বিশ্বকাপ থেকে বিদায়, এটাই মেনে নেয়া কঠিন : রোডস

লক্ষ্য ছিল দ্বাদশ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা। ভারতের কাছে ২৮ রানে হেরে লীগ পর্বের এক ম্যাচ বাকি থাকতেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার আশা শেষ হয়ে গেল টাইগারদের। ভারাক্রান্ত মন, হতাশা ঘিরে ধরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। তবে এর মাঝেও ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশ প্রধান কোচ স্টিভ রোডস। না থেকে উপায়ও নেই। দলের খেলোয়াড়দের আগলে রাখাটাও তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। হতাশা থাকলেও মাশরাফি-সাকিব-তামিমদের নিয়ে গর্ববোধ করেন তিনি। সেমিফাইনালে উঠতে না পারলেও বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলকে নিয়ে গর্বিত রোডস।

মঙ্গলবার ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে হাজির ছিলেন রোডস। ভারতের বিপক্ষে হার ও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে না পারা নিয়ে কথা বলেন তিনি। রোডস বলেন, ‘আমি হতাশ নই। আমরা তিনটি ম্যাচ জিতেছি। বড় বড় দু’টি দলকে হারিয়েছি। সেটাও অনেক কৃতিত্বের, গর্বের। আমি আমার দলকে নিয়ে সন্তুষ্ট, গর্বিত। ছেলেরা ভালো করেছে। ভালো পারফরমেন্স করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। ’ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে বলে মনে করেন রোডস। বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, এই উইকেটে টস খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ম্যাচ যত গড়িয়েছে উইকেট তত সেøা হয়েছে। পরের দিকে আমরা ভালো বোলিং করেছি। ভারতের বোলাররাও ভালো বল করেছে। তাদের কৃতিত্ব দিতে হবে। তারা ভালোভাবে উইকেট ব্যবহার করেছে।’

বাংলাদেশ বোলারদের প্রশংসাও করেন রোডস। বাংলাদেশ বোলারদের নিয়ে রোডস বলেন, ‘ভারত যেভাবে শুরু করেছিল, তাতে মনে হয়েছিল ৩৮০ থেকে ৪০০ রান করে ফেলবে তারা। কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা সেটি হতে দেয়নি। অসাধারণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, ভারতের রানের লাগাম টেনে ধরে। আমাদের শুরুটা ভালো হয়নি। তারপরও ছেলেরা ভালো করেছে। ভাগ্য সহায় হলে হয়ত অন্য কিছু হতে পারত।’

বোলাররা ভালো করার পরও ভারত ৩০ রান বেশি করতে পেরেছে বলে মনে করেন রোডস, ‘উইকেট সহজ ছিল বলেই ভারতীয়রা ৩০ রান বেশি করতে পেরেছে। একই উইকেট পরের সেশনে সেøা হয়ে পড়েছিল। তাই স্বাচ্ছন্দ্য ও সাবলীল ব্যাটিং করা সম্ভব হয়নি। আমরা ৩০ রান বেশি দিয়েছি, আর হেরেছি ২৮ রানে।’

ভারতের জয়ের নায়ক ওপেনার রোহিত শর্মা। ৯২ বলে ১০৪ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন তিনি। তবে এই ইনিংসটি ব্যক্তিগত ৯ রানেই থেমে যেতে পারত। যদি না বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল ক্যাচ ফেলে না দিতেন। ৯ রানে তামিমের কাছে জীবন পেয়ে এবারের বিশ্বকাপে চতুর্থ সেঞ্চুরি করেন রোহিত। তবে তামিমের এই ক্যাচড্রপ বা তার বড় ইনিংস খেলতে না পারায় হতাশ নন রোডস। বরং তামিমের পাশেই দাঁড়ালেন তিনি, ‘আসলে তামিমের ভাগ্য সহায় ছিল না। সে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে ভালো করতে। অনুশীলনে প্রচুর পরিশ্রম ও বাড়তি ঘাম ঝরিয়েছে। অনেক মন দিয়ে ব্যাটিং অনুশীলন করেছে। কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকায় রান পায়নি। আসলে কখনো কখনো এমন হয়, অনেক চেষ্টা করেও সাফল্য পাওয়া যায় না। তামিমের ক্ষেত্রেও হয়ত তাই হয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না, তামিম দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। অনেক ম্যাচের জয়ের নায়কও তিনি। অতীতে তার হাত ধরেই অনেক ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। আমাদের দলের ক্যাচ ধরায় সেরাদের একজজন তামিম। ক্রিকেটে এমন হতে পারে। ঐ ক্যাচের মাশুল আমরা দিয়েছি। তবে এটি নিয়ে সমালোচনা করার পক্ষে আমি নই।’

প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির ফর্ম নিয়েও। এখানেও মাশরাফির পাশে দাড়ালেন রোডস। করলেন অধিনায়কের প্রশংসা, ‘মাশরাফি অনেক চেষ্টা করেছে। সে সাহসী যোদ্ধা। আজ একটা সময় নিজেকে দলের প্রয়োজনে বোলিং থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত সব অধিনায়ক নিতে পারে না। সাহস প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক সফল সেনাপতি মাশরাফি। এছাড়া দারুণ এক মানুষ মাশরাফি। দলের জন্য তার অবদান অস্বীকার করা যাবে না।’

যতভাবেই কথা বলা হোক না কেন, বিশ্বকাপ থেকে বিদায় এটিই মেনে নেয় কঠিনই বটে। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ভালো খেলা। ৩শ’র ওপর রান করে ম্যাচ জয়, বাপাহাড় সমান রান টার্গেট পেয়ে সেখানে হাল ছেড়ে না দেয়া- এগুলোর জন্য প্রশংসা পেতেই পারে বাংলাদেশ। তাই আগামীকাল ৫ জুলাই লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ শেষ করতে উদগ্রীব রোডস, ‘অবশ্যই চেষ্টা করব, সাফল্য দিয়েই যেন বিশ্বকাপের ইতি টানতে পারি।’

বাসস/ওয়েবসাইট।

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০১৯ , ২০ আষাঢ় ১৪২৫, ৩০ শাওয়াল ১৪৪০

বিশ্বকাপ থেকে বিদায়, এটাই মেনে নেয়া কঠিন : রোডস

সংবাদ স্পোর্টস ডেস্ক

image

লক্ষ্য ছিল দ্বাদশ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা। ভারতের কাছে ২৮ রানে হেরে লীগ পর্বের এক ম্যাচ বাকি থাকতেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার আশা শেষ হয়ে গেল টাইগারদের। ভারাক্রান্ত মন, হতাশা ঘিরে ধরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। তবে এর মাঝেও ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশ প্রধান কোচ স্টিভ রোডস। না থেকে উপায়ও নেই। দলের খেলোয়াড়দের আগলে রাখাটাও তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। হতাশা থাকলেও মাশরাফি-সাকিব-তামিমদের নিয়ে গর্ববোধ করেন তিনি। সেমিফাইনালে উঠতে না পারলেও বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলকে নিয়ে গর্বিত রোডস।

মঙ্গলবার ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে হাজির ছিলেন রোডস। ভারতের বিপক্ষে হার ও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে না পারা নিয়ে কথা বলেন তিনি। রোডস বলেন, ‘আমি হতাশ নই। আমরা তিনটি ম্যাচ জিতেছি। বড় বড় দু’টি দলকে হারিয়েছি। সেটাও অনেক কৃতিত্বের, গর্বের। আমি আমার দলকে নিয়ে সন্তুষ্ট, গর্বিত। ছেলেরা ভালো করেছে। ভালো পারফরমেন্স করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। ’ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে বলে মনে করেন রোডস। বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, এই উইকেটে টস খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ম্যাচ যত গড়িয়েছে উইকেট তত সেøা হয়েছে। পরের দিকে আমরা ভালো বোলিং করেছি। ভারতের বোলাররাও ভালো বল করেছে। তাদের কৃতিত্ব দিতে হবে। তারা ভালোভাবে উইকেট ব্যবহার করেছে।’

বাংলাদেশ বোলারদের প্রশংসাও করেন রোডস। বাংলাদেশ বোলারদের নিয়ে রোডস বলেন, ‘ভারত যেভাবে শুরু করেছিল, তাতে মনে হয়েছিল ৩৮০ থেকে ৪০০ রান করে ফেলবে তারা। কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা সেটি হতে দেয়নি। অসাধারণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, ভারতের রানের লাগাম টেনে ধরে। আমাদের শুরুটা ভালো হয়নি। তারপরও ছেলেরা ভালো করেছে। ভাগ্য সহায় হলে হয়ত অন্য কিছু হতে পারত।’

বোলাররা ভালো করার পরও ভারত ৩০ রান বেশি করতে পেরেছে বলে মনে করেন রোডস, ‘উইকেট সহজ ছিল বলেই ভারতীয়রা ৩০ রান বেশি করতে পেরেছে। একই উইকেট পরের সেশনে সেøা হয়ে পড়েছিল। তাই স্বাচ্ছন্দ্য ও সাবলীল ব্যাটিং করা সম্ভব হয়নি। আমরা ৩০ রান বেশি দিয়েছি, আর হেরেছি ২৮ রানে।’

ভারতের জয়ের নায়ক ওপেনার রোহিত শর্মা। ৯২ বলে ১০৪ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন তিনি। তবে এই ইনিংসটি ব্যক্তিগত ৯ রানেই থেমে যেতে পারত। যদি না বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল ক্যাচ ফেলে না দিতেন। ৯ রানে তামিমের কাছে জীবন পেয়ে এবারের বিশ্বকাপে চতুর্থ সেঞ্চুরি করেন রোহিত। তবে তামিমের এই ক্যাচড্রপ বা তার বড় ইনিংস খেলতে না পারায় হতাশ নন রোডস। বরং তামিমের পাশেই দাঁড়ালেন তিনি, ‘আসলে তামিমের ভাগ্য সহায় ছিল না। সে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে ভালো করতে। অনুশীলনে প্রচুর পরিশ্রম ও বাড়তি ঘাম ঝরিয়েছে। অনেক মন দিয়ে ব্যাটিং অনুশীলন করেছে। কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকায় রান পায়নি। আসলে কখনো কখনো এমন হয়, অনেক চেষ্টা করেও সাফল্য পাওয়া যায় না। তামিমের ক্ষেত্রেও হয়ত তাই হয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না, তামিম দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। অনেক ম্যাচের জয়ের নায়কও তিনি। অতীতে তার হাত ধরেই অনেক ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। আমাদের দলের ক্যাচ ধরায় সেরাদের একজজন তামিম। ক্রিকেটে এমন হতে পারে। ঐ ক্যাচের মাশুল আমরা দিয়েছি। তবে এটি নিয়ে সমালোচনা করার পক্ষে আমি নই।’

প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির ফর্ম নিয়েও। এখানেও মাশরাফির পাশে দাড়ালেন রোডস। করলেন অধিনায়কের প্রশংসা, ‘মাশরাফি অনেক চেষ্টা করেছে। সে সাহসী যোদ্ধা। আজ একটা সময় নিজেকে দলের প্রয়োজনে বোলিং থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত সব অধিনায়ক নিতে পারে না। সাহস প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক সফল সেনাপতি মাশরাফি। এছাড়া দারুণ এক মানুষ মাশরাফি। দলের জন্য তার অবদান অস্বীকার করা যাবে না।’

যতভাবেই কথা বলা হোক না কেন, বিশ্বকাপ থেকে বিদায় এটিই মেনে নেয় কঠিনই বটে। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ভালো খেলা। ৩শ’র ওপর রান করে ম্যাচ জয়, বাপাহাড় সমান রান টার্গেট পেয়ে সেখানে হাল ছেড়ে না দেয়া- এগুলোর জন্য প্রশংসা পেতেই পারে বাংলাদেশ। তাই আগামীকাল ৫ জুলাই লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ শেষ করতে উদগ্রীব রোডস, ‘অবশ্যই চেষ্টা করব, সাফল্য দিয়েই যেন বিশ্বকাপের ইতি টানতে পারি।’

বাসস/ওয়েবসাইট।