মায়ানমার সেনাদের নির্যাতনে আরও ৩৫ হাজার বাস্তুচ্যুত হয়েছে

রয়টার্স

চলতি বছর মায়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে আরও ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। গতকাল দেশটিতে মানবাধিকার কর্মী জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ইয়াঙ্গি লির উদ্ধুতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইন ও চিন প্রদেশে মোবাইল ফোন ‘ব্ল্যাক আউট’-এর মাধ্যমে মায়ানমারের সেনাবাহিনী বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।

বিধ্বস্ত রাখাইন ও চিন প্রদেশে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে এখনও জাতিগত বিদ্রোহীদের লড়াই অব্যাহত আছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি প্রদেশ দুটির বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করছে। এরই মধ্যে মায়ানমারের যাতায়াত ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় গত ২২ জুন রাখাইন ও চিন প্রদেশের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন বন্ধ করতে টেলিকম কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেয়।

‘শান্তি বিঘœ ও অবৈধ কর্মকান্ডের সমন্বয়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার’ রুখতে মন্ত্রণালয় ওই নির্দেশ দেয় বলে জানিয়েছে টেলিনর গ্রুপ। রাখাইন ও চিনে মোবাইল ফোন ব্ল্যাক আউটের মাধ্যমে মায়ানমারের সেনাবাহিনী সম্ভবত বড় ধরনের কোন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে গত সপ্তাহে আশঙ্কার কথা বলেছিলেন লি। মঙ্গলবার তিনি ওই আশঙ্কার বিষয়টি আরও বিস্তৃতভাবে হাজির করেন। তিনি বলেন, ‘রাখাইন প্রদেশের উত্তরে ও দক্ষিণ অঞ্চলীয় চিন প্রদেশের একাংশে আরাকান আর্মির সঙ্গে যে সংঘর্ষ গত কয়েক মাস ধরে চলছে, তা বেসামরিকদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। তাতমাদাও (মায়ানমার সেনাবাহিনী) ও আরাকান আর্মির অনেক কাজই মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি সম্ভবত এগুলো যুদ্ধাপরাধের মাত্রাও ছুঁয়েছে।’

পালেতোয়ার ১২ নির্মাণ শ্রমিক ও বাংলাদেশ সীমান্তের কাছ থেকে ৫২ গ্রামবাসীসহ অনেক বেসামরিক লোককে আরাকান আর্মি অপহরণ করেছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে জানান লি। অন্যদিকে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাসাজশ আছে এমন সন্দেহে মায়ানমারের সেনাবাহিনীও রাখাইনের অসংখ্য বাসিন্দাকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আটক অনেকে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে মারা গেছে বলেও দাবি তার। এপ্রিলে সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বাঁশ সংগ্রহে ব্যস্ত রোহিঙ্গাদের ওপর গুলি ছুড়েছিল বলেও জানান জাতিসংঘের এ বিশেষজ্ঞ। চলতি বছর সহিংসতার কারণে ৩৫ হাজারের মতো লোক পালিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

জাতিসংঘে মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুন জানান, তার দেশের সরকার আগস্ট পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ও সংকট সমাধানে চেষ্টা করছে।

২০১৭ সালে মায়ানমারের সেনাবাহিনীর এক সাঁড়াশি অভিযানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি থেকে ৭ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত টপকে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। ‘গণহত্যার উদ্দেশ্য’-এ মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ওই অভিযানে ব্যাপক খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে বলে জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছিলেন।

ইয়াঙ্গুনের সরকার এসব বর্বরতার অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, রাখাইনের উত্তর অঞ্চলে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবেই ওই অভিযান চালানো হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০১৯ , ২০ আষাঢ় ১৪২৫, ৩০ শাওয়াল ১৪৪০

চলতি বছর

মায়ানমার সেনাদের নির্যাতনে আরও ৩৫ হাজার বাস্তুচ্যুত হয়েছে

রয়টার্স

সংবাদ ডেস্ক

চলতি বছর মায়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে আরও ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। গতকাল দেশটিতে মানবাধিকার কর্মী জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ইয়াঙ্গি লির উদ্ধুতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইন ও চিন প্রদেশে মোবাইল ফোন ‘ব্ল্যাক আউট’-এর মাধ্যমে মায়ানমারের সেনাবাহিনী বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।

বিধ্বস্ত রাখাইন ও চিন প্রদেশে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে এখনও জাতিগত বিদ্রোহীদের লড়াই অব্যাহত আছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি প্রদেশ দুটির বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করছে। এরই মধ্যে মায়ানমারের যাতায়াত ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় গত ২২ জুন রাখাইন ও চিন প্রদেশের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন বন্ধ করতে টেলিকম কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেয়।

‘শান্তি বিঘœ ও অবৈধ কর্মকান্ডের সমন্বয়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার’ রুখতে মন্ত্রণালয় ওই নির্দেশ দেয় বলে জানিয়েছে টেলিনর গ্রুপ। রাখাইন ও চিনে মোবাইল ফোন ব্ল্যাক আউটের মাধ্যমে মায়ানমারের সেনাবাহিনী সম্ভবত বড় ধরনের কোন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে গত সপ্তাহে আশঙ্কার কথা বলেছিলেন লি। মঙ্গলবার তিনি ওই আশঙ্কার বিষয়টি আরও বিস্তৃতভাবে হাজির করেন। তিনি বলেন, ‘রাখাইন প্রদেশের উত্তরে ও দক্ষিণ অঞ্চলীয় চিন প্রদেশের একাংশে আরাকান আর্মির সঙ্গে যে সংঘর্ষ গত কয়েক মাস ধরে চলছে, তা বেসামরিকদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। তাতমাদাও (মায়ানমার সেনাবাহিনী) ও আরাকান আর্মির অনেক কাজই মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি সম্ভবত এগুলো যুদ্ধাপরাধের মাত্রাও ছুঁয়েছে।’

পালেতোয়ার ১২ নির্মাণ শ্রমিক ও বাংলাদেশ সীমান্তের কাছ থেকে ৫২ গ্রামবাসীসহ অনেক বেসামরিক লোককে আরাকান আর্মি অপহরণ করেছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে জানান লি। অন্যদিকে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাসাজশ আছে এমন সন্দেহে মায়ানমারের সেনাবাহিনীও রাখাইনের অসংখ্য বাসিন্দাকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আটক অনেকে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে মারা গেছে বলেও দাবি তার। এপ্রিলে সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বাঁশ সংগ্রহে ব্যস্ত রোহিঙ্গাদের ওপর গুলি ছুড়েছিল বলেও জানান জাতিসংঘের এ বিশেষজ্ঞ। চলতি বছর সহিংসতার কারণে ৩৫ হাজারের মতো লোক পালিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

জাতিসংঘে মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুন জানান, তার দেশের সরকার আগস্ট পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ও সংকট সমাধানে চেষ্টা করছে।

২০১৭ সালে মায়ানমারের সেনাবাহিনীর এক সাঁড়াশি অভিযানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি থেকে ৭ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত টপকে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। ‘গণহত্যার উদ্দেশ্য’-এ মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ওই অভিযানে ব্যাপক খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে বলে জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছিলেন।

ইয়াঙ্গুনের সরকার এসব বর্বরতার অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, রাখাইনের উত্তর অঞ্চলে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবেই ওই অভিযান চালানো হয়েছিল।