অধ্যক্ষ সিরাজকে আসামি করে চার্জশিট

  • আজ শুনানি
  • হত্যা মামলার সাক্ষ্য ও জেরা অব্যাহত

সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে ২৭ মার্চ করা যৌন হয়রানির মামলায় গতকাল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ চার্জশিটের ওপর আদালতে শুনানি হবে বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা। বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলম ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ঘটনার দুই মাস পাঁচ দিনের মাথায় মামলাটির চার্জশিট দেয়া হলো। তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফেনী পিবিআইয়ের পরিদর্শক শাহ আলম জানান, অধ্যক্ষ সিরাজ নুসরাত হত্যা মামলায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সেই জবানবন্দিতে ২৭ মার্চ যৌন হয়রনির বিষয়টি স্বীকার করেছে। যার কারণে এই মামলায় নতুন করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। এ মামলায় পিবিআই ৯৬ দিনের মাথায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। ২৭১ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ডাক্তার ও পুলিশসহ মোট ২৯ সাক্ষী রয়েছে। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পিবিআই। আজ চার্জশিটের ওপর আদালতে শুনানি হবে। শুনানি শেষে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠানো হবে। আদালত সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সকালে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ওই মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় নুসরাতের মা সোনাগাজী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পুলিশ ওই দিনই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। এরপর ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত পরীক্ষা দিতে গেলে, কারাগারে থাকা অধ্যক্ষ সিরাজের নির্দেশে তাকে ডেকে মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যান। নুসরাতের মায়ের করা শ্লীলতাহানির মামলা ও নুসরাতের ভাইয়ের করা হত্যা মামলা তদন্ত করে পিবিআই আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

অফিস সহকারীর সাক্ষ্য ও জেরা

এদিকে হত্যা মামলার পঞ্চম দিনে সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী নুরুল আমিনের সাক্ষ্য শেষে গতকাল জেরা শেষ হয়েছে। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে নুরুল আমিনকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন। আজ মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী মো. মোস্তফার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, গত মঙ্গলবার নুসরাতের সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফুর্তির জেরা শেষে হলে গতকাল নতুন সাক্ষী হিসেবে ওই মাদ্রাসার পিয়ন নুরুল আমিনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। গত ২৭ মার্চ নুসরাতকে শ্লীলতাহানির দিন নুরুল আমিনকে দিয়েই নুসরাতকে ডাকা হয়েছিল। অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু আরও বলেন, নুরুল আমিন সাক্ষ্য দেয়ার সময় আদালতকে বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নির্দেশে ২৭ মার্চ সকালে নুসরাতকে ক্লাস থেকে অধ্যক্ষের কক্ষে যেতে বলেছিলাম। তিনি সে সময় ক্লাসে বসে সহপাঠীদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। নুসরাত তার বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানা ফুর্তিকে নিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে যান। অধ্যক্ষ সিরাজ নিশাত ও ফুর্তিকে কক্ষের বাইরে বের করে দেন। এর কয়েক মিনিট পর অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে নুসরাতকে কাঁদতে বের হয়ে বাড়ি চলে যেতে দেখি। পরে নুসরাতকে সঙ্গে নিয়ে তার মা, ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান ও স্থানীয় কাউন্সিলর ইয়াসিন অধ্যক্ষের কক্ষে যান। এ সময় অধ্যক্ষ সিরাজ উল্টো তাকে গালমন্দ করেন এবং নুসরাতের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করেন। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে অধ্যক্ষ ফোন করলে পুলিশ মাদ্রাসায় যায়। গতকাল বেলা ১১টায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নুসরাত হত্যা মামলার ১৬ আসামিকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এর আগে ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০১৯ , ২০ আষাঢ় ১৪২৫, ৩০ শাওয়াল ১৪৪০

নুসরাতকে যৌন হয়রানি

অধ্যক্ষ সিরাজকে আসামি করে চার্জশিট

প্রতিনিধি, ফেনী

  • আজ শুনানি
  • হত্যা মামলার সাক্ষ্য ও জেরা অব্যাহত

সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে ২৭ মার্চ করা যৌন হয়রানির মামলায় গতকাল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ চার্জশিটের ওপর আদালতে শুনানি হবে বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা। বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলম ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ঘটনার দুই মাস পাঁচ দিনের মাথায় মামলাটির চার্জশিট দেয়া হলো। তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফেনী পিবিআইয়ের পরিদর্শক শাহ আলম জানান, অধ্যক্ষ সিরাজ নুসরাত হত্যা মামলায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সেই জবানবন্দিতে ২৭ মার্চ যৌন হয়রনির বিষয়টি স্বীকার করেছে। যার কারণে এই মামলায় নতুন করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। এ মামলায় পিবিআই ৯৬ দিনের মাথায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। ২৭১ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ডাক্তার ও পুলিশসহ মোট ২৯ সাক্ষী রয়েছে। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পিবিআই। আজ চার্জশিটের ওপর আদালতে শুনানি হবে। শুনানি শেষে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠানো হবে। আদালত সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সকালে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ওই মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় নুসরাতের মা সোনাগাজী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পুলিশ ওই দিনই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। এরপর ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত পরীক্ষা দিতে গেলে, কারাগারে থাকা অধ্যক্ষ সিরাজের নির্দেশে তাকে ডেকে মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যান। নুসরাতের মায়ের করা শ্লীলতাহানির মামলা ও নুসরাতের ভাইয়ের করা হত্যা মামলা তদন্ত করে পিবিআই আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

অফিস সহকারীর সাক্ষ্য ও জেরা

এদিকে হত্যা মামলার পঞ্চম দিনে সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী নুরুল আমিনের সাক্ষ্য শেষে গতকাল জেরা শেষ হয়েছে। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে নুরুল আমিনকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন। আজ মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী মো. মোস্তফার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, গত মঙ্গলবার নুসরাতের সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফুর্তির জেরা শেষে হলে গতকাল নতুন সাক্ষী হিসেবে ওই মাদ্রাসার পিয়ন নুরুল আমিনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। গত ২৭ মার্চ নুসরাতকে শ্লীলতাহানির দিন নুরুল আমিনকে দিয়েই নুসরাতকে ডাকা হয়েছিল। অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু আরও বলেন, নুরুল আমিন সাক্ষ্য দেয়ার সময় আদালতকে বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নির্দেশে ২৭ মার্চ সকালে নুসরাতকে ক্লাস থেকে অধ্যক্ষের কক্ষে যেতে বলেছিলাম। তিনি সে সময় ক্লাসে বসে সহপাঠীদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। নুসরাত তার বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানা ফুর্তিকে নিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে যান। অধ্যক্ষ সিরাজ নিশাত ও ফুর্তিকে কক্ষের বাইরে বের করে দেন। এর কয়েক মিনিট পর অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে নুসরাতকে কাঁদতে বের হয়ে বাড়ি চলে যেতে দেখি। পরে নুসরাতকে সঙ্গে নিয়ে তার মা, ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান ও স্থানীয় কাউন্সিলর ইয়াসিন অধ্যক্ষের কক্ষে যান। এ সময় অধ্যক্ষ সিরাজ উল্টো তাকে গালমন্দ করেন এবং নুসরাতের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করেন। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে অধ্যক্ষ ফোন করলে পুলিশ মাদ্রাসায় যায়। গতকাল বেলা ১১টায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নুসরাত হত্যা মামলার ১৬ আসামিকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এর আগে ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।