ধরা পড়েছে রিফাত ফরাজী

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার দ্বিতীয় আসামি কুখ্যাত রিফাত ফরাজীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে কোথা থেকে কে গ্রেফতার করেছেন, তদন্তের স্বার্থে তা উল্লেখ করেনি পুলিশ। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় রিফাত ফরাজী গ্রেফতারের ঘটনা প্রকাশ করেন বরিশালের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। তবে রিফাত ফরাজীর ভাগ্য নয়ন বন্ডের অনুরূপ না হওয়ায় ক্ষেভ প্রকাশ করেছে বরগুনার মানুষ।

সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা পুলিশের সদর দফতরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সভা কক্ষে চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন। এতে বক্তব্য রাখেন বরিশাল বিভাগের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, রিফাত হত্যা মামলার মনিটরিংয়ে তিনি সরাসরি জড়িত থেকে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। রিফাত হত্যা মামলায় লিখিত আসামিদের মধ্যে ৫ জন ইতোমধ্যে ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে ১ নং আসামি নয়ন বন্ড মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। বাকি ৪ জনের মধ্যে রিফাত ফরাজী একজন। তাকে গত গভীর রাতে বরগুনা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, কোথা থেকে কোন আসামি ধরা পড়বে, তা অন্য আসামি ধরার সুবিধার্থে প্রকাশ করা যাবে না। তবে শেষ আসামি না ধরা পর্যন্ত অভিযান থামবে না। রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ডের পরিণতি এক না হওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক প্রভাবের কারণ কি না, জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন।

বিচারবিহীন হত্যা সমর্থন না করলেও বরগুনায় রিফাদ শরীফ হত্যা মামলার মাস্টারমাইন্ড নামে খ্যাত ও নয়ন বন্ডের চেয়েও কুখ্যাত রিফাত ফরাজীকে নয়ন বন্ডের কাতারে বিবেচনা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বরগুনাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। তারা বলেছেন, একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে রিফাত ফরাজীকে অনুকম্পা দেখনো হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, রাজনৈতিক মহলের চাপে প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে পুলিশ প্রশাসন এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার ও প্রচলিত বিচারের ধারায় সঠিক বিচারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

বরগুনার বিশিষ্ট সাংবাদিক জাহাঙ্গীর কবির মৃধা সামাজিক গণমাধ্যমে বলেন, ডিআইজি সকাল ৯টায় বরগুনা এসপি অফিসে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। তিনি রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের আপডেট তথ্য উত্থাপন করবেন। গত রাতে আমরা গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম, সকালবেলা দুটি কুলাঙ্গারের লাশ জাতি দেখতে পাবে। না, কোন সংবাদ পেলাম না। শাকিল আহাম্মেদ মিরাজ বলেছেন, ওই কুলাঙ্গারের লাশ দেখার আশা ছেড়ে দেন। কারণ তাদের ক্ষমতাধর মামা-খালু আছে। বিরূপ মন্তব্য করেছেন আতিকা আহাম্মেদ, এনামূল ইসলাম মিসু, মুশফিক আরিফসহ অনেকে। তারা রিফাত হত্যা মামলায় রিফাত ফরাজীকে বিশেষ অনুকম্পা প্রদর্শনের ভয়াবহ পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তারা এই অনুকম্পার দায়ভাগ প্রশাসনকে বহন করতে হবে বলে জানান।

রিফাত হত্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময়

বরগুনায় গত ২৬ জুন প্রকাশ্যে রিফাত হত্যা-পরবর্তী বরগুনাসহ সারাদেশে ও প্রশাসনে এর প্রভাব নিয়ে বুধবার সকাল ১১টায় বরগুনা সরকারি কলেজে অভিভাবক, শিক্ষক ,শিক্ষার্থী ও প্রশাসনিক পর্যায় কমকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন এবং প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মুস্তাইন বিল্লাহ। এ সময় বক্তব্য রাখেন বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম সভাপতি আনোয়ার হোসেন মনোয়ার, বগুনা প্রেসক্লাব সভাপতি চিত্তরঞ্জন শীল, সাধারণ সম্পাদক জাফর হোসেন হাওলাদার, পরিবেশ আন্দোলনের সম্পাদক মুশফিকুল ইসলাম আরিফ, প্রবীণ শিক্ষক আ. খালেক, লোকবেতারের স্টেশন ম্যানেজার মনির হেসেন কামাল, মহিলা পরিষদ সভাপতি নাজমা বেগম প্রমুখ।

বক্তারা নয়ন বন্ডের কাতারে রিফাত ফরাজীকে বিবেচনা না করে আদালতে হাজির করায় পুলিশ প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার বিরুদ্ধে থানায় ৪টি মামলা রয়েছে। এবার বের হয়ে আর এক নয়ন বন্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে দিনদুপুরে খুন করলে প্রতিবাদেরও কোন সুযোগ থাকবে না।

৭ দিনের রিমান্ডে রিফাত ফরাজী

রিফাত ফরাজীকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হুমায়ন কবির রিমান্ডে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বুধবার দুপুর ২টার দিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রিফাত ফরাজীকে হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন বিচারক সিরাজুল ইসলাম গাজী ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বরগুনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) ও রিফাত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, রাত ২টার দিকে রিফাত শরীফকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর দুপুর ২টার দিকে তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালতের বিচারক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের বাধা দিয়েও স্বামীকে রক্ষা করতে পারেননি। রিফাতকে কুপিয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে হামলাকারীরা। তারা চেহারা লুকানোরও কোন চেষ্টা করেনি। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওইদিন বিকালে চিকিৎসাধীনে তিনি মারা যান।

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০১৯ , ২০ আষাঢ় ১৪২৫, ৩০ শাওয়াল ১৪৪০

ধরা পড়েছে রিফাত ফরাজী

চিত্তরঞ্জন শীল, বরগুনা

image

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার দ্বিতীয় আসামি কুখ্যাত রিফাত ফরাজীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে কোথা থেকে কে গ্রেফতার করেছেন, তদন্তের স্বার্থে তা উল্লেখ করেনি পুলিশ। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় রিফাত ফরাজী গ্রেফতারের ঘটনা প্রকাশ করেন বরিশালের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। তবে রিফাত ফরাজীর ভাগ্য নয়ন বন্ডের অনুরূপ না হওয়ায় ক্ষেভ প্রকাশ করেছে বরগুনার মানুষ।

সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা পুলিশের সদর দফতরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সভা কক্ষে চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন। এতে বক্তব্য রাখেন বরিশাল বিভাগের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, রিফাত হত্যা মামলার মনিটরিংয়ে তিনি সরাসরি জড়িত থেকে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। রিফাত হত্যা মামলায় লিখিত আসামিদের মধ্যে ৫ জন ইতোমধ্যে ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে ১ নং আসামি নয়ন বন্ড মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। বাকি ৪ জনের মধ্যে রিফাত ফরাজী একজন। তাকে গত গভীর রাতে বরগুনা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, কোথা থেকে কোন আসামি ধরা পড়বে, তা অন্য আসামি ধরার সুবিধার্থে প্রকাশ করা যাবে না। তবে শেষ আসামি না ধরা পর্যন্ত অভিযান থামবে না। রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ডের পরিণতি এক না হওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক প্রভাবের কারণ কি না, জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন।

বিচারবিহীন হত্যা সমর্থন না করলেও বরগুনায় রিফাদ শরীফ হত্যা মামলার মাস্টারমাইন্ড নামে খ্যাত ও নয়ন বন্ডের চেয়েও কুখ্যাত রিফাত ফরাজীকে নয়ন বন্ডের কাতারে বিবেচনা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বরগুনাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। তারা বলেছেন, একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে রিফাত ফরাজীকে অনুকম্পা দেখনো হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, রাজনৈতিক মহলের চাপে প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে পুলিশ প্রশাসন এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার ও প্রচলিত বিচারের ধারায় সঠিক বিচারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

বরগুনার বিশিষ্ট সাংবাদিক জাহাঙ্গীর কবির মৃধা সামাজিক গণমাধ্যমে বলেন, ডিআইজি সকাল ৯টায় বরগুনা এসপি অফিসে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। তিনি রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের আপডেট তথ্য উত্থাপন করবেন। গত রাতে আমরা গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম, সকালবেলা দুটি কুলাঙ্গারের লাশ জাতি দেখতে পাবে। না, কোন সংবাদ পেলাম না। শাকিল আহাম্মেদ মিরাজ বলেছেন, ওই কুলাঙ্গারের লাশ দেখার আশা ছেড়ে দেন। কারণ তাদের ক্ষমতাধর মামা-খালু আছে। বিরূপ মন্তব্য করেছেন আতিকা আহাম্মেদ, এনামূল ইসলাম মিসু, মুশফিক আরিফসহ অনেকে। তারা রিফাত হত্যা মামলায় রিফাত ফরাজীকে বিশেষ অনুকম্পা প্রদর্শনের ভয়াবহ পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তারা এই অনুকম্পার দায়ভাগ প্রশাসনকে বহন করতে হবে বলে জানান।

রিফাত হত্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময়

বরগুনায় গত ২৬ জুন প্রকাশ্যে রিফাত হত্যা-পরবর্তী বরগুনাসহ সারাদেশে ও প্রশাসনে এর প্রভাব নিয়ে বুধবার সকাল ১১টায় বরগুনা সরকারি কলেজে অভিভাবক, শিক্ষক ,শিক্ষার্থী ও প্রশাসনিক পর্যায় কমকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন এবং প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মুস্তাইন বিল্লাহ। এ সময় বক্তব্য রাখেন বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম সভাপতি আনোয়ার হোসেন মনোয়ার, বগুনা প্রেসক্লাব সভাপতি চিত্তরঞ্জন শীল, সাধারণ সম্পাদক জাফর হোসেন হাওলাদার, পরিবেশ আন্দোলনের সম্পাদক মুশফিকুল ইসলাম আরিফ, প্রবীণ শিক্ষক আ. খালেক, লোকবেতারের স্টেশন ম্যানেজার মনির হেসেন কামাল, মহিলা পরিষদ সভাপতি নাজমা বেগম প্রমুখ।

বক্তারা নয়ন বন্ডের কাতারে রিফাত ফরাজীকে বিবেচনা না করে আদালতে হাজির করায় পুলিশ প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার বিরুদ্ধে থানায় ৪টি মামলা রয়েছে। এবার বের হয়ে আর এক নয়ন বন্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে দিনদুপুরে খুন করলে প্রতিবাদেরও কোন সুযোগ থাকবে না।

৭ দিনের রিমান্ডে রিফাত ফরাজী

রিফাত ফরাজীকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হুমায়ন কবির রিমান্ডে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বুধবার দুপুর ২টার দিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রিফাত ফরাজীকে হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন বিচারক সিরাজুল ইসলাম গাজী ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বরগুনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) ও রিফাত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, রাত ২টার দিকে রিফাত শরীফকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর দুপুর ২টার দিকে তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালতের বিচারক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের বাধা দিয়েও স্বামীকে রক্ষা করতে পারেননি। রিফাতকে কুপিয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে হামলাকারীরা। তারা চেহারা লুকানোরও কোন চেষ্টা করেনি। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওইদিন বিকালে চিকিৎসাধীনে তিনি মারা যান।