মায়ানমারের বিরুদ্ধে ফের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ জাতিসংঘের

মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে নতুন করে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘ। দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের পর এবার পশ্চিম অঞ্চলীয় প্রদেশগুলোর বেসামরিক নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে মায়ানমার সেনাবাহিনী। মায়ানমারের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ইয়াঙ্গি লি গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির মানবাধিকার কাউন্সিলের কাছে এ অভিযোগ করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, মায়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ লি বলেন, রাখাইন প্রদেশের উত্তরে ও দক্ষিণ অঞ্চলীয় চিন প্রদেশের একাংশে আরাকান আর্মির সঙ্গে মায়ানমার সেনাবাহিনী সংঘর্ষ গত কয়েক মাস ধরেই চলছে। এ সংঘাত দেশটির বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। মায়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির অনেক কাজই মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি সম্ভবত এগুলো যুদ্ধাপরাধের মাত্রাও ছুয়েছে। পালেতোয়ার ১২ নির্মাণ শ্রমিক ও বাংলাদেশ সীমান্তের কাছ থেকে ৫২ গ্রামবাসীসহ অনেক বেসামরিক মানুষকে আরাকান আর্মি অপহরণ করেছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে জানান লি। অন্যদিকে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাসাজশ আছে এমন সন্দেহে মায়ানমারের সেনাবাহিনীও রাখাইনের অসংখ্য বাসিন্দাকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আটক অনেকে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে মারা গেছে বলেও দাবি তার। এপ্রিলে সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বাঁশ সংগ্রহে ব্যস্ত রোহিঙ্গাদের ওপর গুলি ছুড়েছিল বলেও জানান জাতিসংঘের এ বিশেষজ্ঞ।

চলতি বছর সহিংসতার কারণে ৩৫ হাজারের মতো মানুষ মায়ানমার ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। জাতিসংঘে মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুন বলেন, তার দেশের সরকার আগস্ট পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে এবং সংকট সমাধানে চেষ্টা করছে। মায়ানমারের রাখাইন ও চিন প্রদেশে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠীর জাতিগত বিদ্রোহীদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে। রাখাইনের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি প্রদেশ দুটির বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করছে। এরই মধ্যে মায়ানমারের যাতায়াত ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় গত ২২ জুন রাখাইন ও চিন প্রদেশের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন বন্ধ করতে টেলিকম কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেয়। ‘শান্তি বিঘ্নে এবং অবৈধ কর্মকান্ডের সমন্বয়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার’ রুখতে মন্ত্রণালয় ওই নির্দেশ দেয় বলে জানিয়েছে টেলিনর গ্রুপ। রাখাইন ও চিনে মোবাইল ফোন ‘ভ্লেক আউট’-এর মাধ্যমে মায়ানমারের সেনাবাহিনী সম্ভবত বড় ধরনের কোন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে গত সপ্তাহে আশঙ্কার কথা বলেছিলেন লি। গত মঙ্গলবার তিনি ওই আশঙ্কার বিষয়টি আরও বিস্তৃতভাবে হাজির করেন।

২০১৭ সালে মায়ানমারের সেনাবাহিনীর এক সাঁড়াশি অভিযানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি থেকে ৭ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত টপকে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ‘গণহত্যার উদ্দেশ্য’-এ মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ওই অভিযানে ব্যাপক খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে বলে পরে জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন। ইয়াঙ্গুনের সরকার এসব বর্বরতার অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, রাখাইনের উত্তর অঞ্চলে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবেই ওই অভিযান চালানো হয়।

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০১৯ , ২০ আষাঢ় ১৪২৫, ৩০ শাওয়াল ১৪৪০

মায়ানমারের বিরুদ্ধে ফের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ জাতিসংঘের

সংবাদ ডেস্ক

image

ইয়াঙ্গি লি

মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে নতুন করে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘ। দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের পর এবার পশ্চিম অঞ্চলীয় প্রদেশগুলোর বেসামরিক নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে মায়ানমার সেনাবাহিনী। মায়ানমারের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ইয়াঙ্গি লি গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির মানবাধিকার কাউন্সিলের কাছে এ অভিযোগ করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, মায়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ লি বলেন, রাখাইন প্রদেশের উত্তরে ও দক্ষিণ অঞ্চলীয় চিন প্রদেশের একাংশে আরাকান আর্মির সঙ্গে মায়ানমার সেনাবাহিনী সংঘর্ষ গত কয়েক মাস ধরেই চলছে। এ সংঘাত দেশটির বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। মায়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির অনেক কাজই মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি সম্ভবত এগুলো যুদ্ধাপরাধের মাত্রাও ছুয়েছে। পালেতোয়ার ১২ নির্মাণ শ্রমিক ও বাংলাদেশ সীমান্তের কাছ থেকে ৫২ গ্রামবাসীসহ অনেক বেসামরিক মানুষকে আরাকান আর্মি অপহরণ করেছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে জানান লি। অন্যদিকে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাসাজশ আছে এমন সন্দেহে মায়ানমারের সেনাবাহিনীও রাখাইনের অসংখ্য বাসিন্দাকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আটক অনেকে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে মারা গেছে বলেও দাবি তার। এপ্রিলে সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বাঁশ সংগ্রহে ব্যস্ত রোহিঙ্গাদের ওপর গুলি ছুড়েছিল বলেও জানান জাতিসংঘের এ বিশেষজ্ঞ।

চলতি বছর সহিংসতার কারণে ৩৫ হাজারের মতো মানুষ মায়ানমার ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। জাতিসংঘে মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুন বলেন, তার দেশের সরকার আগস্ট পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে এবং সংকট সমাধানে চেষ্টা করছে। মায়ানমারের রাখাইন ও চিন প্রদেশে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠীর জাতিগত বিদ্রোহীদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে। রাখাইনের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি প্রদেশ দুটির বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করছে। এরই মধ্যে মায়ানমারের যাতায়াত ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় গত ২২ জুন রাখাইন ও চিন প্রদেশের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন বন্ধ করতে টেলিকম কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেয়। ‘শান্তি বিঘ্নে এবং অবৈধ কর্মকান্ডের সমন্বয়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার’ রুখতে মন্ত্রণালয় ওই নির্দেশ দেয় বলে জানিয়েছে টেলিনর গ্রুপ। রাখাইন ও চিনে মোবাইল ফোন ‘ভ্লেক আউট’-এর মাধ্যমে মায়ানমারের সেনাবাহিনী সম্ভবত বড় ধরনের কোন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে গত সপ্তাহে আশঙ্কার কথা বলেছিলেন লি। গত মঙ্গলবার তিনি ওই আশঙ্কার বিষয়টি আরও বিস্তৃতভাবে হাজির করেন।

২০১৭ সালে মায়ানমারের সেনাবাহিনীর এক সাঁড়াশি অভিযানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি থেকে ৭ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত টপকে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ‘গণহত্যার উদ্দেশ্য’-এ মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ওই অভিযানে ব্যাপক খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে বলে পরে জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন। ইয়াঙ্গুনের সরকার এসব বর্বরতার অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, রাখাইনের উত্তর অঞ্চলে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবেই ওই অভিযান চালানো হয়।