রথযাত্রা আজ

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব শুরু হচ্ছে আজ। ১২ জুলাই উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে। এই উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব সমাজে বিদ্যমান সম্প্রীতি ও মৈত্রীর বন্ধন আরও দৃঢ় করবে বলে আশা প্রকাশ করেন। রথযাত্রা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনুপম দেশ। সুদীর্ঘকাল ধরে এ দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করছে। রথযাত্রা উৎসব সমাজে বিদ্যমান সম্প্রীতি ও মৈত্রীর বন্ধন আরও দৃঢ় করবে। ধর্মীয় উৎসব মানবিক ঔদার্য বিকশিত করে এবং সবার মধ্যে প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন প্রসারের শিক্ষা দেয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে এসব অনুষ্ঠান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে বলে আমি মনে করি। অনাচার, অবিচার, পঙ্কিলতা দূর করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুগে যুগে এ ধরাধামে বিভিন্ন মহামানবের আবির্ভাব হয়েছে। তারা অসুরকে দমন করে পৃথিবীকে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।

রথযাত্রা উৎসবের সার্বিক সাফল্য কামনা করে আবদুল হামিদ বলেন, জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সবার মধ্যে ঐক্য, সহমর্মিতা ও সম্প্রীতি সৃষ্টিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, রথযাত্রা উৎসব জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে। শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ধর্মীয় উৎসব মানবিক উদারতা এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন প্রসারের শিক্ষা দেয়। রথযাত্রা সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় উৎসব। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল থেকে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা পাশাপাশি বসবাস করে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এ দেশের সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম ও ধর্মীয় উৎসব স্বাধীনভাবে পালন করছে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, জগন্নাথ দেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জগৎ হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ঈশ্বর। তাই জগন্নাথ হচ্ছেন জগতের ঈশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। জীবরূপে তাকে আর জন্ম নিতে হয় না। এ বিশ্বাস থেকেই রথের ওপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমূর্তি রেখে রথ নিয়ে যাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

ঢাকায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) রথযাত্রা উপলক্ষে ৯ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামানায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, পদাবলী কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভাগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পাঠ, ধর্মীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও ধর্মীয় নাটক মঞ্চায়ন।

আজ ইসকন আশ্রমে বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে রথযাত্রা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এ উপলক্ষে স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরে দুপুর ১টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

মঙ্গল প্রদীপ জ্বলিয়ে রথযাত্রা উৎসবের উদ্বোধন করবেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সভাপতিত্ব করবেন যশোদা নন্দন আচার্য্য। পরে সেখান থেকে বর্ণাঢ্য সাজে তিনটি বিশাল রথে জগন্নাথ দেব, শুভদ্রা ও বলরামের প্রতিকৃতিসহ শোভাযাত্রা বের করা হবে। শোভাযাত্রা জয়কালী মন্দির, মতিঝিল শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলার মোড়, বায়তুল মোকাররম, পুরান পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট মোড়, দোয়েল চত্বর, রমনা কালীমন্দির, টিএসসি, জগন্নাথ হল ও পলাশী হয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হবে। এছাড়া তাঁতীবাজারে শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউ ঠাকুর মন্দিরেও রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০১৯ , ২০ আষাঢ় ১৪২৫, ৩০ শাওয়াল ১৪৪০

রথযাত্রা আজ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব শুরু হচ্ছে আজ। ১২ জুলাই উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে। এই উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব সমাজে বিদ্যমান সম্প্রীতি ও মৈত্রীর বন্ধন আরও দৃঢ় করবে বলে আশা প্রকাশ করেন। রথযাত্রা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনুপম দেশ। সুদীর্ঘকাল ধরে এ দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করছে। রথযাত্রা উৎসব সমাজে বিদ্যমান সম্প্রীতি ও মৈত্রীর বন্ধন আরও দৃঢ় করবে। ধর্মীয় উৎসব মানবিক ঔদার্য বিকশিত করে এবং সবার মধ্যে প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন প্রসারের শিক্ষা দেয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে এসব অনুষ্ঠান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে বলে আমি মনে করি। অনাচার, অবিচার, পঙ্কিলতা দূর করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুগে যুগে এ ধরাধামে বিভিন্ন মহামানবের আবির্ভাব হয়েছে। তারা অসুরকে দমন করে পৃথিবীকে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।

রথযাত্রা উৎসবের সার্বিক সাফল্য কামনা করে আবদুল হামিদ বলেন, জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সবার মধ্যে ঐক্য, সহমর্মিতা ও সম্প্রীতি সৃষ্টিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, রথযাত্রা উৎসব জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে। শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ধর্মীয় উৎসব মানবিক উদারতা এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন প্রসারের শিক্ষা দেয়। রথযাত্রা সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় উৎসব। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল থেকে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা পাশাপাশি বসবাস করে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এ দেশের সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম ও ধর্মীয় উৎসব স্বাধীনভাবে পালন করছে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, জগন্নাথ দেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জগৎ হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ঈশ্বর। তাই জগন্নাথ হচ্ছেন জগতের ঈশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। জীবরূপে তাকে আর জন্ম নিতে হয় না। এ বিশ্বাস থেকেই রথের ওপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমূর্তি রেখে রথ নিয়ে যাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

ঢাকায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) রথযাত্রা উপলক্ষে ৯ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামানায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, পদাবলী কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভাগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পাঠ, ধর্মীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও ধর্মীয় নাটক মঞ্চায়ন।

আজ ইসকন আশ্রমে বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে রথযাত্রা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এ উপলক্ষে স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরে দুপুর ১টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

মঙ্গল প্রদীপ জ্বলিয়ে রথযাত্রা উৎসবের উদ্বোধন করবেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সভাপতিত্ব করবেন যশোদা নন্দন আচার্য্য। পরে সেখান থেকে বর্ণাঢ্য সাজে তিনটি বিশাল রথে জগন্নাথ দেব, শুভদ্রা ও বলরামের প্রতিকৃতিসহ শোভাযাত্রা বের করা হবে। শোভাযাত্রা জয়কালী মন্দির, মতিঝিল শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলার মোড়, বায়তুল মোকাররম, পুরান পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট মোড়, দোয়েল চত্বর, রমনা কালীমন্দির, টিএসসি, জগন্নাথ হল ও পলাশী হয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হবে। এছাড়া তাঁতীবাজারে শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউ ঠাকুর মন্দিরেও রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।