প্রতিবেশীদের আশানুরূপ সহযোগিতা পাওয়া যায়নি

সেমিনারে বক্তারা

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আন্তরিক হলেও প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে এই সমস্যা সমাধানে আশানুরূপ সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। গতকাল রাজধানীর বিস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিষয়ক এক সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তারা এ মন্তব্য করেন। বক্তারা বলেন, মায়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন বাংলাদেশ ও ভারতের অগ্রযাত্রার আকাক্সক্ষার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এ অঞ্চলের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা আর অগ্রযাত্রার স্বার্থে একসঙ্গে এই সমস্যা সমাধানে মনোযোগী হওয়া জরুরি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস-বিস) ‘পরিবর্তিত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে। বিসের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মুন্সি ফয়েজ আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আবদুর রহমান এবং ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের (আইডিএসএ) মহাপরিচালক সুজন চিনয়।

গওহর রিজভী বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশে সংখ্যালঘু রয়েছে। কিন্তু মায়ানমারের মতো এমন নৃশংস আচরণ কোন দেশ তার সংখ্যালঘু জাতির ওপর করেনি। রোহিঙ্গাদের ওপর মায়ানমারের হত্যাকান্ড পরিকল্পিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সমস্যা রাতারাতি তৈরি হয়নি। কয়েক দশক ধরে সুপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা আজ শুধু বাংলাদেশের বলে মনে হলেও কাল সেটা আঞ্চলিক এবং পরশু পুরো পৃথিবীর সমস্যায় পরিণত হবে। গওহর রিজভী বলেন, এখন পর্যন্ত সরকার উগ্রবাদ দমনে যথেষ্ট ভালো করেছে। জানি না কত দিন এটা করতে পারবো। আমরা দেখছি এ অঞ্চলে অস্ত্র আসছে। আমরা যদি এ ব্যাপারে প্রতিবেশীদের নিয়ে সতর্ক না হই, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিকভাবে তা মোকাবিলায় আমাদের অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে।

বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী প্রতিটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। এই সম্পর্ক ভারতের নিরাপত্তার অন্যতম স্তম্ভ। তাই দক্ষিণ এশিয়ার নিকট দুই প্রতিবেশী পরস্পরকে ছাড়া সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে না। মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন বাংলাদেশ ও ভারতের অগ্রযাত্রার আকাক্সক্ষার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এ অঞ্চলের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা আর অগ্রযাত্রার স্বার্থে একসঙ্গে সমস্যা সমাধানে মনোযোগী হওয়া জরুরি।

ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের (আইডিএসএ) মহাপরিচালক সুজন চিনয় বলেন, বাংলাদেশ ভারতের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদারী বন্ধু রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের চাইতে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও গভীর। এই সম্পর্ক ভারতের নিরাপত্তার অন্যতম স্তম্ভ। এছাড়াও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভারতরে প্রাচ্যমুখী পরাষ্ট্রনীতিকে পূর্ণতা দান করেছে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বাংলাদেশ এবং ভারতসহ এই অঞ্চলের জন্য এখনো হুমকি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারত একা কাজ করলে চলবে না। এজন্য বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রয়োজন। এভাবে শুধু সন্ত্রাসবাদ নয় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে যদি ভারত এবং বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করে তাহলে দুই দেশ সমান উপকৃত হবে।

মেজর জেনারেল এ কে এম আবদুর রহমান বলেন, ধর্মের নামে সন্ত্রাস এই পুরো পৃথিবীর উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর। আমরা এই ধারার সন্ত্রাস দমনে উল্লেখযোগ্য কাজ করে যাচ্ছি। তবে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা সমস্যা এই অঞ্চলে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ বাড়িয়ে দিতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমধান করতে চায়। কিন্তু এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছ থেকে আশানুরূপ সহযোগিতা পাচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০১৯ , ২০ আষাঢ় ১৪২৫, ৩০ শাওয়াল ১৪৪০

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে

প্রতিবেশীদের আশানুরূপ সহযোগিতা পাওয়া যায়নি

সেমিনারে বক্তারা

কূটনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আন্তরিক হলেও প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে এই সমস্যা সমাধানে আশানুরূপ সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। গতকাল রাজধানীর বিস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিষয়ক এক সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তারা এ মন্তব্য করেন। বক্তারা বলেন, মায়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন বাংলাদেশ ও ভারতের অগ্রযাত্রার আকাক্সক্ষার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এ অঞ্চলের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা আর অগ্রযাত্রার স্বার্থে একসঙ্গে এই সমস্যা সমাধানে মনোযোগী হওয়া জরুরি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস-বিস) ‘পরিবর্তিত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে। বিসের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মুন্সি ফয়েজ আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আবদুর রহমান এবং ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের (আইডিএসএ) মহাপরিচালক সুজন চিনয়।

গওহর রিজভী বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশে সংখ্যালঘু রয়েছে। কিন্তু মায়ানমারের মতো এমন নৃশংস আচরণ কোন দেশ তার সংখ্যালঘু জাতির ওপর করেনি। রোহিঙ্গাদের ওপর মায়ানমারের হত্যাকান্ড পরিকল্পিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সমস্যা রাতারাতি তৈরি হয়নি। কয়েক দশক ধরে সুপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা আজ শুধু বাংলাদেশের বলে মনে হলেও কাল সেটা আঞ্চলিক এবং পরশু পুরো পৃথিবীর সমস্যায় পরিণত হবে। গওহর রিজভী বলেন, এখন পর্যন্ত সরকার উগ্রবাদ দমনে যথেষ্ট ভালো করেছে। জানি না কত দিন এটা করতে পারবো। আমরা দেখছি এ অঞ্চলে অস্ত্র আসছে। আমরা যদি এ ব্যাপারে প্রতিবেশীদের নিয়ে সতর্ক না হই, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিকভাবে তা মোকাবিলায় আমাদের অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে।

বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী প্রতিটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। এই সম্পর্ক ভারতের নিরাপত্তার অন্যতম স্তম্ভ। তাই দক্ষিণ এশিয়ার নিকট দুই প্রতিবেশী পরস্পরকে ছাড়া সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে না। মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন বাংলাদেশ ও ভারতের অগ্রযাত্রার আকাক্সক্ষার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এ অঞ্চলের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা আর অগ্রযাত্রার স্বার্থে একসঙ্গে সমস্যা সমাধানে মনোযোগী হওয়া জরুরি।

ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের (আইডিএসএ) মহাপরিচালক সুজন চিনয় বলেন, বাংলাদেশ ভারতের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদারী বন্ধু রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের চাইতে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও গভীর। এই সম্পর্ক ভারতের নিরাপত্তার অন্যতম স্তম্ভ। এছাড়াও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভারতরে প্রাচ্যমুখী পরাষ্ট্রনীতিকে পূর্ণতা দান করেছে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বাংলাদেশ এবং ভারতসহ এই অঞ্চলের জন্য এখনো হুমকি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারত একা কাজ করলে চলবে না। এজন্য বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রয়োজন। এভাবে শুধু সন্ত্রাসবাদ নয় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে যদি ভারত এবং বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করে তাহলে দুই দেশ সমান উপকৃত হবে।

মেজর জেনারেল এ কে এম আবদুর রহমান বলেন, ধর্মের নামে সন্ত্রাস এই পুরো পৃথিবীর উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর। আমরা এই ধারার সন্ত্রাস দমনে উল্লেখযোগ্য কাজ করে যাচ্ছি। তবে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা সমস্যা এই অঞ্চলে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ বাড়িয়ে দিতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমধান করতে চায়। কিন্তু এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছ থেকে আশানুরূপ সহযোগিতা পাচ্ছে না।