ডেঙ্গু জ্বরে ডাক্তারসহ ৩ জনের মৃত্যু

জুনে আক্রান্ত ১৬৯৯ জন

বর্ষার শুরুতে রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক অ্যাডিস মশার উপদ্রব বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে একজন নারী চিকিৎসকের মৃত্যুও হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ৮৩ জন। গত ৩ দিনে আক্রান্ত ২৫৪ জন। গত জুন মাসে আক্রান্ত ১ হাজার ৬৯৯ জন। চলতি বছরে গতকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ২ হাজার ২৭৭।

রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ডা.নিগার নাহিদ দিপু নামে এক নারী চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৩২ ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন ডা. নিগার সর্বশেষ তিনি কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্কয়ার হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ারের একজন কর্মকর্তা জানান, সকালে জরুরি বিভাগ থেকে আইসিইউতে ভর্তি হন ডা. নিগার। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টায় তার মৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোলরুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আকতার জানান, ডা. নিগার গত ১ জুলাই রাত দেড়টায় প্রচ- জ্বর নিয়ে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি হন। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু পজিটিভ ধরা পড়ে। ভর্তির পর তার রক্তে প্লাটিলেট ছিল ১১ হাজার। পপুলারে কয়েক ঘণ্টার চিকিৎসায় প্লাটিলেট ১৫ হাজার হয়। ওই দিন দুপুরে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তার। দ্রুত চিকিৎসায় তিনি কিছুটা সুস্থ হন। রাত ১টার দিকে আরেকবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সকালে তাকে স্কয়ারে নিয়ে আসা হলে আরেকবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। জানা গেছে, ২ ছেলে ও ১ মেয়েসহ, পরিবার-পরিজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন ডা. নিগার। এ বছর ডা. নিগারসহ মোট তিনজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল।

রাজধানীর ৪১/৩ পুরানা পল্টন এনক্লেভ হাউজিংয়ের একটি ভবনে আরফিন ইসলাম (৮) নামে একটি শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। তাকে শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো তার চিকিৎসা চলছে। এর আগেও পুরানা পল্টন এনক্লেভ হাউজিংয়ে আরও কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতি বছর এ হাউজিংয়ে ডেঙ্গু জ্বর ও চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হলেও মশা দমনে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদফরের কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের পুরানা পল্টন এলাকা জরিপ করে অ্যাডিস মশা দমনে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করলেও তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও নগর ভবনের অদূরে পুরানা পল্টন এলাকা। কিন্তু প্রতি বছর কেউ কেউ এই এলাকায় অ্যাডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। এরপরও জনসচেতনতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আবাসিক এলাকার আশপাশসহ বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকলেও সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা নেই। এভাবে পুরানা পল্টনের মতো রাজধানীর অভিজাত এলাকাসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক অ্যাডিস মশার উপদ্রব বাড়ছে। অন্যান্য প্রজাতির মশার কামড়ে চর্মসহ নানা রোগ দেখা দেয়।

কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে নির্মাণাধীন ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে অ্যাডিস মশার প্রজনন ও বংশবিস্তার ঘটে। তাই অ্যাডিস দমনে জনসচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম মোশারফ হোসেন বলেন, ডেঙ্গু জ্বর হলে ব্যথা ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। শুধু তরল খাবার বা জুস বেশি করে খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। আর ডেঙ্গু জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০১৯ , ২০ আষাঢ় ১৪২৫, ৩০ শাওয়াল ১৪৪০

অ্যাডিস মশার উপদ্রব

ডেঙ্গু জ্বরে ডাক্তারসহ ৩ জনের মৃত্যু

জুনে আক্রান্ত ১৬৯৯ জন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বর্ষার শুরুতে রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক অ্যাডিস মশার উপদ্রব বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে একজন নারী চিকিৎসকের মৃত্যুও হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ৮৩ জন। গত ৩ দিনে আক্রান্ত ২৫৪ জন। গত জুন মাসে আক্রান্ত ১ হাজার ৬৯৯ জন। চলতি বছরে গতকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ২ হাজার ২৭৭।

রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ডা.নিগার নাহিদ দিপু নামে এক নারী চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৩২ ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন ডা. নিগার সর্বশেষ তিনি কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্কয়ার হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ারের একজন কর্মকর্তা জানান, সকালে জরুরি বিভাগ থেকে আইসিইউতে ভর্তি হন ডা. নিগার। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টায় তার মৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোলরুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আকতার জানান, ডা. নিগার গত ১ জুলাই রাত দেড়টায় প্রচ- জ্বর নিয়ে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি হন। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু পজিটিভ ধরা পড়ে। ভর্তির পর তার রক্তে প্লাটিলেট ছিল ১১ হাজার। পপুলারে কয়েক ঘণ্টার চিকিৎসায় প্লাটিলেট ১৫ হাজার হয়। ওই দিন দুপুরে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তার। দ্রুত চিকিৎসায় তিনি কিছুটা সুস্থ হন। রাত ১টার দিকে আরেকবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সকালে তাকে স্কয়ারে নিয়ে আসা হলে আরেকবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। জানা গেছে, ২ ছেলে ও ১ মেয়েসহ, পরিবার-পরিজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন ডা. নিগার। এ বছর ডা. নিগারসহ মোট তিনজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল।

রাজধানীর ৪১/৩ পুরানা পল্টন এনক্লেভ হাউজিংয়ের একটি ভবনে আরফিন ইসলাম (৮) নামে একটি শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। তাকে শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো তার চিকিৎসা চলছে। এর আগেও পুরানা পল্টন এনক্লেভ হাউজিংয়ে আরও কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতি বছর এ হাউজিংয়ে ডেঙ্গু জ্বর ও চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হলেও মশা দমনে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদফরের কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের পুরানা পল্টন এলাকা জরিপ করে অ্যাডিস মশা দমনে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করলেও তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও নগর ভবনের অদূরে পুরানা পল্টন এলাকা। কিন্তু প্রতি বছর কেউ কেউ এই এলাকায় অ্যাডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। এরপরও জনসচেতনতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আবাসিক এলাকার আশপাশসহ বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকলেও সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা নেই। এভাবে পুরানা পল্টনের মতো রাজধানীর অভিজাত এলাকাসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক অ্যাডিস মশার উপদ্রব বাড়ছে। অন্যান্য প্রজাতির মশার কামড়ে চর্মসহ নানা রোগ দেখা দেয়।

কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে নির্মাণাধীন ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে অ্যাডিস মশার প্রজনন ও বংশবিস্তার ঘটে। তাই অ্যাডিস দমনে জনসচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম মোশারফ হোসেন বলেন, ডেঙ্গু জ্বর হলে ব্যথা ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। শুধু তরল খাবার বা জুস বেশি করে খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। আর ডেঙ্গু জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।