এক নারীকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ

থানায় মামলা দায়ের

দিনাজপুরের পার্বতীপুর পৌর মেয়র এজেডএম মেনহাজুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ।

অভিযোগে জানা যায়, শহরের পুরাতন বাজারের এক নারীকে দীর্ঘ প্রায় তিন বছর ধরে ধর্ষণ করে আসছেন। ধর্ষিতা-নির্যাতিতা এই গৃহবধূ ঘটনার বিচার চেয়ে মুখ খোলার কারণে তাকে গণধর্ষণ ও নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতন করে হত্যচেষ্টা চালানো হয়। তার আর্তচিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে মেয়র ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ভিকটিমকে রেখে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাত ১১টায় পার্বতীপুর মডেল থানায় ধর্ষিতা গৃহবধূ (৩৫) বাদী হয়ে পৌর মেয়র এজেডএম মেনহাজুল হকসহ ৩ যুবক ও আরও অজ্ঞাতনামা ৫ যুবকের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছেন। থানায় দায়ের করা মামলা নং-২, ধারা ২০০৩ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধিত) আইনের ৯(১)/৩০সহ দন্ডবিধি ৩২৩, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৫০৬ ও ১১৪। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক শেখ মোহাম্মদ জুবায়ের। ভিকটিমকে গতকাল সকালে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এদিকে, গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় পার্বতীপুর প্রেসক্লাবে বাদিনী সশরীরে হাজির হয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি সংবাদকর্মীদের সামনে মামলার আরজি পড়ে শোনান।

মামলার বাদিনী বলেন, তিনি একজন গৃহিণী ও তিন সন্তানের জননী। তার স্বামী পেশায় মুদি দোকানদার। বাড়ি শহরের পুরাতন বাজার জাহাঙ্গীরনগর মহল্লায়।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পৌর মেয়র এজেডএম মেনহাজুল হক একজন চরিত্রহীন ও মুখোশধারী লম্পট। তিনি আমাকে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গত কয়েক বছরে অসংখ্যবার আমাকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে আসছেন। তিনি গোপনে আমার আপত্তিকর ছবি তুলে সংরক্ষণ করে রাখেন। সেসব ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেইল করে নিয়মিতভাবে ধর্ষণ করেন। আমি ভয় ও লোকলজ্জায় কাউকে কোন কথা বলতে পারিনি। ঘটনাক্রমে বিষয়টি লোকমুখে জানাজানি হলে আমার স্বামী আমার সঙ্গে মৌখিকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। আমি নিরুপায় হয়ে পৌর মেয়রের কাছে আমার অথবা আমার সাবালক ছেলের চাকরি দেয়ার জন্য বারবার আকুতি-মিনতি করেও তার মন গলাতে পারিনি। এর ফলে আমি ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচার চাইলে তিনি আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন। গত ২৯ জুন রাত আনুমানিক ৮টার দিকে মেয়র এজেডএম মেনহাজুল হক আমাকে পৌরসভায় মাস্টাররোলে চাকরি দেয়ার কথা বলে তার বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। আমি তার কথামতো সরল বিশ্বাসে সেখানে গেলে রাত ৯টায় আমাকে পৌরসভাধীন কেয়ার অফিসসংলগ্ন স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকের পাশে পুকুরপাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব থেকে অবস্থানরত এরশাদ, রবিসহ আরও ৫ জন অজ্ঞাতনামা যুবক ওড়না দিয়ে আমার মুখ বেঁধে ফেলে। পৌর মেয়র মেনহাজুল হকসহ তারা সবাই আমাকে জোরপূর্বক উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে কোনক্রমে আমি মুখের ওড়না সরিয়ে ফেলে চিৎকার করলে পৌর মেয়র মেহনহাজুল হক অন্যান্য ধর্ষকদের হুকুম দিয়ে বলে শালীকে মেরে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দাও। বেঁচে থাকলে আমাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করবে। এ সময় বেশ কয়েকজন পথচারী আমার চিৎকারে এগিয়ে এলে মেয়র ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা পালিয়ে যায়।

এ বিষয়ে পার্বতীপুর মডেল থানার ওসি মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভিকটিমকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পার্বতীপুর পৌর মেয়র এজেডএম মেনহাজুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার ভাষ্য নেয়া সম্ভব হয়নি। পরে পৌর ভবনে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকে তিনি অফিসে আসেননি।

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০১৯ , ২০ আষাঢ় ১৪২৫, ৩০ শাওয়াল ১৪৪০

পার্বতীপুর পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে

এক নারীকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ

থানায় মামলা দায়ের

জেলা বার্তা পরিবেশক, দিনাজপুর

দিনাজপুরের পার্বতীপুর পৌর মেয়র এজেডএম মেনহাজুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ।

অভিযোগে জানা যায়, শহরের পুরাতন বাজারের এক নারীকে দীর্ঘ প্রায় তিন বছর ধরে ধর্ষণ করে আসছেন। ধর্ষিতা-নির্যাতিতা এই গৃহবধূ ঘটনার বিচার চেয়ে মুখ খোলার কারণে তাকে গণধর্ষণ ও নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতন করে হত্যচেষ্টা চালানো হয়। তার আর্তচিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে মেয়র ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ভিকটিমকে রেখে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাত ১১টায় পার্বতীপুর মডেল থানায় ধর্ষিতা গৃহবধূ (৩৫) বাদী হয়ে পৌর মেয়র এজেডএম মেনহাজুল হকসহ ৩ যুবক ও আরও অজ্ঞাতনামা ৫ যুবকের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছেন। থানায় দায়ের করা মামলা নং-২, ধারা ২০০৩ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধিত) আইনের ৯(১)/৩০সহ দন্ডবিধি ৩২৩, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৫০৬ ও ১১৪। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক শেখ মোহাম্মদ জুবায়ের। ভিকটিমকে গতকাল সকালে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এদিকে, গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় পার্বতীপুর প্রেসক্লাবে বাদিনী সশরীরে হাজির হয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি সংবাদকর্মীদের সামনে মামলার আরজি পড়ে শোনান।

মামলার বাদিনী বলেন, তিনি একজন গৃহিণী ও তিন সন্তানের জননী। তার স্বামী পেশায় মুদি দোকানদার। বাড়ি শহরের পুরাতন বাজার জাহাঙ্গীরনগর মহল্লায়।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পৌর মেয়র এজেডএম মেনহাজুল হক একজন চরিত্রহীন ও মুখোশধারী লম্পট। তিনি আমাকে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গত কয়েক বছরে অসংখ্যবার আমাকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে আসছেন। তিনি গোপনে আমার আপত্তিকর ছবি তুলে সংরক্ষণ করে রাখেন। সেসব ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেইল করে নিয়মিতভাবে ধর্ষণ করেন। আমি ভয় ও লোকলজ্জায় কাউকে কোন কথা বলতে পারিনি। ঘটনাক্রমে বিষয়টি লোকমুখে জানাজানি হলে আমার স্বামী আমার সঙ্গে মৌখিকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। আমি নিরুপায় হয়ে পৌর মেয়রের কাছে আমার অথবা আমার সাবালক ছেলের চাকরি দেয়ার জন্য বারবার আকুতি-মিনতি করেও তার মন গলাতে পারিনি। এর ফলে আমি ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচার চাইলে তিনি আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন। গত ২৯ জুন রাত আনুমানিক ৮টার দিকে মেয়র এজেডএম মেনহাজুল হক আমাকে পৌরসভায় মাস্টাররোলে চাকরি দেয়ার কথা বলে তার বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। আমি তার কথামতো সরল বিশ্বাসে সেখানে গেলে রাত ৯টায় আমাকে পৌরসভাধীন কেয়ার অফিসসংলগ্ন স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকের পাশে পুকুরপাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব থেকে অবস্থানরত এরশাদ, রবিসহ আরও ৫ জন অজ্ঞাতনামা যুবক ওড়না দিয়ে আমার মুখ বেঁধে ফেলে। পৌর মেয়র মেনহাজুল হকসহ তারা সবাই আমাকে জোরপূর্বক উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে কোনক্রমে আমি মুখের ওড়না সরিয়ে ফেলে চিৎকার করলে পৌর মেয়র মেহনহাজুল হক অন্যান্য ধর্ষকদের হুকুম দিয়ে বলে শালীকে মেরে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দাও। বেঁচে থাকলে আমাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করবে। এ সময় বেশ কয়েকজন পথচারী আমার চিৎকারে এগিয়ে এলে মেয়র ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা পালিয়ে যায়।

এ বিষয়ে পার্বতীপুর মডেল থানার ওসি মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভিকটিমকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পার্বতীপুর পৌর মেয়র এজেডএম মেনহাজুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার ভাষ্য নেয়া সম্ভব হয়নি। পরে পৌর ভবনে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকে তিনি অফিসে আসেননি।