ডিজিটাল বিপ্লবীদের দেশে

মোস্তাফা জব্বার

(পূর্ব প্রকাশের পর ২য় অংশ)

বিশ্ব মোবাইল কংগ্রেস : যে প্রতিষ্ঠানটি এ বিশ্ব সম্মেলনটির আয়োজন করে তার নাম জিএসএম অ্যাসোসিয়েসন। প্রথমে এর নাম ছিল গ্রুপ স্পেশাল মোবাইল। ১৯৯৫ সালে জিএসএম এমওইউ নামে আজকের সংগঠনটির জন্ম হয়। এটি প্রধানত ১৯৮৭ সালে মোবাইলের জিএসএম প্রযুক্তির বিকাশে ১২টি দেশের ১৩টি মোবাইল অপরেটরের একটি সমঝোতা চুক্তির ওপর ভিত্তি করে দাঁড়ানো। ১৯৯৫ সালে এর ভিত আরও মজবুত হয়। এখন বিশ্বের ৮০০ মোবাইল অপারেটর এ সংস্থার সদস্য। প্রায় ৩০০ সহযোগী সদস্যও আছে সংস্থাটি যারা মোবাইল অপারেটর নয়। জিএসএমএ পরিচালনা পরিষদে ২৫ জন পরিচালক আছেন। বর্তমান মহাপরিচালক গ্রানরিড। ভারতের ভারতী টেলিকমের সুনীল মিত্তাল ১৭ সাল থেকে ২ বছরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। মোবাইল বিশ্ব কংগ্রেস আয়োজিত হয় বার্সেলোনার ফিরা বার্সেলোনা গ্রান ভিয়া। ’৮৭ সালে এর প্রথম আসর বসে। ’১৯ সালে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার। ২০০৬ সাল অবধি এটি ফ্রান্সের কানে থ্রিজিএসএমএ নামে আয়োজিত হতো। ২০১৪ সালে মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস সাংহাই নামকরণের মধ্য দিয়ে আজকের নামটির যাত্রা শুরু হয়।

মোবাইল বিশ্ব কংগ্রেস মূলত মোবাইল অপারেটরদের বিশ্ব সংগঠন জিএসএমএ আয়োজন করে থাকে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের বিটিআরসির বড় কাজটা সেই মোবাইল অপারেটরদের নিয়ে। নিজেদের প্রতিষ্ঠান আছে টেলিটক ও বিটিসিএল। তাই এটিকে এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। বিভাগের মন্ত্রী হিসেবে এমন একটি বিশ্ব সম্মেলনে না যাওয়ার কোন যুক্তি থাকতে পারে না। তার মাঝে আমার জন্য একটি বক্তব্য রাখার সøটও রাখা হলো। কিন্তু দীর্ঘ প্লেন ভ্রমণের জন্য আমি যেতে আগ্রহী ছিলাম না। এমটবের সাবেক মহাসচিব নুরুল কবিরসহ আমার দফতরের সবাই মিলে আমাকে সম্মত করাতে পারল যে, এতে যোগ দেয়া খুবই প্রয়োজনীয়। এমনকি এটিও বলা হলো যে, আমি যদি এ বিশ্বসভায় যোগ না দেই তবে রাষ্ট্রীয় ক্ষতি হবে। বিশেষ করে আইটিইউ নামক সংস্থায় বাংলাদেশের যে বিদ্যমান ভূমিকা আছে সেটি ক্ষতির মুখে পড়বে। ভবিষ্যতে এ সংস্থায় নির্বাচন করলে এ যাত্রাটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

এখন আমি এটি বিশ্বাস করি যে, ২০১৮ সালে মোবাইল বিশ্ব কংগ্রেসে যোগ না দিলে রাষ্ট্রের ক্ষতি না হলেও আমি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হতাম। নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি যে, সেই ভ্রমণটি না করলে এখন আফসোস করতাম। অন্য অর্থে বলা যায় যে জ্ঞান নিয়ে এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি নিয়ে কথা বলি তার পরিবর্তনের একটি বিশাল অংশ ১৮ সালের বিশ্ব মোবাইল কংগ্রেসে জন্ম নিয়েছে। কার্যত যেসব বিষয় নিয়ে আজকাল কথা বলতে হয় তার নতুন মাত্রা পেয়েছিলাম ১৮ সালে বার্সেলোনায় মোবাইল বিশ্ব কংগ্রেসে যোগ দিয়ে। সেবার সুযোগ হয়েছিল বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার। ঘর ভরা বিশ্বজনদের সামনে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলে প্রশংসাও পেয়েছিলাম। সেটিও ছিল জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশ দূতাবাসের নাভিদের কথা মনে রাখার মতো ছিল। প্রতি মুহূর্তে নাভিদ আমাদের সব সহায়তা দিয়েছে। সুদূর মাদ্রিদ থেকে এসে এতটা সহায়তা করাটা ব্যতিক্রমী ছিল এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। বার্সেলোনার পুরা অভিজ্ঞতার সঙ্গেই নাভিদ যুক্ত ছিলো। বিটিআরসির তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. শাজাহান মাহমুদ, বিটিআরসির ফয়সাল এবং এমটবের তৎকালীন মহাসচিব নুরুল কবিরের কথাও মনে রাখতে হবে। অনেকগুলো সেমিনারে যোগ দেয়া ছাড়াও ডজন খানেকের বেশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেছি বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সঙ্গে। জিএসএমএ, ফেসবুক, মোবাইল অপারেটরগুলো, ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও মেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। কাকতালীয়ভাবে সেই মোবাইল কংগ্রেসটি আর দশটি মোবাইল কংগ্রেসের মতো ছিল না। বরং সেইবারই প্রথম সারা দুনিয়াকে বড় ধরনের একটি ঝাঁকুনি দিয়েছিল ৫জি মোবাইল প্রযুক্তি। ’১৮ সালে বিশ্ব মোবাইল কংগ্রেসে যারাই গিয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতাটা আমাদের চাইতে মোটেই ভিন্ন ছিল না। যে স্টলেই আমরা গিয়েছি সেখানেই দেখানো হচ্ছিল ৫জি ভিত্তিক প্রযুক্তি। চালকবিহীন গাড়ি, রোবটের উৎপাদন ব্যবস্থা, আইওটি ভিত্তিক কৃষি প্রযুক্তি, ৫জি ভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা দেখেই যাচ্ছিলাম। বিষয়টি আমাদের পুরো টিমকে এতটাই মোহিত করে যে আমরা মনে করি ৫জিতে কোনভাবেই পিছিয়ে থাকতে পারি না। দেশে ফিরে এসে তাই ২৫ জুলাই ’১৮ আমরা ৫জি সামিট করেছিলাম। তারই সূত্র ধরে এবার আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ২১-২৩ সালে ৫জি চালু করার ঘোষণা আসে।

ঢাকা থেকেই স্থির করা হয়েছিল বার্সেলোনার বিভিন্ন কর্মকা-ের বিস্তারিত কর্মসূচি। যদিও শুধু মিনিস্টারস কনফারেন্সে ১০ মিনিটের একটি কী নোট উপস্থাপনাই আমার নির্ধারিত প্রধান কাজ ছিল তথাপি সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রোগ্রামও ছিল। এসব বৈঠকের অন্যতম কারণ ছিল আমার মন্ত্রণালয় বিষয়ক বহুবিধ সমস্যার সমাধানের উপায় বের করা। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নিরাপদ করা ছাড়াও ৫জি যথাসময়ে প্রচলনের ব্যবস্থা করার বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

চমকানো মন্ত্রিত্ব : বস্তুত আমার মন্ত্রিত্বটি ছিল আমার নিজের জন্য অপ্রত্যাশিত এক চমক। প্রতি বছরের মতো ১৮ সালের পহেলা জানুয়ারি আমি আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল গৌরীপুরে ছিলাম। আমার সঙ্গী ছিল বন্ধু জালাল। সকালে শিশুদের সঙ্গে কথা বলে স্কুলের অধ্যক্ষের রুমে বসে আমি ও জালাল মধ্যাহ্ন ভোজ শেষ করছিলাম। আমার খাওয়া তখন শেষ। গৌরীপুরের দই খাওয়াটা শুধু বাকি। তখনই ফোনটা বেজে ওঠে। নাম্বারটা চেনা নয়। তবে জিপির যে সিরিজের নাম্বার সেটি একদম শুরুর দিককার। ফোন করেই তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে জানালেন যে, তার নাম শফিউল আলম কেবিনেট সচিব। সরাসরি জানালেন, ২ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে উপস্থিত থেকে আমাকে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে হবে। ফোনটা রেখেই জালালকে খবরটা দিলাম এবং জালালও চমকে উঠল। কিছুক্ষণের মাঝেই তৎকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম একান্ত সচিব সাজ্জাদ হোসেন ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত করলেন।

ভাবনারও সময় ছিল না : ২ জানুয়ারি ’১৮ মন্ত্রী হিসেবে শপথ ও ৩ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই আমার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কয়েকটি। প্রথমত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ৪জির নিলাম করা এবং দ্বিতীয়ত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ উৎক্ষেপণ করা। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার দিন থেকেই প্রতিদিন শুনে আসছিলাম যে আমাদের বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট সহসাই উৎক্ষেপণ করা হবে। অনেক চ্যালেঞ্জ আছে যার মূল্যায়ন হয়তো অনেক পরে করতে হবে। তবে এটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে টেলিকম খাতে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত সরকারি সংস্থাগুলোর সংকট মোকাবিলা করা পাহাড়সম উঁচু মনে হতে শুরু করে। বিভাগের সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি, বিটিআরসি এবং ক্যাবল শিল্প সংস্থা হয় সরকারের জন্য রাজস্ব আয় করে নয়তোবা লাভজনক প্রতিষ্ঠান। বিটিআরসি ও সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির অবস্থান এমন দৃঢ় যে তাদের রাজস্ব আদায় কোন চ্যােেলঞ্জের মুখে পড়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই বলা যায়। তবে ক্যাবল শিল্প সংস্থাকে ধন্যবাদ যে তারা নিজেরা ক্যাবল উৎপাদন করে শুধু বৈদেশিক মুদ্রাই বাঁচায় না উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে মুনাফা করে। বিটিআরসির রাজস্ব নিয়ে ভাবনা না থাকলেও মনে রাখতে হয় যে দেশের টেলিকম খাত নিয়ন্ত্রণ করে সংস্থাটি। ফলে এ প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, নীতিমালা প্রণয়নসহ বিধিবিধান স্থির করা অতি আবশ্যকীয় বিষয় হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। ডাক বিভাগের বা বিটিসিএলের দুর্বলতার পাশাপাশি টেলিটক বা টেলিফোন শিল্প সংস্থার ঘুরে দাঁড়ানো বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ। প্রযুক্তিগত কারণে ডাক বিভাগের ওঠে দাঁড়ানো একেবারে ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়। বিটিসিএল যার ওপর ব্যবসা করত সেই ফিক্সড ফোন তো জাদুঘরে বিদায় নেয়ার পথে। ফলে এদের ঘুরে দাঁড়ানো আমাদের জন্য প্রচ- চ্যালেঞ্জিং। এর বাইরে তখন আমার দায়িত্বে থাকা তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কথা এখন আলোচনায় নাইবা আনলাম।

তিন॥

স্পেনের বার্সেলোনায় : বিশ্বে কোন বিষয় বা প্রযুক্তিকে যদি সর্বোচ্চ আলোচনার বিষয় মনে করা হয় তবে সেটি ডিজিটাল সংযুক্তি ও ডিজিটাল প্রযুক্তি। টেলিকম বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে এ বিষয়ে কুয়োর ব্যাঙ হয়ে থাকার কোন উপায় ছিল না। যদিও গুগল থাকতে ইচ্ছা করলেই কুয়োতে বাস করা যায় না, তথাপি নিজের চোখে দেখার তো কোন বিকল্পই নেই। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রক্রিয়াতেই বার্সেলোনার মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে যোগদান বস্তুত আমার জন্য একটি সম্পূর্ণ নতুন অনুভূতির জন্ম দিয়েছিল। অভিজ্ঞতার ঝুড়ি এত বিশাল যে এর বাইরের চ্যালেঞ্জগুলোর আলোচনা এখানে না করাই ভালো। কিন্তু যেহেতু টেলিকম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতে হবে সেহেতু দীর্ঘ ভ্রমণের ঝুঁকি নিয়েও বার্সেলোনার ফ্লাইট স্থির করি। সব কিছুর খবরাখবর নিয়ে এমিরেটসকে আমাদের বাহক নির্ণয় করা হয়।

পেশায় এককালে ট্রাভেল এজেন্ট ছিলাম বিধায় এমিরেটস আমার অনেক চেনা নাম। এশিয়ার সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ও মধ্যপ্রাচ্যের এমিরেটস বরাবরই আকাশভ্রমণের জগতে শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে। দুটির একটি এমিরেটসে যাওয়ার ব্যবস্থা হওয়াতে খুশিই হয়েছিলাম। ছেলে জানিয়েছিল এমিরেটসের দুই টুকরো ফ্লাইটের মাঝে দুবাই বার্সেলোনা অংশটি বিশ্বের নবীনতম উড়োজাহাজ এ-৩৮০ দিয়ে হবে। বিজয়ই জানিয়েছিল যে, এমিরেটসে ওয়াইফাই আছে। ১৯ সালে টার্কিস এয়ারলাইন্সে ভ্রমণ করতে গিয়ে দেখলাম যে ওখানেও শুধু ওয়াইফাই নেই রোমিং মোবাইল কল করার সুবিধাও রয়েছে। তবে এ কথাটিও সত্য যে, আকাশপথ বা সড়কপথ কোনখানেই ইন্টারনেটের অবস্থা আমাদের পছন্দ হয়নি। শুধু যেখানে ওয়াইফাই ছিল সেখানে ইন্টারনেটের গতি ভালো ছিল। হোটেল ও প্রদর্শনী স্থল দুটিতেই যেহেতু আমাদের দিনে-রাতে সময়টা কেটেছে সেহেতু ইন্টারনেট নিয়ে তেমন কোন অসুবিধা অনুভব করিনি আমরা। তবে ইন্টারনেট ও ইউরোপে তার প্রয়োগ বিষয়ে যেসব উচ্চ ধারণা পোষণ করেছিলাম সেটা তো ভেঙেছেই, হতাশও হতে হয়েছে। আমরা এখনও মনে করি, মোবাইল বা ডাটা প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে। আহা ইউরোপের কি নেটওয়ার্ক! কি অসাধারণ তার গতি! কার্যক্ষেত্রে গিয়ে কিন্তু ভাবনার শত ভাগের এক ভাগও পাইনি। হোটেল রুমের ওয়াইফাই হোক, মেলাস্থলের ওয়াইফাই হোক বা পথচলার ইন্টারনেটের গতি হোকÑ কোনটাই প্রত্যাশা পূরণ করেনি। বরং মনে হয়েছে বাংলাদেশে আমরা ভালো থাকি। নানা অভিযোগের পরও দেশে স্থির ব্রডব্যান্ড বা মোবাইল ব্রডব্যান্ড আমার কাছে ইউরোপের চাইতে অনেক ভালো মনে হয়েছে। কার্যত এখন ইউরোপকে আমাদের মতো দেশের কাছ থেকেই শিখতে হবে। আমি প্রায়ই ফেসবুকে ভারতের মোবাইল ও ডাটা নিয়ে অকুণ্ঠ প্রশংসা শুনি। জিও মোবাইলের কম দাম শুনে ফিট হয়ে যাওয়ার মতো দশা। কিন্তু নিজে ভারত সফর করে টের পেয়েছি যত গর্জে তত বর্ষে না। আমাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক- বিশেষত গ্রামীণের খুব খারাপ। কলড্রপ নিয়মিত বিষয়। ডাটা রেটও যথেষ্ট উচ্চ, গতি কম। তারপরেও আমাদের ঘরে-অফিসে আমাদের আইএসপিরা চমৎকার ডাটা সেবা প্রদান করে। আশা করি মোবাইলসহ ডাটা ও অন্যান্য ডিজিটাল সেবায় আমরা ইউরোপকে ছাড়িয়ে যেতে পারব। গত কয়েক বছরে আমরা অবকাঠামোগত যেসব অগ্রগতি সাধন করেছি তাতে আমার প্রত্যাশা পূরণ হবে তেমনটা আশা করতেই পারি।

(বাকি অংশ আগামীকাল)

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০১৯ , ২০ আষাঢ় ১৪২৫, ৩০ শাওয়াল ১৪৪০

ডিজিটাল বিপ্লবীদের দেশে

মোস্তাফা জব্বার

(পূর্ব প্রকাশের পর ২য় অংশ)

বিশ্ব মোবাইল কংগ্রেস : যে প্রতিষ্ঠানটি এ বিশ্ব সম্মেলনটির আয়োজন করে তার নাম জিএসএম অ্যাসোসিয়েসন। প্রথমে এর নাম ছিল গ্রুপ স্পেশাল মোবাইল। ১৯৯৫ সালে জিএসএম এমওইউ নামে আজকের সংগঠনটির জন্ম হয়। এটি প্রধানত ১৯৮৭ সালে মোবাইলের জিএসএম প্রযুক্তির বিকাশে ১২টি দেশের ১৩টি মোবাইল অপরেটরের একটি সমঝোতা চুক্তির ওপর ভিত্তি করে দাঁড়ানো। ১৯৯৫ সালে এর ভিত আরও মজবুত হয়। এখন বিশ্বের ৮০০ মোবাইল অপারেটর এ সংস্থার সদস্য। প্রায় ৩০০ সহযোগী সদস্যও আছে সংস্থাটি যারা মোবাইল অপারেটর নয়। জিএসএমএ পরিচালনা পরিষদে ২৫ জন পরিচালক আছেন। বর্তমান মহাপরিচালক গ্রানরিড। ভারতের ভারতী টেলিকমের সুনীল মিত্তাল ১৭ সাল থেকে ২ বছরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। মোবাইল বিশ্ব কংগ্রেস আয়োজিত হয় বার্সেলোনার ফিরা বার্সেলোনা গ্রান ভিয়া। ’৮৭ সালে এর প্রথম আসর বসে। ’১৯ সালে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার। ২০০৬ সাল অবধি এটি ফ্রান্সের কানে থ্রিজিএসএমএ নামে আয়োজিত হতো। ২০১৪ সালে মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস সাংহাই নামকরণের মধ্য দিয়ে আজকের নামটির যাত্রা শুরু হয়।

মোবাইল বিশ্ব কংগ্রেস মূলত মোবাইল অপারেটরদের বিশ্ব সংগঠন জিএসএমএ আয়োজন করে থাকে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের বিটিআরসির বড় কাজটা সেই মোবাইল অপারেটরদের নিয়ে। নিজেদের প্রতিষ্ঠান আছে টেলিটক ও বিটিসিএল। তাই এটিকে এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। বিভাগের মন্ত্রী হিসেবে এমন একটি বিশ্ব সম্মেলনে না যাওয়ার কোন যুক্তি থাকতে পারে না। তার মাঝে আমার জন্য একটি বক্তব্য রাখার সøটও রাখা হলো। কিন্তু দীর্ঘ প্লেন ভ্রমণের জন্য আমি যেতে আগ্রহী ছিলাম না। এমটবের সাবেক মহাসচিব নুরুল কবিরসহ আমার দফতরের সবাই মিলে আমাকে সম্মত করাতে পারল যে, এতে যোগ দেয়া খুবই প্রয়োজনীয়। এমনকি এটিও বলা হলো যে, আমি যদি এ বিশ্বসভায় যোগ না দেই তবে রাষ্ট্রীয় ক্ষতি হবে। বিশেষ করে আইটিইউ নামক সংস্থায় বাংলাদেশের যে বিদ্যমান ভূমিকা আছে সেটি ক্ষতির মুখে পড়বে। ভবিষ্যতে এ সংস্থায় নির্বাচন করলে এ যাত্রাটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

এখন আমি এটি বিশ্বাস করি যে, ২০১৮ সালে মোবাইল বিশ্ব কংগ্রেসে যোগ না দিলে রাষ্ট্রের ক্ষতি না হলেও আমি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হতাম। নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি যে, সেই ভ্রমণটি না করলে এখন আফসোস করতাম। অন্য অর্থে বলা যায় যে জ্ঞান নিয়ে এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি নিয়ে কথা বলি তার পরিবর্তনের একটি বিশাল অংশ ১৮ সালের বিশ্ব মোবাইল কংগ্রেসে জন্ম নিয়েছে। কার্যত যেসব বিষয় নিয়ে আজকাল কথা বলতে হয় তার নতুন মাত্রা পেয়েছিলাম ১৮ সালে বার্সেলোনায় মোবাইল বিশ্ব কংগ্রেসে যোগ দিয়ে। সেবার সুযোগ হয়েছিল বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার। ঘর ভরা বিশ্বজনদের সামনে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলে প্রশংসাও পেয়েছিলাম। সেটিও ছিল জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশ দূতাবাসের নাভিদের কথা মনে রাখার মতো ছিল। প্রতি মুহূর্তে নাভিদ আমাদের সব সহায়তা দিয়েছে। সুদূর মাদ্রিদ থেকে এসে এতটা সহায়তা করাটা ব্যতিক্রমী ছিল এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। বার্সেলোনার পুরা অভিজ্ঞতার সঙ্গেই নাভিদ যুক্ত ছিলো। বিটিআরসির তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. শাজাহান মাহমুদ, বিটিআরসির ফয়সাল এবং এমটবের তৎকালীন মহাসচিব নুরুল কবিরের কথাও মনে রাখতে হবে। অনেকগুলো সেমিনারে যোগ দেয়া ছাড়াও ডজন খানেকের বেশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেছি বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সঙ্গে। জিএসএমএ, ফেসবুক, মোবাইল অপারেটরগুলো, ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও মেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। কাকতালীয়ভাবে সেই মোবাইল কংগ্রেসটি আর দশটি মোবাইল কংগ্রেসের মতো ছিল না। বরং সেইবারই প্রথম সারা দুনিয়াকে বড় ধরনের একটি ঝাঁকুনি দিয়েছিল ৫জি মোবাইল প্রযুক্তি। ’১৮ সালে বিশ্ব মোবাইল কংগ্রেসে যারাই গিয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতাটা আমাদের চাইতে মোটেই ভিন্ন ছিল না। যে স্টলেই আমরা গিয়েছি সেখানেই দেখানো হচ্ছিল ৫জি ভিত্তিক প্রযুক্তি। চালকবিহীন গাড়ি, রোবটের উৎপাদন ব্যবস্থা, আইওটি ভিত্তিক কৃষি প্রযুক্তি, ৫জি ভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা দেখেই যাচ্ছিলাম। বিষয়টি আমাদের পুরো টিমকে এতটাই মোহিত করে যে আমরা মনে করি ৫জিতে কোনভাবেই পিছিয়ে থাকতে পারি না। দেশে ফিরে এসে তাই ২৫ জুলাই ’১৮ আমরা ৫জি সামিট করেছিলাম। তারই সূত্র ধরে এবার আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ২১-২৩ সালে ৫জি চালু করার ঘোষণা আসে।

ঢাকা থেকেই স্থির করা হয়েছিল বার্সেলোনার বিভিন্ন কর্মকা-ের বিস্তারিত কর্মসূচি। যদিও শুধু মিনিস্টারস কনফারেন্সে ১০ মিনিটের একটি কী নোট উপস্থাপনাই আমার নির্ধারিত প্রধান কাজ ছিল তথাপি সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রোগ্রামও ছিল। এসব বৈঠকের অন্যতম কারণ ছিল আমার মন্ত্রণালয় বিষয়ক বহুবিধ সমস্যার সমাধানের উপায় বের করা। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নিরাপদ করা ছাড়াও ৫জি যথাসময়ে প্রচলনের ব্যবস্থা করার বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

চমকানো মন্ত্রিত্ব : বস্তুত আমার মন্ত্রিত্বটি ছিল আমার নিজের জন্য অপ্রত্যাশিত এক চমক। প্রতি বছরের মতো ১৮ সালের পহেলা জানুয়ারি আমি আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল গৌরীপুরে ছিলাম। আমার সঙ্গী ছিল বন্ধু জালাল। সকালে শিশুদের সঙ্গে কথা বলে স্কুলের অধ্যক্ষের রুমে বসে আমি ও জালাল মধ্যাহ্ন ভোজ শেষ করছিলাম। আমার খাওয়া তখন শেষ। গৌরীপুরের দই খাওয়াটা শুধু বাকি। তখনই ফোনটা বেজে ওঠে। নাম্বারটা চেনা নয়। তবে জিপির যে সিরিজের নাম্বার সেটি একদম শুরুর দিককার। ফোন করেই তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে জানালেন যে, তার নাম শফিউল আলম কেবিনেট সচিব। সরাসরি জানালেন, ২ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে উপস্থিত থেকে আমাকে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে হবে। ফোনটা রেখেই জালালকে খবরটা দিলাম এবং জালালও চমকে উঠল। কিছুক্ষণের মাঝেই তৎকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম একান্ত সচিব সাজ্জাদ হোসেন ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত করলেন।

ভাবনারও সময় ছিল না : ২ জানুয়ারি ’১৮ মন্ত্রী হিসেবে শপথ ও ৩ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই আমার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কয়েকটি। প্রথমত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ৪জির নিলাম করা এবং দ্বিতীয়ত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ উৎক্ষেপণ করা। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার দিন থেকেই প্রতিদিন শুনে আসছিলাম যে আমাদের বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট সহসাই উৎক্ষেপণ করা হবে। অনেক চ্যালেঞ্জ আছে যার মূল্যায়ন হয়তো অনেক পরে করতে হবে। তবে এটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে টেলিকম খাতে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত সরকারি সংস্থাগুলোর সংকট মোকাবিলা করা পাহাড়সম উঁচু মনে হতে শুরু করে। বিভাগের সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি, বিটিআরসি এবং ক্যাবল শিল্প সংস্থা হয় সরকারের জন্য রাজস্ব আয় করে নয়তোবা লাভজনক প্রতিষ্ঠান। বিটিআরসি ও সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির অবস্থান এমন দৃঢ় যে তাদের রাজস্ব আদায় কোন চ্যােেলঞ্জের মুখে পড়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই বলা যায়। তবে ক্যাবল শিল্প সংস্থাকে ধন্যবাদ যে তারা নিজেরা ক্যাবল উৎপাদন করে শুধু বৈদেশিক মুদ্রাই বাঁচায় না উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে মুনাফা করে। বিটিআরসির রাজস্ব নিয়ে ভাবনা না থাকলেও মনে রাখতে হয় যে দেশের টেলিকম খাত নিয়ন্ত্রণ করে সংস্থাটি। ফলে এ প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, নীতিমালা প্রণয়নসহ বিধিবিধান স্থির করা অতি আবশ্যকীয় বিষয় হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। ডাক বিভাগের বা বিটিসিএলের দুর্বলতার পাশাপাশি টেলিটক বা টেলিফোন শিল্প সংস্থার ঘুরে দাঁড়ানো বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ। প্রযুক্তিগত কারণে ডাক বিভাগের ওঠে দাঁড়ানো একেবারে ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়। বিটিসিএল যার ওপর ব্যবসা করত সেই ফিক্সড ফোন তো জাদুঘরে বিদায় নেয়ার পথে। ফলে এদের ঘুরে দাঁড়ানো আমাদের জন্য প্রচ- চ্যালেঞ্জিং। এর বাইরে তখন আমার দায়িত্বে থাকা তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কথা এখন আলোচনায় নাইবা আনলাম।

তিন॥

স্পেনের বার্সেলোনায় : বিশ্বে কোন বিষয় বা প্রযুক্তিকে যদি সর্বোচ্চ আলোচনার বিষয় মনে করা হয় তবে সেটি ডিজিটাল সংযুক্তি ও ডিজিটাল প্রযুক্তি। টেলিকম বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে এ বিষয়ে কুয়োর ব্যাঙ হয়ে থাকার কোন উপায় ছিল না। যদিও গুগল থাকতে ইচ্ছা করলেই কুয়োতে বাস করা যায় না, তথাপি নিজের চোখে দেখার তো কোন বিকল্পই নেই। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রক্রিয়াতেই বার্সেলোনার মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে যোগদান বস্তুত আমার জন্য একটি সম্পূর্ণ নতুন অনুভূতির জন্ম দিয়েছিল। অভিজ্ঞতার ঝুড়ি এত বিশাল যে এর বাইরের চ্যালেঞ্জগুলোর আলোচনা এখানে না করাই ভালো। কিন্তু যেহেতু টেলিকম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতে হবে সেহেতু দীর্ঘ ভ্রমণের ঝুঁকি নিয়েও বার্সেলোনার ফ্লাইট স্থির করি। সব কিছুর খবরাখবর নিয়ে এমিরেটসকে আমাদের বাহক নির্ণয় করা হয়।

পেশায় এককালে ট্রাভেল এজেন্ট ছিলাম বিধায় এমিরেটস আমার অনেক চেনা নাম। এশিয়ার সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ও মধ্যপ্রাচ্যের এমিরেটস বরাবরই আকাশভ্রমণের জগতে শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে। দুটির একটি এমিরেটসে যাওয়ার ব্যবস্থা হওয়াতে খুশিই হয়েছিলাম। ছেলে জানিয়েছিল এমিরেটসের দুই টুকরো ফ্লাইটের মাঝে দুবাই বার্সেলোনা অংশটি বিশ্বের নবীনতম উড়োজাহাজ এ-৩৮০ দিয়ে হবে। বিজয়ই জানিয়েছিল যে, এমিরেটসে ওয়াইফাই আছে। ১৯ সালে টার্কিস এয়ারলাইন্সে ভ্রমণ করতে গিয়ে দেখলাম যে ওখানেও শুধু ওয়াইফাই নেই রোমিং মোবাইল কল করার সুবিধাও রয়েছে। তবে এ কথাটিও সত্য যে, আকাশপথ বা সড়কপথ কোনখানেই ইন্টারনেটের অবস্থা আমাদের পছন্দ হয়নি। শুধু যেখানে ওয়াইফাই ছিল সেখানে ইন্টারনেটের গতি ভালো ছিল। হোটেল ও প্রদর্শনী স্থল দুটিতেই যেহেতু আমাদের দিনে-রাতে সময়টা কেটেছে সেহেতু ইন্টারনেট নিয়ে তেমন কোন অসুবিধা অনুভব করিনি আমরা। তবে ইন্টারনেট ও ইউরোপে তার প্রয়োগ বিষয়ে যেসব উচ্চ ধারণা পোষণ করেছিলাম সেটা তো ভেঙেছেই, হতাশও হতে হয়েছে। আমরা এখনও মনে করি, মোবাইল বা ডাটা প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে। আহা ইউরোপের কি নেটওয়ার্ক! কি অসাধারণ তার গতি! কার্যক্ষেত্রে গিয়ে কিন্তু ভাবনার শত ভাগের এক ভাগও পাইনি। হোটেল রুমের ওয়াইফাই হোক, মেলাস্থলের ওয়াইফাই হোক বা পথচলার ইন্টারনেটের গতি হোকÑ কোনটাই প্রত্যাশা পূরণ করেনি। বরং মনে হয়েছে বাংলাদেশে আমরা ভালো থাকি। নানা অভিযোগের পরও দেশে স্থির ব্রডব্যান্ড বা মোবাইল ব্রডব্যান্ড আমার কাছে ইউরোপের চাইতে অনেক ভালো মনে হয়েছে। কার্যত এখন ইউরোপকে আমাদের মতো দেশের কাছ থেকেই শিখতে হবে। আমি প্রায়ই ফেসবুকে ভারতের মোবাইল ও ডাটা নিয়ে অকুণ্ঠ প্রশংসা শুনি। জিও মোবাইলের কম দাম শুনে ফিট হয়ে যাওয়ার মতো দশা। কিন্তু নিজে ভারত সফর করে টের পেয়েছি যত গর্জে তত বর্ষে না। আমাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক- বিশেষত গ্রামীণের খুব খারাপ। কলড্রপ নিয়মিত বিষয়। ডাটা রেটও যথেষ্ট উচ্চ, গতি কম। তারপরেও আমাদের ঘরে-অফিসে আমাদের আইএসপিরা চমৎকার ডাটা সেবা প্রদান করে। আশা করি মোবাইলসহ ডাটা ও অন্যান্য ডিজিটাল সেবায় আমরা ইউরোপকে ছাড়িয়ে যেতে পারব। গত কয়েক বছরে আমরা অবকাঠামোগত যেসব অগ্রগতি সাধন করেছি তাতে আমার প্রত্যাশা পূরণ হবে তেমনটা আশা করতেই পারি।

(বাকি অংশ আগামীকাল)