মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় বিষমুক্ত ফল

মোহাম্মদ হাসান জাফরী

বেশি বেশি ফল খান- এটি চেম্বারের ডাক্তারের উপদেশ বাণী। ফলে প্রচুর ভিটামিন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার শরীরের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য ভিটামিন প্রয়োজন। সব ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল ফলে পাওয়া যায়। ফল সস্তায় হাতের কাছেই সর্বত্র পাওয়া যায়। এটি সবার পছন্দের একটি খাবার, ফল গাছের সৌন্দর্য বাড়ায়। তাই বাড়ির আশপাশে ফলগাছ লাগানো প্রয়োজন। অথচ সেই ফল আমরা খাদ্য তালিকায় সহজে রাখতে চাই না। প্রিয় ফল আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, আনারস, লিচু, কুল, পেয়ারা, কমলালেবু, আঙ্গুর কোনোটাই প্রাণভরে আমরা এখন আর খেতে পারি না। মনে ভীষণ ভয় কাজ করে, না জানি ফরমালিন, কার্বাইড বা অন্য কোন রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে এগুলো এখন আদৌ খাওয়ার উপযোগী আছে কি-না, উপকারের চেয়ে অপকার না হয় ইত্যাদি নানা প্রশ্নে জর্জরিত থাকে মন। গত দু’বছর এ প্রবণতা আরও অনেক বেশি ছিল।

জনগণের আস্থা ইদানীং আবার ফিরতে শুরু করেছে। প্রশাসন সজাগ থাকলেই জনগণের আস্থা আবারও ফিরবে। আমাদের প্রিয় ফল আবার আমাদের কাছে প্রিয় হয়েই থাকবে। দেশ ফল-ফলাদিতে ভরে উঠছে, ভবিষ্যতে আরও বেশি উৎপাদন হবে। ফল আমদানি না করে আমরা আগামী দিনে ফল রফতানি করতে সক্ষম হবো। যদিও বর্তমানে কিছুফল যেমন আম, আনারস, লিচু সীমিত আকারে বিদেশে রফতানি হচ্ছে। ফল রফতানির কারণে কৃষকের ঘরে আবারও আনন্দ ফিরে আসছে। ভবিষ্যতে ফল রফতানি করে আমরা আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব। এমন আশায় বুক বেঁধেছে কৃষকরা আবারও।

এই তো বছর দু’য়েক আগেও কারো বাসায় ফল নিয়ে গেলে বলতে শুনেছি তুমি আমার জন্য বিষ নিয়ে এসেছো? এখন আর কেউ ফল খেতে চায়? ঢাকা শহরের ফল মানে তো বিষে ভরা। এ যে কত বড়ো কষ্টের কথা, কত বড় দুঃখের কথা, তা বাঙালি হিসেবে ভাবতেও কষ্ট হয়। ফল যে আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই ফল নিয়ে সংকোচ আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের।

ফল আমাদের দেশে খাওয়া হয় সাধারণত অসুস্থ হলে। এ প্রবণতা পুরোপুরি সঠিক নয়। সুস্থ ও অসুস্থ, সবারই বিশেষ করে দেশি ফল খাওয়া প্রয়োজন। সুস্থ অবস্থায় নিয়মিত ফল খেলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। আবহাওয়া উপযোগী ফল উৎপন্ন হয় পৃথিবীর সব অঞ্চলেই। আবহাওয়া অনুযায়ী ফল গ্রহণও স্বাস্থ্যসম্মত। দেশি ফলের মধ্যে কলা, আনারস, বেল, তরমুজ, লটকন, বাঙ্গি, আতা, শরীফা, কুল, পেয়ারা, আমড়া, জাম্বুরা প্রভৃতি নিয়মিত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। যখন যে ঋতুতে যে ফল পাওয়া যায়, তা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

আমাদের দেশের কদবেল, লটকন এবং এরকম আরও ফলও বিদেশে রফতানি হয়। পুষ্টিগুণ ও সুস্বাদু হওয়ার কারণে এসব ফলের কদর বেশি। দেশে এখন স্ট্রবেরি চাষ হয়। এর দাম হাতের নাগালে। এটিও ফলন ঋতুতে গ্রহণ করা ভালো। সফেদা ফলের পুষ্টিগুণ শরীরের জন্য ভালো; আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, পেঁপে এ সব বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল। এ সব ফলও ফলন ঋতুতে খাওয়া পুষ্টির জন্য খুবই কার্যকরী।

সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সাফল্যকে ম্লান করে দিতে এক শ্রেণির মধ্যসত্ত্বভোগী, মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা স্বেচ্ছাচারী কু-অভ্যাসের কারণে ফলের বাজারকে কলঙ্কিত করেছিল। তারা হরহামেশা ক্যালসিয়াম কার্বাইডসহ বিভিন্ন প্রকারের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে আম, কলা, কাঁঠাল, আনারসসহ অন্যান্য আকর্ষণীয় ফল মৌসুমের আগেই অপরিপক্ব ফল পাকাতো। এসব কেমিক্যালযুক্ত ফল খেলে ক্যানসারের মতো ভয়াবহ ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, ফলে মানুষের ফল খাওয়ার আগ্রহ অনেকাংশে কমে গিয়েছিল।

মানবদেহের পুষ্টি-চাহিদা পূরণ, মেধার বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। পুষ্টিবিদদের মতে জনপ্রতি প্রতিদিন ১১৫ থেকে ১২৫ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন, কিন্তু আমরা গড়ে খেতে পারছি মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ গ্রাম। রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার এবং চাহিদার তুলনায় জোগানের স্বল্পতা এর মূল কারণ। নানাজাতের দেশীয় ফলের মধ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এর মধ্যে জলীয় অংশ, খনিজ পদার্থ, আঁশ, খাদ্যশক্তি, আমিষ, চর্বি, শর্করা, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি-১, বি-২ ও সি উল্লেখযোগ্য।

বর্তমান সরকারের সময়ে দেশে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। চালসহ অনেক কৃষি পণ্য এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। ফল চাষেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। আগামীতে বাংলাদেশের ফল বিশ্বের বাজারে স্থান করে নিতে পারবে এ কথা যেমন সত্য, তেমনি এ ফল উৎপাদনের পাশাপাশি যথাযথভাবে তা সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রফতানির বিষয়ে অনুকূল পরিবেশ যাতে বিরাজ করে সেদিকে সবার আশু দৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি।

কৃষিক্ষেত্রে যে বিপ্লব সাধিত হয়েছে- তা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে, বিদেশে প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণকে কৃষি মন্ত্রণালয় এখন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি কোন অশুভ শক্তি যেন ফলের বাজার ধ্বংস করতে না পারে, সেদিকে প্রশাসনের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। অন্যদিকে যে কৃষক তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রোদ-বৃষ্টির ধকল কাটিয়ে এ ফসল ফলান, সে যেন প্রয়োজনমতো স্বল্পমূল্যে সার, কীটনাশক, বিনা-সুদে প্রয়োজনীয় কৃষি ঋণ পাওয়ার পাশাপাশি ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত না হন, তার যাবতীয় ব্যবস্থা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

কৃষক এখন মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে পারে। সহজ শর্তে ঋণ নিতে পারে, তবে এ ঋণ হতে হবে সম্পূর্ণভাবে সুদ-মুক্ত। পরিশোধ সাপেক্ষে বারবার, প্রয়োজন মতো যতবার খুশি ততবার, এ ঋণ নেয়ার সুযোগ থাকতে হবে অতি সাধারণ নিয়মনীতির মাধ্যমে। কৃষককে তার কাজকর্ম ফেলে যেন অন্যের পেছনে দৌড়াতে না হয়। এ প্রক্রিয়া হতে হবে সহজলভ্য। সার ও কীটনাশকের সরবরাহ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ মনোযোগ নিশ্চিত করতে হবে যদিও এ বিষয়ে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা এখন বিশেষভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। ‘দিন বদলের বাংলাদেশ ফল বৃক্ষে ভরব দেশ’- এই স্লোগানে দেশ আজ মুখরিত। এ স্লোগান শুধু কথার কথা হয়েই থাকবে না, আসলেই দেশ ফলে হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ- সবার এমন প্রত্যাশা নিশ্চয়ই পূরণ হবে।

(পিআইডি-শিশু ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক যোগাযোগ কার্যক্রম নিবন্ধ)

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০১৯ , ২০ আষাঢ় ১৪২৫, ৩০ শাওয়াল ১৪৪০

মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় বিষমুক্ত ফল

মোহাম্মদ হাসান জাফরী

বেশি বেশি ফল খান- এটি চেম্বারের ডাক্তারের উপদেশ বাণী। ফলে প্রচুর ভিটামিন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার শরীরের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য ভিটামিন প্রয়োজন। সব ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল ফলে পাওয়া যায়। ফল সস্তায় হাতের কাছেই সর্বত্র পাওয়া যায়। এটি সবার পছন্দের একটি খাবার, ফল গাছের সৌন্দর্য বাড়ায়। তাই বাড়ির আশপাশে ফলগাছ লাগানো প্রয়োজন। অথচ সেই ফল আমরা খাদ্য তালিকায় সহজে রাখতে চাই না। প্রিয় ফল আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, আনারস, লিচু, কুল, পেয়ারা, কমলালেবু, আঙ্গুর কোনোটাই প্রাণভরে আমরা এখন আর খেতে পারি না। মনে ভীষণ ভয় কাজ করে, না জানি ফরমালিন, কার্বাইড বা অন্য কোন রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে এগুলো এখন আদৌ খাওয়ার উপযোগী আছে কি-না, উপকারের চেয়ে অপকার না হয় ইত্যাদি নানা প্রশ্নে জর্জরিত থাকে মন। গত দু’বছর এ প্রবণতা আরও অনেক বেশি ছিল।

জনগণের আস্থা ইদানীং আবার ফিরতে শুরু করেছে। প্রশাসন সজাগ থাকলেই জনগণের আস্থা আবারও ফিরবে। আমাদের প্রিয় ফল আবার আমাদের কাছে প্রিয় হয়েই থাকবে। দেশ ফল-ফলাদিতে ভরে উঠছে, ভবিষ্যতে আরও বেশি উৎপাদন হবে। ফল আমদানি না করে আমরা আগামী দিনে ফল রফতানি করতে সক্ষম হবো। যদিও বর্তমানে কিছুফল যেমন আম, আনারস, লিচু সীমিত আকারে বিদেশে রফতানি হচ্ছে। ফল রফতানির কারণে কৃষকের ঘরে আবারও আনন্দ ফিরে আসছে। ভবিষ্যতে ফল রফতানি করে আমরা আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব। এমন আশায় বুক বেঁধেছে কৃষকরা আবারও।

এই তো বছর দু’য়েক আগেও কারো বাসায় ফল নিয়ে গেলে বলতে শুনেছি তুমি আমার জন্য বিষ নিয়ে এসেছো? এখন আর কেউ ফল খেতে চায়? ঢাকা শহরের ফল মানে তো বিষে ভরা। এ যে কত বড়ো কষ্টের কথা, কত বড় দুঃখের কথা, তা বাঙালি হিসেবে ভাবতেও কষ্ট হয়। ফল যে আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই ফল নিয়ে সংকোচ আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের।

ফল আমাদের দেশে খাওয়া হয় সাধারণত অসুস্থ হলে। এ প্রবণতা পুরোপুরি সঠিক নয়। সুস্থ ও অসুস্থ, সবারই বিশেষ করে দেশি ফল খাওয়া প্রয়োজন। সুস্থ অবস্থায় নিয়মিত ফল খেলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। আবহাওয়া উপযোগী ফল উৎপন্ন হয় পৃথিবীর সব অঞ্চলেই। আবহাওয়া অনুযায়ী ফল গ্রহণও স্বাস্থ্যসম্মত। দেশি ফলের মধ্যে কলা, আনারস, বেল, তরমুজ, লটকন, বাঙ্গি, আতা, শরীফা, কুল, পেয়ারা, আমড়া, জাম্বুরা প্রভৃতি নিয়মিত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। যখন যে ঋতুতে যে ফল পাওয়া যায়, তা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

আমাদের দেশের কদবেল, লটকন এবং এরকম আরও ফলও বিদেশে রফতানি হয়। পুষ্টিগুণ ও সুস্বাদু হওয়ার কারণে এসব ফলের কদর বেশি। দেশে এখন স্ট্রবেরি চাষ হয়। এর দাম হাতের নাগালে। এটিও ফলন ঋতুতে গ্রহণ করা ভালো। সফেদা ফলের পুষ্টিগুণ শরীরের জন্য ভালো; আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, পেঁপে এ সব বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল। এ সব ফলও ফলন ঋতুতে খাওয়া পুষ্টির জন্য খুবই কার্যকরী।

সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সাফল্যকে ম্লান করে দিতে এক শ্রেণির মধ্যসত্ত্বভোগী, মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা স্বেচ্ছাচারী কু-অভ্যাসের কারণে ফলের বাজারকে কলঙ্কিত করেছিল। তারা হরহামেশা ক্যালসিয়াম কার্বাইডসহ বিভিন্ন প্রকারের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে আম, কলা, কাঁঠাল, আনারসসহ অন্যান্য আকর্ষণীয় ফল মৌসুমের আগেই অপরিপক্ব ফল পাকাতো। এসব কেমিক্যালযুক্ত ফল খেলে ক্যানসারের মতো ভয়াবহ ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, ফলে মানুষের ফল খাওয়ার আগ্রহ অনেকাংশে কমে গিয়েছিল।

মানবদেহের পুষ্টি-চাহিদা পূরণ, মেধার বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। পুষ্টিবিদদের মতে জনপ্রতি প্রতিদিন ১১৫ থেকে ১২৫ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন, কিন্তু আমরা গড়ে খেতে পারছি মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ গ্রাম। রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার এবং চাহিদার তুলনায় জোগানের স্বল্পতা এর মূল কারণ। নানাজাতের দেশীয় ফলের মধ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এর মধ্যে জলীয় অংশ, খনিজ পদার্থ, আঁশ, খাদ্যশক্তি, আমিষ, চর্বি, শর্করা, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি-১, বি-২ ও সি উল্লেখযোগ্য।

বর্তমান সরকারের সময়ে দেশে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। চালসহ অনেক কৃষি পণ্য এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। ফল চাষেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। আগামীতে বাংলাদেশের ফল বিশ্বের বাজারে স্থান করে নিতে পারবে এ কথা যেমন সত্য, তেমনি এ ফল উৎপাদনের পাশাপাশি যথাযথভাবে তা সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রফতানির বিষয়ে অনুকূল পরিবেশ যাতে বিরাজ করে সেদিকে সবার আশু দৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি।

কৃষিক্ষেত্রে যে বিপ্লব সাধিত হয়েছে- তা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে, বিদেশে প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণকে কৃষি মন্ত্রণালয় এখন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি কোন অশুভ শক্তি যেন ফলের বাজার ধ্বংস করতে না পারে, সেদিকে প্রশাসনের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। অন্যদিকে যে কৃষক তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রোদ-বৃষ্টির ধকল কাটিয়ে এ ফসল ফলান, সে যেন প্রয়োজনমতো স্বল্পমূল্যে সার, কীটনাশক, বিনা-সুদে প্রয়োজনীয় কৃষি ঋণ পাওয়ার পাশাপাশি ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত না হন, তার যাবতীয় ব্যবস্থা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

কৃষক এখন মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে পারে। সহজ শর্তে ঋণ নিতে পারে, তবে এ ঋণ হতে হবে সম্পূর্ণভাবে সুদ-মুক্ত। পরিশোধ সাপেক্ষে বারবার, প্রয়োজন মতো যতবার খুশি ততবার, এ ঋণ নেয়ার সুযোগ থাকতে হবে অতি সাধারণ নিয়মনীতির মাধ্যমে। কৃষককে তার কাজকর্ম ফেলে যেন অন্যের পেছনে দৌড়াতে না হয়। এ প্রক্রিয়া হতে হবে সহজলভ্য। সার ও কীটনাশকের সরবরাহ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ মনোযোগ নিশ্চিত করতে হবে যদিও এ বিষয়ে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা এখন বিশেষভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। ‘দিন বদলের বাংলাদেশ ফল বৃক্ষে ভরব দেশ’- এই স্লোগানে দেশ আজ মুখরিত। এ স্লোগান শুধু কথার কথা হয়েই থাকবে না, আসলেই দেশ ফলে হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ- সবার এমন প্রত্যাশা নিশ্চয়ই পূরণ হবে।

(পিআইডি-শিশু ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক যোগাযোগ কার্যক্রম নিবন্ধ)