রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সু চির সঙ্গে কথা বলবে সিপিসি

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাও নিশ্চিত করেছেন, তার দল কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না (সিপিসি) সমঝোতার ভিত্তিতে দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি ও অন্যান্য নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। বাসস।

সং তাও বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আমরা অং সান সুচিসহ মায়ানমারের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করব। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বেইজিং দিয়াওউনতাই রাষ্ট্রীয় গ্রেস্ট হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ আশ্বাস দেন।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভায় যোগদান ও চীনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ৫ দিনের সরকারি সফরে এখন চীন।

সিপিসি নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য লেখক মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফং করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে সং তাও আশ্বস্ত করেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চীনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, দু’দেশের মধ্যে বর্তমানে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে এবং বাংলাদেশে উন্নয়ন অভিযাত্রায় আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখব। বাংলাদেশের অত্যন্ত বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের উল্লেখ করে এটিকে ‘বিশ্বে দুর্লভ’ বলে বর্ণনা করেন তিনি। এর জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিগত অর্থবছরে ৮ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অপরদিকে চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

সিপিসি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মধ্যকার সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে সং তাও আশা প্রকাশ করেন। কেবল উচ্চ পর্যায়ে নয়, বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল চীন সফর করবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই সফরের মাধ্যমে দুটি দলের মধ্যকার বন্ধন আরও দৃঢ় হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শীঘ্রই একটি সিপিসি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে। বৈঠকের শুরুতেই সিপিসি নেতা চীন সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

চীনকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সিপিসির মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। তিনি ১৯৯৩ সালে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে চীনে তার প্রথম সফর স্মরণ করে বলেন, সফরের পর থেকেই উভয়পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত হয়। আমরা সব সময় চেষ্টা করবÑ যাতে আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক বজায় থাকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও চীন উভয়ের লক্ষ্য এক- দারিদ্র্য বিমোচন ও জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। তিনি বলেন, আমাদের সরকার লক্ষ্য অর্জনে আশাতীত করে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের কথা স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তার ভ্রমণের কথায় ভবিষ্যতে একটি ‘নতুন চীন’ তৈরি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। এখন আমি সেটিই দেখছি, বঙ্গবন্ধু ভ্রমণের পর যে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা জানান, তিনি এখন বঙ্গবন্ধুর ডায়েরি থেকে ‘নিউ চীন’ নামে একটি বই সম্পাদনা করছেন। তিনি বলেন, চীন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভবিষ্যদ্বাণী সংবলিত বইটি শীঘ্ররই প্রকাশ করা হবে।

সিপিপি নেতা ওই বইটি চীনা ভাষায় অনুবাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করে জানান, তারা প্রকাশ করার পর চীনা জনগণের মধ্যে বইটি বিতরণ করবেন।

প্রধানমন্ত্রী চীনের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চীনের জনগণ ও কমিউনিস্ট পার্টিকে তার আন্তরিক অভিনন্দন জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক ও চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল করিম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০১৯ , ২২ আষাঢ় ১৪২৫, ২ জ্বিলকদ ১৪৪০

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সু চির সঙ্গে কথা বলবে সিপিসি

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাও নিশ্চিত করেছেন, তার দল কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না (সিপিসি) সমঝোতার ভিত্তিতে দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি ও অন্যান্য নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। বাসস।

সং তাও বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আমরা অং সান সুচিসহ মায়ানমারের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করব। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বেইজিং দিয়াওউনতাই রাষ্ট্রীয় গ্রেস্ট হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ আশ্বাস দেন।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভায় যোগদান ও চীনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ৫ দিনের সরকারি সফরে এখন চীন।

সিপিসি নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য লেখক মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফং করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে সং তাও আশ্বস্ত করেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চীনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, দু’দেশের মধ্যে বর্তমানে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে এবং বাংলাদেশে উন্নয়ন অভিযাত্রায় আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখব। বাংলাদেশের অত্যন্ত বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের উল্লেখ করে এটিকে ‘বিশ্বে দুর্লভ’ বলে বর্ণনা করেন তিনি। এর জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিগত অর্থবছরে ৮ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অপরদিকে চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

সিপিসি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মধ্যকার সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে সং তাও আশা প্রকাশ করেন। কেবল উচ্চ পর্যায়ে নয়, বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল চীন সফর করবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই সফরের মাধ্যমে দুটি দলের মধ্যকার বন্ধন আরও দৃঢ় হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শীঘ্রই একটি সিপিসি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে। বৈঠকের শুরুতেই সিপিসি নেতা চীন সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

চীনকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সিপিসির মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। তিনি ১৯৯৩ সালে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে চীনে তার প্রথম সফর স্মরণ করে বলেন, সফরের পর থেকেই উভয়পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত হয়। আমরা সব সময় চেষ্টা করবÑ যাতে আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক বজায় থাকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও চীন উভয়ের লক্ষ্য এক- দারিদ্র্য বিমোচন ও জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। তিনি বলেন, আমাদের সরকার লক্ষ্য অর্জনে আশাতীত করে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের কথা স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তার ভ্রমণের কথায় ভবিষ্যতে একটি ‘নতুন চীন’ তৈরি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। এখন আমি সেটিই দেখছি, বঙ্গবন্ধু ভ্রমণের পর যে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা জানান, তিনি এখন বঙ্গবন্ধুর ডায়েরি থেকে ‘নিউ চীন’ নামে একটি বই সম্পাদনা করছেন। তিনি বলেন, চীন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভবিষ্যদ্বাণী সংবলিত বইটি শীঘ্ররই প্রকাশ করা হবে।

সিপিপি নেতা ওই বইটি চীনা ভাষায় অনুবাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করে জানান, তারা প্রকাশ করার পর চীনা জনগণের মধ্যে বইটি বিতরণ করবেন।

প্রধানমন্ত্রী চীনের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চীনের জনগণ ও কমিউনিস্ট পার্টিকে তার আন্তরিক অভিনন্দন জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক ও চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল করিম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।