ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯

মোস্তাফিজের কৃতিত্বের পরও পাকিস্তানের ৩১৫ রান

পাকিস্তানের ৩১৫ রানের জবাবে বাংলাদেশ ভালোই ব্যাটিং করছিল। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩০ ওভারে ১৪৪ রান করেছে ৪ উইকেট হারিয়ে।

সেমিফাইনালে ওঠার জন্য বিশাল ব্যবধানে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় প্রয়োজন ছিল পাকিস্তান ক্রিকেট দলের। টস জিতে বাংলাদেশ দল আগে ব্যাটিংয়ে নামলেই শেষ হয়ে যেত পাকিস্তানের সেমির স্বপ্ন। টস জিতে সরফরাজ আহমেদ ব্যাটিং নিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পর পাকিস্তানের বিপক্ষেও শিকার করলেন পাঁচ উইকেট। টাইগার বোলার হিসেবে দ্রুত শততম উইকেটশিকারি হিসেবে নিজের নাম লেখালেন। মোস্তাফিজের বোলিং নৈপুণ্যে মাশরাফি মর্তুজার শেষ বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে পাকিস্তান নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে তুলল ৩১৫ রান। আর বাংলাদেশ পেল ৩১৬ রানের জয়ের টার্গেট। পড়তি ফর্মের কারণে বিগত কিছুদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একদল ব্যক্তির ট্রলের শিকার হচ্ছেন অধিনায়ক মাশরাফি। যে মানুষটার হাত ধরে টাইগাররা পেয়েছে অনেক সাফল্য সেই মানুষটার বিদায়বেলাটা অতিষ্ট হয়ে উঠছিল কিছু মানুষের জন্য। ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে তিনি টস করতে নামবেন কি না, তা নিয়েই ছিলেন দ্বিধায়। শেষ পর্যন্ত সবার অনুরোধে বিশ্বকাপে এবং লর্ডসে নিজের শেষ ম্যাচে টস করতে নামেন মাশরাফি। ভাগ্যদেবী তার প্রতি প্রসন্ন না হওয়াতে আমন্ত্রণ পান ফিল্ডিংয়ের।

পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত ৩১৫ রান করতে পারত কি না, তা নিয়ে সংশয় কিন্তু থাকছেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বেশ কয়েকবার সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন, উইকেটের পেছনে মুশফিক এবং পয়েন্টে সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেছেন মোসাদ্দেক, ফিল্ডারদের বাউন্ডারি আটকানোতেও কেমন যেন গাছাড়া ভাব ছিল। ফিল্ডারদের অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে তিন উইকেটেই ২৪৬ রান তুলে ফেলে পাকিস্তান। অথচ বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরু থেকে বেশ অস্বস্তিতেই ছিল তারা। স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজকে দিয়ে বোলিং উদ্বোধন করান টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি। প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান দেন মিরাজ। সাত ওভারে আসে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল কেবল ২৩ রান। ইনিংসের অষ্টম ওভারে নিজের চতুর্থ ওভার করতে এসে দ্বিতীয় বলেই পাকিস্তানের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ফখর জামানকে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন সাইফউদ্দীন।

দ্বিতীয় উইকেটে ইমাম উল হক আর বাবর আজম জমা দেন ১৫৭ রান। এই জুটিটাও ভাঙেন সাইফউদ্দীনই। সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া বাবর আজমকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন টাইগার পেসার। ৯৮ বলে ১১ বাউন্ডারিতে বাবর তখন ৯৬ রানে।

তবে ১৮০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর আরও একটা বড় পার্টনারশিপ পায় পাকিস্তান। তৃতীয় উইকেটে ইমাম আর মোহাম্মদ হাফিজ তুলেন ৬৬ রান। ইমাম উল হক কাঁটায় কাঁটায় একশ’ বলে একশ’ রান পূর্ণ করার পরই মোস্তাফিজের বলে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে হিট উইকেট হন পাকিস্তানি ওপেনার।

পাকিস্তানের ইনিংসে তখনো আট ওভার বাকি। এই জুটি ভাঙার পরই পাকিস্তানিরা দ্রুত উইকেট হারায়, যদিও তাদের রান তোলার গতি সেভাবে কমানো যায়নি।

শেষ ১০ ওভারে পাকিস্তান তুলতে পেরেছে ৮৫ রান। তবে উইকেট হারিয়েছে ৭টি। এর মধ্যে ৫টিই নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

ইমাম আউট হওয়ার পরের ওভারে মেহেদী মিরাজ তুলে নেন আরেক সেট ব্যাটসম্যান হাফিজকে (২৭)। সুইপ করতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে সাকিবের সহজ ক্যাচ হন তিনি।

আগের ওভারে ইমামকে শিকারের পরের ওভারে হারিস সোহেলকে (৬) সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানিয়ে শততম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন মোস্তাফিজ। ৫৪তম ম্যাচে এমন কৃতিত্ব গড়লেন তিনি। তার আগে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে কম ম্যাচে একশ’ উইকেট শিকারের কৃতিত্বটা ছিল স্পিনার রাজ্জাকের (৬৯ ম্যাচ)।

সাইফউদ্দীনের ইয়র্কারে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন পাকিস্তানি অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ (২)। ওয়াহাব রিয়াজকেও (২) এই পেসারের দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড হন।

পাকিস্তানের ইনিংসের ৪৮তম ওভারের প্রথম বলেই শাদাব খানকে ফিরতি ক্যাচে ফেরান মোস্তাফিজ।

তবে ইমাদ ওয়াসিম একটা প্রান্ত ধরে দ্রুতগতিতে ব্যাট চালাচ্ছিলেন। ২৬ বলে ৬ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৪৩ রানের এক ঝড় তুলে ইনিংসের শেষ ওভারে মোস্তাফিজের শিকার হন তিনি।

এর মধ্য দিয়ে মোস্তাফিজ টানা দ্বিতীয় ম্যাচে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩১৫/৯ (ফখর ১৩, ইমাম ১০০, বাবর ৯৬, হাফিজ ২৭, হারিস ৬, ইমাদ ৪৩, সরফরাজ ৩*, ওয়াহাব ২, শাদাব ১, আমির ৮, শাহিন ০*, মিরাজ ১০-০-৩০-১, সাইফ ৯-০-৭৭-৩, মোস্তাফিজ ১০-০-৭৫-৫, মাশরাফি ৭-০-৪৬-০, সাকিব ১০-০-৫৭-০, মোসাদ্দেক ৪-০-২৭-০)।

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০১৯ , ২২ আষাঢ় ১৪২৫, ২ জ্বিলকদ ১৪৪০

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯

মোস্তাফিজের কৃতিত্বের পরও পাকিস্তানের ৩১৫ রান

বিশেষ প্রতিনিধি

image

এবারের আসরে নিজেদের শেষ ম্যাচে উজাড় করে দিয়ে মোস্তাফিজ ৫ উইকেট নেন

পাকিস্তানের ৩১৫ রানের জবাবে বাংলাদেশ ভালোই ব্যাটিং করছিল। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩০ ওভারে ১৪৪ রান করেছে ৪ উইকেট হারিয়ে।

সেমিফাইনালে ওঠার জন্য বিশাল ব্যবধানে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় প্রয়োজন ছিল পাকিস্তান ক্রিকেট দলের। টস জিতে বাংলাদেশ দল আগে ব্যাটিংয়ে নামলেই শেষ হয়ে যেত পাকিস্তানের সেমির স্বপ্ন। টস জিতে সরফরাজ আহমেদ ব্যাটিং নিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পর পাকিস্তানের বিপক্ষেও শিকার করলেন পাঁচ উইকেট। টাইগার বোলার হিসেবে দ্রুত শততম উইকেটশিকারি হিসেবে নিজের নাম লেখালেন। মোস্তাফিজের বোলিং নৈপুণ্যে মাশরাফি মর্তুজার শেষ বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে পাকিস্তান নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে তুলল ৩১৫ রান। আর বাংলাদেশ পেল ৩১৬ রানের জয়ের টার্গেট। পড়তি ফর্মের কারণে বিগত কিছুদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একদল ব্যক্তির ট্রলের শিকার হচ্ছেন অধিনায়ক মাশরাফি। যে মানুষটার হাত ধরে টাইগাররা পেয়েছে অনেক সাফল্য সেই মানুষটার বিদায়বেলাটা অতিষ্ট হয়ে উঠছিল কিছু মানুষের জন্য। ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে তিনি টস করতে নামবেন কি না, তা নিয়েই ছিলেন দ্বিধায়। শেষ পর্যন্ত সবার অনুরোধে বিশ্বকাপে এবং লর্ডসে নিজের শেষ ম্যাচে টস করতে নামেন মাশরাফি। ভাগ্যদেবী তার প্রতি প্রসন্ন না হওয়াতে আমন্ত্রণ পান ফিল্ডিংয়ের।

পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত ৩১৫ রান করতে পারত কি না, তা নিয়ে সংশয় কিন্তু থাকছেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বেশ কয়েকবার সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন, উইকেটের পেছনে মুশফিক এবং পয়েন্টে সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেছেন মোসাদ্দেক, ফিল্ডারদের বাউন্ডারি আটকানোতেও কেমন যেন গাছাড়া ভাব ছিল। ফিল্ডারদের অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে তিন উইকেটেই ২৪৬ রান তুলে ফেলে পাকিস্তান। অথচ বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরু থেকে বেশ অস্বস্তিতেই ছিল তারা। স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজকে দিয়ে বোলিং উদ্বোধন করান টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি। প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান দেন মিরাজ। সাত ওভারে আসে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল কেবল ২৩ রান। ইনিংসের অষ্টম ওভারে নিজের চতুর্থ ওভার করতে এসে দ্বিতীয় বলেই পাকিস্তানের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ফখর জামানকে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন সাইফউদ্দীন।

দ্বিতীয় উইকেটে ইমাম উল হক আর বাবর আজম জমা দেন ১৫৭ রান। এই জুটিটাও ভাঙেন সাইফউদ্দীনই। সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া বাবর আজমকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন টাইগার পেসার। ৯৮ বলে ১১ বাউন্ডারিতে বাবর তখন ৯৬ রানে।

তবে ১৮০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর আরও একটা বড় পার্টনারশিপ পায় পাকিস্তান। তৃতীয় উইকেটে ইমাম আর মোহাম্মদ হাফিজ তুলেন ৬৬ রান। ইমাম উল হক কাঁটায় কাঁটায় একশ’ বলে একশ’ রান পূর্ণ করার পরই মোস্তাফিজের বলে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে হিট উইকেট হন পাকিস্তানি ওপেনার।

পাকিস্তানের ইনিংসে তখনো আট ওভার বাকি। এই জুটি ভাঙার পরই পাকিস্তানিরা দ্রুত উইকেট হারায়, যদিও তাদের রান তোলার গতি সেভাবে কমানো যায়নি।

শেষ ১০ ওভারে পাকিস্তান তুলতে পেরেছে ৮৫ রান। তবে উইকেট হারিয়েছে ৭টি। এর মধ্যে ৫টিই নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

ইমাম আউট হওয়ার পরের ওভারে মেহেদী মিরাজ তুলে নেন আরেক সেট ব্যাটসম্যান হাফিজকে (২৭)। সুইপ করতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে সাকিবের সহজ ক্যাচ হন তিনি।

আগের ওভারে ইমামকে শিকারের পরের ওভারে হারিস সোহেলকে (৬) সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানিয়ে শততম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন মোস্তাফিজ। ৫৪তম ম্যাচে এমন কৃতিত্ব গড়লেন তিনি। তার আগে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে কম ম্যাচে একশ’ উইকেট শিকারের কৃতিত্বটা ছিল স্পিনার রাজ্জাকের (৬৯ ম্যাচ)।

সাইফউদ্দীনের ইয়র্কারে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন পাকিস্তানি অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ (২)। ওয়াহাব রিয়াজকেও (২) এই পেসারের দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড হন।

পাকিস্তানের ইনিংসের ৪৮তম ওভারের প্রথম বলেই শাদাব খানকে ফিরতি ক্যাচে ফেরান মোস্তাফিজ।

তবে ইমাদ ওয়াসিম একটা প্রান্ত ধরে দ্রুতগতিতে ব্যাট চালাচ্ছিলেন। ২৬ বলে ৬ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৪৩ রানের এক ঝড় তুলে ইনিংসের শেষ ওভারে মোস্তাফিজের শিকার হন তিনি।

এর মধ্য দিয়ে মোস্তাফিজ টানা দ্বিতীয় ম্যাচে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩১৫/৯ (ফখর ১৩, ইমাম ১০০, বাবর ৯৬, হাফিজ ২৭, হারিস ৬, ইমাদ ৪৩, সরফরাজ ৩*, ওয়াহাব ২, শাদাব ১, আমির ৮, শাহিন ০*, মিরাজ ১০-০-৩০-১, সাইফ ৯-০-৭৭-৩, মোস্তাফিজ ১০-০-৭৫-৫, মাশরাফি ৭-০-৪৬-০, সাকিব ১০-০-৫৭-০, মোসাদ্দেক ৪-০-২৭-০)।