একাদশ নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল প্রমাণ করে কতটা প্রহসন ছিল

ফখরুল

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে প্রতীকী অনশন পালন করেছে বিএনপি। গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা প্রতীকী অনশন পালন করে। সেখানে বক্তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দলীয় নেতারা রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন।

পরবর্তীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনশনকারীদের অনশন ভঙ্গ করান। কর্মসূচিতে আরও অংশ নেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শওকত মাহমুদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম, ড্যাবের সভাপতি মো. হারুনুর রশিদ প্রমুখ।

অনশন কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মানুষ অগণতান্ত্রিক পরিবেশ থেকে মুক্তি চায়। আর এই মুক্তির আর খালেদা জিয়ার মুক্তি একাকার। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য শুধু আইনি লড়াইয়ে নির্ভর না করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার সব রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। এই ক্ষমতা চিরস্থায়ী হবে না। এ ছাড়া সরকার বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। দুর্নীতির জন্য গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের লাভের জন্য এবং জনগণের কাছ থেকে দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি আদায় করা করা হচ্ছে।

বাজেটের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের ওপর করের বোঝা চাপানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী ও সুবিধাভোগকারী ব্যক্তি যারা আছেন, তাদের পকেট ভারী করার জন্য এই বাজেট তৈরি করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিএনপি বলেছে, দলের কেউ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হলে তাদের কোন আপত্তি থাকবে না। তবে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে কাউকে ধানের শীষ বরাদ্দ দেবে না বিএনপি।

গতকাল বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন যে হচ্ছে, ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচন হচ্ছে। এখনও পুরো ইউপি নির্বাচনে শিডিউল আসেনি। এর মধ্যে আমাদের কাছে বিভিন্নভাবে আমাদের নেতাকর্মীরা জানতে চাইছেন যে, এখানে আমাদের অবস্থান কী হবে? আপনারা জানেন যে, ইতিপূর্বে যখন প্রতীক দিয়ে, পার্টির প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করার প্রশ্ন এসেছিল তখনই আমরা এর বিরোধিতা করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম যে, পার্টির মার্কা দিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করাটা বাংলাদেশের জন্য উপযোগী হবে না এবং এটা বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করবে রাজনীতির ক্ষেত্রে। আমরা এখনও মনে করি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে মার্কা ব্যবস্থা তুলে নেয়া উচিত। প্রকৃতপক্ষে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয়দের মার্কা ছাড়াই নির্বাচনের সুযোগ দেয়া উচিত। সেক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, বিএনপির যেসব নেতাকর্মী বা যারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন তারা যদি কেউ অংশ নিতে চান, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু মার্কা সেক্ষেত্রে আমরা বরাদ্দ করব না। গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ওই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া শতাধিক নেতাকে বহিষ্কারও করে দলটি।

নয়ন বন্ডের ‘ক্রসফায়ার’ নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন

বরগুনায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফ নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের ক্রসফায়ারে মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রিফাত হত্যার পর যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা বাংলাদেশের আইন-আদালত ও রাষ্ট্রের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রকাশ করা হয়েছে। দেখুন যে, নয়ন বন্ড প্রধান আসামিকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। ‘আমরা মনে করি, নয়ন বন্ডকে হত্যা করা এটার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- আসল মদদদাতা যারা তাদের আড়াল করা। তারা যেন আপনার আলোচনায় না আসতে পারে সে জন্য এটা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, আইনের শাসনের জন্য মারাত্মক হুমকি। এটা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।’

বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি প্রতিবেদনে এসেছে গত ৬ মাসে ৪৩৮ জনকে ক্রসফায়ার ও এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হতে হয়েছে। গতকাল সম্ভবত আদালতে একটা আদেশ এসেছে সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে যে, এ বিষয়ে তাদেরকে জানানো। এর আগে হাইকোর্টের একটা আদেশ ছিল, কোনমতে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা যাবে না। এটা সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থী, আইনের শাসন পরিপন্থী, সংবিধান পরিপন্থী। অর্থাৎ এটা প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে, এই দেশে এখন আইনের শাসন বলতে কিছু নেই। জনগণের বেঁচে থাকার যে অধিকারটুকু সেটাও এখন নেই। কারণ তারা এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে যেকোন সময়ে যেকোন ব্যক্তিকে হত্যা করার অধিকার তারা নিয়ে নিয়েছে। যেটা আমরা মনে করি একটা স্বাধীন দেশের জন্য, আইনের শাসনের জন্য পরিপন্থী।’ অবিলম্বে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ করার দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

একাদশ নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল প্রসঙ্গে

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদের যে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল প্রকাশ করেছে- তার মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণ হয়েছে এই নির্বাচন ‘কতটা প্রহসন’ ছিল। আপনারা দেখেছেন, প্রায় ২১৩ কেন্দ্রে শতকরা ১০০ ভাগ ভোট পড়েছে, ১৫০০-এর ওপরে ভোটকেন্দ্রে শতকরা ৯৫-৯৯ ভাগ ভোট পড়েছে। যেটা অসম্ভব ব্যাপার, যেটা বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সেটা কখনোই সম্ভব নয়। ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে, এই নির্বাচন কমিশন সরকার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং এই নির্বাচনটাকে প্রহসনে পরিণত করেছে। আমরা এ বিষয়ে তথ্য আরও ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। অল্প দিনের মধ্যে আমরা আপনাদের সামনে আসব।

পাবনায় শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলিবর্ষণের মামলার রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২৪ বছর পরে নিম্ন আদালত থেকে যে রায় দেয়া হয়েছে, এতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ও বিক্ষুব্ধ হয়েছে। সভা মনে করে, শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং পুরোপুরি প্রতিহিংসামূলক রায় হয়েছে এটা। যে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল সেই ঘটনাতে গুলির আওয়াজ শোনা গিয়েছিল কিন্তু কেউ হতাহত হয়নি। সেই গুলির আওয়াজ সম্পর্কেও একজন খুব পরিচিত ব্যক্তি ছিলেন যিনি এর আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করেছিলেন রেন্টু তার ‘আমরা ফাঁসি চাই’ বইতে বলেছিলেন, এটা একটা সাজানো ব্যাপার ছিল, তৎকালীন আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা ছিল। এই ধরনের রায় নজিরবিহীন। আমরা মনে করি, এই ধরনের রায় শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়, প্রতিহিংসাপরায়ণ। এতটুকু ন্যায়বিচার যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল তারা পায়নি। যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা সবাই বিএনপির স্থানীয় বা অঙ্গসংগঠনের লোকজন। আমরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছি।

গত বুধবার পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে শেখ হাসিনার ট্রেনে হামলা মামলায় ৯ জনের ফাঁসি, ২৫ জনের যাবজ্জীবন ও ১৩ জনের ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন।

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০১৯ , ২২ আষাঢ় ১৪২৫, ২ জ্বিলকদ ১৪৪০

খালেদার মুক্তির দাবিতে বিএনপির প্রতীকী অনশন

একাদশ নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল প্রমাণ করে কতটা প্রহসন ছিল

ফখরুল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে প্রতীকী অনশন পালন করেছে বিএনপি। গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা প্রতীকী অনশন পালন করে। সেখানে বক্তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দলীয় নেতারা রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন।

পরবর্তীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনশনকারীদের অনশন ভঙ্গ করান। কর্মসূচিতে আরও অংশ নেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শওকত মাহমুদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম, ড্যাবের সভাপতি মো. হারুনুর রশিদ প্রমুখ।

অনশন কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মানুষ অগণতান্ত্রিক পরিবেশ থেকে মুক্তি চায়। আর এই মুক্তির আর খালেদা জিয়ার মুক্তি একাকার। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য শুধু আইনি লড়াইয়ে নির্ভর না করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার সব রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। এই ক্ষমতা চিরস্থায়ী হবে না। এ ছাড়া সরকার বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। দুর্নীতির জন্য গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের লাভের জন্য এবং জনগণের কাছ থেকে দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি আদায় করা করা হচ্ছে।

বাজেটের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের ওপর করের বোঝা চাপানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী ও সুবিধাভোগকারী ব্যক্তি যারা আছেন, তাদের পকেট ভারী করার জন্য এই বাজেট তৈরি করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিএনপি বলেছে, দলের কেউ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হলে তাদের কোন আপত্তি থাকবে না। তবে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে কাউকে ধানের শীষ বরাদ্দ দেবে না বিএনপি।

গতকাল বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন যে হচ্ছে, ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচন হচ্ছে। এখনও পুরো ইউপি নির্বাচনে শিডিউল আসেনি। এর মধ্যে আমাদের কাছে বিভিন্নভাবে আমাদের নেতাকর্মীরা জানতে চাইছেন যে, এখানে আমাদের অবস্থান কী হবে? আপনারা জানেন যে, ইতিপূর্বে যখন প্রতীক দিয়ে, পার্টির প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করার প্রশ্ন এসেছিল তখনই আমরা এর বিরোধিতা করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম যে, পার্টির মার্কা দিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করাটা বাংলাদেশের জন্য উপযোগী হবে না এবং এটা বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করবে রাজনীতির ক্ষেত্রে। আমরা এখনও মনে করি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে মার্কা ব্যবস্থা তুলে নেয়া উচিত। প্রকৃতপক্ষে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয়দের মার্কা ছাড়াই নির্বাচনের সুযোগ দেয়া উচিত। সেক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, বিএনপির যেসব নেতাকর্মী বা যারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন তারা যদি কেউ অংশ নিতে চান, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু মার্কা সেক্ষেত্রে আমরা বরাদ্দ করব না। গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ওই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া শতাধিক নেতাকে বহিষ্কারও করে দলটি।

নয়ন বন্ডের ‘ক্রসফায়ার’ নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন

বরগুনায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফ নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের ক্রসফায়ারে মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রিফাত হত্যার পর যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা বাংলাদেশের আইন-আদালত ও রাষ্ট্রের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রকাশ করা হয়েছে। দেখুন যে, নয়ন বন্ড প্রধান আসামিকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। ‘আমরা মনে করি, নয়ন বন্ডকে হত্যা করা এটার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- আসল মদদদাতা যারা তাদের আড়াল করা। তারা যেন আপনার আলোচনায় না আসতে পারে সে জন্য এটা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, আইনের শাসনের জন্য মারাত্মক হুমকি। এটা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।’

বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি প্রতিবেদনে এসেছে গত ৬ মাসে ৪৩৮ জনকে ক্রসফায়ার ও এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হতে হয়েছে। গতকাল সম্ভবত আদালতে একটা আদেশ এসেছে সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে যে, এ বিষয়ে তাদেরকে জানানো। এর আগে হাইকোর্টের একটা আদেশ ছিল, কোনমতে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা যাবে না। এটা সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থী, আইনের শাসন পরিপন্থী, সংবিধান পরিপন্থী। অর্থাৎ এটা প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে, এই দেশে এখন আইনের শাসন বলতে কিছু নেই। জনগণের বেঁচে থাকার যে অধিকারটুকু সেটাও এখন নেই। কারণ তারা এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে যেকোন সময়ে যেকোন ব্যক্তিকে হত্যা করার অধিকার তারা নিয়ে নিয়েছে। যেটা আমরা মনে করি একটা স্বাধীন দেশের জন্য, আইনের শাসনের জন্য পরিপন্থী।’ অবিলম্বে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ করার দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

একাদশ নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল প্রসঙ্গে

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদের যে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল প্রকাশ করেছে- তার মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণ হয়েছে এই নির্বাচন ‘কতটা প্রহসন’ ছিল। আপনারা দেখেছেন, প্রায় ২১৩ কেন্দ্রে শতকরা ১০০ ভাগ ভোট পড়েছে, ১৫০০-এর ওপরে ভোটকেন্দ্রে শতকরা ৯৫-৯৯ ভাগ ভোট পড়েছে। যেটা অসম্ভব ব্যাপার, যেটা বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সেটা কখনোই সম্ভব নয়। ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে, এই নির্বাচন কমিশন সরকার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং এই নির্বাচনটাকে প্রহসনে পরিণত করেছে। আমরা এ বিষয়ে তথ্য আরও ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। অল্প দিনের মধ্যে আমরা আপনাদের সামনে আসব।

পাবনায় শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলিবর্ষণের মামলার রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২৪ বছর পরে নিম্ন আদালত থেকে যে রায় দেয়া হয়েছে, এতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ও বিক্ষুব্ধ হয়েছে। সভা মনে করে, শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং পুরোপুরি প্রতিহিংসামূলক রায় হয়েছে এটা। যে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল সেই ঘটনাতে গুলির আওয়াজ শোনা গিয়েছিল কিন্তু কেউ হতাহত হয়নি। সেই গুলির আওয়াজ সম্পর্কেও একজন খুব পরিচিত ব্যক্তি ছিলেন যিনি এর আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করেছিলেন রেন্টু তার ‘আমরা ফাঁসি চাই’ বইতে বলেছিলেন, এটা একটা সাজানো ব্যাপার ছিল, তৎকালীন আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা ছিল। এই ধরনের রায় নজিরবিহীন। আমরা মনে করি, এই ধরনের রায় শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়, প্রতিহিংসাপরায়ণ। এতটুকু ন্যায়বিচার যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল তারা পায়নি। যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা সবাই বিএনপির স্থানীয় বা অঙ্গসংগঠনের লোকজন। আমরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছি।

গত বুধবার পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে শেখ হাসিনার ট্রেনে হামলা মামলায় ৯ জনের ফাঁসি, ২৫ জনের যাবজ্জীবন ও ১৩ জনের ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন।