আরও ২ জনের স্বীকারোক্তি

আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বরগুনায় মেসেঞ্জার গ্রুপ ০০৭ নিয়ে

প্রকাশ্যে রিফাত হত্যার পর আরও দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এ নিয়ে স্বীকারোক্তি দিল ৪ জন। এদিকে খুনিদের গ্রেফতার ঘটনায় মেসেঞ্জার গ্রুপ ০০৭ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বরগুনায়। কার সন্তান গোপনে বা প্রকাশ্যে কিংবা ভিন্নভাবে এ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত অভিভাবকরা জানেন না। তাছাড়া যারা এ গ্রুপের সদস্য, তাদের অনেকে এ গ্রুপের ভয়াবহতা সম্পর্কে অসচেতন বলে জানিয়েছেন।

রিফাত শরীফ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে মামলার ৪ নম্বর আসামি চন্দন ও ৯ নম্বর আসামি হাসান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গাজী মো. সিরাজুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে তারা দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বরগুনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ১ জুলাই মামলার এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও তানভীরও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে একই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ নিয়ে ৪ আসামি রিফাত হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।

বরগুনায় রিফাত হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রধান আসামি নয়ন বন্ড মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজীকে বুধবার রাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাকে ৭ দিন এবং ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয়, সন্দেহভাজন আসামি সাগর, কামরুল হাসান সাইমুন, নাজমুল হাসান ও রাফিউল ইসলাম রাব্বীকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা গেছে। বরগুনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মেসেঞ্জার গ্রুপ ০০৭ নিয়ে আতঙ্ক

গত ২৬ জুন রিফাত শরীফ হত্যার আগে ০০৭ মেসেঞ্জার গ্রুপের সবাইকে ‘কাজে দেখতে চাই’ মেসেজ দিয়ে রিফাত ফরাজী নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে গ্রুপের সবাইকে ৯টার মধ্যে কলেজে থাকতে নির্দেশ দেয়া হযেছিল। বলা হয়েছিল অস্ত্র নিয়ে আসতে। ০০৭ নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে এই তথ্য মিলেছে। ওই মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে গ্রুপ সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে আগের রাতেই হত্যা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে রেখে ছিল। এ গ্রুপের মাধ্যমেই রিফাত ফরাজী নয়ন বন্ডরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করত।

সেরা গুপ্তচর জেমস বন্ডের নাম অনুসারে বরগুনার বখাটে মাদকসেবীরা নাম রেখেছিল নয়ন বন্ড ০০৭। নয়নের নাম সাব্বির আহাম্মেদ নয়ন হলেও নয়ন নিজেকে পরিচয় দিত নয়ন বন্ড নামে। এই গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরাজী। নয়ন-রিফাত একত্র হয়ে গ্রুপ পরিচালনা করত। তারা দল ভারী করে একত্র হয়ে এলাকায় মাদক কারবার, ছিনতাই, মেয়েদের উত্ত্যক্ত ও যৌন লালসায় ব্যাবহার করত। তাদের প্রধান বিচরণ কেন্দ্র ছিল বরগুনার ধানসিঁড়ি রোড, কলেজ রোড, পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট এলাকা। এই গ্রুপ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ঠিকানায় মাদকের চালান সরবরাহ করত। এ ব্যবসা থেকে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়ারাও বাদ পড়ত না।

মেসেঞ্জার গ্রুপ নিয়ে বোঝেন- এমন এক সাংবাদিক বলেন, এ গ্রুপে সদস্য সংখ্যা কত, তা কেউ জানেন না। যারা এ গ্রুপের তথ্য বিশেষ পদ্ধতিতে বের করতে পারেন, তারা জানেন। এ নিয়ে বরগুনার অভিববক মহলে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাদের মধ্যে দেখা গেছে, একটি রাজনৈতিক দলের এক নেতার সপ্তম শ্রেণীর ছেলেকে হাতে রামদা ধরিয়ে ছবি তুলে ০০৭ গ্রুপের সদস্য দেখিয়ে ফেসবুকে আপলোড করা হয়েছে।

আইটি বিশেষজ্ঞরা জানান, এ মেসেঞ্জার গ্রুপের সদস্যরা যে কাউকেই ০০৭ গ্রুপের সদস্য হিসেবে যুক্ত করতে পারবে। এখন কারা, কখন নিজের ইচ্ছায় আথবা ভুলক্রমে বা তাদের ইচ্ছায় ০০৭ গ্রুপের সদস্য হয়েছেন এবং কে, কখন বা কার সন্তান কখন রিফাত হত্যায় গ্রেফতার হয়- ওই আতঙ্কে রয়েছে বরগুনার অনেক পরিবার।

বরগুনায় রিফাত হত্যার বিচার দাবিতে রাস্তায় পোস্টার

বরগুনার বিভিন্ন রাস্তার দেয়ালে রিফাত হত্যার বিচার দাবিতে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। ওই পোস্টার দেখার জন্য মানুষ ভিড় করছে। পোস্টারে নিহত রিফাতের ছবির সঙ্গে খুনিদের ছবি দেয়া হয়েছে। ছবিটি নিয়ে বরগুনায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০১৯ , ২২ আষাঢ় ১৪২৫, ২ জ্বিলকদ ১৪৪০

রিফাত হত্যা

আরও ২ জনের স্বীকারোক্তি

আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বরগুনায় মেসেঞ্জার গ্রুপ ০০৭ নিয়ে

প্রতিনিধি, বরগুনা

প্রকাশ্যে রিফাত হত্যার পর আরও দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এ নিয়ে স্বীকারোক্তি দিল ৪ জন। এদিকে খুনিদের গ্রেফতার ঘটনায় মেসেঞ্জার গ্রুপ ০০৭ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বরগুনায়। কার সন্তান গোপনে বা প্রকাশ্যে কিংবা ভিন্নভাবে এ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত অভিভাবকরা জানেন না। তাছাড়া যারা এ গ্রুপের সদস্য, তাদের অনেকে এ গ্রুপের ভয়াবহতা সম্পর্কে অসচেতন বলে জানিয়েছেন।

রিফাত শরীফ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে মামলার ৪ নম্বর আসামি চন্দন ও ৯ নম্বর আসামি হাসান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গাজী মো. সিরাজুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে তারা দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বরগুনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ১ জুলাই মামলার এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও তানভীরও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে একই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ নিয়ে ৪ আসামি রিফাত হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।

বরগুনায় রিফাত হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রধান আসামি নয়ন বন্ড মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজীকে বুধবার রাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাকে ৭ দিন এবং ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয়, সন্দেহভাজন আসামি সাগর, কামরুল হাসান সাইমুন, নাজমুল হাসান ও রাফিউল ইসলাম রাব্বীকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা গেছে। বরগুনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মেসেঞ্জার গ্রুপ ০০৭ নিয়ে আতঙ্ক

গত ২৬ জুন রিফাত শরীফ হত্যার আগে ০০৭ মেসেঞ্জার গ্রুপের সবাইকে ‘কাজে দেখতে চাই’ মেসেজ দিয়ে রিফাত ফরাজী নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে গ্রুপের সবাইকে ৯টার মধ্যে কলেজে থাকতে নির্দেশ দেয়া হযেছিল। বলা হয়েছিল অস্ত্র নিয়ে আসতে। ০০৭ নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে এই তথ্য মিলেছে। ওই মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে গ্রুপ সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে আগের রাতেই হত্যা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে রেখে ছিল। এ গ্রুপের মাধ্যমেই রিফাত ফরাজী নয়ন বন্ডরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করত।

সেরা গুপ্তচর জেমস বন্ডের নাম অনুসারে বরগুনার বখাটে মাদকসেবীরা নাম রেখেছিল নয়ন বন্ড ০০৭। নয়নের নাম সাব্বির আহাম্মেদ নয়ন হলেও নয়ন নিজেকে পরিচয় দিত নয়ন বন্ড নামে। এই গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরাজী। নয়ন-রিফাত একত্র হয়ে গ্রুপ পরিচালনা করত। তারা দল ভারী করে একত্র হয়ে এলাকায় মাদক কারবার, ছিনতাই, মেয়েদের উত্ত্যক্ত ও যৌন লালসায় ব্যাবহার করত। তাদের প্রধান বিচরণ কেন্দ্র ছিল বরগুনার ধানসিঁড়ি রোড, কলেজ রোড, পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট এলাকা। এই গ্রুপ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ঠিকানায় মাদকের চালান সরবরাহ করত। এ ব্যবসা থেকে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়ারাও বাদ পড়ত না।

মেসেঞ্জার গ্রুপ নিয়ে বোঝেন- এমন এক সাংবাদিক বলেন, এ গ্রুপে সদস্য সংখ্যা কত, তা কেউ জানেন না। যারা এ গ্রুপের তথ্য বিশেষ পদ্ধতিতে বের করতে পারেন, তারা জানেন। এ নিয়ে বরগুনার অভিববক মহলে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাদের মধ্যে দেখা গেছে, একটি রাজনৈতিক দলের এক নেতার সপ্তম শ্রেণীর ছেলেকে হাতে রামদা ধরিয়ে ছবি তুলে ০০৭ গ্রুপের সদস্য দেখিয়ে ফেসবুকে আপলোড করা হয়েছে।

আইটি বিশেষজ্ঞরা জানান, এ মেসেঞ্জার গ্রুপের সদস্যরা যে কাউকেই ০০৭ গ্রুপের সদস্য হিসেবে যুক্ত করতে পারবে। এখন কারা, কখন নিজের ইচ্ছায় আথবা ভুলক্রমে বা তাদের ইচ্ছায় ০০৭ গ্রুপের সদস্য হয়েছেন এবং কে, কখন বা কার সন্তান কখন রিফাত হত্যায় গ্রেফতার হয়- ওই আতঙ্কে রয়েছে বরগুনার অনেক পরিবার।

বরগুনায় রিফাত হত্যার বিচার দাবিতে রাস্তায় পোস্টার

বরগুনার বিভিন্ন রাস্তার দেয়ালে রিফাত হত্যার বিচার দাবিতে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। ওই পোস্টার দেখার জন্য মানুষ ভিড় করছে। পোস্টারে নিহত রিফাতের ছবির সঙ্গে খুনিদের ছবি দেয়া হয়েছে। ছবিটি নিয়ে বরগুনায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।