বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা চাই

শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমরা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলছি। ফলে প্রথাগত চাকরির জগৎ বদলে যাবে। নতুন ধরনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। ওই কর্মসংস্থানের জন্য এখন থেকেই কারিকুলাম তৈরি করতে হবে। এ জন্য ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমির মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি জ্ঞান অর্জনের জন্য। এর পাশাপাশি কর্মসংস্থানের বিষয়টি ফেলে দেয়া যায় না। তাই শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জন করতে ও দক্ষতা বাড়াতে হবে। জ্ঞান অর্জন না করে চাকরির কথা ভাবলে তার জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়। গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৯৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আয়োজনে ঢাবির টিএসসি মিলনায়তনে ‘প্রসঙ্গ উচ্চ শিক্ষা : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনার কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা স্বচ্ছতা চাই। এর বাইরে ভিন্ন কিছু চাই না। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে শুধু নিবন্ধন পরীক্ষা ও এনটিআরসির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে, অন্য কোন মাধ্যমে নয়। সেখানে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কীভাবে শিক্ষক নিয়োগ হবে, এ জন্য কোন কমিশন গঠন করা হবে কি না- তা ভাবার সময় এসেছে। তিনি মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি সৎ হলাম না, আমি পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হলাম না। তাহলে ওই শিক্ষাকে মানসম্মত শিক্ষা বলতে পারব না। এর সঙ্গে কমিউনিকেশন স্কিল, সহ-শিক্ষা কার্যক্রম বাড়াতে হবে। তা হলে পেশাগত জীবনে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে। তিনি বলেন, আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির কথা বারবার বলা হচ্ছে। আমি এটুকু বলতে পারি, এবারের বাজেট তো হয়ে গেছে। আগামীবারের বাজেটের আগেই এ বিষয়গুলো বাজেটের মধ্যে যতটুকু সম্ভব জায়গা করে দেব। এ সময় তিনি ভোরবেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ব্যাক-প্যাক নিজে এসে দেখার ঘোষণাও দেন।

দীপু মনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা পরিবারের বিশাল দায়িত্ব মাথায় রেখেই বিসিএসের দিকে ধাবিত হয়। বিসিএসের দিকে ঝোঁকা দোষের কিছু নয়। তবে সেটি যেন প্রকৃত জ্ঞান থেকে দূরে সরে না হয়।

মুখ্য বক্তার বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে আমাদের শিশুরা শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আমাদের দেশে পরিপূর্ণ ব্রেইন-ড্রেইন হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সুযোগ-সুবিধার অভাবে বিদেশ গেলে আর ফিরে আসতে চায় না। সবদিকে অবদান রাখার পরও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এখনও স্পেশাল স্টেটাস অর্জন করতে পারেনি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক মূল্যায়ন হয় না। মূল্যায়ন আমরাই করতে দিই না। করতে দিলে আমাদের রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে।

এর আগে শিক্ষার্থীরা প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন, লাইব্রেরি, শিক্ষক সংকট, গবেষণা ও গুণগত শিক্ষার অভাবের কথা উল্লেখ করলে সেগুলো পূরণ করার আশ্বাস দেয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০১৯ , ২২ আষাঢ় ১৪২৫, ২ জ্বিলকদ ১৪৪০

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা চাই

শিক্ষামন্ত্রী

প্রতিনিধি, ঢাবি

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমরা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলছি। ফলে প্রথাগত চাকরির জগৎ বদলে যাবে। নতুন ধরনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। ওই কর্মসংস্থানের জন্য এখন থেকেই কারিকুলাম তৈরি করতে হবে। এ জন্য ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমির মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি জ্ঞান অর্জনের জন্য। এর পাশাপাশি কর্মসংস্থানের বিষয়টি ফেলে দেয়া যায় না। তাই শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জন করতে ও দক্ষতা বাড়াতে হবে। জ্ঞান অর্জন না করে চাকরির কথা ভাবলে তার জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়। গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৯৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আয়োজনে ঢাবির টিএসসি মিলনায়তনে ‘প্রসঙ্গ উচ্চ শিক্ষা : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনার কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা স্বচ্ছতা চাই। এর বাইরে ভিন্ন কিছু চাই না। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে শুধু নিবন্ধন পরীক্ষা ও এনটিআরসির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে, অন্য কোন মাধ্যমে নয়। সেখানে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কীভাবে শিক্ষক নিয়োগ হবে, এ জন্য কোন কমিশন গঠন করা হবে কি না- তা ভাবার সময় এসেছে। তিনি মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি সৎ হলাম না, আমি পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হলাম না। তাহলে ওই শিক্ষাকে মানসম্মত শিক্ষা বলতে পারব না। এর সঙ্গে কমিউনিকেশন স্কিল, সহ-শিক্ষা কার্যক্রম বাড়াতে হবে। তা হলে পেশাগত জীবনে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে। তিনি বলেন, আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির কথা বারবার বলা হচ্ছে। আমি এটুকু বলতে পারি, এবারের বাজেট তো হয়ে গেছে। আগামীবারের বাজেটের আগেই এ বিষয়গুলো বাজেটের মধ্যে যতটুকু সম্ভব জায়গা করে দেব। এ সময় তিনি ভোরবেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ব্যাক-প্যাক নিজে এসে দেখার ঘোষণাও দেন।

দীপু মনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা পরিবারের বিশাল দায়িত্ব মাথায় রেখেই বিসিএসের দিকে ধাবিত হয়। বিসিএসের দিকে ঝোঁকা দোষের কিছু নয়। তবে সেটি যেন প্রকৃত জ্ঞান থেকে দূরে সরে না হয়।

মুখ্য বক্তার বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে আমাদের শিশুরা শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আমাদের দেশে পরিপূর্ণ ব্রেইন-ড্রেইন হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সুযোগ-সুবিধার অভাবে বিদেশ গেলে আর ফিরে আসতে চায় না। সবদিকে অবদান রাখার পরও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এখনও স্পেশাল স্টেটাস অর্জন করতে পারেনি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক মূল্যায়ন হয় না। মূল্যায়ন আমরাই করতে দিই না। করতে দিলে আমাদের রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে।

এর আগে শিক্ষার্থীরা প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন, লাইব্রেরি, শিক্ষক সংকট, গবেষণা ও গুণগত শিক্ষার অভাবের কথা উল্লেখ করলে সেগুলো পূরণ করার আশ্বাস দেয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।