গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বাম জোটের আধাবেলা হরতাল কাল

জনস্বার্থ উপেক্ষা করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং জনদুর্ভোগের বাজেটের প্রতিবাদে আগামীকাল দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতালের ঘোষণা দিয়েছে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মোর্চা বাম গণতান্ত্রিক জোট। এই হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (গার্মেন্ট টিইউসি)। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা। পরে একটি মিছিল প্রেসক্লাব ও পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গার্মেন্ট টিইউসি’র কার্যকরি সভাপতি কাজী রুহুল আমীন, সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম মিন্টু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মঞ্জুর মঈন, দফতর সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাজেটে শ্রমিকরা রেশন, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বরাদ্দের দাবি জানিয়েছিলেন। সরকার শ্রমিকদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি। উপরন্তু মালিকদের মুনাফার হার বৃদ্ধির সহায়ক বাজেট পাস করেছে। সরকার একদিকে শ্রমিক-মেহনতি মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে, অন্যদিকে জনগণের পকেট কেটে কতিপয় করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও মালিকগোষ্ঠীর জন্য সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার ব্যবস্থা করেছে। এরই সর্বশেষ পদক্ষেপ গ্যাসের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি।

জনসাধারণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকরা এ দেশের খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের সবচেয়ে অগ্রসর ও সংগঠিত অংশ। তারা সরকারের এই গণবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলবে। ৭ জুলাইয়ের হরতাল সফল করতে এবং শ্রমিক জনতার বিরুদ্ধে সরকারের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে শ্রমিক-কৃষক-নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত জনসাধারণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান তারা।

এদিকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা অর্ধদিবস হরতালের কর্মসূচিতে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকেল ৪টা থেকে দুইঘণ্টা স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক হয়। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান। বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্ত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, বামদলে যারা আছেন, ‘তারা আগামী ৭ জুলাই হরতাল আহ্বান করেছেন। আমরা এই হরতালের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছি।’ তিনি আরও জানান, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ১ জুলাই জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘সারাদেশের মানুষ এই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে ইফেক্টেড হয়েছে। সেই কারণে এটা একটা যৌক্তিক হরতাল বলে আমরা মনে করি। তাই এই হরতালে নীতিগত সমর্থন জানাচ্ছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে সমগ্র অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেটি অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলেই স্থায়ী কমিটি মনে করে। এতে করে প্রত্যেকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়বে, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন কস্ট বেড়ে যাবে, সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি নেতিবাচন প্রভাব পড়বে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের সর্বস্তর থেকে এই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ হয়েছে। বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল কর্মসূচি দিয়েছে, নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু সরকার মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেনি।’

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি আর কোন কর্মসূচি দেবে কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কর্মসূচি দিয়েছি। বাম দলের কর্মসূচিতে সমর্থন দিলাম। এরপর আমরা চেষ্টা করব, যদি অন্য কোন কর্মসূচি দেয়া যায়।’

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গত ৩০ জুন সব ধরনের গ্রাহকপর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম গড়ে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। গ্যাসের এই বাড়তি দাম ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে। এই প্রতিবাদে আগামী ৭ জুলাই (রোববার) দেশব্যাপী আধাবেলা হরতাল ডেকেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। ইতোমধ্যে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বামজোটের ডাকা এই হরতালের কর্মসূচিকে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জেবেল রহমান গাণি বাংলাদেশ ন্যাপ, মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাকের খেলাফত মজলিসসহ রাজনৈতিক দলগুলো সমর্থন দিয়েছে।

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০১৯ , ২২ আষাঢ় ১৪২৫, ২ জ্বিলকদ ১৪৪০

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বাম জোটের আধাবেলা হরতাল কাল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

জনস্বার্থ উপেক্ষা করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং জনদুর্ভোগের বাজেটের প্রতিবাদে আগামীকাল দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতালের ঘোষণা দিয়েছে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মোর্চা বাম গণতান্ত্রিক জোট। এই হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (গার্মেন্ট টিইউসি)। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা। পরে একটি মিছিল প্রেসক্লাব ও পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গার্মেন্ট টিইউসি’র কার্যকরি সভাপতি কাজী রুহুল আমীন, সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম মিন্টু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মঞ্জুর মঈন, দফতর সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাজেটে শ্রমিকরা রেশন, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বরাদ্দের দাবি জানিয়েছিলেন। সরকার শ্রমিকদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি। উপরন্তু মালিকদের মুনাফার হার বৃদ্ধির সহায়ক বাজেট পাস করেছে। সরকার একদিকে শ্রমিক-মেহনতি মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে, অন্যদিকে জনগণের পকেট কেটে কতিপয় করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও মালিকগোষ্ঠীর জন্য সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার ব্যবস্থা করেছে। এরই সর্বশেষ পদক্ষেপ গ্যাসের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি।

জনসাধারণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকরা এ দেশের খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের সবচেয়ে অগ্রসর ও সংগঠিত অংশ। তারা সরকারের এই গণবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলবে। ৭ জুলাইয়ের হরতাল সফল করতে এবং শ্রমিক জনতার বিরুদ্ধে সরকারের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে শ্রমিক-কৃষক-নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত জনসাধারণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান তারা।

এদিকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা অর্ধদিবস হরতালের কর্মসূচিতে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকেল ৪টা থেকে দুইঘণ্টা স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক হয়। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান। বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্ত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, বামদলে যারা আছেন, ‘তারা আগামী ৭ জুলাই হরতাল আহ্বান করেছেন। আমরা এই হরতালের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছি।’ তিনি আরও জানান, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ১ জুলাই জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘সারাদেশের মানুষ এই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে ইফেক্টেড হয়েছে। সেই কারণে এটা একটা যৌক্তিক হরতাল বলে আমরা মনে করি। তাই এই হরতালে নীতিগত সমর্থন জানাচ্ছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে সমগ্র অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেটি অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলেই স্থায়ী কমিটি মনে করে। এতে করে প্রত্যেকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়বে, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন কস্ট বেড়ে যাবে, সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি নেতিবাচন প্রভাব পড়বে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের সর্বস্তর থেকে এই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ হয়েছে। বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল কর্মসূচি দিয়েছে, নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু সরকার মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেনি।’

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি আর কোন কর্মসূচি দেবে কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কর্মসূচি দিয়েছি। বাম দলের কর্মসূচিতে সমর্থন দিলাম। এরপর আমরা চেষ্টা করব, যদি অন্য কোন কর্মসূচি দেয়া যায়।’

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গত ৩০ জুন সব ধরনের গ্রাহকপর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম গড়ে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। গ্যাসের এই বাড়তি দাম ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে। এই প্রতিবাদে আগামী ৭ জুলাই (রোববার) দেশব্যাপী আধাবেলা হরতাল ডেকেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। ইতোমধ্যে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বামজোটের ডাকা এই হরতালের কর্মসূচিকে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জেবেল রহমান গাণি বাংলাদেশ ন্যাপ, মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাকের খেলাফত মজলিসসহ রাজনৈতিক দলগুলো সমর্থন দিয়েছে।