কক্সবাজার হাইওয়ে পুলিশের কাছে জিম্মি পরিবহন চালকরা

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও বিভিন্ন উপসড়কে হাইওয়ে পুলিশের ব্যাপক চাঁদাবাজি চলছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন পরিবহন মালিক ও চালকরা। দীর্ঘদিন ধরে হাইওয়ে পুলিশের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে পরিবহন সেক্টর। তারা প্রতিবাদ করতে গেলে শুরু হয় হাইওয়ে পুলিশের নানা নির্যাতনের কৌশল। চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হলে দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকে রাখার পর জব্দকৃত পরিবহনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। জানা গেছে, হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে গতিনিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা আনা, প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করা, হাইওয়েতে নিষিদ্ধ এমন সব যানবাহনের চলাচল প্রতিরোধ করা। কিন্তু যেসব কাজ তাদের জন্য নির্ধারিত, তা না করে তারা অন্য কাজ করতে পছন্দ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাসিক টোকেন দিয়ে হাইওয়ে থেকে শুরু করে আঞ্চলিক সড়কে চলছে দেদার হাইওয়ে পুলিশের এ চাঁদাবাজি। একইভাবে রামু হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি চলছে অপ্রতিরোধ্যভাবে।

পাশাপাশি বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহন থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে আসছে হাইওয়ে পুলিশ। এতে নানা কৌশলে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে প্রতিনিয়ত আদায় করে আসছে লাখ লাখ টাকা। সম্প্রতি ইজিবাইক আটক করতে আরও একধাপ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে হাইওয়ে পুলিশ। চালকদের দাবি মহাসড়কের আশপাশের যে উপসড়ক রয়েছে, ওখানে ইজিবাইক অবস্থান করামাত্র আটক করে তাদের ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। পরে রাত ৮টার দিকে হাইওয়ে পুলিশের অফিসে গিয়ে বিনা রসিদে ৭-৮ হাজার টাকা নিয়ে ইজিবাইক ছেড়ে দেয়। বর্তমানে ঈদকে সামনে রেখে প্রতিযোগিতামূলকভাবে ইজিবাইক (টমটম) আটক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে হাইওয়ে পুলিশ। ২৩ এপ্রিল বিকালে জব্দকৃত টমটম ছাড়িয়ে নিতে রামু হাইওয়ে পুলিশের ওসির কাছে যায় ভুক্তভোগী মনজুর আলম। তিনি জানান, কোন রসিদ ছাড়া নগদে ৭ হাজার টাকা নিয়ে টমটমটি ছেড়ে দেয় হাইওয়ে পুলিশ। তিনি আরও জানান, আদায়কৃত টাকাগুলো আসলে সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।

১৭ মে বিকালে জব্দকৃত টমটম ছাড়িয়ে নিতে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রামু হাইওয়ে পুলিশের ওসির কাছে যায় আরেক ভুক্তভোগী রফিক। তিনি জানান, কোন রসিদ ছাড়া নগদে ৭ হাজার টাকা নিয়ে টমটমটি ছেড়ে দেয় হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা সাইফুল। তিনিও জানান, আদায়কৃত টাকাগুলো আসলে সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি আরও জানান শহরতলীর অলিগলিতে দৌড়ে দৌড়ে টমটম ধরা এখন হাইওয়ে পুলিশের কাজ। রামু হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃক দৈনিক প্রায় অর্ধশতাধিক টমটম আটক করে। সন্ধ্যা যখন নামবে তখন আটককৃত গাড়ির মামলা নিষ্পত্তি বাবদ আদায় করে আসছে লাখ লাখ টাকা। এ রকম ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে রামু হাইওয়েতে। এছাড়া অসংখ্য মাসিক টোকেনের বিনিময়ে হাইওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় মহাসড়কে চলছে বেপরোয়া সিএনজি ও অটোরিকশা। আর যাদের টোকেন নেই তাদের জন্য আছে আটক বাণিজ্য। গাড়ি আটকের পরে ৮-১০ হাজার টাকার বিনিময়ে সমস্যা সমাধান করে হাইওয়ে পুলিশ। পরিবহনসংশ্লিষ্টরা বলছে, হাইওয়ে পুলিশ প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র চেকের নামে চাঁদা নেয়। কাগজপত্র সঠিক না পেলে তারা খুশি হয়। কোন না কোন অজুহাতে পুলিশ টাকা আদায় করে ছাড়ে। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হলে দীর্ঘ সময় আটকে রাখার পর দেয়া হয় মামলা।

সূত্র জানিয়েছে, দৈনিক ২০-৩০টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (টমটম) শহরতলীর লিংকরোড় স্টেশনসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে রামু তুলাবাগান হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে আটক দেখিয়ে পরে বিনা রসিদে ৭-৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেয়। এভাবে প্রতিদিন রামু হাইওয়ে পুলিশ হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, দালালচক্রের মাধ্যমে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিসহ টেকনাফ সড়কে মিনিবাস ও অন্যান্য গাড়ি থেকেও সমানহারে চলছে এ আটক বাণিজ্য। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি রামু হাইওয়ে পুলিশের ওসির বিরুদ্ধে মাদক গায়েবসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে বিনা রসিদে জরিমানা আদায়ের কথা অস্বীকার করে রামু হাইওয়ে পুলিশের ওসি মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, যেসব পরিবহনকে জরিমানা করা হয় তার টাকা সরকারি কোষাগারে শতভাগ জমা হয়। পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশের যতটুকু সীমানা রয়েছে তার মধ্যে থেকেই কাজ করছে বলে জানান তিনি। তবে হাইওয়ে পুলিশের কেউ যদি সীমা লংঘন করে অভিযান পরিচালনা করে থাকে তাহলে যেই সদস্যের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০১৯ , ২২ আষাঢ় ১৪২৫, ২ জ্বিলকদ ১৪৪০

কক্সবাজার হাইওয়ে পুলিশের কাছে জিম্মি পরিবহন চালকরা

প্রতিনিধি, কক্সবাজার

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও বিভিন্ন উপসড়কে হাইওয়ে পুলিশের ব্যাপক চাঁদাবাজি চলছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন পরিবহন মালিক ও চালকরা। দীর্ঘদিন ধরে হাইওয়ে পুলিশের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে পরিবহন সেক্টর। তারা প্রতিবাদ করতে গেলে শুরু হয় হাইওয়ে পুলিশের নানা নির্যাতনের কৌশল। চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হলে দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকে রাখার পর জব্দকৃত পরিবহনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। জানা গেছে, হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে গতিনিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা আনা, প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করা, হাইওয়েতে নিষিদ্ধ এমন সব যানবাহনের চলাচল প্রতিরোধ করা। কিন্তু যেসব কাজ তাদের জন্য নির্ধারিত, তা না করে তারা অন্য কাজ করতে পছন্দ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাসিক টোকেন দিয়ে হাইওয়ে থেকে শুরু করে আঞ্চলিক সড়কে চলছে দেদার হাইওয়ে পুলিশের এ চাঁদাবাজি। একইভাবে রামু হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি চলছে অপ্রতিরোধ্যভাবে।

পাশাপাশি বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহন থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে আসছে হাইওয়ে পুলিশ। এতে নানা কৌশলে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে প্রতিনিয়ত আদায় করে আসছে লাখ লাখ টাকা। সম্প্রতি ইজিবাইক আটক করতে আরও একধাপ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে হাইওয়ে পুলিশ। চালকদের দাবি মহাসড়কের আশপাশের যে উপসড়ক রয়েছে, ওখানে ইজিবাইক অবস্থান করামাত্র আটক করে তাদের ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। পরে রাত ৮টার দিকে হাইওয়ে পুলিশের অফিসে গিয়ে বিনা রসিদে ৭-৮ হাজার টাকা নিয়ে ইজিবাইক ছেড়ে দেয়। বর্তমানে ঈদকে সামনে রেখে প্রতিযোগিতামূলকভাবে ইজিবাইক (টমটম) আটক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে হাইওয়ে পুলিশ। ২৩ এপ্রিল বিকালে জব্দকৃত টমটম ছাড়িয়ে নিতে রামু হাইওয়ে পুলিশের ওসির কাছে যায় ভুক্তভোগী মনজুর আলম। তিনি জানান, কোন রসিদ ছাড়া নগদে ৭ হাজার টাকা নিয়ে টমটমটি ছেড়ে দেয় হাইওয়ে পুলিশ। তিনি আরও জানান, আদায়কৃত টাকাগুলো আসলে সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।

১৭ মে বিকালে জব্দকৃত টমটম ছাড়িয়ে নিতে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রামু হাইওয়ে পুলিশের ওসির কাছে যায় আরেক ভুক্তভোগী রফিক। তিনি জানান, কোন রসিদ ছাড়া নগদে ৭ হাজার টাকা নিয়ে টমটমটি ছেড়ে দেয় হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা সাইফুল। তিনিও জানান, আদায়কৃত টাকাগুলো আসলে সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি আরও জানান শহরতলীর অলিগলিতে দৌড়ে দৌড়ে টমটম ধরা এখন হাইওয়ে পুলিশের কাজ। রামু হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃক দৈনিক প্রায় অর্ধশতাধিক টমটম আটক করে। সন্ধ্যা যখন নামবে তখন আটককৃত গাড়ির মামলা নিষ্পত্তি বাবদ আদায় করে আসছে লাখ লাখ টাকা। এ রকম ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে রামু হাইওয়েতে। এছাড়া অসংখ্য মাসিক টোকেনের বিনিময়ে হাইওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় মহাসড়কে চলছে বেপরোয়া সিএনজি ও অটোরিকশা। আর যাদের টোকেন নেই তাদের জন্য আছে আটক বাণিজ্য। গাড়ি আটকের পরে ৮-১০ হাজার টাকার বিনিময়ে সমস্যা সমাধান করে হাইওয়ে পুলিশ। পরিবহনসংশ্লিষ্টরা বলছে, হাইওয়ে পুলিশ প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র চেকের নামে চাঁদা নেয়। কাগজপত্র সঠিক না পেলে তারা খুশি হয়। কোন না কোন অজুহাতে পুলিশ টাকা আদায় করে ছাড়ে। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হলে দীর্ঘ সময় আটকে রাখার পর দেয়া হয় মামলা।

সূত্র জানিয়েছে, দৈনিক ২০-৩০টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (টমটম) শহরতলীর লিংকরোড় স্টেশনসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে রামু তুলাবাগান হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে আটক দেখিয়ে পরে বিনা রসিদে ৭-৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেয়। এভাবে প্রতিদিন রামু হাইওয়ে পুলিশ হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, দালালচক্রের মাধ্যমে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিসহ টেকনাফ সড়কে মিনিবাস ও অন্যান্য গাড়ি থেকেও সমানহারে চলছে এ আটক বাণিজ্য। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি রামু হাইওয়ে পুলিশের ওসির বিরুদ্ধে মাদক গায়েবসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে বিনা রসিদে জরিমানা আদায়ের কথা অস্বীকার করে রামু হাইওয়ে পুলিশের ওসি মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, যেসব পরিবহনকে জরিমানা করা হয় তার টাকা সরকারি কোষাগারে শতভাগ জমা হয়। পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশের যতটুকু সীমানা রয়েছে তার মধ্যে থেকেই কাজ করছে বলে জানান তিনি। তবে হাইওয়ে পুলিশের কেউ যদি সীমা লংঘন করে অভিযান পরিচালনা করে থাকে তাহলে যেই সদস্যের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।