নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের প্রকাশে প্রতিক্রিয়া

ফকীর আবদুর রাজ্জাক

একাদশ সংসদ নির্বাচন ও তার ফলাফলের কদর্মাক্ত রেশ সরকারের পিছু ছাড়াছে না। দলে এমন বহু নেতা রয়েছেন যারা ওই কালিমাযুক্ত সমালোচনা বা সরকারি-বেসকারি এজেন্টদের রিপোর্ট তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবেন। কিন্তু ছয় মাস পরে নির্বাচন কমিশন গেজেট আকারে নিজের ওয়েবসাইটে নির্বাচনের যে সার্বিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাকে বোধহয় তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া কঠিন হবে। কেননা নির্বাচন কমিশন, যে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সর্বসময় কর্তা এবং ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থনপুষ্ট। যদিও বলা হয় স্বাধীন নির্বাচন কমিশন তবুও আমরা জানি আমাদের এই উপমহাদেশে নির্বাচন কমিশন সরকারেরই আজ্ঞাবহ। ভারতের নির্বাচন কমিশন সে দেশের স্বাধীনতার পর থেকে ইন্দিরা গান্ধী পর্যন্ত বেশ ভালোই স্বাধীন ছিল। কিন্তু তারপর থেকে এবারের নির্বাচন পর্যন্ত কৌতূহলী নাটক যা দেখা গেছে তাতে আর ওই ধরনের স্বাধীন সত্তা নিয়ে কমিশনে কাজ করতে পারছে না। এবারের নির্বাচনে তো কোন কোন রাজ্যে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের নামে যা হয়েছে, যেসব ঘটনা ঘটেছে এবং নির্বাচন কমিশন অসহায়ত্বে¡র যে প্রমাণ দিয়েছে তাতে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর সময় এমন কি ইন্দিরা গান্ধীর সময়ও ভারতে যে নির্বাচন হয়েছে তার শুভ প্রভাব পড়েছিল পাকিস্তানের মতো ধর্ম প্রভাবিত রাষ্ট্রের নির্বাচনেও। যে কারণে ৫৪ নির্বাচন, বহুসংখ্যক উপনির্বাচন এমনকি ৭০-এর সাধারণ নির্বাচনেও সেই শুভ প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন বাঙালি জাতি লক্ষ্য করেছে। কিন্তু এখন বাংলাদেশের নির্বাচনে ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২১৩ ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পান প্রার্থীরা। এ সব নির্বাচন কমিশনই দায়-দায়িত্ব নিয়ে পরিচালনা করেছে। নির্বাচনের পরে তারা শুধু বলেছে ‘আমাদের কিছু করার ছিল না’। অথচ সাংবিধানিকভাবে তারাই নির্বাচনের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আমাদের নির্বাচন কমিশন কয়েকদিন আগে গেজেট প্রকাশ করে যে নির্বাচনের সার্বিক রিপোর্ট জাতির সামনে তুলে ধরেছেন তাতে ২১৩ কেন্দ্রে প্রার্থীরা শতভাগ পেয়েছেন অর্থাৎ শতভাগ ভোট পড়েছে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবার যথাযথভাবে নির্বাচন করেনি বা অংশ নেয়নি। তারপরও তো দুই ডজন দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। অসংখ্য পরিমাণ স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল তারা কি ওই ২১৩ কেন্দ্রে নিজেদের ভোটটিও প্রদান করেননি?

শুধু কি তাই? ওই সব এলাকায় কি একজন ভোটার মারা যাননি, দু’একটা ভোট বাতিল হয়নি? সঙ্গত কারণে একজনও কি ভোটদানে অনুপস্থিত থাকেননি? এরপরও শতভাগ ভোট পড়ার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। যেন ভৌতিক ভোট। নির্বাচন কমিশনের কথা বাদ দিলেও একজনও কি বিবেকবান মানুষ ছিল না, যিনি পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করে বলেননি শতভাগ যেন না হয়, তাহলে তা বিশ্বাসযোগ্য হবে না। নিজের জেলায় জানা একটা এলাকার একটি কেন্দ্রের খবর জেনেছি। যখন গায়েবি ভোট প্রদানের মহড়া চলছিল তখন একজন ওই এলাকার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত হয়ে সচক্ষে সে দৃশ্য দেখে ধমক দিয়ে ‘করিতকর্মা কর্মী’দের বলেছেন যথেষ্ট হয়েছে আর দরকার নেই। তোমাদের প্রার্থী এমনিতেই জিতবে। কয়েকদিন আগে এমনি এক করিতকর্মা নির্বাচিত এমপির সঙ্গে দেখা হয়েছিল এক পুনর্মিলনী সভায়। তিনি আমারও স্নেহভাজন। বক্তৃতা দেয়ার সময় বেশ গর্ব করে বললেন ‘আমি আপনাদের দোয়ায় ৯১ ভাগ ভোট পেয়ে জিতেছি’। উপস্থিত সবাই করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানালো। আবার নিজের কানে তার গর্বের ভাষণ শোনার পর লজ্জায় মাথা নিচু করে হাতে পাওয়া একটা ছড়ার বই পড়ছিলাম। কেননা গণতান্ত্রিক দেশে তো নয়ই, আমাদের উপমহাদেশে কোন নির্বাচনের ইতিহাসে ৯১ ভাগ ভোট পাওয়া বা ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পাওয়া অথবা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ সিটে বিজয়ী হওয়ার নজির নেই। বাংলাদেশে এমন নজির সৃষ্টি হয়েছে এটা আনন্দের না লজ্জার?

নির্বাচন কমিশনের যে ফাইন্যাল ভোটের রেজাল্ট ওয়েবসাইটে বেরিয়েছে তাতে ১৪টি আসনের সব কেন্দ্রেই ভোট পড়েছে ৯০ থেকে ৯১ দশমিক ৯৯ ভাগ। এমন কেন্দ্রের সংখ্যা ৭ হাজার ৬৬৯টি। ৯৯ ভাগ বা তার বেশি ভোট পড়েছে ১২৭টি কেন্দ্রে। ৮০ থেকে ৮৯ দশমিক ৯৯ ভাগ ভোট পড়েছে ১৫ হাজার ৭১৯টি কেন্দ্রে। ৭০ থেকে ৭৯ দশমিক ৯৯ ভাগ ভোট পড়েছে ১০ হাজার ৭৩টি কেন্দ্রে। এটাই হলো একাদশ সংসদের নির্বাচনী চিত্র। আর একটা অস্বাভাবিক ঘটনা হলো ৬ মাস পরে নির্বাচন কমিশন তাদের সার্বিক ফলাফল প্রকাশ করেছে। যেভাবে সেকাল থেকে একাল পর্যন্ত দেশের সাধারণ নির্বাচন হয়, তাতে নির্বাচন সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফল গণনা করে কেন্দ্রে উপস্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের জানিয়ে দেয়া হয়। তারপর থানা নির্বাচন কমিশন হয়ে তা জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে যায়। যেখান থেকেই সব হিসাব-নিকাশ-বাতিল ইত্যাদি তথ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। এ কাজটি শেষ হয় নির্বাচনের রাতেই। আর বেসরকারি ফল ঘোষণ হয় নির্বাচনের দিনই। এখন জেলা অফিস থেকে পাঠানো ফল যাচাই-বাছাই করে ফাইনাল রেজাল্ট গেজেট আকারে প্রকাশ করতে নির্বাচন কমিশন কেন ৬ মাস সময় নিল? এটাতেও দেশের প্রতিটি সাধারণ শিক্ষিত মানুষই সন্দেহের চোখে দেখছে নির্বাচন কমিশনের কর্মকান্ডকে। অথচ প্রথম গেজেট প্রকাশের পরই নির্বাচিত এমপিরা শপথ নিয়ে রিতিমতো সংসদ কর্মকান্ড চালাচ্ছেন এবং বাজেটও পাস করেছেন। এতে করে সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধী মহল থেকে এতদিন দুর্নীতি, কারচুপি, ব্যালট কেটে বাক্স ভরা বা আগের রাতেই ভোটবাক্স ভরে রাখার যেসব অভিযোগ দিচ্ছিলেন ফাইনাল গেজেটের ফলাফলে এবার সেটাই প্রমাণ হয়েছে। তার জন্য নির্বাচন কমিশন কোনভাবেই দায় এড়াতে পারে না। সরকারকে মহা বিব্রত অবস্থায় ফেলেছে ৬ মাস পরে তা প্রকাশ করে। যোগ্যতা, দক্ষতা ও আন্তরিকতা থাকলে এমন ফলাফল ঘোষণা করার জন্য কোনভাবেই এক মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। এত বিলম্বের পেছনে কোন রহস্য নেই তো?

আমাদের বর্তমান নির্বাচন কমিশনে দিন দিন মতপার্থক্য বাড়ছে। এতদিন একজন কমিশনার নানা বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ না করে নিজেকে ব্যতিক্রম হিসেবে প্রতিপন্ন করেছেন। এবার যখন নির্বাচন কমিশন তাদের ফলাফল নিজ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করল তখন আর একজন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামÑ বলেই দিয়েছেন ‘কোন কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়া স্বাভাবিক ঘটনা নয়’। তিনি মনে করেন ‘ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভোটের এই হিসাবে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। অর্থাৎ দেশবাসীর সামনে নির্বাচন কমিশনের যে ফলাফলের হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে তাতে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে।’ এই শুভঙ্করের ফাঁকির অভিযোগ মাথায় নিয়েই একাদশ সংসদের অস্তিত্ব দেশবাসীকে মেনে নিতে হয়েছে। যে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ও কার্যক্রমে শুভঙ্করের ফাঁকি থাকে তাকে আর যাই হোক প্রকৃত গণতন্ত্র বলে অভিহিত করা যায় না। এহেন সন্দেহজনক, অস্বাভাবিক ও শুভঙ্করের ফাঁকির বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করার অধিকার রাখে। বিচার বিভাগও হস্তক্ষেপ করতে পারেন। শতভাগ ভোট পড়া কেন্দ্রগুলো যেসব নির্বাচনী এলাকাতে ঘটছে সেই এলাকার কোন ব্যক্তি বিবেকের তাড়নায় আসল সত্যি জানার জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। তখন নির্বাচন কমিশনকে দায় স্বীকার করে সাক্ষী দিতে হবে। কারণ ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশন ফাইনাল ভোটের হিসেবে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। পেছানোর সুযোগ নেই। আর নির্বাচনের ফলাফলের প্রকৃত সত্য উচ্চ আদালতের মাধ্যমেই জাতির সামনে প্রতিষ্ঠা পাবে। কথা ছিল প্রধান ও অন্য চারজন কমিশনার সব ব্যাপারে ঐকমত্য হয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন। তারা স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। ক্ষমতাসীন সরকার কেবল প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য সেই স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের চরিত্রের দেখা পাচ্ছে না জাতি।

যে কোন গণতান্ত্রিক দেশে জাতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে যখন একটি দল সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং সরকার গঠন করে তখন সেই দলের নেতাকর্মীরা দারুন উৎফুল্ল হয়। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের মতো অনগ্রসর ও নানা প্রতিবন্ধিকতার মোকাবিলা করে উন্নয়নের ধারা অক্ষুণ্ন রাখার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয় যেসব দেশে সরকারে যারা অধিষ্ঠিত হয় তাদের দায়িত্বের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই দায়িত্বের কথাটিই বেশিরভাগ ক্ষমতাসীন সরকার ও তাদের সংসদ সদস্যরা ভুলে যান। জনগণের বিপুল ভোট বা সমর্থন যে বিপুল দায়িত্ব বর্তানোর বিষয় এই সহজ কথাটি ভুলে গিয়ে এমপি-নেতারা জনগণের দেয়া ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করে দেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটাই সত্য। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভের বিস্ময়কর নজির স্থাপন করেছে। এখন নির্বাচন কমিশনই বলছেÑ এমনটা অস্বাভাবিক। যেমনই হোক এই বিপুল বিজয়কে মহা দায়িত্ব অর্পণ ভেবে যদি মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা সততা, আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের উন্নয়নে কাজ করেন এবং উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হন তাহলে নির্বাচনে বিপুল বিজয়কে যারা সন্দেহের চোখে আজ সমালোচনা করছে তাদের সেই আক্রমণের ধার ভোঁতা হয়ে যাবে। আর যদি ক্ষমতার বিপুল বিজয় বিপুল অপব্যবহারের নগ্ন আকার ধারণ করে তাহলে দেশের প্রতিটি সাধারণ সচেতন মানুষই ধরে নেবে সন্দেহজনক এক নির্বাচনে বিস্ময়কর বিজয় লাভের ভ্রান্ত প্রতিচ্ছবি দেখিয়ে এ সরকার ক্ষমতা কব্জা করেছিল। শেখ হাসিনাই একমাত্র ভরসা। জনগণ এখন আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক বেশি ভরসা করে তাকে।

প্রতিবেশী ভারতে এবার নির্বাচন হয়েছে। যেখানে গত বছরের চাইতেও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন নরেন্দ্র মোদি ও জনতা জোট। নির্বাচনে আর্থ-সামাজিক কোন পরিকল্পনার চাইতেও প্রাধান্য পেয়েছে ধর্মান্ধতার বিষয়। নির্বাচনের সময় এবং তার পরপরই রামমন্দির নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে জনতা জোটের উগ্রহিন্দু দলগুলো। তারা বিশ্বাস করে মি. মোদি এত বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন তাদের হিন্দুত্বইজম চাঙ্গা করার কারণেই। মোদি নির্বাচনের প্রচারে নেমে আর ধর্মনিরপেক্ষ প্রমাণ করার চেষ্টাও করেননি। অতএব ভারতে এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে ভারত আর গান্ধী, নেহরু, মৌলানা আজাদের ভারত নেই। সংবিধানে নামেমাত্র ধর্মনিরপেক্ষতার কথা থাকলেও কার্যক্ষেত্রে উগ্র হিন্দুত্ববাদের নীতি, আর্দশ ও প্রভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের নির্বাচনে এমন আর্দশিক সংকট না থাকলেও সরকারি ছত্রছায়ায় এসে সমাজের একটি বিশাল অপরাধী শ্রেণী নির্বাচনকে যে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে, তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। যে কারণে ৯০ থেকে শতভাগ ভোট পড়ার নজির স্থাপিত হয়েছে। জাতির জন্য, গণতন্ত্র ও মূল্যবোধের জন্য এটা অশনিসঙ্কেত।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যথার্থ রক্তের উত্তরসূরি শেখ হাসিনাকেই দেশ, গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একটা সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তিনি দেশে নানা বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে চারবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এখন তার বয়স হয়েছে। তার অবতর্মানে তার দল, প্রিয় দেশ ও লক্ষ্য অর্জনের বিষয়সমূহের কি পরিণতি হবে- তা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে তাকে। তাই যতকাল তিনি হাল ধরে থাকতে পারবেন ততদিনে উত্তরসূরি, দক্ষ, যোগ্য, সৎ নেতৃত্ব তৈরির ব্যাপারে সুপরিকল্পনা নিয়ে কঠোরভাবে কাজ করতে হবে। দেশে যাতে গণতন্ত্র নির্বাচন সততার ব্যাপারে সব নেতাকর্মী সঠিক পথে চলায় আগ্রহী হন।

[লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট]

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০১৯ , ২২ আষাঢ় ১৪২৫, ২ জ্বিলকদ ১৪৪০

রাজনীতির পথে প্রান্তে

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের প্রকাশে প্রতিক্রিয়া

ফকীর আবদুর রাজ্জাক

একাদশ সংসদ নির্বাচন ও তার ফলাফলের কদর্মাক্ত রেশ সরকারের পিছু ছাড়াছে না। দলে এমন বহু নেতা রয়েছেন যারা ওই কালিমাযুক্ত সমালোচনা বা সরকারি-বেসকারি এজেন্টদের রিপোর্ট তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবেন। কিন্তু ছয় মাস পরে নির্বাচন কমিশন গেজেট আকারে নিজের ওয়েবসাইটে নির্বাচনের যে সার্বিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাকে বোধহয় তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া কঠিন হবে। কেননা নির্বাচন কমিশন, যে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সর্বসময় কর্তা এবং ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থনপুষ্ট। যদিও বলা হয় স্বাধীন নির্বাচন কমিশন তবুও আমরা জানি আমাদের এই উপমহাদেশে নির্বাচন কমিশন সরকারেরই আজ্ঞাবহ। ভারতের নির্বাচন কমিশন সে দেশের স্বাধীনতার পর থেকে ইন্দিরা গান্ধী পর্যন্ত বেশ ভালোই স্বাধীন ছিল। কিন্তু তারপর থেকে এবারের নির্বাচন পর্যন্ত কৌতূহলী নাটক যা দেখা গেছে তাতে আর ওই ধরনের স্বাধীন সত্তা নিয়ে কমিশনে কাজ করতে পারছে না। এবারের নির্বাচনে তো কোন কোন রাজ্যে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের নামে যা হয়েছে, যেসব ঘটনা ঘটেছে এবং নির্বাচন কমিশন অসহায়ত্বে¡র যে প্রমাণ দিয়েছে তাতে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর সময় এমন কি ইন্দিরা গান্ধীর সময়ও ভারতে যে নির্বাচন হয়েছে তার শুভ প্রভাব পড়েছিল পাকিস্তানের মতো ধর্ম প্রভাবিত রাষ্ট্রের নির্বাচনেও। যে কারণে ৫৪ নির্বাচন, বহুসংখ্যক উপনির্বাচন এমনকি ৭০-এর সাধারণ নির্বাচনেও সেই শুভ প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন বাঙালি জাতি লক্ষ্য করেছে। কিন্তু এখন বাংলাদেশের নির্বাচনে ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২১৩ ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পান প্রার্থীরা। এ সব নির্বাচন কমিশনই দায়-দায়িত্ব নিয়ে পরিচালনা করেছে। নির্বাচনের পরে তারা শুধু বলেছে ‘আমাদের কিছু করার ছিল না’। অথচ সাংবিধানিকভাবে তারাই নির্বাচনের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আমাদের নির্বাচন কমিশন কয়েকদিন আগে গেজেট প্রকাশ করে যে নির্বাচনের সার্বিক রিপোর্ট জাতির সামনে তুলে ধরেছেন তাতে ২১৩ কেন্দ্রে প্রার্থীরা শতভাগ পেয়েছেন অর্থাৎ শতভাগ ভোট পড়েছে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবার যথাযথভাবে নির্বাচন করেনি বা অংশ নেয়নি। তারপরও তো দুই ডজন দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। অসংখ্য পরিমাণ স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল তারা কি ওই ২১৩ কেন্দ্রে নিজেদের ভোটটিও প্রদান করেননি?

শুধু কি তাই? ওই সব এলাকায় কি একজন ভোটার মারা যাননি, দু’একটা ভোট বাতিল হয়নি? সঙ্গত কারণে একজনও কি ভোটদানে অনুপস্থিত থাকেননি? এরপরও শতভাগ ভোট পড়ার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। যেন ভৌতিক ভোট। নির্বাচন কমিশনের কথা বাদ দিলেও একজনও কি বিবেকবান মানুষ ছিল না, যিনি পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করে বলেননি শতভাগ যেন না হয়, তাহলে তা বিশ্বাসযোগ্য হবে না। নিজের জেলায় জানা একটা এলাকার একটি কেন্দ্রের খবর জেনেছি। যখন গায়েবি ভোট প্রদানের মহড়া চলছিল তখন একজন ওই এলাকার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত হয়ে সচক্ষে সে দৃশ্য দেখে ধমক দিয়ে ‘করিতকর্মা কর্মী’দের বলেছেন যথেষ্ট হয়েছে আর দরকার নেই। তোমাদের প্রার্থী এমনিতেই জিতবে। কয়েকদিন আগে এমনি এক করিতকর্মা নির্বাচিত এমপির সঙ্গে দেখা হয়েছিল এক পুনর্মিলনী সভায়। তিনি আমারও স্নেহভাজন। বক্তৃতা দেয়ার সময় বেশ গর্ব করে বললেন ‘আমি আপনাদের দোয়ায় ৯১ ভাগ ভোট পেয়ে জিতেছি’। উপস্থিত সবাই করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানালো। আবার নিজের কানে তার গর্বের ভাষণ শোনার পর লজ্জায় মাথা নিচু করে হাতে পাওয়া একটা ছড়ার বই পড়ছিলাম। কেননা গণতান্ত্রিক দেশে তো নয়ই, আমাদের উপমহাদেশে কোন নির্বাচনের ইতিহাসে ৯১ ভাগ ভোট পাওয়া বা ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পাওয়া অথবা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ সিটে বিজয়ী হওয়ার নজির নেই। বাংলাদেশে এমন নজির সৃষ্টি হয়েছে এটা আনন্দের না লজ্জার?

নির্বাচন কমিশনের যে ফাইন্যাল ভোটের রেজাল্ট ওয়েবসাইটে বেরিয়েছে তাতে ১৪টি আসনের সব কেন্দ্রেই ভোট পড়েছে ৯০ থেকে ৯১ দশমিক ৯৯ ভাগ। এমন কেন্দ্রের সংখ্যা ৭ হাজার ৬৬৯টি। ৯৯ ভাগ বা তার বেশি ভোট পড়েছে ১২৭টি কেন্দ্রে। ৮০ থেকে ৮৯ দশমিক ৯৯ ভাগ ভোট পড়েছে ১৫ হাজার ৭১৯টি কেন্দ্রে। ৭০ থেকে ৭৯ দশমিক ৯৯ ভাগ ভোট পড়েছে ১০ হাজার ৭৩টি কেন্দ্রে। এটাই হলো একাদশ সংসদের নির্বাচনী চিত্র। আর একটা অস্বাভাবিক ঘটনা হলো ৬ মাস পরে নির্বাচন কমিশন তাদের সার্বিক ফলাফল প্রকাশ করেছে। যেভাবে সেকাল থেকে একাল পর্যন্ত দেশের সাধারণ নির্বাচন হয়, তাতে নির্বাচন সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফল গণনা করে কেন্দ্রে উপস্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের জানিয়ে দেয়া হয়। তারপর থানা নির্বাচন কমিশন হয়ে তা জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে যায়। যেখান থেকেই সব হিসাব-নিকাশ-বাতিল ইত্যাদি তথ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। এ কাজটি শেষ হয় নির্বাচনের রাতেই। আর বেসরকারি ফল ঘোষণ হয় নির্বাচনের দিনই। এখন জেলা অফিস থেকে পাঠানো ফল যাচাই-বাছাই করে ফাইনাল রেজাল্ট গেজেট আকারে প্রকাশ করতে নির্বাচন কমিশন কেন ৬ মাস সময় নিল? এটাতেও দেশের প্রতিটি সাধারণ শিক্ষিত মানুষই সন্দেহের চোখে দেখছে নির্বাচন কমিশনের কর্মকান্ডকে। অথচ প্রথম গেজেট প্রকাশের পরই নির্বাচিত এমপিরা শপথ নিয়ে রিতিমতো সংসদ কর্মকান্ড চালাচ্ছেন এবং বাজেটও পাস করেছেন। এতে করে সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধী মহল থেকে এতদিন দুর্নীতি, কারচুপি, ব্যালট কেটে বাক্স ভরা বা আগের রাতেই ভোটবাক্স ভরে রাখার যেসব অভিযোগ দিচ্ছিলেন ফাইনাল গেজেটের ফলাফলে এবার সেটাই প্রমাণ হয়েছে। তার জন্য নির্বাচন কমিশন কোনভাবেই দায় এড়াতে পারে না। সরকারকে মহা বিব্রত অবস্থায় ফেলেছে ৬ মাস পরে তা প্রকাশ করে। যোগ্যতা, দক্ষতা ও আন্তরিকতা থাকলে এমন ফলাফল ঘোষণা করার জন্য কোনভাবেই এক মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। এত বিলম্বের পেছনে কোন রহস্য নেই তো?

আমাদের বর্তমান নির্বাচন কমিশনে দিন দিন মতপার্থক্য বাড়ছে। এতদিন একজন কমিশনার নানা বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ না করে নিজেকে ব্যতিক্রম হিসেবে প্রতিপন্ন করেছেন। এবার যখন নির্বাচন কমিশন তাদের ফলাফল নিজ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করল তখন আর একজন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামÑ বলেই দিয়েছেন ‘কোন কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়া স্বাভাবিক ঘটনা নয়’। তিনি মনে করেন ‘ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভোটের এই হিসাবে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। অর্থাৎ দেশবাসীর সামনে নির্বাচন কমিশনের যে ফলাফলের হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে তাতে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে।’ এই শুভঙ্করের ফাঁকির অভিযোগ মাথায় নিয়েই একাদশ সংসদের অস্তিত্ব দেশবাসীকে মেনে নিতে হয়েছে। যে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ও কার্যক্রমে শুভঙ্করের ফাঁকি থাকে তাকে আর যাই হোক প্রকৃত গণতন্ত্র বলে অভিহিত করা যায় না। এহেন সন্দেহজনক, অস্বাভাবিক ও শুভঙ্করের ফাঁকির বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করার অধিকার রাখে। বিচার বিভাগও হস্তক্ষেপ করতে পারেন। শতভাগ ভোট পড়া কেন্দ্রগুলো যেসব নির্বাচনী এলাকাতে ঘটছে সেই এলাকার কোন ব্যক্তি বিবেকের তাড়নায় আসল সত্যি জানার জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। তখন নির্বাচন কমিশনকে দায় স্বীকার করে সাক্ষী দিতে হবে। কারণ ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশন ফাইনাল ভোটের হিসেবে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। পেছানোর সুযোগ নেই। আর নির্বাচনের ফলাফলের প্রকৃত সত্য উচ্চ আদালতের মাধ্যমেই জাতির সামনে প্রতিষ্ঠা পাবে। কথা ছিল প্রধান ও অন্য চারজন কমিশনার সব ব্যাপারে ঐকমত্য হয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন। তারা স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। ক্ষমতাসীন সরকার কেবল প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য সেই স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের চরিত্রের দেখা পাচ্ছে না জাতি।

যে কোন গণতান্ত্রিক দেশে জাতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে যখন একটি দল সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং সরকার গঠন করে তখন সেই দলের নেতাকর্মীরা দারুন উৎফুল্ল হয়। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের মতো অনগ্রসর ও নানা প্রতিবন্ধিকতার মোকাবিলা করে উন্নয়নের ধারা অক্ষুণ্ন রাখার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয় যেসব দেশে সরকারে যারা অধিষ্ঠিত হয় তাদের দায়িত্বের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই দায়িত্বের কথাটিই বেশিরভাগ ক্ষমতাসীন সরকার ও তাদের সংসদ সদস্যরা ভুলে যান। জনগণের বিপুল ভোট বা সমর্থন যে বিপুল দায়িত্ব বর্তানোর বিষয় এই সহজ কথাটি ভুলে গিয়ে এমপি-নেতারা জনগণের দেয়া ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করে দেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটাই সত্য। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভের বিস্ময়কর নজির স্থাপন করেছে। এখন নির্বাচন কমিশনই বলছেÑ এমনটা অস্বাভাবিক। যেমনই হোক এই বিপুল বিজয়কে মহা দায়িত্ব অর্পণ ভেবে যদি মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা সততা, আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের উন্নয়নে কাজ করেন এবং উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হন তাহলে নির্বাচনে বিপুল বিজয়কে যারা সন্দেহের চোখে আজ সমালোচনা করছে তাদের সেই আক্রমণের ধার ভোঁতা হয়ে যাবে। আর যদি ক্ষমতার বিপুল বিজয় বিপুল অপব্যবহারের নগ্ন আকার ধারণ করে তাহলে দেশের প্রতিটি সাধারণ সচেতন মানুষই ধরে নেবে সন্দেহজনক এক নির্বাচনে বিস্ময়কর বিজয় লাভের ভ্রান্ত প্রতিচ্ছবি দেখিয়ে এ সরকার ক্ষমতা কব্জা করেছিল। শেখ হাসিনাই একমাত্র ভরসা। জনগণ এখন আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক বেশি ভরসা করে তাকে।

প্রতিবেশী ভারতে এবার নির্বাচন হয়েছে। যেখানে গত বছরের চাইতেও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন নরেন্দ্র মোদি ও জনতা জোট। নির্বাচনে আর্থ-সামাজিক কোন পরিকল্পনার চাইতেও প্রাধান্য পেয়েছে ধর্মান্ধতার বিষয়। নির্বাচনের সময় এবং তার পরপরই রামমন্দির নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে জনতা জোটের উগ্রহিন্দু দলগুলো। তারা বিশ্বাস করে মি. মোদি এত বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন তাদের হিন্দুত্বইজম চাঙ্গা করার কারণেই। মোদি নির্বাচনের প্রচারে নেমে আর ধর্মনিরপেক্ষ প্রমাণ করার চেষ্টাও করেননি। অতএব ভারতে এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে ভারত আর গান্ধী, নেহরু, মৌলানা আজাদের ভারত নেই। সংবিধানে নামেমাত্র ধর্মনিরপেক্ষতার কথা থাকলেও কার্যক্ষেত্রে উগ্র হিন্দুত্ববাদের নীতি, আর্দশ ও প্রভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের নির্বাচনে এমন আর্দশিক সংকট না থাকলেও সরকারি ছত্রছায়ায় এসে সমাজের একটি বিশাল অপরাধী শ্রেণী নির্বাচনকে যে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে, তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। যে কারণে ৯০ থেকে শতভাগ ভোট পড়ার নজির স্থাপিত হয়েছে। জাতির জন্য, গণতন্ত্র ও মূল্যবোধের জন্য এটা অশনিসঙ্কেত।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যথার্থ রক্তের উত্তরসূরি শেখ হাসিনাকেই দেশ, গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একটা সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তিনি দেশে নানা বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে চারবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এখন তার বয়স হয়েছে। তার অবতর্মানে তার দল, প্রিয় দেশ ও লক্ষ্য অর্জনের বিষয়সমূহের কি পরিণতি হবে- তা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে তাকে। তাই যতকাল তিনি হাল ধরে থাকতে পারবেন ততদিনে উত্তরসূরি, দক্ষ, যোগ্য, সৎ নেতৃত্ব তৈরির ব্যাপারে সুপরিকল্পনা নিয়ে কঠোরভাবে কাজ করতে হবে। দেশে যাতে গণতন্ত্র নির্বাচন সততার ব্যাপারে সব নেতাকর্মী সঠিক পথে চলায় আগ্রহী হন।

[লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট]