নগরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি

চরম দুর্ভোগে রাজধানীবাসী

মেট্রোরেলের নির্মাণ ও সড়কের ড্রেন সংস্কার কাজের কারণে শহরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়িতে চরম দুর্ভোগে রাজধানীবাসী। বিশেষ করে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল থেকে পুরানা পল্টন মোড় হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজের জন্য প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয় যানবাহনকে। নির্মাণ কাজের কারণে প্রধান সড়কের অধিকাংশ স্থান ব্যারিকেট দিয়ে বন্ধ করার কারণে যানবাহন ও পথচারী চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। যানবাহন চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা না করে বিভিন্ন সময় রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে স্থানীয়রা জানান। এছাড়া রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা না রেখে নির্মাণ কাজ শুরু করায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। এদিকে রাজধানীর মতিঝিল, গোপীবাগ, মানিকনগর, মুগদা ও বাসাবোসহ বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন সংস্কারের জন্য সড়কের মাঝে বড় পাইপ বসানো হচ্ছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা কেটে রাখার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানায়।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মতিঝিল থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত প্রধান সড়কের অধিকাংশ স্থান বন্ধ করে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। গাড়ি চলাচলের জন্য এই সড়কের দুই পাশে ১০ ফুট বা একলেন জায়গা রাখা হয়েছে। যা দিয়ে গাড়ি ও রিকশা পাশাপাশি চলতে পারে না। মতিঝিলের দিলকুশার ভিতর দিয়ে একাধিক বিকল্প সড়ক রয়েছে। এই সড়কগুলো দিয়ে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে যেতে পারে। কিন্তু সড়কজুড়ে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়। মতিঝিলের বিমান অফিস থেকে শিল্প ভবন পর্যন্ত সড়কটি পুরোপুরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে। মতিঝিলের যানবাহনগুলো এই সড়ক ব্যবহার করে গুলিস্তানের দিকে যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু সে ব্যবস্থা করা হয়নি। তাই মতিঝিল থেকে প্রেসক্লাব আসার পথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয় গণপরিবহনকে। কোন কোন স্থানে পথচারী চলাচলের ফুটপাত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের।

এ বিষয়ে আবদুল কাদের নামের মেশকাত পরিবহনের এক চালক সংবাদকে বলেন, মেট্রোরেলের কাজের কারণে প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয় বিভিন্ন স্থানে। আগে মোহাম্মদপুর থেকে যাত্রাবাড়ী আসতে সময় লাগতো দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এখন সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। কারণ রাস্তা এই খোঁড়াখুঁড়ি ও মেট্রোরেলের কাজের কারণে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো যায় না। কাজ শুরুর আগে গাড়ি চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা করা দরকার ছিল বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোরেল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক সংবাদকে বলেন, মেট্রোরেল নির্মাণ কাজ শুরুর আগে আমাদের নিজস্ব একটি ট্রাফিক ব্যবস্থা রেখে কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু কোন কোন স্থানে আমরা আমাদের নিজস্ব ট্রাফিক ব্যবস্থা অনুসরণ করতে পারি না। সর্বশেষ অবস্থা বিবেচনা করে এ ক্ষেত্রে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহায়তা নিতে হয়। মতিঝিলের ক্ষেত্রে ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে। তারা যেভাবে নির্দেশ দিচ্ছে যানবাহন সেভাবে চলাচল করছে। তবে আমরা সাধারণত দুইটি গাড়ি পাশাপাশি চলাচলের ব্যবস্থা রেখেই নির্মাণ কাজ শুরু করি। যে সব স্থানে পাশাপাশি দুই গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে সেখানে ফুটপাতের কিছু অংশ ভেঙে দেয়া হচ্ছে। পথচারী চলাচলের কোন সমস্যা না হয় সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে রাজধানীর মতিঝিল, গুপিবাগ, মানিকনগর, মুগদা ও বাসাবোসহ বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন সংস্কারের জন্য সড়কের মাঝে বড় পাইপ বসানো হচ্ছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা কেটে রাখার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানায়। মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকসংলগ্ন দক্ষিণ কমলাপুর সড়কের বেশকিছু অংশ এক মাস ধরে পুরোপুরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ সড়কের মাঝখানে বড় পাইপ স্থাপন করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ কারণে এ সড়ক দিয়ে পথচারীরা কোনরকমে চলাচল করতে পারলেও কোন যানবাহন চলছে না। এতে ওই সড়কের চাপ অন্য সড়কে গিয়ে আশপাশের সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি করছে। এ সড়কের কিছু দূরেই সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের আশপাশের সব সড়কে ড্রেন স্থাপনে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। আরকে মিশন রোডের মাঝখানে বড় বড় সিমেন্টের পাইপ ফেলে রাখা হয়েছে। এ সড়কে পাইপ স্থাপনের কাজ চলায় যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। কমলাপুর থেকে টিটিপাড়া পর্যন্ত রাস্তার পাশে সড়ক খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এ কারণে রাতদিন ওই সড়কে যানজট তৈরি হচ্ছে। অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা দিলকুশার প্রধান সড়ক খুঁড়ে পাইপ ড্রেন স্থাপন করা হচ্ছে। এ জন্য রাস্তার বেশিরভাগ অংশ দীর্ঘদিন থেকে খুঁড়ে রাখায় গাড়ি ও জনসাধারণের চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। বাসাবো বৌদ্ধমন্দিরসংলগ্ন অলিগলি দীর্ঘদিন থেকে খোঁড়াখুঁড়ি করায় ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ওই সড়কে কাজ চলার কারণে মূল সড়কেও ইট-বালু ফেলে রাখা হয়েছে। এতে ওই সড়কের অর্ধেক বন্ধ থাকায় সকাল থেকে রাতঅবধি যানজট লেগেই থাকে। সেগুনবাগিচা এলাকায় ওয়াসার পানির পাইপ বসানোর কার্যক্রম চলছে দীর্ঘদিন থেকে। এ জন্য বড় বড় সিমেন্টের পাইপ ফেলে রাখা হয়েছে সড়কে। এছাড়া সেগুনবাগিচার অলিগলি থেকে মূল সড়ক সর্বত্রই খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। ফলে এসব সড়ক দিয়ে চলাচলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। বসিলাতে সড়ক উন্নয়নে দীর্ঘদিন থেকে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। কিন্তু কাজ এখনও শেষ হয়নি। ফলে জনসাধারণকে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

রাজধানীতে প্রায় তিন বছর আগে মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়েছে। উত্তরা থেকে মিরপুর, শ্যাওড়াপাড়া হয়ে আগারগাঁও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অফিস পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে কাজ করা হয়। এ কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীকে দীর্ঘদিন থেকে ভুগতে হয়েছে। তাদের সে ভোগান্তি এখনও শেষ হয়নি। আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট, শাহবাগ হয়ে বর্তমানে মতিঝিল পর্যন্ত কাজ চলছে। এ কারণে ফার্মগেট, কাওরানবাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, জাতীয় প্রেসক্লাব, পল্টন, দৈনিকবাংলা, মতিঝিল এলাকার সড়কে রাতদিন যানজট লেগেই থাকছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছে সব ধরনের যানবহন। তীব্র গরমের মধ্যে যানজটে হাঁসফাঁস করছে মানুষ।

সাধারণত বর্ষাকালে বিশেষ করে মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বছরের পাঁচ মাস রাস্তা খনন না করার নিয়ম রয়েছে। এ সময়ে বিশেষ প্রয়োজন না থাকলে দিনের বেলায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। সিটি করপোরেশন অন্য কোন সেবা সংস্থাকেও এ সময় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি দিবে না। কিন্তু খোদ সিটি করপোরেশনই সে নিয়ম মানছে না। এর সঙ্গে অন্য সংস্থাগুলোও সিটি করপোরেশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। ফলে সারা বছরই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তবে ভিন্ন কথা বলছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, বর্ষার পানি যাতে দ্রুত সরে যেতে পারে সে জন্যই ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। অর্থবছরের কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে জুন মাস অর্থবছরের শেষ মাস হওয়ায় ঠিকাদাররা এ সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। এ কারণে এ সময়ে কাজ একটু বেশি দেখা যায়। তবে এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন সার্বক্ষণিক তদারকি করছে বলেও তিনি জানান। মেট্রোরেলের কাজের কারণে ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সরকারের একটা মেগাপ্রকল্প। সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি চাইলে না দিয়ে উপায় থাকে না।

রবিবার, ০৭ জুলাই ২০১৯ , ২৩ আষাঢ় ১৪২৫, ৩ জ্বিলকদ ১৪৪০

নগরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি

চরম দুর্ভোগে রাজধানীবাসী

মাহমুদ আকাশ

image

রাজধানীতে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। মতিঝিল থেকে তোলা -সোহরাব আলম

মেট্রোরেলের নির্মাণ ও সড়কের ড্রেন সংস্কার কাজের কারণে শহরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়িতে চরম দুর্ভোগে রাজধানীবাসী। বিশেষ করে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল থেকে পুরানা পল্টন মোড় হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজের জন্য প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয় যানবাহনকে। নির্মাণ কাজের কারণে প্রধান সড়কের অধিকাংশ স্থান ব্যারিকেট দিয়ে বন্ধ করার কারণে যানবাহন ও পথচারী চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। যানবাহন চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা না করে বিভিন্ন সময় রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে স্থানীয়রা জানান। এছাড়া রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা না রেখে নির্মাণ কাজ শুরু করায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। এদিকে রাজধানীর মতিঝিল, গোপীবাগ, মানিকনগর, মুগদা ও বাসাবোসহ বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন সংস্কারের জন্য সড়কের মাঝে বড় পাইপ বসানো হচ্ছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা কেটে রাখার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানায়।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মতিঝিল থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত প্রধান সড়কের অধিকাংশ স্থান বন্ধ করে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। গাড়ি চলাচলের জন্য এই সড়কের দুই পাশে ১০ ফুট বা একলেন জায়গা রাখা হয়েছে। যা দিয়ে গাড়ি ও রিকশা পাশাপাশি চলতে পারে না। মতিঝিলের দিলকুশার ভিতর দিয়ে একাধিক বিকল্প সড়ক রয়েছে। এই সড়কগুলো দিয়ে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে যেতে পারে। কিন্তু সড়কজুড়ে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়। মতিঝিলের বিমান অফিস থেকে শিল্প ভবন পর্যন্ত সড়কটি পুরোপুরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে। মতিঝিলের যানবাহনগুলো এই সড়ক ব্যবহার করে গুলিস্তানের দিকে যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু সে ব্যবস্থা করা হয়নি। তাই মতিঝিল থেকে প্রেসক্লাব আসার পথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয় গণপরিবহনকে। কোন কোন স্থানে পথচারী চলাচলের ফুটপাত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের।

এ বিষয়ে আবদুল কাদের নামের মেশকাত পরিবহনের এক চালক সংবাদকে বলেন, মেট্রোরেলের কাজের কারণে প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয় বিভিন্ন স্থানে। আগে মোহাম্মদপুর থেকে যাত্রাবাড়ী আসতে সময় লাগতো দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এখন সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। কারণ রাস্তা এই খোঁড়াখুঁড়ি ও মেট্রোরেলের কাজের কারণে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো যায় না। কাজ শুরুর আগে গাড়ি চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা করা দরকার ছিল বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোরেল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক সংবাদকে বলেন, মেট্রোরেল নির্মাণ কাজ শুরুর আগে আমাদের নিজস্ব একটি ট্রাফিক ব্যবস্থা রেখে কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু কোন কোন স্থানে আমরা আমাদের নিজস্ব ট্রাফিক ব্যবস্থা অনুসরণ করতে পারি না। সর্বশেষ অবস্থা বিবেচনা করে এ ক্ষেত্রে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহায়তা নিতে হয়। মতিঝিলের ক্ষেত্রে ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে। তারা যেভাবে নির্দেশ দিচ্ছে যানবাহন সেভাবে চলাচল করছে। তবে আমরা সাধারণত দুইটি গাড়ি পাশাপাশি চলাচলের ব্যবস্থা রেখেই নির্মাণ কাজ শুরু করি। যে সব স্থানে পাশাপাশি দুই গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে সেখানে ফুটপাতের কিছু অংশ ভেঙে দেয়া হচ্ছে। পথচারী চলাচলের কোন সমস্যা না হয় সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে রাজধানীর মতিঝিল, গুপিবাগ, মানিকনগর, মুগদা ও বাসাবোসহ বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন সংস্কারের জন্য সড়কের মাঝে বড় পাইপ বসানো হচ্ছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা কেটে রাখার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানায়। মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকসংলগ্ন দক্ষিণ কমলাপুর সড়কের বেশকিছু অংশ এক মাস ধরে পুরোপুরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ সড়কের মাঝখানে বড় পাইপ স্থাপন করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ কারণে এ সড়ক দিয়ে পথচারীরা কোনরকমে চলাচল করতে পারলেও কোন যানবাহন চলছে না। এতে ওই সড়কের চাপ অন্য সড়কে গিয়ে আশপাশের সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি করছে। এ সড়কের কিছু দূরেই সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের আশপাশের সব সড়কে ড্রেন স্থাপনে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। আরকে মিশন রোডের মাঝখানে বড় বড় সিমেন্টের পাইপ ফেলে রাখা হয়েছে। এ সড়কে পাইপ স্থাপনের কাজ চলায় যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। কমলাপুর থেকে টিটিপাড়া পর্যন্ত রাস্তার পাশে সড়ক খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এ কারণে রাতদিন ওই সড়কে যানজট তৈরি হচ্ছে। অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা দিলকুশার প্রধান সড়ক খুঁড়ে পাইপ ড্রেন স্থাপন করা হচ্ছে। এ জন্য রাস্তার বেশিরভাগ অংশ দীর্ঘদিন থেকে খুঁড়ে রাখায় গাড়ি ও জনসাধারণের চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। বাসাবো বৌদ্ধমন্দিরসংলগ্ন অলিগলি দীর্ঘদিন থেকে খোঁড়াখুঁড়ি করায় ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ওই সড়কে কাজ চলার কারণে মূল সড়কেও ইট-বালু ফেলে রাখা হয়েছে। এতে ওই সড়কের অর্ধেক বন্ধ থাকায় সকাল থেকে রাতঅবধি যানজট লেগেই থাকে। সেগুনবাগিচা এলাকায় ওয়াসার পানির পাইপ বসানোর কার্যক্রম চলছে দীর্ঘদিন থেকে। এ জন্য বড় বড় সিমেন্টের পাইপ ফেলে রাখা হয়েছে সড়কে। এছাড়া সেগুনবাগিচার অলিগলি থেকে মূল সড়ক সর্বত্রই খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। ফলে এসব সড়ক দিয়ে চলাচলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। বসিলাতে সড়ক উন্নয়নে দীর্ঘদিন থেকে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। কিন্তু কাজ এখনও শেষ হয়নি। ফলে জনসাধারণকে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

রাজধানীতে প্রায় তিন বছর আগে মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়েছে। উত্তরা থেকে মিরপুর, শ্যাওড়াপাড়া হয়ে আগারগাঁও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অফিস পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে কাজ করা হয়। এ কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীকে দীর্ঘদিন থেকে ভুগতে হয়েছে। তাদের সে ভোগান্তি এখনও শেষ হয়নি। আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট, শাহবাগ হয়ে বর্তমানে মতিঝিল পর্যন্ত কাজ চলছে। এ কারণে ফার্মগেট, কাওরানবাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, জাতীয় প্রেসক্লাব, পল্টন, দৈনিকবাংলা, মতিঝিল এলাকার সড়কে রাতদিন যানজট লেগেই থাকছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছে সব ধরনের যানবহন। তীব্র গরমের মধ্যে যানজটে হাঁসফাঁস করছে মানুষ।

সাধারণত বর্ষাকালে বিশেষ করে মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বছরের পাঁচ মাস রাস্তা খনন না করার নিয়ম রয়েছে। এ সময়ে বিশেষ প্রয়োজন না থাকলে দিনের বেলায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। সিটি করপোরেশন অন্য কোন সেবা সংস্থাকেও এ সময় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি দিবে না। কিন্তু খোদ সিটি করপোরেশনই সে নিয়ম মানছে না। এর সঙ্গে অন্য সংস্থাগুলোও সিটি করপোরেশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। ফলে সারা বছরই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তবে ভিন্ন কথা বলছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, বর্ষার পানি যাতে দ্রুত সরে যেতে পারে সে জন্যই ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। অর্থবছরের কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে জুন মাস অর্থবছরের শেষ মাস হওয়ায় ঠিকাদাররা এ সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। এ কারণে এ সময়ে কাজ একটু বেশি দেখা যায়। তবে এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন সার্বক্ষণিক তদারকি করছে বলেও তিনি জানান। মেট্রোরেলের কাজের কারণে ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সরকারের একটা মেগাপ্রকল্প। সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি চাইলে না দিয়ে উপায় থাকে না।