শিশু সায়মাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়

ফরেনসিক রিপোর্ট

রাজধানীর ওয়ারীতে শিশু সামিয়া আক্তার সায়মার (৭) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জানা যায় ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়। সায়মার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ এ তথ্য জানান।

গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেন সোহেল মাহমুদ। তদন্ত শেষে সোহেল মাহমুদ বলেন, বাহ্যিকভাবে শিশুটির গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার আলামত পাওয়া গেছে। এছাড়া তার ঠোঁটে কামড়ের চিহ্ন এবং যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে এবং হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ আলামত আমরা পেয়েছি। সোহেল মাহমুদ বলেন, এ ব্যাপারে আরও স্পষ্ট হতে হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াবের জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সব নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। এসব প্রতিবেদন পাওয়া গেলে শিশুটির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

গত শুক্রবার মাগরিবের নামাজের সময় সায়মা নিখোঁজ হয়। অনেক খোজাখুঁজির পর নির্মাণাধীন ভবনের অষ্টম তলার একটি কক্ষ থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত সায়মা সিলভারডেল স্কুলের ছাত্রী ছিল। তার বাবা আবদুস সালাম নবাবপুরে ব্যবসা করেন।

নিহত সায়মার বাবা আবদুস সালাম বলেন, মাগরিবের আজানের সময় আমি নামাজ আদায়ে মসজিদে যাই। মসজিদ থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যার নাশতা কিনে বাসায় আসি। বাসায় এসে দেখি সায়মা নেই। আমি ও আমার স্ত্রী সায়মাকে খুঁজতে শুরু করি। ছয়তলা ও আটতলায় খুঁজে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে আবার আটতলায় খুঁজতে গিয়ে রান্নাঘরে তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় গতকাল সকালে শিশুটির বাবা আবদুস সালাম অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে ওয়ারী থানায় মামলা করেছেন।

পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আমরা কয়েকজনকে আটক করেছি। ঘটনার তদন্ত এখনো চলছে। ওয়ারী থানার ওসি আজিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ওই বাড়ি নির্মাণ কাজে নিয়োজিত লেবার রয়েছে, ডেভেলপার কোম্পানির মালিকের ছেলে, নিরাপত্তারক্ষীর ছেলে রয়েছে। তবে তাদের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি। কে বা কারা ঘটনায় জড়িত তা নির্ণয় করতে পারলে তাদের গ্রেফতার দেখানো হবে।

সায়মার জন্য নাস্তার প্যাকেটটিও ছিল বাবার হাতে

ছুটির দিন পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটান আবদুস সালাম। ছেলেমেয়েদের নিয়ে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখেন। দুপুরে জুমার নামাজ শেষে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়াও করেন। মাগরিবের নামাজ শেষে সবার জন্য আনেন সন্ধ্যার নাস্তা। কিন্তু গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সবার জন্য নাস্তা নিয়ে এসে জানতে পারেন আদরের ছোট্ট সায়মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথমে স্বাভাবিক ভেবেই নাস্তার প্যাকেট হাতে মেয়েকে খুঁজতে যান। আধাঘণ্টা ধরে খোঁজার পর ক্লান্ত হয়ে পড়েন বাবা আবদুস সালাম। তবুও থেমে থাকেননি। আশপাশে খুঁজতে খুঁজতে ভবনের ৯ম তলায় গিয়ে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে ছোট্ট সায়মার নিথর দেহ। ততক্ষণে সব আশা শেষ। খবর পেয়ে পুলিশ আসে, সিআইডির ফরেনসিক টিম আলামত সংগ্রহ করে, ঘটনা তদন্তে ডিবি টিম পরিদর্শনে আসে। কিন্তু বাকরুদ্ধ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন আবদুস সালাম। নাস্তার প্যাকেটটি তখনো ছিল তার হাতে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে সায়মার বাবা আবদুস সালাম ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে শিশু সামিয়া আফরিন সায়মার খোঁজ পাচ্ছিল না পরিবার। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওয়ারীর বনগ্রাম সড়কের ১৩৯নং নবনির্মিত ভবনটির নবম তলার ফাঁকা ফ্ল্যাটের ভেতরে সায়মাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। ভবনটির ছয়তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকত সায়মা। বাবা আবদুস সালাম নবাবপুরে মেশিনারিজের ব্যবসা করেন। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সায়মা। পড়ত ওয়ারী সিলভারডেল স্কুলের নার্সারিতে। শনিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য সায়মার মরদেহ নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। মেয়ের মরদেহ নিতে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিদের সঙ্গে আসেন বাবা আবদুস সালামও।

ঢামেক মর্গের সামনে সায়মার বাবা আবদুস সালাম বলেন, বাবা হয়ে মেয়ের মরদেহ কাটাছেড়া করতে দেখতে হচ্ছে। বাবা হয়ে নিজের কাঁধে শিশুকন্যার মরদেহ উঠাতে হবে কখনোই ভাবিনি। এ ভার সইবার নয়। আবদুস সালাম বলেন, আমার দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় ছেলে দেশের বাইরে থাকে। বড় মেয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে বাড়িতে আসার পর সায়মাকে পড়তে বসায়। ঘটনার দিনও আসরের পর পড়াশোনা শেষ করে মাগরিবের নামাজের সময় খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সায়মা।

তিনি বলেন, এ হত্যাকান্ড কোন বাবাই সহ্য করতে পারবেন না। আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সব অভিভাবক ও গণমাধ্যমের ভূমিকা দরকার। আর কোন শিশুর যেন এমন ঘটনার শিকার হতে না হয়।

রবিবার, ০৭ জুলাই ২০১৯ , ২৩ আষাঢ় ১৪২৫, ৩ জ্বিলকদ ১৪৪০

রাজধানীর ওয়ারী

শিশু সায়মাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়

ফরেনসিক রিপোর্ট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর ওয়ারীতে শিশু সামিয়া আক্তার সায়মার (৭) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জানা যায় ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়। সায়মার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ এ তথ্য জানান।

গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেন সোহেল মাহমুদ। তদন্ত শেষে সোহেল মাহমুদ বলেন, বাহ্যিকভাবে শিশুটির গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার আলামত পাওয়া গেছে। এছাড়া তার ঠোঁটে কামড়ের চিহ্ন এবং যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে এবং হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ আলামত আমরা পেয়েছি। সোহেল মাহমুদ বলেন, এ ব্যাপারে আরও স্পষ্ট হতে হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াবের জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সব নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। এসব প্রতিবেদন পাওয়া গেলে শিশুটির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

গত শুক্রবার মাগরিবের নামাজের সময় সায়মা নিখোঁজ হয়। অনেক খোজাখুঁজির পর নির্মাণাধীন ভবনের অষ্টম তলার একটি কক্ষ থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত সায়মা সিলভারডেল স্কুলের ছাত্রী ছিল। তার বাবা আবদুস সালাম নবাবপুরে ব্যবসা করেন।

নিহত সায়মার বাবা আবদুস সালাম বলেন, মাগরিবের আজানের সময় আমি নামাজ আদায়ে মসজিদে যাই। মসজিদ থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যার নাশতা কিনে বাসায় আসি। বাসায় এসে দেখি সায়মা নেই। আমি ও আমার স্ত্রী সায়মাকে খুঁজতে শুরু করি। ছয়তলা ও আটতলায় খুঁজে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে আবার আটতলায় খুঁজতে গিয়ে রান্নাঘরে তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় গতকাল সকালে শিশুটির বাবা আবদুস সালাম অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে ওয়ারী থানায় মামলা করেছেন।

পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আমরা কয়েকজনকে আটক করেছি। ঘটনার তদন্ত এখনো চলছে। ওয়ারী থানার ওসি আজিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ওই বাড়ি নির্মাণ কাজে নিয়োজিত লেবার রয়েছে, ডেভেলপার কোম্পানির মালিকের ছেলে, নিরাপত্তারক্ষীর ছেলে রয়েছে। তবে তাদের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি। কে বা কারা ঘটনায় জড়িত তা নির্ণয় করতে পারলে তাদের গ্রেফতার দেখানো হবে।

সায়মার জন্য নাস্তার প্যাকেটটিও ছিল বাবার হাতে

ছুটির দিন পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটান আবদুস সালাম। ছেলেমেয়েদের নিয়ে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখেন। দুপুরে জুমার নামাজ শেষে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়াও করেন। মাগরিবের নামাজ শেষে সবার জন্য আনেন সন্ধ্যার নাস্তা। কিন্তু গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সবার জন্য নাস্তা নিয়ে এসে জানতে পারেন আদরের ছোট্ট সায়মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথমে স্বাভাবিক ভেবেই নাস্তার প্যাকেট হাতে মেয়েকে খুঁজতে যান। আধাঘণ্টা ধরে খোঁজার পর ক্লান্ত হয়ে পড়েন বাবা আবদুস সালাম। তবুও থেমে থাকেননি। আশপাশে খুঁজতে খুঁজতে ভবনের ৯ম তলায় গিয়ে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে ছোট্ট সায়মার নিথর দেহ। ততক্ষণে সব আশা শেষ। খবর পেয়ে পুলিশ আসে, সিআইডির ফরেনসিক টিম আলামত সংগ্রহ করে, ঘটনা তদন্তে ডিবি টিম পরিদর্শনে আসে। কিন্তু বাকরুদ্ধ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন আবদুস সালাম। নাস্তার প্যাকেটটি তখনো ছিল তার হাতে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে সায়মার বাবা আবদুস সালাম ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে শিশু সামিয়া আফরিন সায়মার খোঁজ পাচ্ছিল না পরিবার। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওয়ারীর বনগ্রাম সড়কের ১৩৯নং নবনির্মিত ভবনটির নবম তলার ফাঁকা ফ্ল্যাটের ভেতরে সায়মাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। ভবনটির ছয়তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকত সায়মা। বাবা আবদুস সালাম নবাবপুরে মেশিনারিজের ব্যবসা করেন। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সায়মা। পড়ত ওয়ারী সিলভারডেল স্কুলের নার্সারিতে। শনিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য সায়মার মরদেহ নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। মেয়ের মরদেহ নিতে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিদের সঙ্গে আসেন বাবা আবদুস সালামও।

ঢামেক মর্গের সামনে সায়মার বাবা আবদুস সালাম বলেন, বাবা হয়ে মেয়ের মরদেহ কাটাছেড়া করতে দেখতে হচ্ছে। বাবা হয়ে নিজের কাঁধে শিশুকন্যার মরদেহ উঠাতে হবে কখনোই ভাবিনি। এ ভার সইবার নয়। আবদুস সালাম বলেন, আমার দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় ছেলে দেশের বাইরে থাকে। বড় মেয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে বাড়িতে আসার পর সায়মাকে পড়তে বসায়। ঘটনার দিনও আসরের পর পড়াশোনা শেষ করে মাগরিবের নামাজের সময় খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সায়মা।

তিনি বলেন, এ হত্যাকান্ড কোন বাবাই সহ্য করতে পারবেন না। আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সব অভিভাবক ও গণমাধ্যমের ভূমিকা দরকার। আর কোন শিশুর যেন এমন ঘটনার শিকার হতে না হয়।