লিবিয়ায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের

লিবিয়ার বিদ্যমান সংঘাতে গত ৩ মাসে প্রায় ছয় হাজার মানুষ হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে নিহতের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। এছাড়াও আহত হয়েছেন আরও পাঁচ হাজার মানুষ। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ত্রিপোলির একটি অভিবাসী আটক কেন্দ্রে সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত হাফতার বাহিনীর বিমান হামলায় ৪৪ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। এদিকে, লিবিয়ায় বিদ্যমান অস্থিরতার জন্য উওর আটলান্টিকের সামরিক জোট ন্যাটোকে দায়ী করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার দাবি, এ জোট লিবিয়াকে ধ্বংস করেছে। গত বৃহস্পতিবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী গিসেপ্পে কোঁতের সঙ্গে রোমে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পুতিন এ মন্তব্য করেন। ডেইলি সাবাহ, আনাদোলু এজেন্সি, পার্স টুডে।

গত শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে ত্রিপোলির অভিবাসী কেন্দ্রে হামলার নিন্দা জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ। জীবনযাপনের মানের দিকে থেকে তেলসমৃদ্ধ লিবিয়া একসময় আফ্রিকার শীর্ষে অর্থনীতির দেশ ছিল। তবে দেশটি যে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ঐশ্বর্য নিশ্চিত করেছিল, সেটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ২০১১ সালে যখন পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। তারপর থেকে লিবিয়ায় চলছে সীমাহীন সংঘাত। গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যার শিকার হওয়ার পর ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি মনোনীত সরকার রয়েছে। ওই কর্তৃপক্ষকে জাতীয় চুক্তির সরকার বা জিএনএ নামে অভিহিত করা হয়। তবে দেশেটির বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়ে গেছে। গত এপ্রিল থেকে হাফতার বাহিনী (এলএনএ) লিবিয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

প্রায় ৫ বছর ধরে লিবিয়ায় দুটি সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে একটি সরকারকে সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ। আরেকটি ফিল্ড মার্শাল হাফতারের নেতৃত্বাধীন রয়েছে। ত্রিপোলির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে তুরস্ক, ইতালি ও যুক্তরাজ্যও। আর হাফতার বাহিনীর সমর্থনে রয়েছে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও ফ্রান্স। তবে আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট নয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে (জিএনএ) সমর্থন করে এবং শান্তি আলোচনার আহ্বান জানায়। এদিকে, গত বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, সিরিয়া থেকে উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা লিবিয়ায় যাচ্ছে। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। আপনারা কী স্মরণ করতে পারেন কে লিবিয়াকে ধ্বংস করেছে? এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ন্যাটো। ইউরোপীয় বিমান থেকে লিবিয়ায় বোমাবর্ষণ করা হয়েছিল। লিবিয়ায় বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে পুতিন বলেন, যত দ্রুত সম্ভব লিবিয়ায় রক্তপাত বন্ধ করা জরুরি।

লিবিয়ার বর্তমান সংকট নিরসনে রাশিয়ার মূল ভূমিকা নেয়া উচিত বলেও মনে করেন পুতিন। তিনি বলেন, যারা এ সংকট তৈরি করেছে বিষয়টি নিয়ে তাদের কাছেই প্রশ্ন তোলা উচিত। আমরা এ সংকটের উত্তরণ চাই। সবার সঙ্গে কথা বলাটা জরুরি। যত দ্রুত সম্ভব রক্তপাত থামানো উচিত। দ্রুত আলোচনা শুরু করা দরকার।

রবিবার, ০৭ জুলাই ২০১৯ , ২৩ আষাঢ় ১৪২৫, ৩ জ্বিলকদ ১৪৪০

লিবিয়ায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের

সংবাদ ডেস্ক

image

লিবিয়ার বিদ্যমান সংঘাতে গত ৩ মাসে প্রায় ছয় হাজার মানুষ হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে নিহতের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। এছাড়াও আহত হয়েছেন আরও পাঁচ হাজার মানুষ। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ত্রিপোলির একটি অভিবাসী আটক কেন্দ্রে সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত হাফতার বাহিনীর বিমান হামলায় ৪৪ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। এদিকে, লিবিয়ায় বিদ্যমান অস্থিরতার জন্য উওর আটলান্টিকের সামরিক জোট ন্যাটোকে দায়ী করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার দাবি, এ জোট লিবিয়াকে ধ্বংস করেছে। গত বৃহস্পতিবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী গিসেপ্পে কোঁতের সঙ্গে রোমে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পুতিন এ মন্তব্য করেন। ডেইলি সাবাহ, আনাদোলু এজেন্সি, পার্স টুডে।

গত শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে ত্রিপোলির অভিবাসী কেন্দ্রে হামলার নিন্দা জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ। জীবনযাপনের মানের দিকে থেকে তেলসমৃদ্ধ লিবিয়া একসময় আফ্রিকার শীর্ষে অর্থনীতির দেশ ছিল। তবে দেশটি যে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ঐশ্বর্য নিশ্চিত করেছিল, সেটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ২০১১ সালে যখন পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। তারপর থেকে লিবিয়ায় চলছে সীমাহীন সংঘাত। গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যার শিকার হওয়ার পর ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি মনোনীত সরকার রয়েছে। ওই কর্তৃপক্ষকে জাতীয় চুক্তির সরকার বা জিএনএ নামে অভিহিত করা হয়। তবে দেশেটির বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়ে গেছে। গত এপ্রিল থেকে হাফতার বাহিনী (এলএনএ) লিবিয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

প্রায় ৫ বছর ধরে লিবিয়ায় দুটি সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে একটি সরকারকে সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ। আরেকটি ফিল্ড মার্শাল হাফতারের নেতৃত্বাধীন রয়েছে। ত্রিপোলির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে তুরস্ক, ইতালি ও যুক্তরাজ্যও। আর হাফতার বাহিনীর সমর্থনে রয়েছে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও ফ্রান্স। তবে আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট নয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে (জিএনএ) সমর্থন করে এবং শান্তি আলোচনার আহ্বান জানায়। এদিকে, গত বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, সিরিয়া থেকে উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা লিবিয়ায় যাচ্ছে। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। আপনারা কী স্মরণ করতে পারেন কে লিবিয়াকে ধ্বংস করেছে? এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ন্যাটো। ইউরোপীয় বিমান থেকে লিবিয়ায় বোমাবর্ষণ করা হয়েছিল। লিবিয়ায় বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে পুতিন বলেন, যত দ্রুত সম্ভব লিবিয়ায় রক্তপাত বন্ধ করা জরুরি।

লিবিয়ার বর্তমান সংকট নিরসনে রাশিয়ার মূল ভূমিকা নেয়া উচিত বলেও মনে করেন পুতিন। তিনি বলেন, যারা এ সংকট তৈরি করেছে বিষয়টি নিয়ে তাদের কাছেই প্রশ্ন তোলা উচিত। আমরা এ সংকটের উত্তরণ চাই। সবার সঙ্গে কথা বলাটা জরুরি। যত দ্রুত সম্ভব রক্তপাত থামানো উচিত। দ্রুত আলোচনা শুরু করা দরকার।