ফের নদী দখলের চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বুড়িগঙ্গাসহ দেশের সব নদী দখলমুক্ত করে বাংলাদেশের নদীমাতৃক রূপ তুলে ধরা হবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, নদী তীরবর্তী যেসব এলাকা দখলমুক্ত হয়েছে, সেগুলো আবার কেউ দখলের চেষ্টা করবে বলে আমি মনে করি না। আর কেউ যদি অবৈধ দখলের চিন্তা করেন, তবে ভুল করবেন। কারণ আগের সরকার আর বর্তমান সরকার এক নয়। আমরা যা বলি তাই করি।

গতকাল রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের খোলামোড়া ঘাটে নদী সীমানা পিলার, ওয়াকওয়ে, নদী তীর রক্ষায় (কি’ওয়াল) দ্বিতীয় প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও পরিবেশবিদ সৈয়দ আবুল মকসুদ, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব উল ইসলাম এবং প্রকল্প পরিচালক নুরুল আলম প্রমুখ।

এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, রাজধানীর চারপাশে থাকা নদীর তীরগুলো দখলমুক্ত করতে সরকার কাজ করছে এরপরও কেউ যদি পুনরায় নদীর তীর দখলের চেষ্টা করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নদীর তীর দখলমুক্ত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। একে একে সব নদী দখলমুক্ত করা হবে। নদীমাতৃক বাংলাদেশকে জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বুড়িগঙ্গাকে পুরানো রূপে ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন। তার সে নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঢাকার চারপাশে সার্কুলার নৌপথ চালু করে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন সহজতর করা হবে। বুড়িগঙ্গাকে হাতিরঝিলের ন্যায় নয়নাভিরাম করা হবে, বছর খানেকের মধ্যে এ দৃশ্য দেখা যাবে। বুড়িগঙ্গা হবে আনন্দ ও বিনোদনের কেন্দ্র।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করতে চাই। মানুষের জীবিকার জন্য নদী ব্যবহৃত হবেÑ আমরা সেরকম পরিবেশ গড়ে তুলব। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে সরকার কাজ করছে। এক্ষেত্রে কেউ হস্তক্ষেপ করলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ। তিনি নদী রক্ষায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে সীমানা পিলার স্থাপন, ওয়াকওয়ে, কিওয়ালসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করবে। নদীর তীরভূমিতে ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ, নদীর তীরভূমিতে পাইলের ওপর ১২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ১০ হাজার ৮২০টি সীমানা পিলার স্থাপন, তিনটি ইকোপার্ক নির্মাণ, দুটি পর্যটনবান্ধব দৃষ্টিনন্দন পার্ক, ১৯টি আরসিসি জেটি, ১০০টি আরসিসি সিঁড়ি, ৪০ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষাসহ (কি’ওয়াল) আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ করা হবে। এজন্য প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের জুলাই হতে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। নদীর তীরভূমির অবৈধ দখলরোধ, দখলমুক্ত অংশের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি, পরিবেশগত উন্নয়ন, ওয়াকওয়ে (হাঁটার রাস্তা) নির্মাণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। গতকাল ঢাকার কামরাঙ্গিরচর খোলামোড়া ঘাটে সীমানা পিলার, ওয়াকওয়ে, নদীতীর রক্ষা (কি’ওয়াল), ওয়াকওয়ে অন পাইল নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

প্রথম পর্যায়ে ঢাকা নদীবন্দর এলাকায় ৩ হাজার ৮০৩টি আরসিসি সীমানা পিলার, রামচন্দ্রপুর হতে বসিলা ও রায়েরবাজার খাল হতে কামরাঙ্গীরচর পর্যন্ত এক কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, এক কিলোমিটার কি’ওয়াল, দু’দশমিক পাঁচ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে অন পাইল নির্মাণ/স্থাপন করা হবে। ৩ হাজার ৮০৩টি আরসিসি সীমানা পিলারের মধ্যে ২ হাজার ৩৪০টি সিঙ্গেল পাইলের এবং ১ হাজার ৪৬৩টি ডাবল পাইলের হবে। ৩ হাজার ৮০৩টি আরসিসি সীমানা পিলার নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এগুলোর স্থাপনের কাজ শেষ হবে। রামচন্দ্রপুর হতে বসিলা ও রায়েরবাজার খাল হতে কামরাঙ্গীরচর পর্যন্ত এক কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, এক কিলোমিটার কি’ওয়াল এবং দু’দশমিক পাঁচ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে অন পাইল নির্মাণ/স্থাপনে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এগুলোর স্থাপনের কাজ শেষ হবে।

রবিবার, ০৭ জুলাই ২০১৯ , ২৩ আষাঢ় ১৪২৫, ৩ জ্বিলকদ ১৪৪০

ফের নদী দখলের চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বুড়িগঙ্গাসহ দেশের সব নদী দখলমুক্ত করে বাংলাদেশের নদীমাতৃক রূপ তুলে ধরা হবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, নদী তীরবর্তী যেসব এলাকা দখলমুক্ত হয়েছে, সেগুলো আবার কেউ দখলের চেষ্টা করবে বলে আমি মনে করি না। আর কেউ যদি অবৈধ দখলের চিন্তা করেন, তবে ভুল করবেন। কারণ আগের সরকার আর বর্তমান সরকার এক নয়। আমরা যা বলি তাই করি।

গতকাল রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের খোলামোড়া ঘাটে নদী সীমানা পিলার, ওয়াকওয়ে, নদী তীর রক্ষায় (কি’ওয়াল) দ্বিতীয় প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও পরিবেশবিদ সৈয়দ আবুল মকসুদ, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব উল ইসলাম এবং প্রকল্প পরিচালক নুরুল আলম প্রমুখ।

এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, রাজধানীর চারপাশে থাকা নদীর তীরগুলো দখলমুক্ত করতে সরকার কাজ করছে এরপরও কেউ যদি পুনরায় নদীর তীর দখলের চেষ্টা করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নদীর তীর দখলমুক্ত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। একে একে সব নদী দখলমুক্ত করা হবে। নদীমাতৃক বাংলাদেশকে জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বুড়িগঙ্গাকে পুরানো রূপে ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন। তার সে নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঢাকার চারপাশে সার্কুলার নৌপথ চালু করে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন সহজতর করা হবে। বুড়িগঙ্গাকে হাতিরঝিলের ন্যায় নয়নাভিরাম করা হবে, বছর খানেকের মধ্যে এ দৃশ্য দেখা যাবে। বুড়িগঙ্গা হবে আনন্দ ও বিনোদনের কেন্দ্র।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করতে চাই। মানুষের জীবিকার জন্য নদী ব্যবহৃত হবেÑ আমরা সেরকম পরিবেশ গড়ে তুলব। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে সরকার কাজ করছে। এক্ষেত্রে কেউ হস্তক্ষেপ করলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ। তিনি নদী রক্ষায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে সীমানা পিলার স্থাপন, ওয়াকওয়ে, কিওয়ালসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করবে। নদীর তীরভূমিতে ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ, নদীর তীরভূমিতে পাইলের ওপর ১২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ১০ হাজার ৮২০টি সীমানা পিলার স্থাপন, তিনটি ইকোপার্ক নির্মাণ, দুটি পর্যটনবান্ধব দৃষ্টিনন্দন পার্ক, ১৯টি আরসিসি জেটি, ১০০টি আরসিসি সিঁড়ি, ৪০ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষাসহ (কি’ওয়াল) আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ করা হবে। এজন্য প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের জুলাই হতে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। নদীর তীরভূমির অবৈধ দখলরোধ, দখলমুক্ত অংশের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি, পরিবেশগত উন্নয়ন, ওয়াকওয়ে (হাঁটার রাস্তা) নির্মাণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। গতকাল ঢাকার কামরাঙ্গিরচর খোলামোড়া ঘাটে সীমানা পিলার, ওয়াকওয়ে, নদীতীর রক্ষা (কি’ওয়াল), ওয়াকওয়ে অন পাইল নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

প্রথম পর্যায়ে ঢাকা নদীবন্দর এলাকায় ৩ হাজার ৮০৩টি আরসিসি সীমানা পিলার, রামচন্দ্রপুর হতে বসিলা ও রায়েরবাজার খাল হতে কামরাঙ্গীরচর পর্যন্ত এক কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, এক কিলোমিটার কি’ওয়াল, দু’দশমিক পাঁচ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে অন পাইল নির্মাণ/স্থাপন করা হবে। ৩ হাজার ৮০৩টি আরসিসি সীমানা পিলারের মধ্যে ২ হাজার ৩৪০টি সিঙ্গেল পাইলের এবং ১ হাজার ৪৬৩টি ডাবল পাইলের হবে। ৩ হাজার ৮০৩টি আরসিসি সীমানা পিলার নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এগুলোর স্থাপনের কাজ শেষ হবে। রামচন্দ্রপুর হতে বসিলা ও রায়েরবাজার খাল হতে কামরাঙ্গীরচর পর্যন্ত এক কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, এক কিলোমিটার কি’ওয়াল এবং দু’দশমিক পাঁচ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে অন পাইল নির্মাণ/স্থাপনে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এগুলোর স্থাপনের কাজ শেষ হবে।