ফের আন্দোলনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা

নব্বই দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ, ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু, আলাদা প্রশাসনিক ভবন নিমার্ণসহ পাঁচ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় ফের আন্দোলনে নেমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষাথীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তারা এসব দাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। মানববন্ধন থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আগামীকাল বিক্ষোভ মিছিল সহযোগে ঢাবি উপাচার্য বরাবর স্বারকলিপি প্রদানের কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন।

আন্দোলনকারীরা জানান, পাঁচ দফা দাবি আদায়ে আগামী সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকা কলেজের মূল ফটক থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ মিছিল করবেন। এরপর ঢাবি উপাচার্যকে স্মারকলিপি প্রদান করবেন। ঐদিনই তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

আন্দোলনরতদের পাঁচ দফা দাবি হচ্ছে- ফলাফল প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সকল বিভাগের ত্রুটিমুক্ত ফল প্রকাশ করা; অনার্স, মাস্টার্স, ডিগ্রির সকল বর্ষে ফলাফল অকৃতকার্য হওয়ার কারণ প্রকাশসহ খাতার পুনর্মূল্যায়ন; সাত কলেজ পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ; সিলেবাস অনুযায়ী মানসম্মত প্রশ্নপত্র প্রণয়নসহ উত্তরপত্র মূল্যায়ন সম্পূর্ণরূপে সাত কলেজের শিক্ষক দ্বারা করা এবং সেশনজট নিরসনে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশসহ ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু।

মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানান, সাত কলেজ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তরিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পর থেকে তাদের ভোগান্তি কখনই পিছু ছাড়ছে না। তারা বলেন, অনিয়মের অভিযোগ করে আমরা ইতোমধ্যেই রাস্তায় নেমেছি, কিন্তু কার্যকর কোন সমাধান পাইনি। ঢাবির অধিভুক্তির পর থেকে তীব্র সেশনজট, ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, ক্রটিযুক্ত ফল প্রকাশসহ নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে আমাদের। এসব সমস্যার সমাধানে ঢাবি কর্তৃপক্ষ দৃশ্যত কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলেও অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, ঢাবি প্রশাসন আমাদের সঙ্গে প্রহসন করছে। দাবি আদায়ের আশ্বাস দিয়েও তারা আমাদের কোন দাবিই পূরণ করেনি। আবু বকর আরও বলেন, সময়মতো পরীক্ষা না নেয়া, ফল প্রকাশে সাত থেকে আট মাস বিলম্ব করা, বিনা নোটিসে নতুন নিয়ম কার্যকর, একই বিষয়ে গণহারে ফেল, খাতার সঠিক মূল্যায়ন না হওয়া, সিলেবাস বহির্ভূত প্রশ্নপদ্ধতিসহ নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও এ সমস্যার সমাধান হয়নি। ঢাবি কর্তৃপক্ষ বারবার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও তার ফল পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। তাদের সংকট ক্রমেই বাড়ছে।

এর আগে গত রোববার বেলা ১১টায় ঢাকা কলেজের ক্যাফেটেরিয়ায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ‘সাত কলেজের শিক্ষা সংকট সমাধানে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাত কলেজের প্রতিনিধিরা।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়। এগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই এসব কলেজে চলছে নানা সংকট। ফলে লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। এ কারণে তারা কখনো পরীক্ষার রুটিন, কখনো ফলের দাবিতে রাজধানীর নীলক্ষেত ও শাহবাগের মোড় অবরোধ করছে। এ আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তিতুমীর কলেজের আবু বকর সিদ্দিক নামে এক শিক্ষার্থী চোখও হারিয়েছে। তবুও সুফল পায়নি সাত কলেজের লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। তাই বারবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

রবিবার, ০৭ জুলাই ২০১৯ , ২৩ আষাঢ় ১৪২৫, ৩ জ্বিলকদ ১৪৪০

পাঁচ দফা দাবিতে

ফের আন্দোলনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা

প্রতিনিধি, ঢাবি

নব্বই দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ, ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু, আলাদা প্রশাসনিক ভবন নিমার্ণসহ পাঁচ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় ফের আন্দোলনে নেমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষাথীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তারা এসব দাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। মানববন্ধন থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আগামীকাল বিক্ষোভ মিছিল সহযোগে ঢাবি উপাচার্য বরাবর স্বারকলিপি প্রদানের কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন।

আন্দোলনকারীরা জানান, পাঁচ দফা দাবি আদায়ে আগামী সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকা কলেজের মূল ফটক থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ মিছিল করবেন। এরপর ঢাবি উপাচার্যকে স্মারকলিপি প্রদান করবেন। ঐদিনই তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

আন্দোলনরতদের পাঁচ দফা দাবি হচ্ছে- ফলাফল প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সকল বিভাগের ত্রুটিমুক্ত ফল প্রকাশ করা; অনার্স, মাস্টার্স, ডিগ্রির সকল বর্ষে ফলাফল অকৃতকার্য হওয়ার কারণ প্রকাশসহ খাতার পুনর্মূল্যায়ন; সাত কলেজ পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ; সিলেবাস অনুযায়ী মানসম্মত প্রশ্নপত্র প্রণয়নসহ উত্তরপত্র মূল্যায়ন সম্পূর্ণরূপে সাত কলেজের শিক্ষক দ্বারা করা এবং সেশনজট নিরসনে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশসহ ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু।

মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানান, সাত কলেজ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তরিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পর থেকে তাদের ভোগান্তি কখনই পিছু ছাড়ছে না। তারা বলেন, অনিয়মের অভিযোগ করে আমরা ইতোমধ্যেই রাস্তায় নেমেছি, কিন্তু কার্যকর কোন সমাধান পাইনি। ঢাবির অধিভুক্তির পর থেকে তীব্র সেশনজট, ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, ক্রটিযুক্ত ফল প্রকাশসহ নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে আমাদের। এসব সমস্যার সমাধানে ঢাবি কর্তৃপক্ষ দৃশ্যত কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলেও অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, ঢাবি প্রশাসন আমাদের সঙ্গে প্রহসন করছে। দাবি আদায়ের আশ্বাস দিয়েও তারা আমাদের কোন দাবিই পূরণ করেনি। আবু বকর আরও বলেন, সময়মতো পরীক্ষা না নেয়া, ফল প্রকাশে সাত থেকে আট মাস বিলম্ব করা, বিনা নোটিসে নতুন নিয়ম কার্যকর, একই বিষয়ে গণহারে ফেল, খাতার সঠিক মূল্যায়ন না হওয়া, সিলেবাস বহির্ভূত প্রশ্নপদ্ধতিসহ নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও এ সমস্যার সমাধান হয়নি। ঢাবি কর্তৃপক্ষ বারবার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও তার ফল পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। তাদের সংকট ক্রমেই বাড়ছে।

এর আগে গত রোববার বেলা ১১টায় ঢাকা কলেজের ক্যাফেটেরিয়ায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ‘সাত কলেজের শিক্ষা সংকট সমাধানে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাত কলেজের প্রতিনিধিরা।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়। এগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই এসব কলেজে চলছে নানা সংকট। ফলে লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। এ কারণে তারা কখনো পরীক্ষার রুটিন, কখনো ফলের দাবিতে রাজধানীর নীলক্ষেত ও শাহবাগের মোড় অবরোধ করছে। এ আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তিতুমীর কলেজের আবু বকর সিদ্দিক নামে এক শিক্ষার্থী চোখও হারিয়েছে। তবুও সুফল পায়নি সাত কলেজের লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। তাই বারবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছে তারা।