সুন্দরবনের মর্যাদা যেন অটুট থাকে

জুবায়ের আল মাহমুদ

সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে প্রায় ১৫৪টি শিল্পকারখানা স্থাপনের ফলে মারাত্মক হুমকিতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এ কারণে সুন্দরবনকে ‘বিপন্ন বা ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছিল প্রকৃতি রক্ষার বৈশ্বিক সংগঠন আইইউসিএন; যা গত ৭ জুন ২০১৯ তারিখে ইউনেস্কোর সদর দপ্তর প্যারিস থেকে প্রকাশিত হয়।

সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এর আশপাশে ছোট বড় শতাধিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠার মতো বিষয়গুলোয় সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রাখার কারণ হিসেবে সংস্থাটির ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে আশার কথা হচ্ছে, আজারবাইজানের বাকুতে ইউনেস্কোর চলমান ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪৩তম সভায় গত ৬ জুলাই এ বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত এসেছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউনেস্কো সুন্দরবনকে আপাতত ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রাখছে না। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ৮ মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে সুন্দরবনের ক্ষতি হয়- এমন সব কার্যক্রম (রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আশপাশের শিল্পকারখানা) বন্ধের তাগিদ রয়েছে। বিষয়গুলো নিশ্চিত করে বাংলাদেশ সরকারকে আগামী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইউনেস্কো বরাবর একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সরকারের ওই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই ও সরেজমিন তথ্য সংগ্রহের পর নিজেদের ৪৪তম সভায় সুন্দরবনের চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণ করবে ইউনেস্কো।

ইউনেস্কোর বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ রামপালে নির্মাণ কাজ চলতে থাকা কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সুন্দরবনের সন্নিকটে গড়ে ওঠা ১৫৪টি শিল্পকারখানার কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে কিনা- এ বিষয়ে বিশ্লেষণের আগে পাঠকদের কিছু পুরানো তথ্য মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করছি।

আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে ২০১৭ সালে সুন্দরবনের সন্নিকটে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছিল ইউনেস্কো। অথচ ওই সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘ইউনেস্কো পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪১তম সভায় সুন্দরবনের সন্নিকটে রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে নিজেদের আপত্তি তুলে নিয়েছে।’ সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছিল যে, ‘রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি করবে বলে যারা আন্দোলন করছেন, তারা কিছু না জেনে বা না বুঝেই করছেন।’ এমন নানা বক্তব্যে দিয়ে সরকার রামপাল বিদুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলমান রাখে।

অথচ রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের যে ক্ষতি হবেইÑ তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে কাজ করেন এমন একাধিক বিজ্ঞানী প্রতিবেদন দিয়েছেন। অধ্যাপক ডেভ নেইমার, ড. রণজিৎ সাহু, অধ্যাপক চার্লস ড্রিসকল, ড. চার্লস নরিস এবং ডোনা লিসেনবি’র মতো বিশ্বখ্যাত গবেষকদের করা ১৩টি প্রতিবেদন সরকারের কাছে বছর দুই আগে জমাও দিয়েছিল সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি। এতকিছুর পরেও সরকারের দাবি রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের কোন ক্ষতি করবে না। তবে রামপাল ইস্যুতে সরকার বাচালের মতো বক্তব্য দিলেও সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠা ১৫৪টি শিল্পকারখানা বনের কোন ক্ষতি করবে কিনাÑ এ বিষয়ে সরকার ‘বোবা নীতি’ অনুসরণ করছে।

তবে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুশ্চিন্তার কারণ নয় বলে সরকার যতই উল্লেখ করুক না কেন গত ৭ জুন প্রকাশিত ইউনেস্কোর প্রতিবেদন এবং ২০১৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪১তম সভার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সরকার এ বিষয়ে সবসময়ই জনগণকে পুরোপুরি ভুল তথ্য জানিয়ে আসছে। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নাকি কোন বিশেষ মহলের স্বার্থে এমনটা করছে তা নিয়ে অবশ্যই বিতর্ক থাকতে পারে। তবে একথা শতভাগ সত্য যে, গত ৭ জুন প্রকাশিত ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সুন্দরবনের দূষণ রোধে বাংলাদেশ সরকার গৃহিত কোন পদক্ষেপের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতিই নেই। বরং বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির আপত্তি থাকার সত্ত্বেও সরকার রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ অব্যাহত রেখেছে।’

এছাড়া সুন্দরবনে উচ্চমাত্রায় পানি দূষণ এবং ভাটি এলাকায় উচ্চমাত্রায় বায়ুদূষণ হচ্ছে বলে ইউনেস্কোর ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে প্রচুরসংখ্যক জাহাজ চললেও এ বিষয়েও সরকার কোন ধরনের পদক্ষেপ না নিয়ে বরং নিজের একগুঁয়েমি মনোভাবে অনড় রয়েছে।

সরকারের এই চরম একগুঁয়েমিতার কারণে আমাদের সুন্দরবন তথা বাংলাদেশ তার ভাবমূর্তি হারাতে বসেছিল। যদিও ইউনেস্কো সুন্দরবনের ক্ষতি হয়-এমন সব কার্যক্রম আগামী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বন্ধ করে বাংলাদেশকে একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছে। একথা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের প্রতি ইউনেস্কোর এবারের কড়া সতর্ক বাণী যদি ‘ক্ষতি হবে না বা কিছু হবে না’ বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়Ñ তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে সুন্দরবন অবশ্যই বাদ পড়বে’। আর সত্যি সত্যিই যদি এমনটা হয়, তাহলে তা হবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক। বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য বাংলাদেশে হাজার হাজার জায়গা রয়েছে। কিন্তু একটিই রয়েছে সুন্দরবন; যা বহুকাল ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে সৃষ্ট শত শত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাংলাদেশকে মায়ের মতো আগলে রেখেছে। শুধু কি তাই, সুন্দরবনকেন্দ্রিক অর্থনীতির সঙ্গেও জড়িয়ে আছে এ দেশের লক্ষাধিক মানুষ। তাই যেকোন মূল্যে অক্সিজেনের এই বিশাল কারখানা ও রয়েল বেঙ্গলের অভয়ারণ্য আমাদের সবার প্রাণের সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা যেন ধরে রাখা হয়।

[লেখক : সাংবাদিক, পরিবেশ ও সমাজ উন্নয়নকর্মী]

রবিবার, ০৭ জুলাই ২০১৯ , ২৩ আষাঢ় ১৪২৫, ৩ জ্বিলকদ ১৪৪০

সুন্দরবনের মর্যাদা যেন অটুট থাকে

জুবায়ের আল মাহমুদ

সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে প্রায় ১৫৪টি শিল্পকারখানা স্থাপনের ফলে মারাত্মক হুমকিতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এ কারণে সুন্দরবনকে ‘বিপন্ন বা ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছিল প্রকৃতি রক্ষার বৈশ্বিক সংগঠন আইইউসিএন; যা গত ৭ জুন ২০১৯ তারিখে ইউনেস্কোর সদর দপ্তর প্যারিস থেকে প্রকাশিত হয়।

সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এর আশপাশে ছোট বড় শতাধিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠার মতো বিষয়গুলোয় সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রাখার কারণ হিসেবে সংস্থাটির ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে আশার কথা হচ্ছে, আজারবাইজানের বাকুতে ইউনেস্কোর চলমান ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪৩তম সভায় গত ৬ জুলাই এ বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত এসেছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউনেস্কো সুন্দরবনকে আপাতত ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রাখছে না। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ৮ মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে সুন্দরবনের ক্ষতি হয়- এমন সব কার্যক্রম (রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আশপাশের শিল্পকারখানা) বন্ধের তাগিদ রয়েছে। বিষয়গুলো নিশ্চিত করে বাংলাদেশ সরকারকে আগামী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইউনেস্কো বরাবর একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সরকারের ওই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই ও সরেজমিন তথ্য সংগ্রহের পর নিজেদের ৪৪তম সভায় সুন্দরবনের চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণ করবে ইউনেস্কো।

ইউনেস্কোর বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ রামপালে নির্মাণ কাজ চলতে থাকা কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সুন্দরবনের সন্নিকটে গড়ে ওঠা ১৫৪টি শিল্পকারখানার কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে কিনা- এ বিষয়ে বিশ্লেষণের আগে পাঠকদের কিছু পুরানো তথ্য মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করছি।

আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে ২০১৭ সালে সুন্দরবনের সন্নিকটে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছিল ইউনেস্কো। অথচ ওই সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘ইউনেস্কো পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪১তম সভায় সুন্দরবনের সন্নিকটে রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে নিজেদের আপত্তি তুলে নিয়েছে।’ সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছিল যে, ‘রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি করবে বলে যারা আন্দোলন করছেন, তারা কিছু না জেনে বা না বুঝেই করছেন।’ এমন নানা বক্তব্যে দিয়ে সরকার রামপাল বিদুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলমান রাখে।

অথচ রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের যে ক্ষতি হবেইÑ তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে কাজ করেন এমন একাধিক বিজ্ঞানী প্রতিবেদন দিয়েছেন। অধ্যাপক ডেভ নেইমার, ড. রণজিৎ সাহু, অধ্যাপক চার্লস ড্রিসকল, ড. চার্লস নরিস এবং ডোনা লিসেনবি’র মতো বিশ্বখ্যাত গবেষকদের করা ১৩টি প্রতিবেদন সরকারের কাছে বছর দুই আগে জমাও দিয়েছিল সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি। এতকিছুর পরেও সরকারের দাবি রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের কোন ক্ষতি করবে না। তবে রামপাল ইস্যুতে সরকার বাচালের মতো বক্তব্য দিলেও সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠা ১৫৪টি শিল্পকারখানা বনের কোন ক্ষতি করবে কিনাÑ এ বিষয়ে সরকার ‘বোবা নীতি’ অনুসরণ করছে।

তবে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুশ্চিন্তার কারণ নয় বলে সরকার যতই উল্লেখ করুক না কেন গত ৭ জুন প্রকাশিত ইউনেস্কোর প্রতিবেদন এবং ২০১৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪১তম সভার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সরকার এ বিষয়ে সবসময়ই জনগণকে পুরোপুরি ভুল তথ্য জানিয়ে আসছে। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নাকি কোন বিশেষ মহলের স্বার্থে এমনটা করছে তা নিয়ে অবশ্যই বিতর্ক থাকতে পারে। তবে একথা শতভাগ সত্য যে, গত ৭ জুন প্রকাশিত ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সুন্দরবনের দূষণ রোধে বাংলাদেশ সরকার গৃহিত কোন পদক্ষেপের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতিই নেই। বরং বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির আপত্তি থাকার সত্ত্বেও সরকার রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ অব্যাহত রেখেছে।’

এছাড়া সুন্দরবনে উচ্চমাত্রায় পানি দূষণ এবং ভাটি এলাকায় উচ্চমাত্রায় বায়ুদূষণ হচ্ছে বলে ইউনেস্কোর ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে প্রচুরসংখ্যক জাহাজ চললেও এ বিষয়েও সরকার কোন ধরনের পদক্ষেপ না নিয়ে বরং নিজের একগুঁয়েমি মনোভাবে অনড় রয়েছে।

সরকারের এই চরম একগুঁয়েমিতার কারণে আমাদের সুন্দরবন তথা বাংলাদেশ তার ভাবমূর্তি হারাতে বসেছিল। যদিও ইউনেস্কো সুন্দরবনের ক্ষতি হয়-এমন সব কার্যক্রম আগামী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বন্ধ করে বাংলাদেশকে একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছে। একথা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের প্রতি ইউনেস্কোর এবারের কড়া সতর্ক বাণী যদি ‘ক্ষতি হবে না বা কিছু হবে না’ বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়Ñ তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে সুন্দরবন অবশ্যই বাদ পড়বে’। আর সত্যি সত্যিই যদি এমনটা হয়, তাহলে তা হবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক। বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য বাংলাদেশে হাজার হাজার জায়গা রয়েছে। কিন্তু একটিই রয়েছে সুন্দরবন; যা বহুকাল ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে সৃষ্ট শত শত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাংলাদেশকে মায়ের মতো আগলে রেখেছে। শুধু কি তাই, সুন্দরবনকেন্দ্রিক অর্থনীতির সঙ্গেও জড়িয়ে আছে এ দেশের লক্ষাধিক মানুষ। তাই যেকোন মূল্যে অক্সিজেনের এই বিশাল কারখানা ও রয়েল বেঙ্গলের অভয়ারণ্য আমাদের সবার প্রাণের সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা যেন ধরে রাখা হয়।

[লেখক : সাংবাদিক, পরিবেশ ও সমাজ উন্নয়নকর্মী]