বিশেষজ্ঞ রিপোর্টের পর কী পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট

ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিদূষণ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর কী পদক্ষেপ নিয়েছে ওয়াসার কাছে তা জানতে চেয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল সকালে এ বিষয়ে শুনানিতে ওয়াসার বক্তব্যও জানতে চান উচ্চ আদালত। দুপুরে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ঢাকা ওয়াসার ১০টি মডস জোনের মধ্যে চারটি থেকে সংগৃহীত আটটি নমুনার দূষণ রিপোর্ট হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয় গতকাল। আদালতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটি দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। এ সময় রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

তানভীর আহমেদ জানান, ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি রিপোর্ট দাখিলের পর ওয়াসা কী ব্যবস্থা নিয়েছে- সে ব্যাপারে আদালতের কাছে জানতে আবেদন জানিয়েছিলাম। আমরা বলেছি, সুপেয় পানি সরবরাহ করতে আইনগতভাবে তারা বাধ্য। তবে এক্ষেত্রে ওয়াসা ব্যর্থ হয়েছে। তাই আদালত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ওয়াসার বক্তব্য জানতে চেয়েছেন। এ ছাড়া আগামী ২৪ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন বলেও জানান রিটকারী পক্ষের ওই আইনজীবী।

এর আগে ঢাকা ওয়াসার ১০টি মডস জোনের মধ্যে চারটি এবং সায়েদাবাদ ও চাঁদনীঘাট এলাকা থেকে সংগৃহীত আটটি নমুনার পানিতে দূষণ পাওয়া যায়। এসব এলাকার পানিতে ব্যাকটেরিয়া ও উচ্চমাত্রার অ্যামোনিয়া পাওয়া গেছে। এছাড়াও কিছু কিছু নমুনাতে মলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। গত ৩ জুলাই এই পানি দূষণের তথ্য প্রতিবেদন আকারে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দাখিল করা হয়।

গত ২১ মে এক আদেশে ঢাকা ওয়াসার পানির উৎস, ১০টি বিতরণ জোন, গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এবং দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১০টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় ৩৪টি স্থান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে তা আইসিডিডিআরবি, বুয়েট ও ঢাবি অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে আটটি নমুনায় দূষণ পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ অনিরাপদ উৎসের পানি পান করে। ৪১ শতাংশ পানির নিরাপদ উৎসগুলোতে রয়েছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। ১৩ শতাংশ পানিতে রয়েছে আর্সেনিক। পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানিতে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮২ শতাংশ। পরে পত্রিকায়ও এসব তথ্য প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। এরপর ওই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৬ নভেম্বর রাজধানী ঢাকায় পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

পরে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে আছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং আইসিডিডিআরবির প্রতিনিধিরা। এরপর ওই কমিটিকে গত ২১ মে পানি পরীক্ষার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০১৯ , ২৪ আষাঢ় ১৪২৫, ৪ জ্বিলকদ ১৪৪০

ওয়াসার পানিদূষণ

বিশেষজ্ঞ রিপোর্টের পর কী পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিদূষণ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর কী পদক্ষেপ নিয়েছে ওয়াসার কাছে তা জানতে চেয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল সকালে এ বিষয়ে শুনানিতে ওয়াসার বক্তব্যও জানতে চান উচ্চ আদালত। দুপুরে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ঢাকা ওয়াসার ১০টি মডস জোনের মধ্যে চারটি থেকে সংগৃহীত আটটি নমুনার দূষণ রিপোর্ট হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয় গতকাল। আদালতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটি দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। এ সময় রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

তানভীর আহমেদ জানান, ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি রিপোর্ট দাখিলের পর ওয়াসা কী ব্যবস্থা নিয়েছে- সে ব্যাপারে আদালতের কাছে জানতে আবেদন জানিয়েছিলাম। আমরা বলেছি, সুপেয় পানি সরবরাহ করতে আইনগতভাবে তারা বাধ্য। তবে এক্ষেত্রে ওয়াসা ব্যর্থ হয়েছে। তাই আদালত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ওয়াসার বক্তব্য জানতে চেয়েছেন। এ ছাড়া আগামী ২৪ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন বলেও জানান রিটকারী পক্ষের ওই আইনজীবী।

এর আগে ঢাকা ওয়াসার ১০টি মডস জোনের মধ্যে চারটি এবং সায়েদাবাদ ও চাঁদনীঘাট এলাকা থেকে সংগৃহীত আটটি নমুনার পানিতে দূষণ পাওয়া যায়। এসব এলাকার পানিতে ব্যাকটেরিয়া ও উচ্চমাত্রার অ্যামোনিয়া পাওয়া গেছে। এছাড়াও কিছু কিছু নমুনাতে মলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। গত ৩ জুলাই এই পানি দূষণের তথ্য প্রতিবেদন আকারে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দাখিল করা হয়।

গত ২১ মে এক আদেশে ঢাকা ওয়াসার পানির উৎস, ১০টি বিতরণ জোন, গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এবং দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১০টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় ৩৪টি স্থান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে তা আইসিডিডিআরবি, বুয়েট ও ঢাবি অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে আটটি নমুনায় দূষণ পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ অনিরাপদ উৎসের পানি পান করে। ৪১ শতাংশ পানির নিরাপদ উৎসগুলোতে রয়েছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। ১৩ শতাংশ পানিতে রয়েছে আর্সেনিক। পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানিতে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮২ শতাংশ। পরে পত্রিকায়ও এসব তথ্য প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। এরপর ওই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৬ নভেম্বর রাজধানী ঢাকায় পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

পরে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে আছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং আইসিডিডিআরবির প্রতিনিধিরা। এরপর ওই কমিটিকে গত ২১ মে পানি পরীক্ষার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।