খুলনায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি : জনমনে উদ্বেগ

  • ১৩ দিনে তিন ধর্ষণ ও শিশু হত্যা
  • নগরীতে অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে

খুলনায় অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে। ১৩ দিনে নগরীতে তিনটি ধর্ষণ ও শিশু হত্যাসহ একটি লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। মোড়ে মোড়ে বেড়েছে বখাটেদের উৎপাত। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে। অন্যদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে সামাজিক সংগঠনগুলো।

মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, নগরীতে অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে। শুধু কিশোররা নয়, বয়স্করাও অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এসব অপরাধ দমনে পুলিশ তৎপর রয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, অভিভাবকদের সচেতন করতে পুলিশিং কমিটি তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। প্রতিটি পরিবারের বাবা-মাকে তাদের সন্তান কোথায় কী করছে, এর খোঁজ রাখতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুন চকলেট দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ইসলামিয়া কলেজের নৈশ প্রহরী মহিবুল্লাহ (৫০) ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় শিশুর বাবা সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ মহিবুল্লাহকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। নির্যাতনের শিকার শিশুর মা ওই কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করতেন। এ ঘটনার পর তিনি চাকরিটি হারান। এ ঘটনার ১০ দিন পর ২৮ জুন ইসলামিয়া কলেজের অদূরে বয়রা শ্মশানঘাট আল আকসা এলাকায় ১৩ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করা হয়। তখন ওই শিশুর বাবা ও মা বাড়িতে ছিলেন না। এই সুযোগে ওই এলাকার বখাটে মিলন ঘরে ঢুকে শিশুকে ধর্ষণ করে এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি তার মাকে জানায়। কিন্তু উল্টো তাদের দোষারোপ করার ভয়ে তিনিও ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করেন। ওই শিশুর অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ঘটনার ৫ দিন পর হরিণটানা থানায় মামলা হয়। ৩ জুলাই নজরুল ইসলামের ছেলে মিলনকে বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

অন্যদিকে পশ্চিম বানিয়াখামার বিহারি কলোনিতে গত ২৯ জুন এক স্কুলছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে শান্ত নামে এক বখাটে ধর্ষণের শিকার মেয়েটিকে ডেকে নুরুন্নবির বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে তাকে আটকে রেখে আপত্তিকর ছবি তোলে এবং সাত বন্ধু মিলে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলা করা হলে পুলিশ ছয়জনকে গ্রেফতার করে। তবে মূল আসামি শান্ত এখনও পলাতক।

গত ২ জুন ৯ মাসের শিশু মেহেবকে জবাই করে হত্যা করে তার মা। রায়েরমহল বাঙ্গালবাড়ি রোডের একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এ ঘটনায় শিশুর মা শ্রাবণীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। ৪ জুন রূপসা থেকে অজ্ঞাত যুবকের (২২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, সামাজিক অবক্ষয় বেড়েছে। একই সঙ্গে আইনের শাসনের দুর্বলতার কারণে অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল ও আন্তরিক হতে হবে। তিনি বলেন, আগে পাড়া-মহল্লাভিত্তিক একটা শাসন ব্যবস্থা ছিল। মুরুব্বিরা সেটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখন তা নেই। এখন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে রাজনীতিকরা। তাই কিশোর বয়সেই রাজনীতিতে যুক্ত হতে চায় এখনকার কিশোরা। বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে তারা অপরাধে লিপ্ত হয়।

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০১৯ , ২৪ আষাঢ় ১৪২৫, ৪ জ্বিলকদ ১৪৪০

খুলনায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি : জনমনে উদ্বেগ

শুভ্র শচীন, খুলনা

  • ১৩ দিনে তিন ধর্ষণ ও শিশু হত্যা
  • নগরীতে অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে

খুলনায় অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে। ১৩ দিনে নগরীতে তিনটি ধর্ষণ ও শিশু হত্যাসহ একটি লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। মোড়ে মোড়ে বেড়েছে বখাটেদের উৎপাত। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে। অন্যদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে সামাজিক সংগঠনগুলো।

মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, নগরীতে অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে। শুধু কিশোররা নয়, বয়স্করাও অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এসব অপরাধ দমনে পুলিশ তৎপর রয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, অভিভাবকদের সচেতন করতে পুলিশিং কমিটি তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। প্রতিটি পরিবারের বাবা-মাকে তাদের সন্তান কোথায় কী করছে, এর খোঁজ রাখতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুন চকলেট দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ইসলামিয়া কলেজের নৈশ প্রহরী মহিবুল্লাহ (৫০) ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় শিশুর বাবা সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ মহিবুল্লাহকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। নির্যাতনের শিকার শিশুর মা ওই কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করতেন। এ ঘটনার পর তিনি চাকরিটি হারান। এ ঘটনার ১০ দিন পর ২৮ জুন ইসলামিয়া কলেজের অদূরে বয়রা শ্মশানঘাট আল আকসা এলাকায় ১৩ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করা হয়। তখন ওই শিশুর বাবা ও মা বাড়িতে ছিলেন না। এই সুযোগে ওই এলাকার বখাটে মিলন ঘরে ঢুকে শিশুকে ধর্ষণ করে এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি তার মাকে জানায়। কিন্তু উল্টো তাদের দোষারোপ করার ভয়ে তিনিও ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করেন। ওই শিশুর অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ঘটনার ৫ দিন পর হরিণটানা থানায় মামলা হয়। ৩ জুলাই নজরুল ইসলামের ছেলে মিলনকে বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

অন্যদিকে পশ্চিম বানিয়াখামার বিহারি কলোনিতে গত ২৯ জুন এক স্কুলছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে শান্ত নামে এক বখাটে ধর্ষণের শিকার মেয়েটিকে ডেকে নুরুন্নবির বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে তাকে আটকে রেখে আপত্তিকর ছবি তোলে এবং সাত বন্ধু মিলে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলা করা হলে পুলিশ ছয়জনকে গ্রেফতার করে। তবে মূল আসামি শান্ত এখনও পলাতক।

গত ২ জুন ৯ মাসের শিশু মেহেবকে জবাই করে হত্যা করে তার মা। রায়েরমহল বাঙ্গালবাড়ি রোডের একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এ ঘটনায় শিশুর মা শ্রাবণীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। ৪ জুন রূপসা থেকে অজ্ঞাত যুবকের (২২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, সামাজিক অবক্ষয় বেড়েছে। একই সঙ্গে আইনের শাসনের দুর্বলতার কারণে অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল ও আন্তরিক হতে হবে। তিনি বলেন, আগে পাড়া-মহল্লাভিত্তিক একটা শাসন ব্যবস্থা ছিল। মুরুব্বিরা সেটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখন তা নেই। এখন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে রাজনীতিকরা। তাই কিশোর বয়সেই রাজনীতিতে যুক্ত হতে চায় এখনকার কিশোরা। বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে তারা অপরাধে লিপ্ত হয়।