শিশু সায়মা ধর্ষণ ও হত্যা

ধর্ষক হারুন গ্রেফতার

নির্মমতার বর্ণনা স্বীকারোক্তিতে

রাজধানীর ওয়ারীতে ৭ বছরের শিশু সামিয়া আফরিন সায়মাকে ধর্ষণ করে হত্যার আগে ছাদ দেখানোর কথা বলে ডেকে নেয় ধর্ষক হারুন অর রশিদ। এরপর ভবনের ৯ তলার ফাঁকা ফ্ল্যাটে নিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর শিশুটির ওপর বর্বর নির্যাতন চালায় হারুন। শিশুটিকে নৃশংসভাবে হত্যার পর গলায় রশি পেঁচিয়ে টেনেহিঁচড়ে ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে নিয়ে সিঙ্কের নিচে রেখে পালিয়ে যায়। গতকাল কুমিল্লা থেকে অভিযান চালিয়ে ধর্ষক হারুনকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর অপরাধ তথ্য ও গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গতকাল ধর্ষক হারুনকে গণমাধ্যমের মুখোমুখি করা হয়। এ সময় ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন। ধর্ষক হারুন ওই ভবনের ভাড়াটিয়া পারভেজের খালাতো ভাই। পারভেজ যে ফ্লাটে থাকত সেই ফ্ল্যাটের ৬ তলায় থাকত সায়মার পরিবার। গত প্রায় ২ মাস আগে হারুন পারভেজের বাসায় আসে। সে পারভেজের বাসায় থাকত এবং তার রংয়ের দোকানে কাজ করত। নিহত সায়মার বাবা আবদুস সালাম জানিয়েছেন, ‘মাগরিবের আজানের সময় আমি নামাজ পড়তে মসজিদে যাই। মসজিদ থেকে ফেরার সময় সন্ধ্যার নাশতা কিনে বাসায় আসি। বাসায় এসে দেখি সায়মা নেই। আমি, আমার স্ত্রীসহ সায়মাকে খুঁজতে শুরু করি। ছয়তলা ও আটতলায় খুঁজে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে আবার আটতলায় খুঁজতে গিয়ে রান্নাঘরে তার লাশ পাওয়া যায়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, গত ৫ জুলাই শুক্রবার স্কুলছাত্রী সায়মাকে নিজ ফ্ল্যাটে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ভিকটিমের বয়স ছিল ৬ বছর এবং সে সিলভারডেল স্কুলে নার্সারিতে পড়াশোনা করত। এ বিষয়ে ভিকটিমের পিতা মো. আ. সালাম ওয়ারী থানায় অভিযোগ করলে একটি মামলা রুজু হয়। ঘটনার পরপরই ওয়ারী থানা পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করে। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা বিভাগও ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে গোয়েন্দা পূর্ব বিভাগের ওয়ারী জোনাল টিম আসামিকে কুমিল্লা থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত ভিকটিমকে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যার বিষয়ে পুলিশের কাছে স্বীকার করে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ‘শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন সায়মা তার মাকে বলে যায় ‘ভবনের আট তলায় ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের ছোট বাচ্চার সঙ্গে সে খেলবে। ওই ফ্ল্যাটে গেলে পারভেজের স্ত্রী জানান, তার মেয়ে ঘুমাচ্ছে। এর পর শিশুটি নিজ ফ্লাটে ফিরে আসছিল একা। ‘ভবনের লিফটে করে নামার সময় সায়মার সঙ্গে পারভেজের খালাতো ভাই হারুনের দেখা হয়। হারুন সায়মাকে ছাদ দেখানোর কথা বলে লিফট থেকে ছাদে নিয়ে যায়। এরপর সে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করলে সায়মা চিৎকার দেয়। এ সময় সে সায়মার মুখ চেপে ধরে এবং ধর্ষণ করে। পরে সায়মাকে নিস্তেজ দেখে তার গলায় দড়ি পেঁচিয়ে টেনে ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে নিয়ে যায়। এরপর সায়মার লাশ সিঙ্কের নিচে রেখে হারুন পালিয়ে তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গায় চলে যায়।

শিশু ধর্ষণের ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ উল্লেখ করে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধীরা সাধারণত ধর্ষণের পর যখন মনে করে বিষয়টি জানাজানি হবে বা নিজে রেহাই পাবে না, ঠিক তখনই ভুক্তভোগীকে হত্যা করে। মূলত অপরাধ ঢাকতে গিয়ে সায়মাকে হত্যা করেছে হারুন। ‘সায়মাদের পরিবারের সঙ্গে পারভেজের পরিবারের ভালো সখ্য ছিল। তবে এই ঘটনায় অন্য কোন কারণ বা কেউ জড়িত ছিল না। হারুন এটা একাই ঘটিয়েছে।’

গতকাল সংবাদ সম্মেলে উপস্থিত ছিলেন শিশু সায়মার বাবা আবদুস সালাম। তিবি বলেন মূল আসামি হারুন অর রশিদের দ্রুত সময়ে ফাঁসি কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি। আবদুস সালাম বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে মূল আসামিকে চিহ্নিত করতে পেরেছে পুলিশ। তাকে ধরতে পেরেছে। আমি চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে, তিন মাস থেকে ছয় মাসের মধ্যে তাকে প্রকৃত সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক। সে যেহেতু আমার মেয়েকে দুই রকম নির্যাতন করে হত্যা করেছে, তাকে ছয় মাসের মধ্যে ফাঁসি দেয়া হোক। আমি আমার মেয়েকে রক্ষা করতে পারিনি। আমার স্ত্রী আমাকে জানায়, মেয়ে তাকে বলে ১০ মিনিটের জন্য আমি আটতলার বাচ্চাটার সঙ্গে খেলে এসে আম্মু আমি তোমাকে পড়াগুলো দেব।’ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে গেল। আমি নামাজ পড়ে এসে আর মেয়েকে পেলাম না। আপনাদের যাদের মেয়ে আছে, সন্তান আছে এরকম কুরুচিপূর্ণ, এ রকম পশুত্বসুলভ আচরণকারীদের কাছ থেকে কীভাবে দূরে রাখবেন, আপনারা একটু ভেবে দেখবেন। এসব পশুর কাছ থেকে বাচ্চাদের রক্ষার চেষ্টা করুন। আমি হয়ত পারি নাই আমার মেয়েকে রক্ষা করতে। যেভাবে আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে আমরা কিভাবে ধৈর্যধারণ করব। এই ঘটনায় আমার পরিবার পুরোটাই বিধ্বস্ত।

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০১৯ , ২৪ আষাঢ় ১৪২৫, ৪ জ্বিলকদ ১৪৪০

শিশু সায়মা ধর্ষণ ও হত্যা

ধর্ষক হারুন গ্রেফতার

নির্মমতার বর্ণনা স্বীকারোক্তিতে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

রাজধানীর ওয়ারীতে ৭ বছরের শিশু সামিয়া আফরিন সায়মাকে ধর্ষণ করে হত্যার আগে ছাদ দেখানোর কথা বলে ডেকে নেয় ধর্ষক হারুন অর রশিদ। এরপর ভবনের ৯ তলার ফাঁকা ফ্ল্যাটে নিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর শিশুটির ওপর বর্বর নির্যাতন চালায় হারুন। শিশুটিকে নৃশংসভাবে হত্যার পর গলায় রশি পেঁচিয়ে টেনেহিঁচড়ে ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে নিয়ে সিঙ্কের নিচে রেখে পালিয়ে যায়। গতকাল কুমিল্লা থেকে অভিযান চালিয়ে ধর্ষক হারুনকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর অপরাধ তথ্য ও গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গতকাল ধর্ষক হারুনকে গণমাধ্যমের মুখোমুখি করা হয়। এ সময় ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন। ধর্ষক হারুন ওই ভবনের ভাড়াটিয়া পারভেজের খালাতো ভাই। পারভেজ যে ফ্লাটে থাকত সেই ফ্ল্যাটের ৬ তলায় থাকত সায়মার পরিবার। গত প্রায় ২ মাস আগে হারুন পারভেজের বাসায় আসে। সে পারভেজের বাসায় থাকত এবং তার রংয়ের দোকানে কাজ করত। নিহত সায়মার বাবা আবদুস সালাম জানিয়েছেন, ‘মাগরিবের আজানের সময় আমি নামাজ পড়তে মসজিদে যাই। মসজিদ থেকে ফেরার সময় সন্ধ্যার নাশতা কিনে বাসায় আসি। বাসায় এসে দেখি সায়মা নেই। আমি, আমার স্ত্রীসহ সায়মাকে খুঁজতে শুরু করি। ছয়তলা ও আটতলায় খুঁজে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে আবার আটতলায় খুঁজতে গিয়ে রান্নাঘরে তার লাশ পাওয়া যায়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, গত ৫ জুলাই শুক্রবার স্কুলছাত্রী সায়মাকে নিজ ফ্ল্যাটে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ভিকটিমের বয়স ছিল ৬ বছর এবং সে সিলভারডেল স্কুলে নার্সারিতে পড়াশোনা করত। এ বিষয়ে ভিকটিমের পিতা মো. আ. সালাম ওয়ারী থানায় অভিযোগ করলে একটি মামলা রুজু হয়। ঘটনার পরপরই ওয়ারী থানা পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করে। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা বিভাগও ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে গোয়েন্দা পূর্ব বিভাগের ওয়ারী জোনাল টিম আসামিকে কুমিল্লা থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত ভিকটিমকে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যার বিষয়ে পুলিশের কাছে স্বীকার করে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ‘শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন সায়মা তার মাকে বলে যায় ‘ভবনের আট তলায় ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের ছোট বাচ্চার সঙ্গে সে খেলবে। ওই ফ্ল্যাটে গেলে পারভেজের স্ত্রী জানান, তার মেয়ে ঘুমাচ্ছে। এর পর শিশুটি নিজ ফ্লাটে ফিরে আসছিল একা। ‘ভবনের লিফটে করে নামার সময় সায়মার সঙ্গে পারভেজের খালাতো ভাই হারুনের দেখা হয়। হারুন সায়মাকে ছাদ দেখানোর কথা বলে লিফট থেকে ছাদে নিয়ে যায়। এরপর সে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করলে সায়মা চিৎকার দেয়। এ সময় সে সায়মার মুখ চেপে ধরে এবং ধর্ষণ করে। পরে সায়মাকে নিস্তেজ দেখে তার গলায় দড়ি পেঁচিয়ে টেনে ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে নিয়ে যায়। এরপর সায়মার লাশ সিঙ্কের নিচে রেখে হারুন পালিয়ে তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গায় চলে যায়।

শিশু ধর্ষণের ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ উল্লেখ করে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধীরা সাধারণত ধর্ষণের পর যখন মনে করে বিষয়টি জানাজানি হবে বা নিজে রেহাই পাবে না, ঠিক তখনই ভুক্তভোগীকে হত্যা করে। মূলত অপরাধ ঢাকতে গিয়ে সায়মাকে হত্যা করেছে হারুন। ‘সায়মাদের পরিবারের সঙ্গে পারভেজের পরিবারের ভালো সখ্য ছিল। তবে এই ঘটনায় অন্য কোন কারণ বা কেউ জড়িত ছিল না। হারুন এটা একাই ঘটিয়েছে।’

গতকাল সংবাদ সম্মেলে উপস্থিত ছিলেন শিশু সায়মার বাবা আবদুস সালাম। তিবি বলেন মূল আসামি হারুন অর রশিদের দ্রুত সময়ে ফাঁসি কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি। আবদুস সালাম বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে মূল আসামিকে চিহ্নিত করতে পেরেছে পুলিশ। তাকে ধরতে পেরেছে। আমি চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে, তিন মাস থেকে ছয় মাসের মধ্যে তাকে প্রকৃত সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক। সে যেহেতু আমার মেয়েকে দুই রকম নির্যাতন করে হত্যা করেছে, তাকে ছয় মাসের মধ্যে ফাঁসি দেয়া হোক। আমি আমার মেয়েকে রক্ষা করতে পারিনি। আমার স্ত্রী আমাকে জানায়, মেয়ে তাকে বলে ১০ মিনিটের জন্য আমি আটতলার বাচ্চাটার সঙ্গে খেলে এসে আম্মু আমি তোমাকে পড়াগুলো দেব।’ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে গেল। আমি নামাজ পড়ে এসে আর মেয়েকে পেলাম না। আপনাদের যাদের মেয়ে আছে, সন্তান আছে এরকম কুরুচিপূর্ণ, এ রকম পশুত্বসুলভ আচরণকারীদের কাছ থেকে কীভাবে দূরে রাখবেন, আপনারা একটু ভেবে দেখবেন। এসব পশুর কাছ থেকে বাচ্চাদের রক্ষার চেষ্টা করুন। আমি হয়ত পারি নাই আমার মেয়েকে রক্ষা করতে। যেভাবে আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে আমরা কিভাবে ধৈর্যধারণ করব। এই ঘটনায় আমার পরিবার পুরোটাই বিধ্বস্ত।