ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ স্থগিত করে জারি করা বিতর্কিত আদেশ সংশোধন করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন আদেশে অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল রাখা হয়েছে; তবে গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে জারি করা বিতর্কিত ও উদ্দেশ্যমূলক আদেশের পুরো অংশই বাদ দেয়া হয়েছে।
গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের দেয়া এ সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়, ‘প্রক্রিয়া যথাযথ না হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করা হলো। বিধিমালা অনুসরণ করে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য নিয়োগ কার্যক্রম পুনরায় শুরুর জন্য অনুরোধ করা হলো’।
নতুন আদেশে রাখা হয়নি কোন নিষেধাজ্ঞা। অথচ নিয়োগ নিয়ে দেশের খ্যাতিমান এই প্রতিষ্ঠানে চলা ব্যাপক বিতর্কের মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়, ‘এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য ইতোপূর্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের নিয়োগ কমিটির সদস্যদের ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠানের মতো কোনো স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নিয়োগ কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করার অনুরোধ করা হলো।’
ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ নিয়োগ কমিটিতে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের সেই সময়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার, সদস্য আতাউর রহমান ও সদস্য ডা. মজিবুর রহামান।
এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব অধ্যাপক শাহেদুল খবীর চৌধুরী এবং ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌস আরা।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত প্রতিষ্ঠানটিতে সক্রিয় ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্যের একটি সিন্ডিকেটের যোগসাজশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী একাধিক কর্মকর্তা আগের আদেশটি জারি করেছিল। তারা সরকারি ও বেসরকারি কয়েকজনের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। এ নিয়ে খোদ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারাই অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
ওই বিতর্কিত আদেশ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বিধিমালা, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ নিয়োগ বিধিমালাসহ সবধরনের বিধির পরিপন্থী। এ আদেশ জারি করার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে নানারকম সমালোচনা শুরু হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের বিষয়ে এভাবে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া যায় কিনা তা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ারও ঘোষণা দেন গভর্নিং বডির সাবেক সদস্যরা।
এ অবস্থায় গতকাল বিষয়টি নজরে আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়স সচিব সোহরাব হোসাইনের। তিনি দ্রুত আগের আদেশ থেকে নিষেধাজ্ঞার অংশ তুলে দিয়ে আদেশ জারি করতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন।
সোহরাব হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আগের আদেশের ওই অংশটি বাদ দিচ্ছি। ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যানকে বলে দিয়েছি, বোর্ড এখন যে আদেশ দেবে সেটাই হবে চূড়ান্ত।’
এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘আমরা আদেশ ওয়েবসাইটে দিয়েছি। সেখানে কারও বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নেই। তাছাড়া আগের গভর্নিং বডির সেই সদস্যরাতো এখন আর সেখানে নেই।’ তাহলে আগের আদেশ কেন দেয়া হয়েছিল- এমন প্রশ্নে বোর্ড চেয়ারম্যান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এমন বিতর্ক তৈরি হলো- সেই গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, ‘অধ্যক্ষ নিয়োগে কোন অনিয়ম হয়নি। বিধি অনুসারেই হয়েছে। আসলে নিয়োগ নিয়ে সক্রিয় একটি বিএনপি-জামায়াত সিন্ডিকেট টাকার বিনিময়ে বিতর্কিত আদেশ জারি করিয়েছে। এ চক্রটি চেয়েছে তাদের একজন নিয়োগ পাক। কিন্তু তিনি লিখিত পরীক্ষায় এক নম্বর পেয়েছিল বলে তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়।’ তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে সক্রিয় বিএনপি-জামায়াত চক্রের ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে নজর দিতে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামরা করেছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে এখন কার্যকর আছে এডহক কমিটি। ফলে তারাও বিধিমালা অনুসারে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে পারবে না। অথচ এখানে পূর্ণ অধ্যক্ষ নেই প্রায় ৯ বছর ধরে।
সোমবার, ০৮ জুলাই ২০১৯ , ২৪ আষাঢ় ১৪২৫, ৪ জ্বিলকদ ১৪৪০
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ স্থগিত করে জারি করা বিতর্কিত আদেশ সংশোধন করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন আদেশে অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল রাখা হয়েছে; তবে গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে জারি করা বিতর্কিত ও উদ্দেশ্যমূলক আদেশের পুরো অংশই বাদ দেয়া হয়েছে।
গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের দেয়া এ সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়, ‘প্রক্রিয়া যথাযথ না হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করা হলো। বিধিমালা অনুসরণ করে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য নিয়োগ কার্যক্রম পুনরায় শুরুর জন্য অনুরোধ করা হলো’।
নতুন আদেশে রাখা হয়নি কোন নিষেধাজ্ঞা। অথচ নিয়োগ নিয়ে দেশের খ্যাতিমান এই প্রতিষ্ঠানে চলা ব্যাপক বিতর্কের মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়, ‘এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য ইতোপূর্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের নিয়োগ কমিটির সদস্যদের ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠানের মতো কোনো স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নিয়োগ কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করার অনুরোধ করা হলো।’
ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ নিয়োগ কমিটিতে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের সেই সময়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার, সদস্য আতাউর রহমান ও সদস্য ডা. মজিবুর রহামান।
এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব অধ্যাপক শাহেদুল খবীর চৌধুরী এবং ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌস আরা।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত প্রতিষ্ঠানটিতে সক্রিয় ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্যের একটি সিন্ডিকেটের যোগসাজশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী একাধিক কর্মকর্তা আগের আদেশটি জারি করেছিল। তারা সরকারি ও বেসরকারি কয়েকজনের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। এ নিয়ে খোদ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারাই অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
ওই বিতর্কিত আদেশ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বিধিমালা, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ নিয়োগ বিধিমালাসহ সবধরনের বিধির পরিপন্থী। এ আদেশ জারি করার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে নানারকম সমালোচনা শুরু হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের বিষয়ে এভাবে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া যায় কিনা তা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ারও ঘোষণা দেন গভর্নিং বডির সাবেক সদস্যরা।
এ অবস্থায় গতকাল বিষয়টি নজরে আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়স সচিব সোহরাব হোসাইনের। তিনি দ্রুত আগের আদেশ থেকে নিষেধাজ্ঞার অংশ তুলে দিয়ে আদেশ জারি করতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন।
সোহরাব হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আগের আদেশের ওই অংশটি বাদ দিচ্ছি। ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যানকে বলে দিয়েছি, বোর্ড এখন যে আদেশ দেবে সেটাই হবে চূড়ান্ত।’
এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘আমরা আদেশ ওয়েবসাইটে দিয়েছি। সেখানে কারও বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নেই। তাছাড়া আগের গভর্নিং বডির সেই সদস্যরাতো এখন আর সেখানে নেই।’ তাহলে আগের আদেশ কেন দেয়া হয়েছিল- এমন প্রশ্নে বোর্ড চেয়ারম্যান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এমন বিতর্ক তৈরি হলো- সেই গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, ‘অধ্যক্ষ নিয়োগে কোন অনিয়ম হয়নি। বিধি অনুসারেই হয়েছে। আসলে নিয়োগ নিয়ে সক্রিয় একটি বিএনপি-জামায়াত সিন্ডিকেট টাকার বিনিময়ে বিতর্কিত আদেশ জারি করিয়েছে। এ চক্রটি চেয়েছে তাদের একজন নিয়োগ পাক। কিন্তু তিনি লিখিত পরীক্ষায় এক নম্বর পেয়েছিল বলে তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়।’ তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে সক্রিয় বিএনপি-জামায়াত চক্রের ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে নজর দিতে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামরা করেছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে এখন কার্যকর আছে এডহক কমিটি। ফলে তারাও বিধিমালা অনুসারে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে পারবে না। অথচ এখানে পূর্ণ অধ্যক্ষ নেই প্রায় ৯ বছর ধরে।