ক্রিকেট, বিশ্বকাপ আমাদের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

আবু আফজাল সালেহ

সিরিজ বা টুর্নামেন্ট শেষে এই হিসাব মেলানো ক্রিকেটে বহুল প্রচলিত। কিন্তু পরে এটা নিয়ে খুব কম কাজই করা হয়। একটা ইস্যু অন্য ইস্যু দিয়ে ঢেকে যায়। সমর্থকদের কাছে যদি জানতে চাওয়া হয়, এবারের বিশ্বকাপে কেমন খেলেছে বাংলাদেশ? বেশিরভাগই বলবেন মোটামুটি। পরিসংখ্যান আর মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতা মিলিয়ে টাইগারদের পারফরম্যান্সের গ্রাফটা মোটামুটির চেয়েও ভালো মনে হয়। কারণ আগের কোনো বিশ্বকাপেই এভাবে বুক টান করে, প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে দেখা যায়নি টাইগারদের। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার দাবি, ভালোমন্দ মিলে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপটা মিশ্র একটা জায়গায় শেষ করল বাংলাদেশ। তবে বড় প্রাপ্তি সাকিব আল হাসানের রেকর্ডময় পারফরম্যান্স। সাকিব বাদে বাংলাদেশের খেলা? অনেকে চিন্তায় পড়ে যাবেন। ক্রিকেট জানাশোনা লোকেরা বলবেন, দল হিসাবে সাধারণ! সাকিব কী ঢেকে দিচ্ছেন আমাদের দুর্বলতা? না ভাবলে কিন্তু আমাদেরই ক্ষতি। তারপরও ফিল্ডিং দুর্বলতা নিয়ে কিন্তু সাধারণ দর্শকও বলবেন। হ্যাঁ, এখানেই আমাদের বেশি কাজ করতে হবে।

ক্রিকেট আমাদের অনেক দিচ্ছে। বিশ্বে আমাদের ইতিবাচকভাবে চিনাতে সহযোগিতা করছে। সাকিব, মাশরাফি, মুস্তাফিজ বা সালমারা আইডল হচ্ছেন; দেশ-বিদেশে। বিভিন্ন দেশে খেলে সুনাম কুড়াচ্ছেন। কিন্তু আরও গতিশীলতা আনতে আমরা কী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছি? টিম সিলেকসনে সমস্যা থাকে, বাণিজ্যিক মনোভাব আমাদের বেশ। এসব থেকে উত্তরণ করতে পারলে পঞ্চপা-বের বিদায়ের পর পিছিয়ে যেতে পারছি। আমরা ভালো ব্যাকআপ তৈরি করতে পারিনি। মাঝেমধ্যে নতুনদের মধ্যে ঝলক দেখা যায়। কিন্তু ধারাবাহিকতা নেই। অনেক ক্রিকেটার জনপ্রিয়তা পেয়ে মন্দকাজেও জড়িত হয়ে ক্রিকেটজগতে কালিমা দিচ্ছে।

ফিল্ডিং সাইডে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই খারাপ। এ ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নারী ক্রিকেটও বাংলাদেশের অবস্থান মজবুত। কিন্তু নারী-মেয়েরা অবহেলিত। মেয়েদের ক্রিকেটে গুরুত্ব দিতে হবে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে হারের পর ফিল্ডিং নিয়ে বেশি সমস্যা ধরা পড়ছে। কিন্তু সমস্যা চিরদিনের। ম্যাচ জেতা হয়ে গেলে ভুলত্রুটি ধরা হয় খুব কমই। এটাই আমাদের দুর্বলতা। বাংলাদেশ বাদে আর কোনো দেশের মিডিয়া-দর্শক এমন করে না! আমরা প্রশংসা-গালির চরম অবস্থায় বুঝি কেবল। যুক্তি আমাদের কাছে অনর্থক মনে হয়। মিডিয়া-বোর্ডের ক্ষেত্রে এ সম্পর্কে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। কোচ-এনালিস্টদের এ ব্যাপারে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা বোর্ডকে দিতে হবেই। নাহলে উন্নতির ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে। ৫০-৫০ ম্যাচের রেজাল্ট হাতছাড়া হয়ে যাবে।

সাকিবের অতিমানবীয় অবদান বাদ দিন। সাথে মুশফিক বা কয়েকজনের। দেখবেন বাংলাদেশ খুবই খারাপ অবস্থান। সাকিব প্রতি ম্যাচে ভালো না খেললে বাংলাদেশের ভরাডুবি হতো বলেই মনে হয়। উল্টা ভাবলে, যদি আর কয়েকজন সাকিবের কাছাকাছি পারফর্ম করলে! ফলাফল কিন্তু অবিশ্বাস্য হতে পারত। তারপরেও এ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে অন্যভাবে চিনল ক্রিকেট বিশ্ব। সমীহ আদায় করার মতো। এবার নিজেরা ফাঁকফোকর দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আত্মতৃপ্তি পাওয়ার মতো দল হিসাবে আমরা পারফর্ম করিনি। ‘সাকিব সো’ হয়েছে বলা যায়। অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা সাকিব আল হাসান বিশ্বকাপের ইতিহাসে ছাপিয়ে গেছেন বহু নামজাদা ব্যাটসম্যানদের। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, জাভেদ মিয়াঁদাদ, মাহেলা জয়াবর্ধনেরদের মতো তারকাদের টপকে সাকিব এখন বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা ১০ রান সংগ্রাহকদের একজন। সাকিব অনেক রেকর্ড করেছে, ভেঙেছে। আবার নিজে সৃষ্টি করেছেন অনন্য কিছু রেকর্ড। তাকে হ্যাটখোলা অভিনন্দন। ক্রিকেট বিশ্বের মহারথীরা সাকিবকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন। এটা তার প্রাপ্য।

নতুনরা কেনো পারফর্ম করতে পারছে না? বা বলা ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছে না! এসব বিষয়ে কাজ করা দরকার। আবার একটা ম্যাচ জিতলে দোষত্রুটি ধরা বাদে প্রশংসায় ভাসিয়ে দেব আমরা। বাঙালি হিসাবে খুবই আবেগপ্রবণ আমরা। কয়েকদিন বা কয়েকঘণ্টায় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে যায় আমরা! কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য আমাদেরকে ভাবতেই হবে। কর্মপরিকল্পনা করতেই হবে। নতুবা অশনি সংকেত আছে। শ্রীলংকার যেমন শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। ওয়াহদের অবসরের পর অস্ট্রেলিয়ার হয়েছিল। বা শচীন-দ্রাবিড়ের অবসরপরবর্তী ভারতের অবস্থা! তাদের ব্যাকআপ ভালো ছিল। অবস্থান কেউ ধরে রেখেছে বা কেউ ফিরে পেয়েছে। শ্রীলংকা ধুঁকছে। সিনিয়র কয়েকজন অবসরে গেলে আমাদের কী হতে পারে? ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। মাশরাফির মতো অধিনায়ক পেতে আমাদের কাজ করতে হবে।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। জেলা ও উপজেলায় কমপক্ষে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ নিয়মিত টুর্নামেন্টের আয়োজন স্কুল/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ। নিয়মিত খেলার আয়োজন করতে হবে। বিপিএল এ স্থানীয় খেলোয়াড়দের গুরুত্ব দিয়ে বিদেশি ক্রিকেটারের নির্ভরশীলতা কমাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবসায়িক মনোভাব ছেড়ে এক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থে কঠোর হতে হবে। হান্টার প্রজেক্টের মতো সরকারকে খেলোয়ার সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি রুখতে হবে। নিয়মিত বাছাই কার্যক্রম চালাতে হবে। গ্রামাঞ্চল থেকেও ক্রিকেট মেধা বের করতে হবে। বিকেএসপির মতো প্রতিষ্ঠান আরও গড়তে হবে। এদের অভিজ্ঞতা অন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে কাজে লাগানোর সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সাকিব-মুশফিকের স্থায়িত্ব ও ক্লাস কোয়ালিটি তৈরিতে বিকেএসপির ভূমিকা অনস্বীকার্য। নিয়মিত আন্তঃস্কুল টুর্নামেন্ট করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়েও বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কমিটিতে ক্রিকেটার (সাবেক)/সংগঠকদের (সত্যিকারের) অন্তর্ভুক্ত করে তাদের ক্ষমতায়িত করতে হবে। বোর্ডের বিভিন্ন উপকমিটিতে সাবেক ক্রিকেটারদের সদস্য করে তাদের মেধা কাজে লাগাতে হবে। দেশীয় ক্রিকেট কোচ তৈরিতে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণ/অভিজ্ঞ হতে বিদেশে পাঠাতে হবে। বিভিন্ন লেভেলের কোর্স গ্রহণে সহযোগিতা দিতে হবে। বিভিন্ন বয়সভিত্তিকে দক্ষ কোচ/স্টাফ নিয়োগ দিতে হবে।

একাডেমি অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশের অনুসরণ করে বিভিন্ন একাডেমি গঠন করা যেতে পারে। এমসিসির মতো একাডেমি/প্রতিষ্ঠান গড়া যেতে পারে। যেখানে দেশের সাবেক/বর্তমান অধিনায়ক, রেকর্ডধারী/স্টার ক্রিকেটার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্যদেশের একাডেমির কিছু সদস্য/উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে হবে। দেশের স্বার্থে বিভিন্ন সুপারিশমালা বোর্ড/সরকারের কাছে পেশ করবে। ভারতের বিভিন্ন কমিটি গঠনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। বিভাগীয় ও বড় শহরগুলোতে পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক/বহুজাতিক/বয়সভিত্তিক উন্নত ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে। এতে দর্শক বাড়বে। মফঃস্বলের ক্ষুদ্র ক্রিকেটারদের মধ্য আগ্রহ/অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হবে।

ক্রিকেট আমাদের বিশ্বে চিনিয়ে দিচ্ছে। আগে বাংলাদেশের নেতিবাচক বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবরে শিরোনাম হত। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করেছে। তবে সাকিবের অংশ বাদ দিলে সাধারণ হয়ে যাবে। মাশরাফি-মুশফিক-মাহমুদ-তামিম চলে গেলে দলটি সাধারণ হয়ে যাওয়ার আশংকাও রয়েছে। তাই সাকিবদের বিকল্প বা উত্তরসূরি আমরা কী তৈরি করতে পেরেছি? পারিনি! এখনও সময় আছে ক্রিকেট অবকাঠামো বা খেলার মানোন্নয়নে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ। ভাবা যায়, দেশের দলমত নির্বিশেষে একটি ক্ষেত্রে একক। তার কারণ বিশ্বক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন, পরাশালী দেশের সমীহ ও প্রশংসা আদায়। ক্রিকেট ছাড়া বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে আমাদের কোনো বলার মতো তেমন কিছুই নেই; যা জাতিকে একত্রিত করতে পারে। তাই ক্রিকেট উন্নয়নকল্পে সুপারিশমালা বাস্তবায়ন হবে আশা করছি।

ইমেইল-abuafzalsaleh@gmail.com

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০১৯ , ২৪ আষাঢ় ১৪২৫, ৪ জ্বিলকদ ১৪৪০

ক্রিকেট, বিশ্বকাপ আমাদের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

আবু আফজাল সালেহ

image

সিরিজ বা টুর্নামেন্ট শেষে এই হিসাব মেলানো ক্রিকেটে বহুল প্রচলিত। কিন্তু পরে এটা নিয়ে খুব কম কাজই করা হয়। একটা ইস্যু অন্য ইস্যু দিয়ে ঢেকে যায়। সমর্থকদের কাছে যদি জানতে চাওয়া হয়, এবারের বিশ্বকাপে কেমন খেলেছে বাংলাদেশ? বেশিরভাগই বলবেন মোটামুটি। পরিসংখ্যান আর মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতা মিলিয়ে টাইগারদের পারফরম্যান্সের গ্রাফটা মোটামুটির চেয়েও ভালো মনে হয়। কারণ আগের কোনো বিশ্বকাপেই এভাবে বুক টান করে, প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে দেখা যায়নি টাইগারদের। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার দাবি, ভালোমন্দ মিলে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপটা মিশ্র একটা জায়গায় শেষ করল বাংলাদেশ। তবে বড় প্রাপ্তি সাকিব আল হাসানের রেকর্ডময় পারফরম্যান্স। সাকিব বাদে বাংলাদেশের খেলা? অনেকে চিন্তায় পড়ে যাবেন। ক্রিকেট জানাশোনা লোকেরা বলবেন, দল হিসাবে সাধারণ! সাকিব কী ঢেকে দিচ্ছেন আমাদের দুর্বলতা? না ভাবলে কিন্তু আমাদেরই ক্ষতি। তারপরও ফিল্ডিং দুর্বলতা নিয়ে কিন্তু সাধারণ দর্শকও বলবেন। হ্যাঁ, এখানেই আমাদের বেশি কাজ করতে হবে।

ক্রিকেট আমাদের অনেক দিচ্ছে। বিশ্বে আমাদের ইতিবাচকভাবে চিনাতে সহযোগিতা করছে। সাকিব, মাশরাফি, মুস্তাফিজ বা সালমারা আইডল হচ্ছেন; দেশ-বিদেশে। বিভিন্ন দেশে খেলে সুনাম কুড়াচ্ছেন। কিন্তু আরও গতিশীলতা আনতে আমরা কী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছি? টিম সিলেকসনে সমস্যা থাকে, বাণিজ্যিক মনোভাব আমাদের বেশ। এসব থেকে উত্তরণ করতে পারলে পঞ্চপা-বের বিদায়ের পর পিছিয়ে যেতে পারছি। আমরা ভালো ব্যাকআপ তৈরি করতে পারিনি। মাঝেমধ্যে নতুনদের মধ্যে ঝলক দেখা যায়। কিন্তু ধারাবাহিকতা নেই। অনেক ক্রিকেটার জনপ্রিয়তা পেয়ে মন্দকাজেও জড়িত হয়ে ক্রিকেটজগতে কালিমা দিচ্ছে।

ফিল্ডিং সাইডে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই খারাপ। এ ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নারী ক্রিকেটও বাংলাদেশের অবস্থান মজবুত। কিন্তু নারী-মেয়েরা অবহেলিত। মেয়েদের ক্রিকেটে গুরুত্ব দিতে হবে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে হারের পর ফিল্ডিং নিয়ে বেশি সমস্যা ধরা পড়ছে। কিন্তু সমস্যা চিরদিনের। ম্যাচ জেতা হয়ে গেলে ভুলত্রুটি ধরা হয় খুব কমই। এটাই আমাদের দুর্বলতা। বাংলাদেশ বাদে আর কোনো দেশের মিডিয়া-দর্শক এমন করে না! আমরা প্রশংসা-গালির চরম অবস্থায় বুঝি কেবল। যুক্তি আমাদের কাছে অনর্থক মনে হয়। মিডিয়া-বোর্ডের ক্ষেত্রে এ সম্পর্কে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। কোচ-এনালিস্টদের এ ব্যাপারে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা বোর্ডকে দিতে হবেই। নাহলে উন্নতির ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে। ৫০-৫০ ম্যাচের রেজাল্ট হাতছাড়া হয়ে যাবে।

সাকিবের অতিমানবীয় অবদান বাদ দিন। সাথে মুশফিক বা কয়েকজনের। দেখবেন বাংলাদেশ খুবই খারাপ অবস্থান। সাকিব প্রতি ম্যাচে ভালো না খেললে বাংলাদেশের ভরাডুবি হতো বলেই মনে হয়। উল্টা ভাবলে, যদি আর কয়েকজন সাকিবের কাছাকাছি পারফর্ম করলে! ফলাফল কিন্তু অবিশ্বাস্য হতে পারত। তারপরেও এ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে অন্যভাবে চিনল ক্রিকেট বিশ্ব। সমীহ আদায় করার মতো। এবার নিজেরা ফাঁকফোকর দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আত্মতৃপ্তি পাওয়ার মতো দল হিসাবে আমরা পারফর্ম করিনি। ‘সাকিব সো’ হয়েছে বলা যায়। অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা সাকিব আল হাসান বিশ্বকাপের ইতিহাসে ছাপিয়ে গেছেন বহু নামজাদা ব্যাটসম্যানদের। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, জাভেদ মিয়াঁদাদ, মাহেলা জয়াবর্ধনেরদের মতো তারকাদের টপকে সাকিব এখন বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা ১০ রান সংগ্রাহকদের একজন। সাকিব অনেক রেকর্ড করেছে, ভেঙেছে। আবার নিজে সৃষ্টি করেছেন অনন্য কিছু রেকর্ড। তাকে হ্যাটখোলা অভিনন্দন। ক্রিকেট বিশ্বের মহারথীরা সাকিবকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন। এটা তার প্রাপ্য।

নতুনরা কেনো পারফর্ম করতে পারছে না? বা বলা ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছে না! এসব বিষয়ে কাজ করা দরকার। আবার একটা ম্যাচ জিতলে দোষত্রুটি ধরা বাদে প্রশংসায় ভাসিয়ে দেব আমরা। বাঙালি হিসাবে খুবই আবেগপ্রবণ আমরা। কয়েকদিন বা কয়েকঘণ্টায় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে যায় আমরা! কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য আমাদেরকে ভাবতেই হবে। কর্মপরিকল্পনা করতেই হবে। নতুবা অশনি সংকেত আছে। শ্রীলংকার যেমন শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। ওয়াহদের অবসরের পর অস্ট্রেলিয়ার হয়েছিল। বা শচীন-দ্রাবিড়ের অবসরপরবর্তী ভারতের অবস্থা! তাদের ব্যাকআপ ভালো ছিল। অবস্থান কেউ ধরে রেখেছে বা কেউ ফিরে পেয়েছে। শ্রীলংকা ধুঁকছে। সিনিয়র কয়েকজন অবসরে গেলে আমাদের কী হতে পারে? ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। মাশরাফির মতো অধিনায়ক পেতে আমাদের কাজ করতে হবে।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। জেলা ও উপজেলায় কমপক্ষে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ নিয়মিত টুর্নামেন্টের আয়োজন স্কুল/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ। নিয়মিত খেলার আয়োজন করতে হবে। বিপিএল এ স্থানীয় খেলোয়াড়দের গুরুত্ব দিয়ে বিদেশি ক্রিকেটারের নির্ভরশীলতা কমাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবসায়িক মনোভাব ছেড়ে এক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থে কঠোর হতে হবে। হান্টার প্রজেক্টের মতো সরকারকে খেলোয়ার সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি রুখতে হবে। নিয়মিত বাছাই কার্যক্রম চালাতে হবে। গ্রামাঞ্চল থেকেও ক্রিকেট মেধা বের করতে হবে। বিকেএসপির মতো প্রতিষ্ঠান আরও গড়তে হবে। এদের অভিজ্ঞতা অন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে কাজে লাগানোর সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সাকিব-মুশফিকের স্থায়িত্ব ও ক্লাস কোয়ালিটি তৈরিতে বিকেএসপির ভূমিকা অনস্বীকার্য। নিয়মিত আন্তঃস্কুল টুর্নামেন্ট করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়েও বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কমিটিতে ক্রিকেটার (সাবেক)/সংগঠকদের (সত্যিকারের) অন্তর্ভুক্ত করে তাদের ক্ষমতায়িত করতে হবে। বোর্ডের বিভিন্ন উপকমিটিতে সাবেক ক্রিকেটারদের সদস্য করে তাদের মেধা কাজে লাগাতে হবে। দেশীয় ক্রিকেট কোচ তৈরিতে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণ/অভিজ্ঞ হতে বিদেশে পাঠাতে হবে। বিভিন্ন লেভেলের কোর্স গ্রহণে সহযোগিতা দিতে হবে। বিভিন্ন বয়সভিত্তিকে দক্ষ কোচ/স্টাফ নিয়োগ দিতে হবে।

একাডেমি অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশের অনুসরণ করে বিভিন্ন একাডেমি গঠন করা যেতে পারে। এমসিসির মতো একাডেমি/প্রতিষ্ঠান গড়া যেতে পারে। যেখানে দেশের সাবেক/বর্তমান অধিনায়ক, রেকর্ডধারী/স্টার ক্রিকেটার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্যদেশের একাডেমির কিছু সদস্য/উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে হবে। দেশের স্বার্থে বিভিন্ন সুপারিশমালা বোর্ড/সরকারের কাছে পেশ করবে। ভারতের বিভিন্ন কমিটি গঠনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। বিভাগীয় ও বড় শহরগুলোতে পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক/বহুজাতিক/বয়সভিত্তিক উন্নত ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে। এতে দর্শক বাড়বে। মফঃস্বলের ক্ষুদ্র ক্রিকেটারদের মধ্য আগ্রহ/অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হবে।

ক্রিকেট আমাদের বিশ্বে চিনিয়ে দিচ্ছে। আগে বাংলাদেশের নেতিবাচক বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবরে শিরোনাম হত। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করেছে। তবে সাকিবের অংশ বাদ দিলে সাধারণ হয়ে যাবে। মাশরাফি-মুশফিক-মাহমুদ-তামিম চলে গেলে দলটি সাধারণ হয়ে যাওয়ার আশংকাও রয়েছে। তাই সাকিবদের বিকল্প বা উত্তরসূরি আমরা কী তৈরি করতে পেরেছি? পারিনি! এখনও সময় আছে ক্রিকেট অবকাঠামো বা খেলার মানোন্নয়নে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ। ভাবা যায়, দেশের দলমত নির্বিশেষে একটি ক্ষেত্রে একক। তার কারণ বিশ্বক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন, পরাশালী দেশের সমীহ ও প্রশংসা আদায়। ক্রিকেট ছাড়া বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে আমাদের কোনো বলার মতো তেমন কিছুই নেই; যা জাতিকে একত্রিত করতে পারে। তাই ক্রিকেট উন্নয়নকল্পে সুপারিশমালা বাস্তবায়ন হবে আশা করছি।

ইমেইল-abuafzalsaleh@gmail.com