নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ

জিনাত আরা আহমেদ

নারী-পুরুষের সম্মিলিত শক্তিকে পুঁজি করে বর্তমানে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ, যেখানে গড় মাথাপিছু আয় ১৭৫২ ডলার। বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। নারীদের অধিকার ও তাদের সুরক্ষায় সরকার ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে গ্রহণ করেছে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা। তারপরও নারীদের প্রায় ৬৭ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে বৈষম্য অথবা নির্যাতনের শিকার। পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে নারীরা নানাভাবে সহিংসতা এবং অমর্যাদাকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য নারীদের কর্মপরিবেশ এবং চলার পথ নিরাপদ থাকা জরুরি।

নারী পরিবারে কন্যা, ভগিনী, জায়া, জননী। এই নারীকে বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রতিদিন বের হতে হয় ঘর থেকে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েদের যেতে হয় তাদের ক্যাম্পাসে। অফিস-আদালতে চাকরি করছে অসংখ্য নারী। নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে প্রায়ই তাদের যেতে হয় বাইরে। অনেক নারী গৃহকর্মী হিসেবে বাসাবাড়িতে শ্রম দিচ্ছেন। কর্মজীবী নারীর শ্রমে গড়ে উঠেছে আজকের প্রতিষ্ঠিত পোশাক শিল্প। ঘরে বাইরে পাল্লা দিয়ে নারীরা তাদের শ্রম ও মেধার স্ফূরণ ঘটিয়ে সচল রাখছেন সংসার ও সমাজের চাকা, এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। কিন্তু নারীর চলার পথ সবক্ষেত্রে মসৃণ নয়। সমাজ-সংসারের গতিময়তায় অবদান রাখা নারীদের কর্মক্ষেত্র অথবা চলার পথ প্রায়ই বিভিন্নভাবে বাধার সম্মুখীন হয়।

কর্মপরিবেশ শুধুুমাত্র নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। ঘর থেকে বের হবার পর থেকে ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। এমনকি স্কুলে যাওয়ার পর শিক্ষক তার ছাত্রীর সঙ্গে কি ভাষায় কথা বলছেন, এটাও এ বিবেচনার বিষয়। অনেকক্ষেত্রে কোচিংয়ে মেয়েরা অশোভন আচরণের শিকার হয়। অথচ শিক্ষা জীবন একটা মেয়ের কর্মজীবনে প্রবেশের প্রস্তুতিকাল। এখানকার নিরাপদ পরিবেশ তার মানসিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এসময় যদি কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বা ভীতিকর অবস্থা মনে দানা বাঁধে, তা পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য আত্মবিশ্বাস তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়া রাস্তায় অনিরাপত্তা একটা মেয়ের মধ্যে হীনমন্যতা তৈরি করে, যা নারীর এগিয়ে চলার পথে বড় রকমের প্রতিবন্ধকতা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে।

নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্র এবং রাস্তায় নারী এখনও পুরোপুরি নিরাপদ নয়। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা রাস্তায় চলাফেরার সময় ভিড়ের মধ্যে, আবার পাবলিক বাসে নানাভাবে অশোভন আচরণের শিকার হয়। কর্মপরিবেশে নারীদের প্রতি বিভ্রান্তিকর মানসিকতার দরুন এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীদের জন্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করার পরও নারী অনেক সময় আশানুরূপ সহযোগিতা পায় না।

নারীর কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনটি বিষয়ে জোর দেয়া প্রয়োজন। পুরুষ সহকর্মীর মত নারী সহকর্মীর প্রতিও সমান দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে হবে। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নারী কর্মীর সময় এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। কাজ শেষে নারীর নিরাপদে বাড়িতে ফিরার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা জরুরি। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ নিরুৎসাহিত করতে কর্মক্ষেত্রে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা রাখা যায়। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নারীর মর্যাদা ও সুরক্ষার বিষয়টি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নজরদারীতে রাখা প্রয়োজন।

প্রতিটি মানুষের মত নারীর রয়েছে মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকার অধিকার, কিন্তু বৈষম্যমূলক মনোভাবের কারণে নারী তার প্রাপ্য সম্মান পায়না। নারীর প্রতি হীন মানসিকতার বহি:প্রকাশে কেউ কেউ অশ্লীল কিংবা অশোভন আচরণ করে থাকে। তাই সরকার নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রণয়ন করেছে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন-২০১০। ইভটিজিং বা যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে আইন হয়েছে। শুধু তাইনা, কোনো মেয়ে সহিংসতার শিকার হলে হট লাইন ১০৯ নম্বরে ফোন করে জানালে সব ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সামাজিক সচেতনতার অংশ হিসেবে কিশোরী মেয়েদের চেঞ্জমেকার হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে যৌন হয়রানি বন্ধ হবে অনেকাংশেই।

সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা-১৯৭৯ এর ২৭ ধারাতে বলা আছে কোনো কর্মচারি নারী সহকর্মীর প্রতি এমন কোনো ভাষা বা আচরণ করতে পারবে না, যা অনুচিত এবং দাপ্তরিক শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং যা নারী সহকর্মীর মর্যাদাহানি ঘটায়। সরকার নারী গৃহকর্মীদের সম্মানজনক জীবিকা এবং সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে আইন করেছে। গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫ এর ৭ (১০) ধারা অনুযায়ী নিয়োগকারী অথবা তার পরিবারের সদস্য বা আগত অতিথিদের দ্বারা গৃহকর্মী কোন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন যেমন অশ্লীল আচরণ, যৌন নির্যাতন কিংবা শারীরিক আঘাত অথবা ভীতি প্রদর্শনের শিকার হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ধরনের মামলা সরকারি ব্যয়ে পরিচালিত হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের গাইড লাইন প্রযোজ্য হবে।

সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি এবং নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে নারীর ক্ষমতায়নে সরকার বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০ উদ্যোগের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়ণে গৃহীত কর্মসূচি দেশের নারীদের দৃঢ় সামাজিক অবস্থানে নিয়ে গেছে। এসবের মধ্যে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মা ও শিশুর যতœসহ যাবতীয় বিষয়ে উদ্ধুদ্ধকরণ ও সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দরিদ্র, অসহায় ও স্বল্প আয়সম্পন্ন নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে কম্পিউটারসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা থাকলে পরিপূর্ণ সাফল্য আসে না। পিছিয়ে পড়ে পরিবার, শ্লথ হয়ে পড়ে দেশের উন্নয়নের গতি। এ কারণে টেকসই উন্নয়নে নারীর নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বিশেষ লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা আছে। কিন্তু নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী ছাড়া কল্যাণমূলক সংস্কৃতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আর নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পরিবার থেকেই গড়ে তুলতে হবে এ সংস্কৃতি।

(পিআইডি-শিশু ও নারী উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রমবিষয়ক ফিচার)

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০১৯ , ২৪ আষাঢ় ১৪২৫, ৪ জ্বিলকদ ১৪৪০

নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ

জিনাত আরা আহমেদ

নারী-পুরুষের সম্মিলিত শক্তিকে পুঁজি করে বর্তমানে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ, যেখানে গড় মাথাপিছু আয় ১৭৫২ ডলার। বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। নারীদের অধিকার ও তাদের সুরক্ষায় সরকার ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে গ্রহণ করেছে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা। তারপরও নারীদের প্রায় ৬৭ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে বৈষম্য অথবা নির্যাতনের শিকার। পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে নারীরা নানাভাবে সহিংসতা এবং অমর্যাদাকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য নারীদের কর্মপরিবেশ এবং চলার পথ নিরাপদ থাকা জরুরি।

নারী পরিবারে কন্যা, ভগিনী, জায়া, জননী। এই নারীকে বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রতিদিন বের হতে হয় ঘর থেকে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েদের যেতে হয় তাদের ক্যাম্পাসে। অফিস-আদালতে চাকরি করছে অসংখ্য নারী। নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে প্রায়ই তাদের যেতে হয় বাইরে। অনেক নারী গৃহকর্মী হিসেবে বাসাবাড়িতে শ্রম দিচ্ছেন। কর্মজীবী নারীর শ্রমে গড়ে উঠেছে আজকের প্রতিষ্ঠিত পোশাক শিল্প। ঘরে বাইরে পাল্লা দিয়ে নারীরা তাদের শ্রম ও মেধার স্ফূরণ ঘটিয়ে সচল রাখছেন সংসার ও সমাজের চাকা, এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। কিন্তু নারীর চলার পথ সবক্ষেত্রে মসৃণ নয়। সমাজ-সংসারের গতিময়তায় অবদান রাখা নারীদের কর্মক্ষেত্র অথবা চলার পথ প্রায়ই বিভিন্নভাবে বাধার সম্মুখীন হয়।

কর্মপরিবেশ শুধুুমাত্র নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। ঘর থেকে বের হবার পর থেকে ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। এমনকি স্কুলে যাওয়ার পর শিক্ষক তার ছাত্রীর সঙ্গে কি ভাষায় কথা বলছেন, এটাও এ বিবেচনার বিষয়। অনেকক্ষেত্রে কোচিংয়ে মেয়েরা অশোভন আচরণের শিকার হয়। অথচ শিক্ষা জীবন একটা মেয়ের কর্মজীবনে প্রবেশের প্রস্তুতিকাল। এখানকার নিরাপদ পরিবেশ তার মানসিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এসময় যদি কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বা ভীতিকর অবস্থা মনে দানা বাঁধে, তা পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য আত্মবিশ্বাস তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়া রাস্তায় অনিরাপত্তা একটা মেয়ের মধ্যে হীনমন্যতা তৈরি করে, যা নারীর এগিয়ে চলার পথে বড় রকমের প্রতিবন্ধকতা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে।

নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্র এবং রাস্তায় নারী এখনও পুরোপুরি নিরাপদ নয়। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা রাস্তায় চলাফেরার সময় ভিড়ের মধ্যে, আবার পাবলিক বাসে নানাভাবে অশোভন আচরণের শিকার হয়। কর্মপরিবেশে নারীদের প্রতি বিভ্রান্তিকর মানসিকতার দরুন এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীদের জন্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করার পরও নারী অনেক সময় আশানুরূপ সহযোগিতা পায় না।

নারীর কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনটি বিষয়ে জোর দেয়া প্রয়োজন। পুরুষ সহকর্মীর মত নারী সহকর্মীর প্রতিও সমান দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে হবে। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নারী কর্মীর সময় এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। কাজ শেষে নারীর নিরাপদে বাড়িতে ফিরার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা জরুরি। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ নিরুৎসাহিত করতে কর্মক্ষেত্রে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা রাখা যায়। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নারীর মর্যাদা ও সুরক্ষার বিষয়টি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নজরদারীতে রাখা প্রয়োজন।

প্রতিটি মানুষের মত নারীর রয়েছে মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকার অধিকার, কিন্তু বৈষম্যমূলক মনোভাবের কারণে নারী তার প্রাপ্য সম্মান পায়না। নারীর প্রতি হীন মানসিকতার বহি:প্রকাশে কেউ কেউ অশ্লীল কিংবা অশোভন আচরণ করে থাকে। তাই সরকার নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রণয়ন করেছে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন-২০১০। ইভটিজিং বা যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে আইন হয়েছে। শুধু তাইনা, কোনো মেয়ে সহিংসতার শিকার হলে হট লাইন ১০৯ নম্বরে ফোন করে জানালে সব ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সামাজিক সচেতনতার অংশ হিসেবে কিশোরী মেয়েদের চেঞ্জমেকার হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে যৌন হয়রানি বন্ধ হবে অনেকাংশেই।

সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা-১৯৭৯ এর ২৭ ধারাতে বলা আছে কোনো কর্মচারি নারী সহকর্মীর প্রতি এমন কোনো ভাষা বা আচরণ করতে পারবে না, যা অনুচিত এবং দাপ্তরিক শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং যা নারী সহকর্মীর মর্যাদাহানি ঘটায়। সরকার নারী গৃহকর্মীদের সম্মানজনক জীবিকা এবং সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে আইন করেছে। গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫ এর ৭ (১০) ধারা অনুযায়ী নিয়োগকারী অথবা তার পরিবারের সদস্য বা আগত অতিথিদের দ্বারা গৃহকর্মী কোন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন যেমন অশ্লীল আচরণ, যৌন নির্যাতন কিংবা শারীরিক আঘাত অথবা ভীতি প্রদর্শনের শিকার হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ধরনের মামলা সরকারি ব্যয়ে পরিচালিত হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের গাইড লাইন প্রযোজ্য হবে।

সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি এবং নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে নারীর ক্ষমতায়নে সরকার বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০ উদ্যোগের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়ণে গৃহীত কর্মসূচি দেশের নারীদের দৃঢ় সামাজিক অবস্থানে নিয়ে গেছে। এসবের মধ্যে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মা ও শিশুর যতœসহ যাবতীয় বিষয়ে উদ্ধুদ্ধকরণ ও সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দরিদ্র, অসহায় ও স্বল্প আয়সম্পন্ন নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে কম্পিউটারসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা থাকলে পরিপূর্ণ সাফল্য আসে না। পিছিয়ে পড়ে পরিবার, শ্লথ হয়ে পড়ে দেশের উন্নয়নের গতি। এ কারণে টেকসই উন্নয়নে নারীর নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বিশেষ লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা আছে। কিন্তু নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী ছাড়া কল্যাণমূলক সংস্কৃতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আর নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পরিবার থেকেই গড়ে তুলতে হবে এ সংস্কৃতি।

(পিআইডি-শিশু ও নারী উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রমবিষয়ক ফিচার)