বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রয়োজন সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং বিশ্বস্ততা

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের ডালিয়ানে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সভায় বলেছেন, বাংলাদেশ বিদেশি অর্থায়নে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও বৈদেশিক ঋণের ফাঁদে যাতে না পড়ে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, তার সময়ে বাংলাদেশ কখনই ঋণের ফাঁদে পড়বে না। ভারত, চীন, জাপানসহ সব দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশ অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে এই তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিনিয়োগ নিয়ে কারও সঙ্গে বাংলাদেশের কোন সমস্যা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে তার পাঁচটি প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন, সব দেশের সঙ্গে শান্তি, সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। পারস্পরিক আস্থা ও সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়তে হবে। সবাইকে নিয়েই উন্নয়ন হতে হবে। প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে হবে, শত্রুতা নয়। বাংলাদেশ তৃতীয় কোন পক্ষের সহযোগিতা না নিয়ে ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি করেছে। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন ও স্থলসীমান্ত চুক্তি করেছে।

আজকের বিশ্ব একটি গ্লোবাল ভিলেজ। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কিছুটা সমস্যা থাকতে পারে, তবে আলোচনার মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য যে কোন দেশের উন্নয়নে অনুসরণযোগ্য কৌশল হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে। বাংলাদেশের প্রধান রফতানিপণ্য তৈরি পোশাক। বিশ্ববাজারে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। অথচ ব্যবসা ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সহযোগিতার অনুকরণযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। চীন এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সহযোগী। বাংলাদেশের উন্নয়নে বাংলাদেশ যেমন প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বিশ্বস্ততার সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে, তেমন চীন-জাপানসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও অকপট। ফলে সব দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। সুসম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কৌশল অন্য দেশগুলোর জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ প্রতিবেশী মায়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার নীতি গ্রহণ করেছে। সংঘাত এড়িয়ে কীভাবে এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়, সে পথে হাঁটছে। এশিয়ায় শান্তি, উন্নয়ন ও সহযোগিতার পরিবেশ রচনায় বাংলাদেশ সবার জন্য অনুকরণীয় মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্যের পেছনেও সবাইকে বন্ধু ভাবার ঔদার্যতা নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।

বাংলাদেশের মানুষ অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী। অপরিসীম তাদের ধৈর্য, সৃজনশীলতা এবং সংগ্রাম করার মনোবল ও উদ্যম। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই, কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না। বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।

বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী এক বিস্ময়ের নাম। সম্ভাবনার দিগন্তে পতপত করে উড়ছে পতাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প একের পর এক পেখম মেলে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। চার লেন মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পানগাঁও নৌ-টামির্নাল নির্মাণ প্রকল্প, গ্যাস সংকট নিরসনে এলএনজি টামির্নাল প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রাজধানীর চারপাশে স্যুয়ারেজ ট্যানেল নির্মাণের মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।

উন্নয়নের এ কমর্যজ্ঞে যোগ হয়েছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম প্রকল্প। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি অঞ্চলের কাজের উদ্বোধনও করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিরাপদ এবং পণ্য পরিবহন-খালাস সহজীকরণ করতে নেয়া আরও কিছু অবকাঠামোর সংস্কার হচ্ছে। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও এগিয়েছে দেশ। ১৬ কোটি মানুষের দেশে কয়েক বছরে সক্রিয় মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি, আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সম্ভাবনার নবদিগন্তে বাংলাদেশে সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি। দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের সব মানুষ যোগাযোগ ও সম্প্রচার সুবিধার আওতায় আসবে। এর দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত হবে। এমনকি স্যাটেলাইটের বধির্ত ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও উপার্জন করা যাবে।

এক নজরে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন : পদ্মা সেতু নির্মাণ, সমুদ্র সীমানা বিজয়, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, ফ্লাইওভার নির্মাণ, জেলেদের খাদ্য সহায়তা প্রদান, দরিদ্রতার হার নিম্ন পর্যায়ে, যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, বিনামূল্যে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর হাতে বই বিতরণ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, দেশের রফতানি আয় বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, গরিব শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন ব্যবস্থা, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা প্রদান, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল তথ্য সেবা কেন্দ্র, বিভিন্ন জেলায় বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ, বিভিন্ন জেলায় শিল্প পার্ক নির্মাণ, দেশের বিভিন্ন স্থানে ইকোনমিক জোন নির্মাণ, গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও কালভার্ট নির্মাণ, মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহক বৃদ্ধি, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, কৃষিতে সফলতা, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সফলতা, এশিয়া হাইওয়ে রোড প্রকল্প, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান, নারীর ক্ষমতায়ন, বিধবা ভাতা প্রদান, মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধি, বয়স্ক ভাতা প্রদান, মাতৃকালীন ভাতা প্রদান, ডিজিটাল বাংলাদেশ কাযর্কর, মেট্রোরেল, হাতিরঝিল প্রকল্প, এলিভেটেড একপ্রেস প্রকল্পের কাজ চলছে, স্যাটেলাইট, ৪জি-৫জি, মাদক দমন, ভিক্ষুক মুক্তকরণ, হরতাল মুক্তকরণ, ২০০টির উপরে মসজিদ স্থাপন, রূপপুরে পারমাণবিক স্থাপন, প্রাইমারি স্কুল সরকারিকরণ।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা দিয়েছিল। অথচ স্বাধীনতার ৪৭ বছরে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, সম্পদে ভরপুর এবং সম্পদে উপচেপড়া ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতা অজর্ন এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ, সাহসী, সৎ, যোগ্য নেতৃত্বের ফলে। আশির দশকে বাংলাদেশের গামের্ন্ট শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থ উপার্জনের সূচনা হয়। কালক্রমে এই শিল্প এখন বিশ্বে অন্যতম প্রধান রফতানিকারক শিল্পে পরিণত হয়েছে। প্রবাসী আয় আজ বার্ষিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আজ আমরা শত্রুর মুখে চুনকালি দিয়ে বিশ্ব অগ্রগতির মহাসড়কে।

বাংলাদেশ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে দারিদ্র্যমুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হওয়া। সেই পথ ধরে ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্নও দেখছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নে, সন্ত্রাসবাদ দমনে, জঙ্গিবাদ নির্মূলে দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতোই পদক্ষেপ এগুলো। তা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার মতো সুযোগ্য, দক্ষ নেতৃত্ব এবং আওয়ামী লীগের মতো দেশপ্রেমিক সংগঠন থাকায়। এমন সুযোগ্য নেতৃত্বই আমাদের দীর্ঘ সময় দরকার, তাহলেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

[লেখক : সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড]

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০১৯ , ২৪ আষাঢ় ১৪২৫, ৪ জ্বিলকদ ১৪৪০

বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রয়োজন সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং বিশ্বস্ততা

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের ডালিয়ানে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সভায় বলেছেন, বাংলাদেশ বিদেশি অর্থায়নে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও বৈদেশিক ঋণের ফাঁদে যাতে না পড়ে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, তার সময়ে বাংলাদেশ কখনই ঋণের ফাঁদে পড়বে না। ভারত, চীন, জাপানসহ সব দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশ অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে এই তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিনিয়োগ নিয়ে কারও সঙ্গে বাংলাদেশের কোন সমস্যা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে তার পাঁচটি প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন, সব দেশের সঙ্গে শান্তি, সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। পারস্পরিক আস্থা ও সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়তে হবে। সবাইকে নিয়েই উন্নয়ন হতে হবে। প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে হবে, শত্রুতা নয়। বাংলাদেশ তৃতীয় কোন পক্ষের সহযোগিতা না নিয়ে ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি করেছে। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন ও স্থলসীমান্ত চুক্তি করেছে।

আজকের বিশ্ব একটি গ্লোবাল ভিলেজ। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কিছুটা সমস্যা থাকতে পারে, তবে আলোচনার মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য যে কোন দেশের উন্নয়নে অনুসরণযোগ্য কৌশল হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে। বাংলাদেশের প্রধান রফতানিপণ্য তৈরি পোশাক। বিশ্ববাজারে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। অথচ ব্যবসা ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সহযোগিতার অনুকরণযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। চীন এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সহযোগী। বাংলাদেশের উন্নয়নে বাংলাদেশ যেমন প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বিশ্বস্ততার সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে, তেমন চীন-জাপানসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও অকপট। ফলে সব দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। সুসম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কৌশল অন্য দেশগুলোর জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ প্রতিবেশী মায়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার নীতি গ্রহণ করেছে। সংঘাত এড়িয়ে কীভাবে এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়, সে পথে হাঁটছে। এশিয়ায় শান্তি, উন্নয়ন ও সহযোগিতার পরিবেশ রচনায় বাংলাদেশ সবার জন্য অনুকরণীয় মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্যের পেছনেও সবাইকে বন্ধু ভাবার ঔদার্যতা নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।

বাংলাদেশের মানুষ অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী। অপরিসীম তাদের ধৈর্য, সৃজনশীলতা এবং সংগ্রাম করার মনোবল ও উদ্যম। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই, কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না। বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।

বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী এক বিস্ময়ের নাম। সম্ভাবনার দিগন্তে পতপত করে উড়ছে পতাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প একের পর এক পেখম মেলে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। চার লেন মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পানগাঁও নৌ-টামির্নাল নির্মাণ প্রকল্প, গ্যাস সংকট নিরসনে এলএনজি টামির্নাল প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রাজধানীর চারপাশে স্যুয়ারেজ ট্যানেল নির্মাণের মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।

উন্নয়নের এ কমর্যজ্ঞে যোগ হয়েছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম প্রকল্প। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি অঞ্চলের কাজের উদ্বোধনও করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিরাপদ এবং পণ্য পরিবহন-খালাস সহজীকরণ করতে নেয়া আরও কিছু অবকাঠামোর সংস্কার হচ্ছে। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও এগিয়েছে দেশ। ১৬ কোটি মানুষের দেশে কয়েক বছরে সক্রিয় মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি, আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সম্ভাবনার নবদিগন্তে বাংলাদেশে সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি। দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের সব মানুষ যোগাযোগ ও সম্প্রচার সুবিধার আওতায় আসবে। এর দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত হবে। এমনকি স্যাটেলাইটের বধির্ত ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও উপার্জন করা যাবে।

এক নজরে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন : পদ্মা সেতু নির্মাণ, সমুদ্র সীমানা বিজয়, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, ফ্লাইওভার নির্মাণ, জেলেদের খাদ্য সহায়তা প্রদান, দরিদ্রতার হার নিম্ন পর্যায়ে, যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, বিনামূল্যে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর হাতে বই বিতরণ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, দেশের রফতানি আয় বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, গরিব শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন ব্যবস্থা, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা প্রদান, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল তথ্য সেবা কেন্দ্র, বিভিন্ন জেলায় বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ, বিভিন্ন জেলায় শিল্প পার্ক নির্মাণ, দেশের বিভিন্ন স্থানে ইকোনমিক জোন নির্মাণ, গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও কালভার্ট নির্মাণ, মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহক বৃদ্ধি, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, কৃষিতে সফলতা, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সফলতা, এশিয়া হাইওয়ে রোড প্রকল্প, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান, নারীর ক্ষমতায়ন, বিধবা ভাতা প্রদান, মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধি, বয়স্ক ভাতা প্রদান, মাতৃকালীন ভাতা প্রদান, ডিজিটাল বাংলাদেশ কাযর্কর, মেট্রোরেল, হাতিরঝিল প্রকল্প, এলিভেটেড একপ্রেস প্রকল্পের কাজ চলছে, স্যাটেলাইট, ৪জি-৫জি, মাদক দমন, ভিক্ষুক মুক্তকরণ, হরতাল মুক্তকরণ, ২০০টির উপরে মসজিদ স্থাপন, রূপপুরে পারমাণবিক স্থাপন, প্রাইমারি স্কুল সরকারিকরণ।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা দিয়েছিল। অথচ স্বাধীনতার ৪৭ বছরে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, সম্পদে ভরপুর এবং সম্পদে উপচেপড়া ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতা অজর্ন এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ, সাহসী, সৎ, যোগ্য নেতৃত্বের ফলে। আশির দশকে বাংলাদেশের গামের্ন্ট শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থ উপার্জনের সূচনা হয়। কালক্রমে এই শিল্প এখন বিশ্বে অন্যতম প্রধান রফতানিকারক শিল্পে পরিণত হয়েছে। প্রবাসী আয় আজ বার্ষিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আজ আমরা শত্রুর মুখে চুনকালি দিয়ে বিশ্ব অগ্রগতির মহাসড়কে।

বাংলাদেশ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে দারিদ্র্যমুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হওয়া। সেই পথ ধরে ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্নও দেখছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নে, সন্ত্রাসবাদ দমনে, জঙ্গিবাদ নির্মূলে দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতোই পদক্ষেপ এগুলো। তা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার মতো সুযোগ্য, দক্ষ নেতৃত্ব এবং আওয়ামী লীগের মতো দেশপ্রেমিক সংগঠন থাকায়। এমন সুযোগ্য নেতৃত্বই আমাদের দীর্ঘ সময় দরকার, তাহলেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

[লেখক : সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড]