গত একদশকে বিদ্যুৎ খাতে অর্জন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলম

বিদ্যুৎ খাতে বর্তমান সরকার অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। গত এক দশকে (২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত) বিদ্যুতের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৬০৬ থেকে ১৮ হাজার ৭৯ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ের ব্যবধানে সর্বোচ্চ উৎপাদন ৪ হাজার ৬০৬ থেকে ১১ হাজার ৬২৩ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পায়। বিদ্যুৎ নিয়ে বর্তমান সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো আগামী ২০২১ সালে স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াট (তখন চাহিদা দাঁড়াবে ১৯ হাজার মেগাওয়াট), ২০৩০ সালে স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ হাজার মেগাওয়াট (তখন চাহিদা দাঁড়াবে ৩৩ হাজার মেগাওয়াট) এবং ২০৪১ সালে স্থাপিত ক্ষমতা ৬০ হাজার মেগাওয়াটে বৃদ্ধি (তখন চাহিদা দাঁড়াবে ৫২ হাজার মেগাওয়াট)। বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক ৫৬ দশমিক ৫০, আমদানি ৬ দশমিক ৪২, নবায়নযোগ্য জ্বালানি শূন্য দশমিক ১৩, ডিজেল ৯ দশমিক ৮২, কয়লা ২ দশমিক ৯০, ফার্নেস অয়েল ২২ দশমিক ৯৭ ও জলবিদ্যুৎ ১ দশমিক ২৭ শতাংশ (জ্বালানির ভিত্তিতে)। অপরদিকে বর্তমানে ১৪ হাজার ২০২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প নির্মাণাধীন। আবার ৫ হাজার ৮০১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৮টি কেন্দ্রের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন যেগুলোর কার্যক্রম অচিরেই শুরু হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। উল্লেখ করতে হয় যে, এক দশক আগেও বিদ্যুতের অভাবে দেশের অর্থনীতি ছিল পর্যুদস্ত। শিল্প-বাণিজ্য ছিল স্থবির এবং জনজীবনে লোডশেডিং ছিল অসহনীয়। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছে এবং ইতোমধ্যে দ্বিতীয় মেয়াদের সাড়ে চার বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সাহসী, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বিদ্যুৎ খাতে সাড়ে নয় বছরে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যুৎ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে। লক্ষ্য সবার জন্য বিদ্যুৎ যৌক্তিক ও সহনীয় মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করা। মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪৯৪২ মেগাওয়াট এবং প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩২৬৮ মেগাওয়াট। সে সময় নতুন সরকার বিদ্যুত খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদানপূর্বক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিসহ এ খাতের সার্বিক ও সুষম উন্নয়নে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল, কয়লা, ডুয়েল ফুয়েল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও নিউক্লিয়ার এনার্জিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারের সাড়ে নয় বছরে ২০০৯ সাল থেকে ১৮ জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জিত হয়েছে। সরকারের ৯ বছরের চেষ্টায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি থেকে ১১৮টিতে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। ২০০৯ সালে মোট ১২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলোর মোট ক্ষমতা ৩৫৬ মেগাওয়াট। ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়, যেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৭৭৫ মেগাওয়াট। একইভাবে ২০১১ সালে এক হাজার ৭৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২২টি, ২০১২ সালে ৯৫১ মেগাওয়াটের ১১টি, ২০১৩ সালে ৬৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি, ২০১৪ সালে ৬৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার সাতটি, ২০১৫ সালে এক হাজার ৩৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার সাতটি, ২০১৬ সালে এক হাজার ১৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতার আটটি এবং ২০১৭ সালে দেশে ১ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট ১০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকারি খাতে ৬ হাজার ৭০৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৬টি এবং বেসরকারি খাতে ৪ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ মোট ১১ হাজার ৩৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারি খাতে ২ হাজার ৭৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮টি এবং বেসরকারি খাতে ২ হাজার ৮৪৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সর্বমোট ৪ হাজার ৯১৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন সরকারি খাতে ৬ হাজার ৪১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনাধীন রয়েছে।

চলতি বছরের মধ্যে ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির কার্যক্রম চলমান। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে ২০২৩ সালের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় আমূল পরবর্তন ঘটবে। এক নজরে ২০০৯ সাল থেকে ১৮ জুলাই ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাড়ে ৯ বছরে বিদ্যুৎ খাতের উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩১০০ মেগাওয়াট থেকে ১৭২০০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ৩২৬৮ মেগাওয়াট হতে ১১৩৮৭ মেগাওয়াটে উন্নীত করা, বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭% থেকে ৯০% উন্নীত করা; মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট আওয়ার হতে ৪৬৪ কিলোওয়াট আওয়ারে উন্নীত করা; ৯৬ লাখ নতুন গ্রাহক সংযোগের মাধ্যমে প্রায় ৩ কোটি গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান; প্রায় ২০০০ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণসহ মোট সঞ্চালন লাইন (সা.কি.মি.) : ১১,১২২ সর্বমোট বিতরণ লাইন ৪ লাখ ৫৫ হাজার এবং জুন ২০১৭ সাল পর্যন্ত সিস্টেম লস দাঁড়িয়েছে ১২.১৯% বিতরণ লস : ৯.৯৮%। ২০০৯ সালে গ্রিড সাবস্টেশনের ক্ষমতা ছিল ১৫ হাজার ৮৭০ এমভিএ। এখন যার পরিমাণ ৩০ হাজার ৯৯৩ এমভিএ। আঞ্চলিক সহযোগিতা কার্যক্রমের আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ হতে ৬৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন ও ভেড়ামারা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণপূর্বক ৫ অক্টোবর ২০১৩ সাল থেকে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। ২৩ মার্চ ২০১৬ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মি. নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারত দ্বিতীয় গ্রিড আন্তঃসংযোগ উদ্বোধনের মাধ্যমে ত্রিপুরা হতে কুমিল্লা উপকেন্দ্রে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়েছে। ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়া ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও জাপানের সহযোগিতায় কয়লাভিত্তিক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

[লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক কর কমিশনার ও চেয়ারম্যান ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন]

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০১৯ , ২৪ আষাঢ় ১৪২৫, ৪ জ্বিলকদ ১৪৪০

গত একদশকে বিদ্যুৎ খাতে অর্জন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলম

image

বিদ্যুৎ খাতে বর্তমান সরকার অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। গত এক দশকে (২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত) বিদ্যুতের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৬০৬ থেকে ১৮ হাজার ৭৯ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ের ব্যবধানে সর্বোচ্চ উৎপাদন ৪ হাজার ৬০৬ থেকে ১১ হাজার ৬২৩ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পায়। বিদ্যুৎ নিয়ে বর্তমান সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো আগামী ২০২১ সালে স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াট (তখন চাহিদা দাঁড়াবে ১৯ হাজার মেগাওয়াট), ২০৩০ সালে স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ হাজার মেগাওয়াট (তখন চাহিদা দাঁড়াবে ৩৩ হাজার মেগাওয়াট) এবং ২০৪১ সালে স্থাপিত ক্ষমতা ৬০ হাজার মেগাওয়াটে বৃদ্ধি (তখন চাহিদা দাঁড়াবে ৫২ হাজার মেগাওয়াট)। বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক ৫৬ দশমিক ৫০, আমদানি ৬ দশমিক ৪২, নবায়নযোগ্য জ্বালানি শূন্য দশমিক ১৩, ডিজেল ৯ দশমিক ৮২, কয়লা ২ দশমিক ৯০, ফার্নেস অয়েল ২২ দশমিক ৯৭ ও জলবিদ্যুৎ ১ দশমিক ২৭ শতাংশ (জ্বালানির ভিত্তিতে)। অপরদিকে বর্তমানে ১৪ হাজার ২০২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প নির্মাণাধীন। আবার ৫ হাজার ৮০১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৮টি কেন্দ্রের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন যেগুলোর কার্যক্রম অচিরেই শুরু হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। উল্লেখ করতে হয় যে, এক দশক আগেও বিদ্যুতের অভাবে দেশের অর্থনীতি ছিল পর্যুদস্ত। শিল্প-বাণিজ্য ছিল স্থবির এবং জনজীবনে লোডশেডিং ছিল অসহনীয়। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছে এবং ইতোমধ্যে দ্বিতীয় মেয়াদের সাড়ে চার বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সাহসী, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বিদ্যুৎ খাতে সাড়ে নয় বছরে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যুৎ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে। লক্ষ্য সবার জন্য বিদ্যুৎ যৌক্তিক ও সহনীয় মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করা। মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪৯৪২ মেগাওয়াট এবং প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩২৬৮ মেগাওয়াট। সে সময় নতুন সরকার বিদ্যুত খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদানপূর্বক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিসহ এ খাতের সার্বিক ও সুষম উন্নয়নে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল, কয়লা, ডুয়েল ফুয়েল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও নিউক্লিয়ার এনার্জিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারের সাড়ে নয় বছরে ২০০৯ সাল থেকে ১৮ জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জিত হয়েছে। সরকারের ৯ বছরের চেষ্টায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি থেকে ১১৮টিতে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। ২০০৯ সালে মোট ১২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলোর মোট ক্ষমতা ৩৫৬ মেগাওয়াট। ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়, যেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৭৭৫ মেগাওয়াট। একইভাবে ২০১১ সালে এক হাজার ৭৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২২টি, ২০১২ সালে ৯৫১ মেগাওয়াটের ১১টি, ২০১৩ সালে ৬৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি, ২০১৪ সালে ৬৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার সাতটি, ২০১৫ সালে এক হাজার ৩৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার সাতটি, ২০১৬ সালে এক হাজার ১৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতার আটটি এবং ২০১৭ সালে দেশে ১ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট ১০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকারি খাতে ৬ হাজার ৭০৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৬টি এবং বেসরকারি খাতে ৪ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ মোট ১১ হাজার ৩৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারি খাতে ২ হাজার ৭৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮টি এবং বেসরকারি খাতে ২ হাজার ৮৪৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সর্বমোট ৪ হাজার ৯১৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন সরকারি খাতে ৬ হাজার ৪১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনাধীন রয়েছে।

চলতি বছরের মধ্যে ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির কার্যক্রম চলমান। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে ২০২৩ সালের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় আমূল পরবর্তন ঘটবে। এক নজরে ২০০৯ সাল থেকে ১৮ জুলাই ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাড়ে ৯ বছরে বিদ্যুৎ খাতের উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩১০০ মেগাওয়াট থেকে ১৭২০০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ৩২৬৮ মেগাওয়াট হতে ১১৩৮৭ মেগাওয়াটে উন্নীত করা, বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭% থেকে ৯০% উন্নীত করা; মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট আওয়ার হতে ৪৬৪ কিলোওয়াট আওয়ারে উন্নীত করা; ৯৬ লাখ নতুন গ্রাহক সংযোগের মাধ্যমে প্রায় ৩ কোটি গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান; প্রায় ২০০০ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণসহ মোট সঞ্চালন লাইন (সা.কি.মি.) : ১১,১২২ সর্বমোট বিতরণ লাইন ৪ লাখ ৫৫ হাজার এবং জুন ২০১৭ সাল পর্যন্ত সিস্টেম লস দাঁড়িয়েছে ১২.১৯% বিতরণ লস : ৯.৯৮%। ২০০৯ সালে গ্রিড সাবস্টেশনের ক্ষমতা ছিল ১৫ হাজার ৮৭০ এমভিএ। এখন যার পরিমাণ ৩০ হাজার ৯৯৩ এমভিএ। আঞ্চলিক সহযোগিতা কার্যক্রমের আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ হতে ৬৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন ও ভেড়ামারা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণপূর্বক ৫ অক্টোবর ২০১৩ সাল থেকে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। ২৩ মার্চ ২০১৬ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মি. নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারত দ্বিতীয় গ্রিড আন্তঃসংযোগ উদ্বোধনের মাধ্যমে ত্রিপুরা হতে কুমিল্লা উপকেন্দ্রে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়েছে। ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়া ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও জাপানের সহযোগিতায় কয়লাভিত্তিক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

[লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক কর কমিশনার ও চেয়ারম্যান ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন]