সরকার শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

সরকার শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘রিজওনাল সেমিনার অন ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট প্রোটেকশন’ শীর্ষক ৪ দিনের এক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করছে। অনুষ্ঠানে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ এবং বিএসইসি চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন। ৮ থেকে ১১ জুলাই এ চার দিনব্যাপী কনফারেন্সে জাপান, নেপাল, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ ৯টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, বিভিন্ন সংস্কার করে পুঁজিবাজারে জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন বা যারা খরচ করেন তাদের একটা অনুরোধ করব, আপনারা যখন বিনিয়োগ করতে যান বা খরচ করতে যান, যে টাকা উপার্জন করেন তার সবটুকু খরচ করে ফেলবেন না। কিছু টাকা জমা রেখে তারপর বিনিয়োগ করবেন। অনেক সময় দেখা যায়, যতটুকু পাওয়া গেলে, আরও বেশি পাওয়ার লোভে সবটুকু খরচ করে ফেলে শেষে শূন্য হয়ে যেতে হয়। সেটা যেন না হয়। এ জন্য যাই উপার্জন করুন, কিছু হাতে রেখে জমা রাখবেন, কিছু খরচ করবেন। তাহলে আমার মনে হয় আপনাদের আয় স্থিতিশীল থাকবে বলে পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, বিএসইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সরকার প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধিসহ অন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বিএসইসির নিজস্ব ভবনও আমরা নির্মাণ করেছি। বিএসইসির কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রণীত সব প্রণোদনা বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিদেশি কৌশলগত বিনিয়োগকারী অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হয়েছে।

এ সময় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও ইমপ্যাক্ট ফান্ড গঠন নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও ইমপ্যাক্ট ফান্ড গঠনের জন্য বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যার ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের কোম্পানিগুলো পুঁজি উত্তোলন করতে পারবে এবং স্টেপআপ কোম্পানি তালিকাভুক্তির সুযোগ পাবে। শেয়ারবাজারের লেনদেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের পুঁজিবাজার এখনও শ্রেণী বিনিয়োগকারীর ওপর নির্ভরশীল। শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে দৈনন্দিন লেনদেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। জ্ঞাননির্ভর বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটি জ্ঞাননির্ভর বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিনিয়োগ শিক্ষা কর্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ব্যক্তি-শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কর্যক্রম চালু রয়েছে। ইতোমধ্যে বিএসইসির আওতায় বিভাগীয় শহরগুলোতে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তা সব জেলা সদরে অনুষ্ঠিত হবে। বিনিয়োগকারীরাই হলো পুঁজিবাজারের মূল চালিকা শক্তি। তাই তাদের সচেতনতার বিষয়টি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্যতম। জেনে, বুঝে বিনিয়োগ করলে, একদিকে যেমন প্রত্যেকের বিনিয়োগ ঝুঁকির সক্ষমতা বাড়ে, অন্যদিকে নিশ্চিত হয় পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা।

তিনি বলেন, আমরা ২০১৮ সালে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এই শিরোনামে ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে দেশব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্যক্রম সম্প্রসারণের ওপর জোর দিয়েছি। শুধু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নয়, পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ, নীতি নির্ধারণীতে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিনিয়োগ সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি ত্বরান্বিত হবে। উন্নত দেশ হওয়ার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের অন্যতম উৎস হবে এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্য প্রচেষ্টার পাশাপাশি বিনয়োগকারীদের সুরক্ষার দিকটি অধিকতর নিশ্চিত হয়ে একটি বিকশিত পুঁজিবাজার গড়ে উঠবে। যে পুঁজিবাজার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তারিত হবার আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের অন্যতম উৎস হিসেবে আবির্ভূত হবে।

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০১৯ , ২৫ আষাঢ় ১৪২৫, ৫ জ্বিলকদ ১৪৪০

সরকার শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

সরকার শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘রিজওনাল সেমিনার অন ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট প্রোটেকশন’ শীর্ষক ৪ দিনের এক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করছে। অনুষ্ঠানে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ এবং বিএসইসি চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন। ৮ থেকে ১১ জুলাই এ চার দিনব্যাপী কনফারেন্সে জাপান, নেপাল, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ ৯টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, বিভিন্ন সংস্কার করে পুঁজিবাজারে জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন বা যারা খরচ করেন তাদের একটা অনুরোধ করব, আপনারা যখন বিনিয়োগ করতে যান বা খরচ করতে যান, যে টাকা উপার্জন করেন তার সবটুকু খরচ করে ফেলবেন না। কিছু টাকা জমা রেখে তারপর বিনিয়োগ করবেন। অনেক সময় দেখা যায়, যতটুকু পাওয়া গেলে, আরও বেশি পাওয়ার লোভে সবটুকু খরচ করে ফেলে শেষে শূন্য হয়ে যেতে হয়। সেটা যেন না হয়। এ জন্য যাই উপার্জন করুন, কিছু হাতে রেখে জমা রাখবেন, কিছু খরচ করবেন। তাহলে আমার মনে হয় আপনাদের আয় স্থিতিশীল থাকবে বলে পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, বিএসইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সরকার প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধিসহ অন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বিএসইসির নিজস্ব ভবনও আমরা নির্মাণ করেছি। বিএসইসির কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রণীত সব প্রণোদনা বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিদেশি কৌশলগত বিনিয়োগকারী অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হয়েছে।

এ সময় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও ইমপ্যাক্ট ফান্ড গঠন নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও ইমপ্যাক্ট ফান্ড গঠনের জন্য বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যার ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের কোম্পানিগুলো পুঁজি উত্তোলন করতে পারবে এবং স্টেপআপ কোম্পানি তালিকাভুক্তির সুযোগ পাবে। শেয়ারবাজারের লেনদেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের পুঁজিবাজার এখনও শ্রেণী বিনিয়োগকারীর ওপর নির্ভরশীল। শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে দৈনন্দিন লেনদেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। জ্ঞাননির্ভর বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটি জ্ঞাননির্ভর বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিনিয়োগ শিক্ষা কর্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ব্যক্তি-শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কর্যক্রম চালু রয়েছে। ইতোমধ্যে বিএসইসির আওতায় বিভাগীয় শহরগুলোতে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তা সব জেলা সদরে অনুষ্ঠিত হবে। বিনিয়োগকারীরাই হলো পুঁজিবাজারের মূল চালিকা শক্তি। তাই তাদের সচেতনতার বিষয়টি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্যতম। জেনে, বুঝে বিনিয়োগ করলে, একদিকে যেমন প্রত্যেকের বিনিয়োগ ঝুঁকির সক্ষমতা বাড়ে, অন্যদিকে নিশ্চিত হয় পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা।

তিনি বলেন, আমরা ২০১৮ সালে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এই শিরোনামে ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে দেশব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্যক্রম সম্প্রসারণের ওপর জোর দিয়েছি। শুধু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নয়, পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ, নীতি নির্ধারণীতে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিনিয়োগ সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি ত্বরান্বিত হবে। উন্নত দেশ হওয়ার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের অন্যতম উৎস হবে এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্য প্রচেষ্টার পাশাপাশি বিনয়োগকারীদের সুরক্ষার দিকটি অধিকতর নিশ্চিত হয়ে একটি বিকশিত পুঁজিবাজার গড়ে উঠবে। যে পুঁজিবাজার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তারিত হবার আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের অন্যতম উৎস হিসেবে আবির্ভূত হবে।