বাড়ছে অ্যাকাউন্ট কমছে বিনিয়োগ

অর্থনীতির আকারের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে ব্যাংক অ্যাকউন্ট বা হিসাবের সংখ্যা। কিন্তু সে অনুযায়ী বাড়ছে না বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ। তারল্য সংকট, উচ্চ সুদহারসহ নানা কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের অবস্থা নাজুক। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শুরু থেকে কমতে থাকা ঋণ প্রবৃদ্ধি মে শেষে ১২ দশমকি ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বেসরকারি বিনিয়োগে ধীরগতি রয়েছে। এর মূল কারণ ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত তারল্য নেই। ঋণ আমানত অনুপাতের (এডিআর) নতুন সীমায় নামিয়ে আনারও চাপ রয়েছে। আবার আমানতের প্রবৃদ্ধি কম থাকায় চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ঋণ দিতে পারছে না। এছাড়া ব্যবসায়ীরা উচ্চ সুদহারে ঋণ নিতে নিচ্ছেন না। এসব কারণে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে বেসরকারি খাতের ঋণ হু হু করে বাড়ছিল। ফলে ঋণ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে গত বছরের শুরুতেই ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কিছুটা কমিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপর থেকে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে। এরপর কয়েক দফা এডিআর সমন্বয়ের সীমা বাড়ানো হলেও, নানা কারণে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। নিম্নমুখীর ধারা অব্যাহত আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালের মে মাসের তুলনায় চলতি বছরের মে মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ, এপ্রিলে যা ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ এবং মার্চ শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। গত মে মাস শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯১৮ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময় শেষে ঋণ ছিল ৮ লাখ ৯২ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা।

এদিকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে কার্যরত ৫৮টি ব্যাংকে গ্রাহকদের ৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬২ হাজার ৮৩৭টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গত বছর একই সময়ে মোট অ্যাকাউন্ট ছিল ৯ কোটি ৭১ লাখ ৫ হাজার ৫৯১টি। এক বছরের ব্যবধান অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ২৪৬টি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রিন ব্যাংকিং-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, মোট অ্যাকাউন্টের ৪০ শতাংশই খোলা হয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকে। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল ব্যাংকে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ ১৬ হাজার ৫৩৪টি। বেসরকারি খাতের ৪০ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে ৪ কোটি ৫৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৭৪টি। সরকারি বিশেষায়িত ৩ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ ৩৬ হাজার ৯৩১। বিদেশি ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৮। ওই প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ৫৮টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৬টি ব্যাংক অনলাইন ব্যাংকিং এবং ৪১টি ব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু করেছে। মার্চ পর্যন্ত হিসাবে ব্যাংকগুলোর সর্বমোট ১০ হাজার ৩২১টি শাখার মধ্যে ৯ হাজার ২৩১ শাখায় অনলাইন সেবা পাওয়া যাচ্ছে। মোট শাখার ৯০ শতাংশ অনলাইন ব্যাংকিংয়ের আওতায়। সরকারি ৩৭৫৮টি শাখার মধ্যে ৩ হাজার ৬৮৮টি অনলাইনের আওতায়। বিশেষায়িত ব্যাংকের ১ হাজার ৪১৫টি শাখার মধ্যে মাত্র ৩৯৮টি শাখায় অনলাইন সেবা রয়েছে। বেসরকারি বাংকগুলোর ৫ হাজার ৮৩টি শাখার মধ্যে ৫ হাজার ৮০টি অনলাইন এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৬৫টি শাখার সবগুলোই অনলাইনের আওতায়।

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০১৯ , ২৫ আষাঢ় ১৪২৫, ৫ জ্বিলকদ ১৪৪০

বাড়ছে অ্যাকাউন্ট কমছে বিনিয়োগ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

অর্থনীতির আকারের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে ব্যাংক অ্যাকউন্ট বা হিসাবের সংখ্যা। কিন্তু সে অনুযায়ী বাড়ছে না বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ। তারল্য সংকট, উচ্চ সুদহারসহ নানা কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের অবস্থা নাজুক। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শুরু থেকে কমতে থাকা ঋণ প্রবৃদ্ধি মে শেষে ১২ দশমকি ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বেসরকারি বিনিয়োগে ধীরগতি রয়েছে। এর মূল কারণ ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত তারল্য নেই। ঋণ আমানত অনুপাতের (এডিআর) নতুন সীমায় নামিয়ে আনারও চাপ রয়েছে। আবার আমানতের প্রবৃদ্ধি কম থাকায় চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ঋণ দিতে পারছে না। এছাড়া ব্যবসায়ীরা উচ্চ সুদহারে ঋণ নিতে নিচ্ছেন না। এসব কারণে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে বেসরকারি খাতের ঋণ হু হু করে বাড়ছিল। ফলে ঋণ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে গত বছরের শুরুতেই ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কিছুটা কমিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপর থেকে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে। এরপর কয়েক দফা এডিআর সমন্বয়ের সীমা বাড়ানো হলেও, নানা কারণে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। নিম্নমুখীর ধারা অব্যাহত আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালের মে মাসের তুলনায় চলতি বছরের মে মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ, এপ্রিলে যা ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ এবং মার্চ শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। গত মে মাস শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯১৮ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময় শেষে ঋণ ছিল ৮ লাখ ৯২ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা।

এদিকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে কার্যরত ৫৮টি ব্যাংকে গ্রাহকদের ৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬২ হাজার ৮৩৭টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গত বছর একই সময়ে মোট অ্যাকাউন্ট ছিল ৯ কোটি ৭১ লাখ ৫ হাজার ৫৯১টি। এক বছরের ব্যবধান অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ২৪৬টি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রিন ব্যাংকিং-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, মোট অ্যাকাউন্টের ৪০ শতাংশই খোলা হয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকে। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল ব্যাংকে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ ১৬ হাজার ৫৩৪টি। বেসরকারি খাতের ৪০ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে ৪ কোটি ৫৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৭৪টি। সরকারি বিশেষায়িত ৩ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ ৩৬ হাজার ৯৩১। বিদেশি ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৮। ওই প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ৫৮টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৬টি ব্যাংক অনলাইন ব্যাংকিং এবং ৪১টি ব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু করেছে। মার্চ পর্যন্ত হিসাবে ব্যাংকগুলোর সর্বমোট ১০ হাজার ৩২১টি শাখার মধ্যে ৯ হাজার ২৩১ শাখায় অনলাইন সেবা পাওয়া যাচ্ছে। মোট শাখার ৯০ শতাংশ অনলাইন ব্যাংকিংয়ের আওতায়। সরকারি ৩৭৫৮টি শাখার মধ্যে ৩ হাজার ৬৮৮টি অনলাইনের আওতায়। বিশেষায়িত ব্যাংকের ১ হাজার ৪১৫টি শাখার মধ্যে মাত্র ৩৯৮টি শাখায় অনলাইন সেবা রয়েছে। বেসরকারি বাংকগুলোর ৫ হাজার ৮৩টি শাখার মধ্যে ৫ হাজার ৮০টি অনলাইন এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৬৫টি শাখার সবগুলোই অনলাইনের আওতায়।