সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে চীন

  • উন্নয়ন চাইলে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি মেনে নিতে হবে
  • ধর্ষণ রোধে পুরুষদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চীন সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও অন্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আলোচনায় সব নেতাই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন এবং এই সমস্যা সমাধানে তারা কাজ করবেন। তিনি বলেন, এবারের সফর বাংলাদেশ ও চীনের বিদ্যমান সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গতকাল বিকেলে গণভবনে সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা জানান, এ সফরে তার আহ্বানে দুই দেশের স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা, সময়মতো তহবিল ছাড়, ঋণচুক্তির শর্ত সহজ করা, বাণিজ্যবৈষম্য দূর করা এবং চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি খোচাং। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, চাকরির বয়স বৃদ্ধি, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ‘পারফরম্যান্স’, ধর্ষণ প্রতিরোধ প্রসঙ্গেও কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা মন্তব্য করে এর সমাধানে চীন কাজ করবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মায়ানমার সরকারকে সম্মত করার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খোয়াং। এছাড়া চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাও সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ও অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে জানান, চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তারা এ সংকট সমাধানে যতটা সম্ভব চেষ্টা করবেন। চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বাংলাদেশ ও মায়ানমার দু’দেশই তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের কাছে দু’দেশই সমান, কেউ কম বা বেশি নয়। তিনি জানান, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তারা তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দু’বার মায়ানমারে পাঠিয়েছেন। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনে তারা আবারও মন্ত্রীকে মায়ানমারে পাঠাবেন।

উন্নয়ন চাইলে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে হবে : গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং এর প্রতিবাদে আন্দোলন প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি চাইলে আন্দোলন না করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি মেনে নিতেই হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের আগে ঠিক করতে হবে, তাদের গ্যাসের প্রয়োজন আছে কি না। তিনি বলেন, ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপি কতটুকু বেড়েছে আর আমরা এখন জিডিপি ৮ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এর কারণ হলো আমরা এনার্জির ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি। শিল্পায়ন করতে হলে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হলে, সার উৎপাদন করতে হলে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হলে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ হতে হলে সরকারকে এলএনজি আমদানি করতেই হবে। আর যদি সত্যিই অর্থনৈতিক উন্নতি চান, তাহলে এটা তো মেনে নিতেই হবে। এলএনজি আমদানি করতে আমার কত টাকা খরচ হয়, ওই হিসাবটা তো আগে জানতে হবে। প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে আমাদের খরচ পড়ে ৬১ দশমিক ১২ টাকা। সেটি আমরা দিচ্ছি ৯ দমমিক ৮০ টাকায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম গৃহস্থালিতে স্থানভেদে ৩০ থেকে ৩৭, শিল্পে ৪০ থেকে ৪২, সিএনজি ৪৪ ও বাণিজ্যিকে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা। আর বাংলাদেশে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম গৃহস্থালিতে ১২ দশমিক ৬০, শিল্পে ১০ দমমিক ৭০, সিএনজি ৪৩ ও বাণিজ্যিকে ২৩ টাকা। তিনি বলেন, আমরা এলএনজি নিয়ে আসি ৬১ দশমিক ১২ টাকায়। সেটি আমরা দিচ্ছি ৯ দশমিক ৮০ টাকায়। তারপরও আন্দোলন! আন্দোলনে একটা মজার বিষয় আছে, বাম আর ডান মিলে গেছে এক সুরে, এই তো? ভালো। সব ট্যাক্স মাফ করে দেয়া হয়েছে। মানুষের কাছে যাতে সহজলভ্য হয়, আমি ওই ব্যবস্থাটা করেছি। তারপরও ওনারা হরতাল ডাকেন, আন্দোলন করেন। খুব ভালো, বহুদিন পর হরতাল পেলাম তো, পরিবেশের জন্য ভালো, ধন্যবাদ। এখন গ্যাসের দাম যে পরিমাণে দাম বাড়ানো হয়েছে, তারপরও বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হবে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন লোডশেডিং নেই। সবাই বেশ আরাম-আয়েশে আছে বলেই ভুলে গেছেন অতীতের কথা। দশ বছর আগে কী অবস্থা ছিল?

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জানান, ২০০০ সালে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলে তিনি ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেননি। তার ভাষায়- বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তখন ‘গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে’ ক্ষমতায় আসেন। ওই বিএনপি সরকারের সময় ভারতকে পাইপলাইন দিয়ে মায়ানমার থেকে গ্যাস আনার সুযোগ না দেয়াও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি বলেন, আমি থাকলে কী করতাম? পাইপলাইনে তো গ্যাস নিতে দিতামই, আমি আমার ভাগটা রেখে দিতাম যে, আমাকে দিয়ে তারপর নিতে হবে। তখন যদি মায়ানমার থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আনতে পারতাম আর অর্থনৈতিক কাজে লাগাতে পারতাম, তাহলে আমাদের এখন এলএনজি আমদানি না করলেও চলত। কারণ সেখানে প্রচুর গ্যাসের রিজার্ভ আছে। ওই গ্যাস এখন পাইপলাইনে করেই চীনে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের কতগুলো বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব যদি ভুল করেন বা সরকার যদি ভুল করে, তাহলে এর খেসারত জনগণকে দিতে হয়।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে : এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যথেষ্ট উন্নতি করেছে। ওয়ার্ল্ড কাপ পাওয়া একেকটা নামি-দামি দলের সঙ্গে খেলাÑ সেটি কম কথা নয়। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স অত্যন্ত চমৎকার ছিল। আমরা যে খেলতে পেরেছি বা এতটা যেতে পেরেছি, এটা অনেক বড় কথা। আমাদের যারা খেলোয়াড় যেমনÑ সাকিব আল হাসান, সে তো বিশ্বে একটা স্থান করে নিয়েছে। মোস্তাফিজ একটা স্থান করে নিয়েছে। তিনি বলেন, খেলা এমন একটা জিনিস, অনেক সময় ভাগ্যও লাগে। সব সময় যে একই রকম হবে, তা নয়। খেলায় সাহসী মনোভাব নিয়ে মোকাবিলা করতে পারাÑ আমি এটা প্রশংসা করি। এত দল খেলল। এর মধ্যে মাত্র চারটি দল সেমিফাইনালে উঠেছে। এর মানে কি বাকিরা সবাই খারাপ খেলেছে? একেকটা জাঁদরেল জাঁদরেল দল, দীর্ঘদিন ধরে যারা খেলে খেলে অভ্যস্তÑ তাদের সঙ্গে মোকাবিলা করে খেলায় ছেলেদের কনফিডেন্সের কোন অভাব দেখিনি। আমি নিজে খেলা দেখেছি। আমাদের ছেলেদের ধন্যবাদ জানাব, তারা যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিয়েছে। তাদের ভেতর একটা আলাদা আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। ধীরে ধীরে আরও উন্নতি হবে।

ধর্ষণ রোধে পুরুষদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান : এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্ষণ প্রতিরোধে যা যা করার দরকার বা আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দরকার হলে সরকার তা-ই করবে। ধর্ষকদের শাস্তি দিতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর বলে জানান তিনি। ধর্ষণ প্রতিরোধে তিনি বলেন, কেবল নারীরাই চিৎকার করে যাবে নাকি? এ ব্যাপারে পুরুষদেরও সোচ্চার হওয়া উচিত।

কারও কাছে আমাদের পানি চাইতে হবে না : সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইলিশ মাছ ও তিস্তা নদীর পানি সংক্রান্ত এক বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি (মমতা) বলেছেন, তিস্তার পানি দিইনি বলেই ইলিশ মাছ পাচ্ছি না। আমরা বলেছিলাম, তিস্তায় পানি নেই। তবে ইলিশ আসবে কীভাবে? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা দেশের সব নদী খনন করব। বর্ষায় পানি ধরে রাখব। কারও কাছে আমাদের পানি চাইতে হবে না। আমরা আত্মনির্ভরশীল হতে চাই, পরনির্ভরশীল নয়। গত ১০ বছর আগে দেশের অবস্থা কী ছিল, এখন আমরা কী অবস্থায় দেশকে নিয়েছে এসেছিÑ তা একটু বিচার করুন। দেশের এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে।

উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড ইকোনামিক ফোরামে (ডব্লিউইএফ) অংশ নিতে এবং চীনের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খোয়াংয়ের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত চীন সফর করেন। অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডারসের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিসহ উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল তার সফরসঙ্গী ছিলেন। এছাড়া একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে বলেছেন, আমরা পরস্পরের সত্যিকারের বন্ধু হয়ে থাকব। আমরা দুই প্রতিবেশী দেশ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছি। তার দেশ সব সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টার পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। একই সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে একমত হন বলেও জানান তিনি।

চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, চীনা প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের অংশীদার হিসেবে আখ্যায়িত করেন। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে। তিনি এটিকে আরও উচ্চ স্তরে নিয়ে যেতে চান। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন, একটি জলবায়ু অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপন এবং তিস্তা নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প বাস্তবায়ন, সেই সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দ্রুততগামী ট্রেন যোগাযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া গতিশীল করতেও চীনের সহায়তা কামনা করেন। তিনি বলেন, আমি চীনের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী, বিশেষ করে ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানাই। এ অঞ্চলের বাজারগুলোকে সংযুক্ত করতে আমরা উভয় দেশ বিসিআইএম করিডোর দ্রুত বাস্তবায়নে সম্মত হই। পরে প্রধানমন্ত্রী লি খোয়াংয়ের দেয়া এক ভোজসভায় যোগদান করি। আমাদের উভয়ের উপস্থিতিতে ৯টি চুক্তি ও সমঝোতা দলিল স্বাক্ষরিত হয়।

ওইদিন বিকেলে চায়না কাউন্সিল ফর দি প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড আয়োজিত চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে তিনি মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ সময় বাংলাদেশে ব্যবসার বিভিন্ন অনুকূল পরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে চীনের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। চীনের ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশের চলমান আর্থসামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তারা এই অগ্রযাত্রায় অংশগ্রহণে আগ্রহ ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী জানান, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাওয়ের সঙ্গে তার বৈঠকে উভয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং চীন কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হন। বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে সং তাও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চীনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। বঙ্গবন্ধুর ডায়েরি থেকে ‘নতুন চীন’ নামে প্রকাশিতব্য বইটি চীনা ভাষায় অনুবাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন সং তাও।

৫ জুলাই সন্ধ্যায় দিয়াওউয়াতি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন এবং অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিষয় ছাড়াও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টি গুরুত্ব পায়। শেখ হাসিনা জানান, এনপিসির স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান লি ঝানসুর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এ সময় লি ঝানসু দুই দেশের রাজনীতিবিদ ও আইন প্রণেতাদের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। সফরে তিনি চীনে বসবাসরত বাঙালিদের এক সংবর্ধনা সভায় যোগদান করেন। এছাড়া চীনের প্রভাবশালী ইংরেজি ভাষার টিভি চ্যালেন সিজিটিএন তার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তা প্রচার করে। চীনে তার সফর শেষে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে যৌথ বিবৃতি গৃহীত হয় বলেও জানান তিনি।

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০১৯ , ২৫ আষাঢ় ১৪২৫, ৫ জ্বিলকদ ১৪৪০

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে চীন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

  • উন্নয়ন চাইলে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি মেনে নিতে হবে
  • ধর্ষণ রোধে পুরুষদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চীন সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও অন্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আলোচনায় সব নেতাই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন এবং এই সমস্যা সমাধানে তারা কাজ করবেন। তিনি বলেন, এবারের সফর বাংলাদেশ ও চীনের বিদ্যমান সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গতকাল বিকেলে গণভবনে সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা জানান, এ সফরে তার আহ্বানে দুই দেশের স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা, সময়মতো তহবিল ছাড়, ঋণচুক্তির শর্ত সহজ করা, বাণিজ্যবৈষম্য দূর করা এবং চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি খোচাং। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, চাকরির বয়স বৃদ্ধি, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ‘পারফরম্যান্স’, ধর্ষণ প্রতিরোধ প্রসঙ্গেও কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা মন্তব্য করে এর সমাধানে চীন কাজ করবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মায়ানমার সরকারকে সম্মত করার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খোয়াং। এছাড়া চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাও সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ও অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে জানান, চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তারা এ সংকট সমাধানে যতটা সম্ভব চেষ্টা করবেন। চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বাংলাদেশ ও মায়ানমার দু’দেশই তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের কাছে দু’দেশই সমান, কেউ কম বা বেশি নয়। তিনি জানান, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তারা তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দু’বার মায়ানমারে পাঠিয়েছেন। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনে তারা আবারও মন্ত্রীকে মায়ানমারে পাঠাবেন।

উন্নয়ন চাইলে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে হবে : গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং এর প্রতিবাদে আন্দোলন প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি চাইলে আন্দোলন না করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি মেনে নিতেই হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের আগে ঠিক করতে হবে, তাদের গ্যাসের প্রয়োজন আছে কি না। তিনি বলেন, ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপি কতটুকু বেড়েছে আর আমরা এখন জিডিপি ৮ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এর কারণ হলো আমরা এনার্জির ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি। শিল্পায়ন করতে হলে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হলে, সার উৎপাদন করতে হলে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হলে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ হতে হলে সরকারকে এলএনজি আমদানি করতেই হবে। আর যদি সত্যিই অর্থনৈতিক উন্নতি চান, তাহলে এটা তো মেনে নিতেই হবে। এলএনজি আমদানি করতে আমার কত টাকা খরচ হয়, ওই হিসাবটা তো আগে জানতে হবে। প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে আমাদের খরচ পড়ে ৬১ দশমিক ১২ টাকা। সেটি আমরা দিচ্ছি ৯ দমমিক ৮০ টাকায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম গৃহস্থালিতে স্থানভেদে ৩০ থেকে ৩৭, শিল্পে ৪০ থেকে ৪২, সিএনজি ৪৪ ও বাণিজ্যিকে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা। আর বাংলাদেশে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম গৃহস্থালিতে ১২ দশমিক ৬০, শিল্পে ১০ দমমিক ৭০, সিএনজি ৪৩ ও বাণিজ্যিকে ২৩ টাকা। তিনি বলেন, আমরা এলএনজি নিয়ে আসি ৬১ দশমিক ১২ টাকায়। সেটি আমরা দিচ্ছি ৯ দশমিক ৮০ টাকায়। তারপরও আন্দোলন! আন্দোলনে একটা মজার বিষয় আছে, বাম আর ডান মিলে গেছে এক সুরে, এই তো? ভালো। সব ট্যাক্স মাফ করে দেয়া হয়েছে। মানুষের কাছে যাতে সহজলভ্য হয়, আমি ওই ব্যবস্থাটা করেছি। তারপরও ওনারা হরতাল ডাকেন, আন্দোলন করেন। খুব ভালো, বহুদিন পর হরতাল পেলাম তো, পরিবেশের জন্য ভালো, ধন্যবাদ। এখন গ্যাসের দাম যে পরিমাণে দাম বাড়ানো হয়েছে, তারপরও বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হবে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন লোডশেডিং নেই। সবাই বেশ আরাম-আয়েশে আছে বলেই ভুলে গেছেন অতীতের কথা। দশ বছর আগে কী অবস্থা ছিল?

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জানান, ২০০০ সালে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলে তিনি ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেননি। তার ভাষায়- বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তখন ‘গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে’ ক্ষমতায় আসেন। ওই বিএনপি সরকারের সময় ভারতকে পাইপলাইন দিয়ে মায়ানমার থেকে গ্যাস আনার সুযোগ না দেয়াও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি বলেন, আমি থাকলে কী করতাম? পাইপলাইনে তো গ্যাস নিতে দিতামই, আমি আমার ভাগটা রেখে দিতাম যে, আমাকে দিয়ে তারপর নিতে হবে। তখন যদি মায়ানমার থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আনতে পারতাম আর অর্থনৈতিক কাজে লাগাতে পারতাম, তাহলে আমাদের এখন এলএনজি আমদানি না করলেও চলত। কারণ সেখানে প্রচুর গ্যাসের রিজার্ভ আছে। ওই গ্যাস এখন পাইপলাইনে করেই চীনে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের কতগুলো বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব যদি ভুল করেন বা সরকার যদি ভুল করে, তাহলে এর খেসারত জনগণকে দিতে হয়।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে : এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যথেষ্ট উন্নতি করেছে। ওয়ার্ল্ড কাপ পাওয়া একেকটা নামি-দামি দলের সঙ্গে খেলাÑ সেটি কম কথা নয়। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স অত্যন্ত চমৎকার ছিল। আমরা যে খেলতে পেরেছি বা এতটা যেতে পেরেছি, এটা অনেক বড় কথা। আমাদের যারা খেলোয়াড় যেমনÑ সাকিব আল হাসান, সে তো বিশ্বে একটা স্থান করে নিয়েছে। মোস্তাফিজ একটা স্থান করে নিয়েছে। তিনি বলেন, খেলা এমন একটা জিনিস, অনেক সময় ভাগ্যও লাগে। সব সময় যে একই রকম হবে, তা নয়। খেলায় সাহসী মনোভাব নিয়ে মোকাবিলা করতে পারাÑ আমি এটা প্রশংসা করি। এত দল খেলল। এর মধ্যে মাত্র চারটি দল সেমিফাইনালে উঠেছে। এর মানে কি বাকিরা সবাই খারাপ খেলেছে? একেকটা জাঁদরেল জাঁদরেল দল, দীর্ঘদিন ধরে যারা খেলে খেলে অভ্যস্তÑ তাদের সঙ্গে মোকাবিলা করে খেলায় ছেলেদের কনফিডেন্সের কোন অভাব দেখিনি। আমি নিজে খেলা দেখেছি। আমাদের ছেলেদের ধন্যবাদ জানাব, তারা যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিয়েছে। তাদের ভেতর একটা আলাদা আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। ধীরে ধীরে আরও উন্নতি হবে।

ধর্ষণ রোধে পুরুষদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান : এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্ষণ প্রতিরোধে যা যা করার দরকার বা আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দরকার হলে সরকার তা-ই করবে। ধর্ষকদের শাস্তি দিতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর বলে জানান তিনি। ধর্ষণ প্রতিরোধে তিনি বলেন, কেবল নারীরাই চিৎকার করে যাবে নাকি? এ ব্যাপারে পুরুষদেরও সোচ্চার হওয়া উচিত।

কারও কাছে আমাদের পানি চাইতে হবে না : সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইলিশ মাছ ও তিস্তা নদীর পানি সংক্রান্ত এক বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি (মমতা) বলেছেন, তিস্তার পানি দিইনি বলেই ইলিশ মাছ পাচ্ছি না। আমরা বলেছিলাম, তিস্তায় পানি নেই। তবে ইলিশ আসবে কীভাবে? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা দেশের সব নদী খনন করব। বর্ষায় পানি ধরে রাখব। কারও কাছে আমাদের পানি চাইতে হবে না। আমরা আত্মনির্ভরশীল হতে চাই, পরনির্ভরশীল নয়। গত ১০ বছর আগে দেশের অবস্থা কী ছিল, এখন আমরা কী অবস্থায় দেশকে নিয়েছে এসেছিÑ তা একটু বিচার করুন। দেশের এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে।

উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড ইকোনামিক ফোরামে (ডব্লিউইএফ) অংশ নিতে এবং চীনের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খোয়াংয়ের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত চীন সফর করেন। অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডারসের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিসহ উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল তার সফরসঙ্গী ছিলেন। এছাড়া একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে বলেছেন, আমরা পরস্পরের সত্যিকারের বন্ধু হয়ে থাকব। আমরা দুই প্রতিবেশী দেশ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছি। তার দেশ সব সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টার পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। একই সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে একমত হন বলেও জানান তিনি।

চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, চীনা প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের অংশীদার হিসেবে আখ্যায়িত করেন। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে। তিনি এটিকে আরও উচ্চ স্তরে নিয়ে যেতে চান। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন, একটি জলবায়ু অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপন এবং তিস্তা নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প বাস্তবায়ন, সেই সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দ্রুততগামী ট্রেন যোগাযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া গতিশীল করতেও চীনের সহায়তা কামনা করেন। তিনি বলেন, আমি চীনের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী, বিশেষ করে ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানাই। এ অঞ্চলের বাজারগুলোকে সংযুক্ত করতে আমরা উভয় দেশ বিসিআইএম করিডোর দ্রুত বাস্তবায়নে সম্মত হই। পরে প্রধানমন্ত্রী লি খোয়াংয়ের দেয়া এক ভোজসভায় যোগদান করি। আমাদের উভয়ের উপস্থিতিতে ৯টি চুক্তি ও সমঝোতা দলিল স্বাক্ষরিত হয়।

ওইদিন বিকেলে চায়না কাউন্সিল ফর দি প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড আয়োজিত চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে তিনি মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ সময় বাংলাদেশে ব্যবসার বিভিন্ন অনুকূল পরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে চীনের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। চীনের ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশের চলমান আর্থসামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তারা এই অগ্রযাত্রায় অংশগ্রহণে আগ্রহ ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী জানান, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাওয়ের সঙ্গে তার বৈঠকে উভয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং চীন কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হন। বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে সং তাও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চীনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। বঙ্গবন্ধুর ডায়েরি থেকে ‘নতুন চীন’ নামে প্রকাশিতব্য বইটি চীনা ভাষায় অনুবাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন সং তাও।

৫ জুলাই সন্ধ্যায় দিয়াওউয়াতি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন এবং অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিষয় ছাড়াও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টি গুরুত্ব পায়। শেখ হাসিনা জানান, এনপিসির স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান লি ঝানসুর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এ সময় লি ঝানসু দুই দেশের রাজনীতিবিদ ও আইন প্রণেতাদের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। সফরে তিনি চীনে বসবাসরত বাঙালিদের এক সংবর্ধনা সভায় যোগদান করেন। এছাড়া চীনের প্রভাবশালী ইংরেজি ভাষার টিভি চ্যালেন সিজিটিএন তার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তা প্রচার করে। চীনে তার সফর শেষে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে যৌথ বিবৃতি গৃহীত হয় বলেও জানান তিনি।