বাড়ানো হচ্ছে বাস মিনিবাসের ভাড়া

পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর কোন আবেদন করেননি

সরকারি সিদ্ধান্ত ছাড়াই ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়িয়েছেন বাস মালিকরা। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে জানান তারা। আগে থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে অবৈধ ও বেআইনিভাবে বিভিন্ন সার্ভিস চালু করে দুই থেকে তিন গুণ ভাড়া আদায় করছেন পরিবহন মালিকরা। বর্তমানে লোকাল সার্ভিসের বাস-মিনিবাসেও বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। সরকারি নির্ধারিত রাজধানীতে বড় বাস ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ ও ৫ টাকা হলেও নেয়া হচ্ছে ১০-২০ টাকা। বিভিন্ন রুটে যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন পরিবহন শ্রমিকরা। অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন রুটে বাস-মিনিবাসে যাত্রীদের পরিবহন শ্রমিকদের বাগ্বিতন্ডা হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। তবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হলেও বাস মালিকদের পক্ষ থেকে ভাড়া বৃদ্ধির কোন আবেদন করা হয়নি বা বাসের ভাড়া বাড়ানো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে বিআরটিএ পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) মাহবুব ই রব্বানী সংবাদকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীর বাস-মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধির জন্য বাস মালিকদের পক্ষ থেকে কোন আবেদন করা হয়নি। এছাড়া গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে বাস-মিনিবাসের কোন ভাড়া বাড়নোর সিদ্ধান্ত হয়নি। ভাড়া বৃদ্ধি বিষয়ে বিআরটিএর আলাদা কমিটি আছে। তারা সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে ভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কমিটির আহ্বায়ক হলেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে রাজধানীর ও চট্টগ্রাম মহানগরী এবং ঢাকার আশপাশের জেলায় বড় বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো হয়। তখন ১০ পয়সা বাড়িয়ে বড় বাসে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়, যা আগে ছিল বড় বাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা ও মিনিবাসে ১ টাকা ৫০ পয়সা। সর্বনিম্ন ভাড়া বড়বাসের জন্য ৭ টাকা ও মিনিবাসের জন্য ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে ২০১১ সালে দুই দফা বাড়ানো হয় সিএনজির দাম। সে সময় দুই দফা ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। এছাড়া ১৯৯০ সালে প্রতি কিলোমিটার বাসের ভাড়া ছিল ৩২ পয়সা। আর মিনিবাসের ভাড়া ছিল ৩৫ পয়সা। ২০০৮ সালের ২২ জুলাই ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে পৃথকভাবে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। তখনই মিনিবাসের চেয়ে বড় বাসের ভাড়া বেশি নির্ধারণ করা হয়। তখন বাসের জন্য ১ টাকা ২০ পয়সা ও মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ১০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। তখনই মালিক সমিতির সম্মতিতে বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২০১১ সালের ১৮ মে মাসে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে আবার বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তখন বাসের জন্য ১ টাকা ৫৫ পয়সা ও মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। সে সময় বড় বাস ও মিনিবাসের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা ও ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে মালিক সমিতির আপত্তি ছিল বলে বিআরটিএর সূত্র জানায়। এরপর ২০১১ সালে গ্যাসের দাম ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তখন বাসের জন্য ১ টাকা ৬০ পয়সা ও মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। তখনো বাস ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা ও ৫ টাকা অপরিবর্তিত থাকে বলে বিআরটিএর সূত্রে জানায়। কিন্তু এই নীতিমালা মানছে না গণপরিবহন মালিকরা। ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সিটিং, গেটলক, স্পেশাল ও বিরতিহীন সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন চালকরা। রাজধানীর পরিবহন ভাড়া নির্ধারণের জন্য সরকারের দুটি কমিটি রযেছে। এর মধ্যে একটি হলো সাব কমিটি বা ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি। অপরটি মূল কমিটি। দুটি কমিটিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি আছেন। ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি পরিবহনের যাবতীয় আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করে ভাড়া বৃদ্ধির একটি খসড়া প্রস্তাবনা মূল কমিটির কাছে পেশ করে। এরপর মূল কমিটি তা চূড়ান্ত করে কিন্তু রাজধানীর পরিবহনগুলো ভাড়া নির্ধারণে ক্ষেত্রে কোন প্রকার বিরতিহীন, গেটলক, সিটিং সার্ভিস, কাউন্টার সার্ভিসের নাম উল্লেখ নেই। এসব নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি বলে বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ সংবাদকে বলেন, মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো কোন আবেদন সরকারের কাছে করা হয়নি। কারণ আন্তঃজেলার বেশির ভাগ গাড়ি চলে ডিজেলে। ডিজেলের দাম যেহেতু বৃদ্ধি করা হয়নি। সেহেতু ভাড়া বাড়ানোর কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে মহানগরীতে কিছু কিছু গাড়ি গ্যাসে চলাচল করে। এছাড়া কিছু পণ্যপরিহনের ট্রাক গ্যাসে চলাচল করে। তাদের সংখ্যা খুবেই কম। তাই সার্বিক বিবেচনায় বাস-মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধির কোন আবেদন করা হয়নি। এর মধ্যে কিছু কিছু পরিবহনের মালিক ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। এটা তারা ব্যক্তিগতভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। সরকারি বা মালিক সমিতির কোন সিদ্ধান্ত নেই।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, বাস-মিনিবাস নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। পুরোপুরি জিম্মি করে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বাস-মিনিবাস চালকরা। এরা সরকারের কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না। রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলরত বাস-মিনিবাসে ‘সিটিং সার্ভিস’ নামে চলছে অনিয়ম। সব বাসেই এখন ১০-২০ টাকার নিচে কোন ভাড়া নেয়া হয় না। রাজধানীর মিরপুর-যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচল করে ট্রান্সসিলভা পরিবহনের সিটিং সার্ভিস বাসগুলো। ওঠার পর যাত্রী যেখানে খুশি নামতে পারেন, তবে এজন্য ন্যূনতম ভাড়া দিতে হয় ২০ টাকা। তবে শেষ গন্তব্য পর্যন্ত ভাড়া ৩০ টাকা। একই পথে চলাচলকারী অন্য পরিবহনের সিটিং সার্ভিস বাসগুলোর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম চালু রয়েছে। ভাড়ার হারও অভিন্ন। তবে গত রোববার রাতে সিএনজির দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর গতকাল সকাল থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে এসব বাসে ন্যূনতম ভাড়া আদায় করা হয়েছে ২৫ টাকা। মিরপুর-১ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হয়েছে ৩৫ টাকা। এছাড়া যাত্রাবাড়ী-গাবতলী রুটে চলাচল করে বিরতিহীন পরিবহন (সাবেক ৮ নম্বর), মিরপুর রুটে খাজাবাবা, শিকড়, শিখর, বেস্টওয়ে, মোহাম্মদপুরে রুটে মেসকাতসহ রাজধানীর সব গণপরিবহনে চলছে ভাড়া নৈরাজ্য। এ নিয়ে সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের সঙ্গে গণপরিবহনের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়, এমনকি ছোটখাটো হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। গণপরিবহন শ্রমিকদের দাবি, গ্যাসের দাম বাড়ায় জ্বালানি খরচ বেড়েছে। এ কারণে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিতে হচ্ছে। মালিকের সঙ্গে চুক্তি ভিত্তিতে গাড়ি চালানোর কারণে বাড়তি ভাড়া না নিলে এ লোকসান তাদের বহন করতে হবে।

এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী সংবাদকে বলেন, সরকার বাস ও মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণ করে কিন্তু তদারকি নেই। সারাদেশে গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। কোন নিয়ম-নীতিমালা মানছেন না পরিবহন মালিকরা। ভাড়া নির্ধারণের যে কমিটি রয়েছে সেখানে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের প্রাধান্য বেশি। তাই গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে কোন সুষ্ঠু সমাধান কখনো হয়নি।

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০১৯ , ২৫ আষাঢ় ১৪২৫, ৫ জ্বিলকদ ১৪৪০

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে

বাড়ানো হচ্ছে বাস মিনিবাসের ভাড়া

পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর কোন আবেদন করেননি

মাহমুদ আকাশ

সরকারি সিদ্ধান্ত ছাড়াই ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়িয়েছেন বাস মালিকরা। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে জানান তারা। আগে থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে অবৈধ ও বেআইনিভাবে বিভিন্ন সার্ভিস চালু করে দুই থেকে তিন গুণ ভাড়া আদায় করছেন পরিবহন মালিকরা। বর্তমানে লোকাল সার্ভিসের বাস-মিনিবাসেও বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। সরকারি নির্ধারিত রাজধানীতে বড় বাস ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ ও ৫ টাকা হলেও নেয়া হচ্ছে ১০-২০ টাকা। বিভিন্ন রুটে যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন পরিবহন শ্রমিকরা। অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন রুটে বাস-মিনিবাসে যাত্রীদের পরিবহন শ্রমিকদের বাগ্বিতন্ডা হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। তবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হলেও বাস মালিকদের পক্ষ থেকে ভাড়া বৃদ্ধির কোন আবেদন করা হয়নি বা বাসের ভাড়া বাড়ানো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে বিআরটিএ পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) মাহবুব ই রব্বানী সংবাদকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীর বাস-মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধির জন্য বাস মালিকদের পক্ষ থেকে কোন আবেদন করা হয়নি। এছাড়া গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে বাস-মিনিবাসের কোন ভাড়া বাড়নোর সিদ্ধান্ত হয়নি। ভাড়া বৃদ্ধি বিষয়ে বিআরটিএর আলাদা কমিটি আছে। তারা সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে ভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কমিটির আহ্বায়ক হলেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে রাজধানীর ও চট্টগ্রাম মহানগরী এবং ঢাকার আশপাশের জেলায় বড় বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো হয়। তখন ১০ পয়সা বাড়িয়ে বড় বাসে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়, যা আগে ছিল বড় বাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা ও মিনিবাসে ১ টাকা ৫০ পয়সা। সর্বনিম্ন ভাড়া বড়বাসের জন্য ৭ টাকা ও মিনিবাসের জন্য ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে ২০১১ সালে দুই দফা বাড়ানো হয় সিএনজির দাম। সে সময় দুই দফা ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। এছাড়া ১৯৯০ সালে প্রতি কিলোমিটার বাসের ভাড়া ছিল ৩২ পয়সা। আর মিনিবাসের ভাড়া ছিল ৩৫ পয়সা। ২০০৮ সালের ২২ জুলাই ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে পৃথকভাবে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। তখনই মিনিবাসের চেয়ে বড় বাসের ভাড়া বেশি নির্ধারণ করা হয়। তখন বাসের জন্য ১ টাকা ২০ পয়সা ও মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ১০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। তখনই মালিক সমিতির সম্মতিতে বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২০১১ সালের ১৮ মে মাসে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে আবার বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তখন বাসের জন্য ১ টাকা ৫৫ পয়সা ও মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। সে সময় বড় বাস ও মিনিবাসের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা ও ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে মালিক সমিতির আপত্তি ছিল বলে বিআরটিএর সূত্র জানায়। এরপর ২০১১ সালে গ্যাসের দাম ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তখন বাসের জন্য ১ টাকা ৬০ পয়সা ও মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। তখনো বাস ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা ও ৫ টাকা অপরিবর্তিত থাকে বলে বিআরটিএর সূত্রে জানায়। কিন্তু এই নীতিমালা মানছে না গণপরিবহন মালিকরা। ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সিটিং, গেটলক, স্পেশাল ও বিরতিহীন সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন চালকরা। রাজধানীর পরিবহন ভাড়া নির্ধারণের জন্য সরকারের দুটি কমিটি রযেছে। এর মধ্যে একটি হলো সাব কমিটি বা ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি। অপরটি মূল কমিটি। দুটি কমিটিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি আছেন। ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি পরিবহনের যাবতীয় আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করে ভাড়া বৃদ্ধির একটি খসড়া প্রস্তাবনা মূল কমিটির কাছে পেশ করে। এরপর মূল কমিটি তা চূড়ান্ত করে কিন্তু রাজধানীর পরিবহনগুলো ভাড়া নির্ধারণে ক্ষেত্রে কোন প্রকার বিরতিহীন, গেটলক, সিটিং সার্ভিস, কাউন্টার সার্ভিসের নাম উল্লেখ নেই। এসব নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি বলে বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ সংবাদকে বলেন, মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো কোন আবেদন সরকারের কাছে করা হয়নি। কারণ আন্তঃজেলার বেশির ভাগ গাড়ি চলে ডিজেলে। ডিজেলের দাম যেহেতু বৃদ্ধি করা হয়নি। সেহেতু ভাড়া বাড়ানোর কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে মহানগরীতে কিছু কিছু গাড়ি গ্যাসে চলাচল করে। এছাড়া কিছু পণ্যপরিহনের ট্রাক গ্যাসে চলাচল করে। তাদের সংখ্যা খুবেই কম। তাই সার্বিক বিবেচনায় বাস-মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধির কোন আবেদন করা হয়নি। এর মধ্যে কিছু কিছু পরিবহনের মালিক ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। এটা তারা ব্যক্তিগতভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। সরকারি বা মালিক সমিতির কোন সিদ্ধান্ত নেই।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, বাস-মিনিবাস নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। পুরোপুরি জিম্মি করে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বাস-মিনিবাস চালকরা। এরা সরকারের কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না। রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলরত বাস-মিনিবাসে ‘সিটিং সার্ভিস’ নামে চলছে অনিয়ম। সব বাসেই এখন ১০-২০ টাকার নিচে কোন ভাড়া নেয়া হয় না। রাজধানীর মিরপুর-যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচল করে ট্রান্সসিলভা পরিবহনের সিটিং সার্ভিস বাসগুলো। ওঠার পর যাত্রী যেখানে খুশি নামতে পারেন, তবে এজন্য ন্যূনতম ভাড়া দিতে হয় ২০ টাকা। তবে শেষ গন্তব্য পর্যন্ত ভাড়া ৩০ টাকা। একই পথে চলাচলকারী অন্য পরিবহনের সিটিং সার্ভিস বাসগুলোর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম চালু রয়েছে। ভাড়ার হারও অভিন্ন। তবে গত রোববার রাতে সিএনজির দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর গতকাল সকাল থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে এসব বাসে ন্যূনতম ভাড়া আদায় করা হয়েছে ২৫ টাকা। মিরপুর-১ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হয়েছে ৩৫ টাকা। এছাড়া যাত্রাবাড়ী-গাবতলী রুটে চলাচল করে বিরতিহীন পরিবহন (সাবেক ৮ নম্বর), মিরপুর রুটে খাজাবাবা, শিকড়, শিখর, বেস্টওয়ে, মোহাম্মদপুরে রুটে মেসকাতসহ রাজধানীর সব গণপরিবহনে চলছে ভাড়া নৈরাজ্য। এ নিয়ে সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের সঙ্গে গণপরিবহনের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়, এমনকি ছোটখাটো হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। গণপরিবহন শ্রমিকদের দাবি, গ্যাসের দাম বাড়ায় জ্বালানি খরচ বেড়েছে। এ কারণে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিতে হচ্ছে। মালিকের সঙ্গে চুক্তি ভিত্তিতে গাড়ি চালানোর কারণে বাড়তি ভাড়া না নিলে এ লোকসান তাদের বহন করতে হবে।

এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী সংবাদকে বলেন, সরকার বাস ও মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণ করে কিন্তু তদারকি নেই। সারাদেশে গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। কোন নিয়ম-নীতিমালা মানছেন না পরিবহন মালিকরা। ভাড়া নির্ধারণের যে কমিটি রয়েছে সেখানে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের প্রাধান্য বেশি। তাই গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে কোন সুষ্ঠু সমাধান কখনো হয়নি।