টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল। জলাবদ্ধতায় নগরীর প্রধান সড়কসহ শাখা সড়কগুলো ডুবে যাওয়ায় পথে পথে যানবাহন অচল হয়ে পড়ে। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়েছে বাসাবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ফলে দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। গতকাল বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে পৃথকভাবে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া এ জলাবদ্ধতাকে জলাবদ্ধতা বলতে নারাজ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তারা এটিকে বলছেন জলজট। আকস্মিক বৃষ্টিতে এ জলজট সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন।
গত রোববার থেকে টানা ভারী বর্ষণে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, অভিভাবক, চাকরিজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। মহানগরীর হালিশহর, অক্সিজেন, বহদ্দারহাট, চকবাজার, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এর পাশাপাশি ফ্লাইওভারগুলোয় জমে আছে বৃষ্টির পানি। গতকাল বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নগরের অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন ছিল। সংশ্লিষ্টরা জানান, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কেও পানি উঠেছে। অনেক দোকান ও বাসাবাড়িতে ঢুকে গেছে পানি। পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকায় চাল-ডালের আড়ত, শুঁটকিপট্টি, তেলের দোকান, ভুসির আড়ত, মসলার বাজারের বেশকিছু দোকানের মালপত্র পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে।
এদিকে সড়কে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষ না হওয়ায় সৃষ্ট গর্তে জমে আছে পানি। এতে রিকশা ও যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। ভারী বৃষ্টিতে হেমসেন লেইন এলাকায় ১ নম্বর গলির একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের সীমানা প্রাচীরধসের ঘটনা ঘটেছে। ঘাটফরহাদ বেগ এলাকায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সীমানা প্রাচীরের একাংশও ধসে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফ্লাইওভারগুলোয় দেখা দিয়েছে যানজট।
এদিকে জলাবদ্ধতা নিয়ে নগরবাসী ক্ষোভ ঝাড়ছেন। তারা বলেছেন, তিন সরকারি সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড পৃথক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখনও প্রকল্পের কাজে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি নেই।
তবে জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছে। রেড ক্রিসেন্ট নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে। মেডিকেল টিম গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জন অফিস।
ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদ জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে (বঙ্গোপসাগর) বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে খাদ্যশস্যসহ বৃষ্টিতে ভিজলে নষ্ট হয় এমন খোলাপণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। তবে পাথরজাতীয় কিছু পণ্য দু’চারটি লাইটার জাহাজে খালাস হচ্ছে। বৈরি আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকলে বিদেশি জাহাজের পাইলটরা লাইটারিং বন্ধ করে দেন। তবে এনসিটি, সিসিটি ও জিসিবি বার্থের জাহাজে কনটেইনার হ্যান্ডলিং স্বাভাবিক রয়েছে।
চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, অক্সিজেন, এক্সেস রোডসহ নগরের নিম্নাঞ্চলে পানি জমে যাওয়ার খবর পেয়েছি। সরেজমিন দেখার জন্য এক্সেস রোডের দিকে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি যদি জোয়ারের কারণে কর্ণফুলী নদীতে নামতে না পারে, তাহলে দুর্ভোগ বাড়বে।
মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০১৯ , ২৫ আষাঢ় ১৪২৫, ৫ জ্বিলকদ ১৪৪০
চট্টগ্রাম ব্যুরো
টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল। জলাবদ্ধতায় নগরীর প্রধান সড়কসহ শাখা সড়কগুলো ডুবে যাওয়ায় পথে পথে যানবাহন অচল হয়ে পড়ে। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়েছে বাসাবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ফলে দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। গতকাল বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে পৃথকভাবে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া এ জলাবদ্ধতাকে জলাবদ্ধতা বলতে নারাজ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তারা এটিকে বলছেন জলজট। আকস্মিক বৃষ্টিতে এ জলজট সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন।
গত রোববার থেকে টানা ভারী বর্ষণে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, অভিভাবক, চাকরিজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। মহানগরীর হালিশহর, অক্সিজেন, বহদ্দারহাট, চকবাজার, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এর পাশাপাশি ফ্লাইওভারগুলোয় জমে আছে বৃষ্টির পানি। গতকাল বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নগরের অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন ছিল। সংশ্লিষ্টরা জানান, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কেও পানি উঠেছে। অনেক দোকান ও বাসাবাড়িতে ঢুকে গেছে পানি। পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকায় চাল-ডালের আড়ত, শুঁটকিপট্টি, তেলের দোকান, ভুসির আড়ত, মসলার বাজারের বেশকিছু দোকানের মালপত্র পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে।
এদিকে সড়কে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষ না হওয়ায় সৃষ্ট গর্তে জমে আছে পানি। এতে রিকশা ও যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। ভারী বৃষ্টিতে হেমসেন লেইন এলাকায় ১ নম্বর গলির একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের সীমানা প্রাচীরধসের ঘটনা ঘটেছে। ঘাটফরহাদ বেগ এলাকায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সীমানা প্রাচীরের একাংশও ধসে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফ্লাইওভারগুলোয় দেখা দিয়েছে যানজট।
এদিকে জলাবদ্ধতা নিয়ে নগরবাসী ক্ষোভ ঝাড়ছেন। তারা বলেছেন, তিন সরকারি সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড পৃথক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখনও প্রকল্পের কাজে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি নেই।
তবে জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছে। রেড ক্রিসেন্ট নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে। মেডিকেল টিম গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জন অফিস।
ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদ জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে (বঙ্গোপসাগর) বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে খাদ্যশস্যসহ বৃষ্টিতে ভিজলে নষ্ট হয় এমন খোলাপণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। তবে পাথরজাতীয় কিছু পণ্য দু’চারটি লাইটার জাহাজে খালাস হচ্ছে। বৈরি আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকলে বিদেশি জাহাজের পাইলটরা লাইটারিং বন্ধ করে দেন। তবে এনসিটি, সিসিটি ও জিসিবি বার্থের জাহাজে কনটেইনার হ্যান্ডলিং স্বাভাবিক রয়েছে।
চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, অক্সিজেন, এক্সেস রোডসহ নগরের নিম্নাঞ্চলে পানি জমে যাওয়ার খবর পেয়েছি। সরেজমিন দেখার জন্য এক্সেস রোডের দিকে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি যদি জোয়ারের কারণে কর্ণফুলী নদীতে নামতে না পারে, তাহলে দুর্ভোগ বাড়বে।