এমপি ফিরোজ রশিদের পুত্রবধূ গুলিবিদ্ধ

আইসিইউতে চিকিৎসাধীন

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের পুত্রবধূ মেরিনা শোয়েব গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। মেরিনা শোয়েবের শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও পুলিশ বলছে, মেরিনা আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। গত রোববার রাতে ধানমন্ডির ৯/এ নম্বর সড়কের কাজী ফিরোজ রশীদের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশের ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল্লাহীল কাফি বলেন, রোববার রাত সাড়ে ৯টার দি?কে ঘটনাটি ঘটে। রাতেই তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করানো হয়। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যার চেষ্টা বলে মনে হয়েছে। তবুও ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও সাক্ষ্যগ্রহণ করে তদন্ত চলছে বলে জানান এডিসি। জানা গেছে, মেরিনা শোয়েবের সঙ্গে কাজী ফিরোজ রশীদের ছেলে কাজী শোয়েব রশীদের ৩ বছর আগে বিচ্ছেদ হয়। তাদের ২০ বছরের এক মেয়ে ও ১১ বছরের এক ছেলে আছে। ছেলে স্কুলে পড়ে। মেয়ে ‘এ’ লেভেল পাস করেছেন। তবে বিচ্ছেদের পরও মেরিনা শ্বশুরবাড়িতে সন্তানদের নিয়ে থাকছেন। রোববার রাতে যখন এই ঘটনা ঘটে, তখন ধানমন্ডির ওই বাড়িতে তার ছেলেমেয়ে, দেবর ও শাশুড়ি ছিলেন। ছেলে ও দেবর ঘরেই ক্রিকেট খেলা দেখছিলেন। এ সময় তার মেয়ে অন্য ঘরে ছিলেন।

হঠাৎ করে মেয়েই প্রথম গুলির শব্দ শুনতে পান। মেয়ে সবাইকে ডেকে ঘরে গিয়ে দেখেন, মেরিনা মাটিতে পড়ে আছেন। তার পাশেই একটি পিস্তল। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে তার বাবা শোয়েব, দাদা ফিরোজ রশীদকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। ফোন পেয়ে সংসদ থেকে সেখানে ছুটে আসেন কাজী ফিরোজ রশীদ। বাসার সবাই মিলে মেরিনাকে ল্যাবএইডে নিয়ে যান। পরে পুলিশ পিস্তলটি উদ্ধার করে দেখতে পায়, এটি কাজী শোয়েবের লাইসেন্স করা পিস্তল। সেটি জব্দ করে পুলিশ।

মেরিনার বাবা সিরাজুল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, পিস্তলটি তার জামাতার। সন্দেহটা সেখানেই। কোন মেয়ে শখ করে আত্মহত্যা করে না। মেয়ে যন্ত্রণায় ছিল। জামাতা আরেকটি বিয়ে করেছেন বলে তিনি শুনেছেন। পারিবারিক সিদ্ধান্তে পৃথক থাকা বাতিল করে স্বামী-স্ত্রীর এক সঙ্গে থাকার কথা হলেও শ্বশুরবাড়ির তেমন উদ্যোগ ছিল না বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ নিয়ে তার মেয়ে খুব কষ্টে ছিলেন। মেয়ের গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি আত্মহত্যা চেষ্টা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সকালে আইসিইউয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছি। সে আমাকে শুধু চিনতে পেরেছে আর কিছু বলেনি। শোয়েব বলল, সে নাকি ওই সময় বাড়িতে ছিল না। পুলিশ শোয়েবের স্টেটমেন্ট ধানমন্ডি থানায় নিয়ে গেছে। আমরা ইতোমধ্যে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি। তবে মামলা করিনি।

মেরিনার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ল্যাবএইডের এজিএম (করপোরেট কমিউনিকেশন) সাইফুর রহমান লেলিন জানান, গুলি তার পিঠ দিয়ে ঢুকেছে। এখন পেটে আছে। তার একটি অপারেশন হয়েছে। কিন্তু গুলিটি বের করা যায়নি। গুলির কারণে পেটের ভেতর যেসব ড্যামেজ বা লিকেজ হয়েছিল, সেগুলো রিপেয়ার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে আইসিইউয়ে আছেন। তাকে ট্রায়াল হিসেবে কিছুক্ষণ পর পর ভেন্টিলেশন দেয়া হচ্ছে আবার খুলে ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, তাকে আপাতত আশঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। তবে সেন্স আছে।

ধানমন্ডি থানার ওসি আবদুর লতিফ বলেন, ঘটনার সময় মেরিনা শোয়েব ঘরে একা ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যার চেষ্টা মনে হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ৩ বছর ধরে স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না থাকায় হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তিনি একটু সুস্থ হলে তারা (পুলিশ) তার সঙ্গে কথা বলবেন। আর এ ঘটনায় মেরিনার পরিবার কোন অভিযোগ করেননি বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০১৯ , ২৫ আষাঢ় ১৪২৫, ৫ জ্বিলকদ ১৪৪০

এমপি ফিরোজ রশিদের পুত্রবধূ গুলিবিদ্ধ

আইসিইউতে চিকিৎসাধীন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের পুত্রবধূ মেরিনা শোয়েব গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। মেরিনা শোয়েবের শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও পুলিশ বলছে, মেরিনা আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। গত রোববার রাতে ধানমন্ডির ৯/এ নম্বর সড়কের কাজী ফিরোজ রশীদের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশের ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল্লাহীল কাফি বলেন, রোববার রাত সাড়ে ৯টার দি?কে ঘটনাটি ঘটে। রাতেই তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করানো হয়। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যার চেষ্টা বলে মনে হয়েছে। তবুও ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও সাক্ষ্যগ্রহণ করে তদন্ত চলছে বলে জানান এডিসি। জানা গেছে, মেরিনা শোয়েবের সঙ্গে কাজী ফিরোজ রশীদের ছেলে কাজী শোয়েব রশীদের ৩ বছর আগে বিচ্ছেদ হয়। তাদের ২০ বছরের এক মেয়ে ও ১১ বছরের এক ছেলে আছে। ছেলে স্কুলে পড়ে। মেয়ে ‘এ’ লেভেল পাস করেছেন। তবে বিচ্ছেদের পরও মেরিনা শ্বশুরবাড়িতে সন্তানদের নিয়ে থাকছেন। রোববার রাতে যখন এই ঘটনা ঘটে, তখন ধানমন্ডির ওই বাড়িতে তার ছেলেমেয়ে, দেবর ও শাশুড়ি ছিলেন। ছেলে ও দেবর ঘরেই ক্রিকেট খেলা দেখছিলেন। এ সময় তার মেয়ে অন্য ঘরে ছিলেন।

হঠাৎ করে মেয়েই প্রথম গুলির শব্দ শুনতে পান। মেয়ে সবাইকে ডেকে ঘরে গিয়ে দেখেন, মেরিনা মাটিতে পড়ে আছেন। তার পাশেই একটি পিস্তল। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে তার বাবা শোয়েব, দাদা ফিরোজ রশীদকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। ফোন পেয়ে সংসদ থেকে সেখানে ছুটে আসেন কাজী ফিরোজ রশীদ। বাসার সবাই মিলে মেরিনাকে ল্যাবএইডে নিয়ে যান। পরে পুলিশ পিস্তলটি উদ্ধার করে দেখতে পায়, এটি কাজী শোয়েবের লাইসেন্স করা পিস্তল। সেটি জব্দ করে পুলিশ।

মেরিনার বাবা সিরাজুল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, পিস্তলটি তার জামাতার। সন্দেহটা সেখানেই। কোন মেয়ে শখ করে আত্মহত্যা করে না। মেয়ে যন্ত্রণায় ছিল। জামাতা আরেকটি বিয়ে করেছেন বলে তিনি শুনেছেন। পারিবারিক সিদ্ধান্তে পৃথক থাকা বাতিল করে স্বামী-স্ত্রীর এক সঙ্গে থাকার কথা হলেও শ্বশুরবাড়ির তেমন উদ্যোগ ছিল না বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ নিয়ে তার মেয়ে খুব কষ্টে ছিলেন। মেয়ের গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি আত্মহত্যা চেষ্টা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সকালে আইসিইউয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছি। সে আমাকে শুধু চিনতে পেরেছে আর কিছু বলেনি। শোয়েব বলল, সে নাকি ওই সময় বাড়িতে ছিল না। পুলিশ শোয়েবের স্টেটমেন্ট ধানমন্ডি থানায় নিয়ে গেছে। আমরা ইতোমধ্যে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি। তবে মামলা করিনি।

মেরিনার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ল্যাবএইডের এজিএম (করপোরেট কমিউনিকেশন) সাইফুর রহমান লেলিন জানান, গুলি তার পিঠ দিয়ে ঢুকেছে। এখন পেটে আছে। তার একটি অপারেশন হয়েছে। কিন্তু গুলিটি বের করা যায়নি। গুলির কারণে পেটের ভেতর যেসব ড্যামেজ বা লিকেজ হয়েছিল, সেগুলো রিপেয়ার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে আইসিইউয়ে আছেন। তাকে ট্রায়াল হিসেবে কিছুক্ষণ পর পর ভেন্টিলেশন দেয়া হচ্ছে আবার খুলে ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, তাকে আপাতত আশঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। তবে সেন্স আছে।

ধানমন্ডি থানার ওসি আবদুর লতিফ বলেন, ঘটনার সময় মেরিনা শোয়েব ঘরে একা ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যার চেষ্টা মনে হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ৩ বছর ধরে স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না থাকায় হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তিনি একটু সুস্থ হলে তারা (পুলিশ) তার সঙ্গে কথা বলবেন। আর এ ঘটনায় মেরিনার পরিবার কোন অভিযোগ করেননি বলে জানান তিনি।