‘সংবাদ’ আমারই ছিল আমারই আছে

মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ

দৈনিক সংবাদ-এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। জাতীয় দৈনিকে লেখালেখি শুরু করেছিলাম ষাটের দশকের মাঝামাঝি। গল্প লেখা দিয়ে আমার যাত্রা। সে সময় ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিকের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা তিন-চারটে। লেখকের সংখ্যাও ছিল সীমিত। জেলা শহরে কোন দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের কথা ভাবা যেত না। তখনও ঢাকা শহরে আসিনি। ছোট্ট জেলা শহরে বসে হাতে লিখতাম, ডাকযোগে লেখা পাঠাতাম। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম হাতে লেখা গল্পটি ছাপার অক্ষরে দেখার জন্য। নিজের লেখা ছাপার অক্ষরে দেখে আনন্দে বুক ভরে যেত। সেদিনের ঐতিহ্যবাহী প্রগতিশীল দৈনিক সংবাদ দিয়েই আমাদের মতো অনেকের পত্রিকায় লেখা শুরু হয়। দৈনিক সংবাদ ছিল লেখক ও সাংবাদিক তৈরির করখানা। আজকের বেশিরভাগ সিনিয়র সাংবাদিক এমনকি সম্পাদক প্রথম জীবনে সংবাদে কাজ করেছেন। সংবাদে কর্মরত সবার সহযোগিতায় সেদিনের স্বল্পসংখ্যক দৈনিকের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। সংবাদের ২৬৩ নম্বর বংশাল রোডের পুরোনো ভবনে পরিচিত হই প্রবীণ দেশবরেণ্য লেখক শহীদুল্লা কায়সারের সঙ্গে। অল্পদিনের মধ্যে রণেশ দাশগুপ্তের একান্ত স্নেহভাজন হয়ে উঠি। চাকরির পরের সময়টুকু সংবাদেই বেশ আনন্দে কাটিয়ে দিতাম। বেশিরভাগ সময় কেটে যেত রণেশদার কাছে নিবিড় আলাপে। তিনি আমাকে গল্প লিখতে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। তার মতো সদা হাসিমুখের মানুষ আমি কম দেখেছি। রণেশদার মতো একজন উঁচু মাপের লেখকের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা ভাবতে আজও অবাক লাগে। পরে সংবাদে দেখা পাই সাংবাদিক লেখক সন্তোষ গুপ্তের। বিশেষ করে সংবাদ সম্পাদক বজলুর রহমানের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা নিবিড় হয়। তিনি সংবাদের সাহিত্য সাময়িকীতে আমার গল্প নিয়মিত ছাপতেন। অনেক সময় বজলুর রহমান ভাইয়ের সঙ্গে গল্পের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হতো। আমার লেখার ওপর তার একটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছিল।

সংবাদে লেখালেখির সুবাদে দৈনিক বাংলার (তখনকার দৈনিক পাকিস্তান) সাহিত্য সম্পাদক কবি আহসান হাবীবের এস্নেহের পরশ পাওয়া সম্ভব হয়েছে। তিনি আমাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং তার কাগজে আমার অনেক গল্প প্রকাশ করেছেন। তিনি আমাকে বেশি করে ভালো ইংরেজি লেখকদের লেখা পড়তে পরামর্শ দিতেন। এ সবই সম্ভব হয়েছে সংবাদে আমার সুসম্পর্কের কারণে। আমার বেশিরভাগ গল্পে নিম্নবিত্ত জীবনের দুঃখ-কষ্ট, বেঁচে থাকার নিরন্তর সংগ্রাম, হাসি-আনন্দের দুর্নিবার আশা-আকাঙ্ক্ষা স্থান পেয়েছে। দীর্ঘ সময় বিদেশে কাটানোর পর নব্বইয়ের শেষের দিকে দেশে ফিরে দেখি সব কিছু যেন পাল্টে গেছে। অনেক পত্রিকার ভিড়ে আমার প্রিয় পত্রিকাগুলো কোথায় যে হারিয়ে গেছে। বেরিয়েছে নিত্যনতুন কাগজ। পুরোনো সম্পাদক, সাংবাদিকও অনেকে পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। অনেকে ইহলোক ছেড়েছেন। নতুনরা পুরোনোর জায়গায় স্থান করে নেবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম।

১৯৫১ সালের ১৭ মে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী দৈনিক সংবাদ দীর্ঘ ৬৮ বছর অতিক্রম শেষে ৬৯-এর বর্ণিল যাত্রা শুরু করেছে। সময়ের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সব কর্মকান্ডের নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনে সংবাদ পালন করেছে তার দায়িত্বশীল ভূমিকা। সৎ সাংবাদিকতা, সৃষ্টিশীল লেখক তৈরির ক্ষেত্রে সর্বদা সংবাদের ভূমিকা প্রসংশনীয়। অন্যায়ের সঙ্গে আপস না-করার নিরন্তর সংগ্রামে সংবাদ দাঁড়িয়েছে মাথা উঁচু করে। ১৯৬৪ সালের দাঙ্গা, ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনসহ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, নিপীড়িত মানুষের পক্ষে সংবাদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। একাত্তরের ২৮ মার্চের কালরাতে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ২৮ মার্চের কালরাতে হানাদার বাহিনী সংবাদ অফিসে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সংবাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, জাতীয়তাবাদ ও আদর্শগত দিকের পরিবর্তন হয়নি। মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও প্রগতির ধারাকে এগিয়ে নিতে সর্বদা গণমানুষের পক্ষে থেকেছে। মানবতার প্রশ্নে সর্বদা সক্রিয় সংবাদ মানুষের বিবেক জাগ্রত করতে কখনও পিছ পা হয়নি। সংবাদের যাত্রায় প্রথম সম্পাদক খায়রুল কবির থেকে শুরু করে দীর্ঘ পথ পরিক্রমণে আহমদুল কবির, রণেশ দাসগুপ্ত, সত্যেন সেন, জহুর হোসেন চৌধুরী, আবু জাফর শামসুদ্দীন, শহীদুল্লা কায়সার, তোহা খান, সন্তোষ গুপ্ত, বজলুর রহমানসহ অনেক কৃতী, নিবেদিতপ্রাণ সম্পাদক, সাংবাদিক সংবাদকে সৃষ্টিশীলতার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান সেই ধারাকে অব্যাহত রেখে নিজ দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক পেয়েছে দৈনিক সংবাদ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এই পদক প্রবর্তন করে। বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এ পদক তুলে দিয়ে সাংবাদিকদের তথ্যভিত্তিক সংবাদ পরিবেশনের অনুরোধ জানান। তিনি আরও বলেন, সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার সৎসাহসই পারে একজন সাংবাদিকের পেশাগত উৎকর্ষের শীর্ষে নিয়ে যেতে। সংবাদের এই পদকপ্রাপ্তি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে আশান্বিত করেছে। সংবাদকে দেয়া এ সম্মান জাতীয় জীবনে সংবাদপত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার একটি দৃষ্টান্ত। অনেক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি সংকটকালে সংবাদ জনবিবেক জাগ্রত করে দেশকে প্রগতিশীলতার সঙ্গে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে তার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। শত চেষ্টা করেও তার কণ্ঠরোধ করা যায়নি। সংবাদ নিছক একটি দৈনিক পত্রিকা নয়, একটি প্রতিষ্ঠান। আজ সংবাদের অফিসের স্থান পরিবর্তন হয়েছে। পুরোনো ঢাকার বংশালের সেই পলেস্তারা খসা জীর্ণ ভবন ছেড়ে নতুন ঢাকায় এসেছে। এখন নিয়মিত সংবাদে কলাম লিখছি। সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক প্রিয়ভাজন খন্দকার মুনীরুজ্জামানের সঙ্গে দেখা হলে পুরোনো দিনের স্মৃতি ভেসে ওঠে। আলাপ-আলোচনা হয়, বড্ড ভালো লাগে। সময়ের ব্যবধানে সংবাদের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়নি, এটাই বড় পাওয়া। মনে হয়, সংবাদ যেমন আমার ছিল ঠিক তেমন আমারই আছে। সংবাদ উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাক আপন মহিমায়। ৬৯ বছরের সংবাদ-এর অগ্রযাত্রায় রইলো শুভকামনা।

image

শিল্পী : সমর মজুমদার

আরও খবর
৬৯ বছরে সংবাদ
ভাষা থেকে ভূখন্ড
স্মৃতিময় সংবাদ-এর ৬৯ বছর
একটি রাজনৈতিক পাঠ
সংবাদ : কিছু কথা কিছু স্মৃতি
যুগে যুগে সংবাদপত্রের অগ্রযাত্রা
আলোর তৃষ্ণায় জাগো
ইতিহাস ঐতিহ্য ও আদর্শের স্মারক দৈনিক সংবাদ
কেন লিখি
সংবাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আত্মার
ঐতিহ্য আর মুক্তচিন্তার সংবাদ
আমার সংবাদ সংবাদের আমি
বিচিত্র জীবিকা বিচিত্র জীবন
ঋতুপর্ণ ঘোষের এলোমেলো দেশকাল
চীন ও বাংলাদেশ : প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সম্পর্ক
সংবাদের জলসাঘর
আমরা এখন শান্ত হয়ে আছি
মাটির মাধুর্য
কষ্টের ঢাকা স্বপ্নের বাংলাদেশ
তোমারে বধিবে যে...
বঙ্গবন্ধুর জনকল্যাণের অর্থনৈতিক নীতি কৌশল
শারহুল পটবসন্ত ও বজলুর রহমান
শিশুশিক্ষায় শিল্প-সাহিত্য-সংগীত
গণমাধ্যমের হাল-হকিকত
এবং বজলুর রহমান স্মৃতিপদক
দুর্নীতি, পেশাদারিত্ব ও উন্নয়ন
বাংলাদেশের থিয়েটার চর্চার ভবিষ্যৎ
চেতনায় নৈতিকতা মূল্যবোধ : বিরুদ্ধবাস্তবতা
সবার উপরে মানুষ সত্য
আহমদুল কবির শ্রদ্ধাঞ্জলি
কার্যকর সংসদ এবং সুশাসনের স্বপ্ন
আমাদের ‘সংবাদ’
নারীর অধিকার ও সচেতনতা
গণমাধ্যমে বিশ্বাস কমছে পাঠকের
নারী ও তার বিধাতা পুরুষ
বাংলাদেশের নারী
সংবাদের কাছে আমি ঋণী
বিস্মৃতিপ্রবণতা ও রাষ্ট্রের অক্ষমতা
যে দীপশিখা দিয়েছে আলো

বুধবার, ১০ জুলাই ২০১৯ , ২৬ আষাঢ় ১৪২৫, ৬ জ্বিলকদ ১৪৪০

‘সংবাদ’ আমারই ছিল আমারই আছে

মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ

image

শিল্পী : সমর মজুমদার

দৈনিক সংবাদ-এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। জাতীয় দৈনিকে লেখালেখি শুরু করেছিলাম ষাটের দশকের মাঝামাঝি। গল্প লেখা দিয়ে আমার যাত্রা। সে সময় ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিকের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা তিন-চারটে। লেখকের সংখ্যাও ছিল সীমিত। জেলা শহরে কোন দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের কথা ভাবা যেত না। তখনও ঢাকা শহরে আসিনি। ছোট্ট জেলা শহরে বসে হাতে লিখতাম, ডাকযোগে লেখা পাঠাতাম। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম হাতে লেখা গল্পটি ছাপার অক্ষরে দেখার জন্য। নিজের লেখা ছাপার অক্ষরে দেখে আনন্দে বুক ভরে যেত। সেদিনের ঐতিহ্যবাহী প্রগতিশীল দৈনিক সংবাদ দিয়েই আমাদের মতো অনেকের পত্রিকায় লেখা শুরু হয়। দৈনিক সংবাদ ছিল লেখক ও সাংবাদিক তৈরির করখানা। আজকের বেশিরভাগ সিনিয়র সাংবাদিক এমনকি সম্পাদক প্রথম জীবনে সংবাদে কাজ করেছেন। সংবাদে কর্মরত সবার সহযোগিতায় সেদিনের স্বল্পসংখ্যক দৈনিকের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। সংবাদের ২৬৩ নম্বর বংশাল রোডের পুরোনো ভবনে পরিচিত হই প্রবীণ দেশবরেণ্য লেখক শহীদুল্লা কায়সারের সঙ্গে। অল্পদিনের মধ্যে রণেশ দাশগুপ্তের একান্ত স্নেহভাজন হয়ে উঠি। চাকরির পরের সময়টুকু সংবাদেই বেশ আনন্দে কাটিয়ে দিতাম। বেশিরভাগ সময় কেটে যেত রণেশদার কাছে নিবিড় আলাপে। তিনি আমাকে গল্প লিখতে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। তার মতো সদা হাসিমুখের মানুষ আমি কম দেখেছি। রণেশদার মতো একজন উঁচু মাপের লেখকের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা ভাবতে আজও অবাক লাগে। পরে সংবাদে দেখা পাই সাংবাদিক লেখক সন্তোষ গুপ্তের। বিশেষ করে সংবাদ সম্পাদক বজলুর রহমানের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা নিবিড় হয়। তিনি সংবাদের সাহিত্য সাময়িকীতে আমার গল্প নিয়মিত ছাপতেন। অনেক সময় বজলুর রহমান ভাইয়ের সঙ্গে গল্পের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হতো। আমার লেখার ওপর তার একটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছিল।

সংবাদে লেখালেখির সুবাদে দৈনিক বাংলার (তখনকার দৈনিক পাকিস্তান) সাহিত্য সম্পাদক কবি আহসান হাবীবের এস্নেহের পরশ পাওয়া সম্ভব হয়েছে। তিনি আমাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং তার কাগজে আমার অনেক গল্প প্রকাশ করেছেন। তিনি আমাকে বেশি করে ভালো ইংরেজি লেখকদের লেখা পড়তে পরামর্শ দিতেন। এ সবই সম্ভব হয়েছে সংবাদে আমার সুসম্পর্কের কারণে। আমার বেশিরভাগ গল্পে নিম্নবিত্ত জীবনের দুঃখ-কষ্ট, বেঁচে থাকার নিরন্তর সংগ্রাম, হাসি-আনন্দের দুর্নিবার আশা-আকাঙ্ক্ষা স্থান পেয়েছে। দীর্ঘ সময় বিদেশে কাটানোর পর নব্বইয়ের শেষের দিকে দেশে ফিরে দেখি সব কিছু যেন পাল্টে গেছে। অনেক পত্রিকার ভিড়ে আমার প্রিয় পত্রিকাগুলো কোথায় যে হারিয়ে গেছে। বেরিয়েছে নিত্যনতুন কাগজ। পুরোনো সম্পাদক, সাংবাদিকও অনেকে পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। অনেকে ইহলোক ছেড়েছেন। নতুনরা পুরোনোর জায়গায় স্থান করে নেবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম।

১৯৫১ সালের ১৭ মে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী দৈনিক সংবাদ দীর্ঘ ৬৮ বছর অতিক্রম শেষে ৬৯-এর বর্ণিল যাত্রা শুরু করেছে। সময়ের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সব কর্মকান্ডের নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনে সংবাদ পালন করেছে তার দায়িত্বশীল ভূমিকা। সৎ সাংবাদিকতা, সৃষ্টিশীল লেখক তৈরির ক্ষেত্রে সর্বদা সংবাদের ভূমিকা প্রসংশনীয়। অন্যায়ের সঙ্গে আপস না-করার নিরন্তর সংগ্রামে সংবাদ দাঁড়িয়েছে মাথা উঁচু করে। ১৯৬৪ সালের দাঙ্গা, ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনসহ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, নিপীড়িত মানুষের পক্ষে সংবাদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। একাত্তরের ২৮ মার্চের কালরাতে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ২৮ মার্চের কালরাতে হানাদার বাহিনী সংবাদ অফিসে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সংবাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, জাতীয়তাবাদ ও আদর্শগত দিকের পরিবর্তন হয়নি। মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও প্রগতির ধারাকে এগিয়ে নিতে সর্বদা গণমানুষের পক্ষে থেকেছে। মানবতার প্রশ্নে সর্বদা সক্রিয় সংবাদ মানুষের বিবেক জাগ্রত করতে কখনও পিছ পা হয়নি। সংবাদের যাত্রায় প্রথম সম্পাদক খায়রুল কবির থেকে শুরু করে দীর্ঘ পথ পরিক্রমণে আহমদুল কবির, রণেশ দাসগুপ্ত, সত্যেন সেন, জহুর হোসেন চৌধুরী, আবু জাফর শামসুদ্দীন, শহীদুল্লা কায়সার, তোহা খান, সন্তোষ গুপ্ত, বজলুর রহমানসহ অনেক কৃতী, নিবেদিতপ্রাণ সম্পাদক, সাংবাদিক সংবাদকে সৃষ্টিশীলতার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান সেই ধারাকে অব্যাহত রেখে নিজ দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক পেয়েছে দৈনিক সংবাদ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এই পদক প্রবর্তন করে। বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এ পদক তুলে দিয়ে সাংবাদিকদের তথ্যভিত্তিক সংবাদ পরিবেশনের অনুরোধ জানান। তিনি আরও বলেন, সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার সৎসাহসই পারে একজন সাংবাদিকের পেশাগত উৎকর্ষের শীর্ষে নিয়ে যেতে। সংবাদের এই পদকপ্রাপ্তি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে আশান্বিত করেছে। সংবাদকে দেয়া এ সম্মান জাতীয় জীবনে সংবাদপত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার একটি দৃষ্টান্ত। অনেক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি সংকটকালে সংবাদ জনবিবেক জাগ্রত করে দেশকে প্রগতিশীলতার সঙ্গে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে তার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। শত চেষ্টা করেও তার কণ্ঠরোধ করা যায়নি। সংবাদ নিছক একটি দৈনিক পত্রিকা নয়, একটি প্রতিষ্ঠান। আজ সংবাদের অফিসের স্থান পরিবর্তন হয়েছে। পুরোনো ঢাকার বংশালের সেই পলেস্তারা খসা জীর্ণ ভবন ছেড়ে নতুন ঢাকায় এসেছে। এখন নিয়মিত সংবাদে কলাম লিখছি। সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক প্রিয়ভাজন খন্দকার মুনীরুজ্জামানের সঙ্গে দেখা হলে পুরোনো দিনের স্মৃতি ভেসে ওঠে। আলাপ-আলোচনা হয়, বড্ড ভালো লাগে। সময়ের ব্যবধানে সংবাদের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়নি, এটাই বড় পাওয়া। মনে হয়, সংবাদ যেমন আমার ছিল ঠিক তেমন আমারই আছে। সংবাদ উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাক আপন মহিমায়। ৬৯ বছরের সংবাদ-এর অগ্রযাত্রায় রইলো শুভকামনা।