লবণ শিল্পের সমস্যা সমাধানে দুই মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীরা

কোনবানিকে সামনে রেখে প্রতিবছরই লবণ শিল্পে অস্থিরতা দেখা দেয়। এবারও কোরবানি ঈদ সামনে রেখে লবণ সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কাঁচা চামড়া মজুদকরণে বিপুল পরিমাণ লবণের প্রয়োজন হবে ওই সময়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় দেশে এখন লবণের পর্যাপ্ত মজুদ নেই। অন্যদিকে দেশীয় শিল্প রক্ষায় সব ধরনের লবণ আমদানিতে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শিল্প লবণ হিসেবে পরিচিত সোডিয়াম সালফেট আমদানি হচ্ছে শূন্য শতাংশ শুল্কে। অবাধে এই লবণ আমদানি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্য লবণ হিসেবে বাজারে বিক্রি করছে। তথ্য গরমিলের সুযোগে অবাধে আমদানি হচ্ছে বিষাক্ত এই লবণ সোডিয়াম সালফেট। এতে সরকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিও নতুন করে হুমকির মুখে পড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া লবণের প্রকৃত চাহিদা ও উৎপাদনের তথ্যনিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির কারণে গভীর সংকটে লবণ শিল্পখাত। এমন পরিস্থিতিতে লবণ শিল্প বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ লবণ শিল্প মালিক সমিতি। এছাড়া সংগঠনটির পক্ষ থেকে দ্রুত সমাধানে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিসিক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছে। এর প্রেক্ষিতে সংকট উত্তরণে শীঘ্রই লবণ শিল্প নিয়ে বৈঠক বসবে বলে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ লবণ মিলমালিক সমিতি বলছে, দেশে লবণের চাহিদা ২৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে কস্টিক সোডা ও বন্ডেড লবণ ছাড়া শিল্পখাতে প্রয়োজন হয় ৯ লাখ মেট্রিকটনের বেশি। কিন্তু বিসিকের তথ্যমতে, সারাবছর শিল্পখাতে ৪ লাখ টন লবণ ব্যবহার হচ্ছে। ওই হিসেবে এখানে ৫ লাখ টন লবণের ঘাটতি রয়েছে। একইভাবে আগে ৬০ হাজার একর জমিতে লবণের চাষ করা হতো। অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সমুদ্র বন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১৫ হাজার একর জমি এ্যাকোয়ার করে নিয়েছে সরকার। এ কারণেও লবণের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে ৫ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু বিসিক এসব হিসাব না করেই পুরনো হিসেব দেখাচ্ছে। এর ফলে বিষাক্ত লবণ সোডিয়াম সালফেট অবাধে দেশে আনা হচ্ছে। পাশাপাশি চোরাই পথে আরও ৪ থেকে ৫ লাখ টন লবণ ঢুকছে দেশে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ লবণ মিলমালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, লবণের চাহিদা ও উৎপাদন নিয়ে বিসিক যে তথ্য দিয়েছে তা বাস্তবতা বিবর্জিত ও কল্পনাপ্রসূত। ব্যাপক গরমিল রয়েছে তাদের তথ্যে। আর এ কারণে অবৈধপথে বিষাক্ত লবণ সোডিয়াম সালফেট আমদানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। দেশের ৩০০ লবণ মিলমালিক তাদের বাজার হারিয়েছে। এ সংকট উত্তরণে শিল্প, বাণিজ্য বিসিক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশীয় শিল্প বিকাশে সব ধরনে উদ্যোগ নিয়েছেন। জাতির অভিভাবক হিসেবে লবণ শিল্প বাঁচাতেও আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এদিকে, স্বাদ ও বর্ণ এক হওয়ার কারণে খাদ্য লবণের বিকল্প হিসেবে খুব সহজে সোডিয়াম সালফেট কারসাজিতে জড়িয়ে পড়ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাজারের এই লবণ খাওয়ার উপযোগী কি না- তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তদন্ত করে সম্প্রতি বিসিককে প্রতিবেদন দেয়ার নিদের্শ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। লবণ উৎপাদন, চাহিদা এবং দেশে কারা সোডিয়াম সালফেট আমদানি করছে তা নিয়ে বিসিকের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এ সংক্রান্ত বিসিকের দেয়া তথ্যও সঠিক নয়। সংস্থাটির দেয়া তথ্যেও বিভ্রান্তি রয়েছে। এটি আর যাচাই-বাছাই হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় কোরবানি সামনে রেখে এবার দেশে লবণের সংকট হতে পারে।

জানা গেছে, কোরবানি সামনে রেখে ঘাটতি পূরণে সাধারণত ৩-৫ লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। এই লবণ আমদানি হয় মিলমালিকদের মাধ্যমে। পরবর্তীতে আমদানিকৃত ও দেশে উৎপাদিত লবণ দিয়ে সারাবছর মিলগুলোতে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এখন শিল্প লবণ আমদানি উন্মুক্ত করে খাদ্য লবণ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে সোডিয়াম সালফেটে বাজার সয়লাব হয়ে পড়ছে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সোডিয়াম সালফেট আমদানি হচ্ছে শিল্প লবণ ঘোষণা দিয়ে। কিন্তু পরবর্তীতে এই লবণই বাজারে আসছে বলে একাধিক অভিযোগ পেয়েছে মন্ত্রণালয়। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিসিককে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, শিল্প লবণ শূণ্য শতাংশ শুল্কে আমদানি হচ্ছে বিধায় এখানে কারসাজির অনেক সুযোগ রয়েছে। এভাবে বিনাশুল্কে কোন পণ্যই আমদানি হতে পারে না। এ কারণে সোডিয়াম সালফেট বা শিল্প লবণ আমদানিতে শুল্ক আরোপের বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে।

বুধবার, ১০ জুলাই ২০১৯ , ২৬ আষাঢ় ১৪২৫, ৬ জ্বিলকদ ১৪৪০

কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে

লবণ শিল্পের সমস্যা সমাধানে দুই মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীরা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশ

কোনবানিকে সামনে রেখে প্রতিবছরই লবণ শিল্পে অস্থিরতা দেখা দেয়। এবারও কোরবানি ঈদ সামনে রেখে লবণ সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কাঁচা চামড়া মজুদকরণে বিপুল পরিমাণ লবণের প্রয়োজন হবে ওই সময়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় দেশে এখন লবণের পর্যাপ্ত মজুদ নেই। অন্যদিকে দেশীয় শিল্প রক্ষায় সব ধরনের লবণ আমদানিতে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শিল্প লবণ হিসেবে পরিচিত সোডিয়াম সালফেট আমদানি হচ্ছে শূন্য শতাংশ শুল্কে। অবাধে এই লবণ আমদানি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্য লবণ হিসেবে বাজারে বিক্রি করছে। তথ্য গরমিলের সুযোগে অবাধে আমদানি হচ্ছে বিষাক্ত এই লবণ সোডিয়াম সালফেট। এতে সরকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিও নতুন করে হুমকির মুখে পড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া লবণের প্রকৃত চাহিদা ও উৎপাদনের তথ্যনিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির কারণে গভীর সংকটে লবণ শিল্পখাত। এমন পরিস্থিতিতে লবণ শিল্প বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ লবণ শিল্প মালিক সমিতি। এছাড়া সংগঠনটির পক্ষ থেকে দ্রুত সমাধানে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিসিক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছে। এর প্রেক্ষিতে সংকট উত্তরণে শীঘ্রই লবণ শিল্প নিয়ে বৈঠক বসবে বলে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ লবণ মিলমালিক সমিতি বলছে, দেশে লবণের চাহিদা ২৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে কস্টিক সোডা ও বন্ডেড লবণ ছাড়া শিল্পখাতে প্রয়োজন হয় ৯ লাখ মেট্রিকটনের বেশি। কিন্তু বিসিকের তথ্যমতে, সারাবছর শিল্পখাতে ৪ লাখ টন লবণ ব্যবহার হচ্ছে। ওই হিসেবে এখানে ৫ লাখ টন লবণের ঘাটতি রয়েছে। একইভাবে আগে ৬০ হাজার একর জমিতে লবণের চাষ করা হতো। অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সমুদ্র বন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১৫ হাজার একর জমি এ্যাকোয়ার করে নিয়েছে সরকার। এ কারণেও লবণের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে ৫ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু বিসিক এসব হিসাব না করেই পুরনো হিসেব দেখাচ্ছে। এর ফলে বিষাক্ত লবণ সোডিয়াম সালফেট অবাধে দেশে আনা হচ্ছে। পাশাপাশি চোরাই পথে আরও ৪ থেকে ৫ লাখ টন লবণ ঢুকছে দেশে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ লবণ মিলমালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, লবণের চাহিদা ও উৎপাদন নিয়ে বিসিক যে তথ্য দিয়েছে তা বাস্তবতা বিবর্জিত ও কল্পনাপ্রসূত। ব্যাপক গরমিল রয়েছে তাদের তথ্যে। আর এ কারণে অবৈধপথে বিষাক্ত লবণ সোডিয়াম সালফেট আমদানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। দেশের ৩০০ লবণ মিলমালিক তাদের বাজার হারিয়েছে। এ সংকট উত্তরণে শিল্প, বাণিজ্য বিসিক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশীয় শিল্প বিকাশে সব ধরনে উদ্যোগ নিয়েছেন। জাতির অভিভাবক হিসেবে লবণ শিল্প বাঁচাতেও আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এদিকে, স্বাদ ও বর্ণ এক হওয়ার কারণে খাদ্য লবণের বিকল্প হিসেবে খুব সহজে সোডিয়াম সালফেট কারসাজিতে জড়িয়ে পড়ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাজারের এই লবণ খাওয়ার উপযোগী কি না- তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তদন্ত করে সম্প্রতি বিসিককে প্রতিবেদন দেয়ার নিদের্শ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। লবণ উৎপাদন, চাহিদা এবং দেশে কারা সোডিয়াম সালফেট আমদানি করছে তা নিয়ে বিসিকের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এ সংক্রান্ত বিসিকের দেয়া তথ্যও সঠিক নয়। সংস্থাটির দেয়া তথ্যেও বিভ্রান্তি রয়েছে। এটি আর যাচাই-বাছাই হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় কোরবানি সামনে রেখে এবার দেশে লবণের সংকট হতে পারে।

জানা গেছে, কোরবানি সামনে রেখে ঘাটতি পূরণে সাধারণত ৩-৫ লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। এই লবণ আমদানি হয় মিলমালিকদের মাধ্যমে। পরবর্তীতে আমদানিকৃত ও দেশে উৎপাদিত লবণ দিয়ে সারাবছর মিলগুলোতে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এখন শিল্প লবণ আমদানি উন্মুক্ত করে খাদ্য লবণ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে সোডিয়াম সালফেটে বাজার সয়লাব হয়ে পড়ছে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সোডিয়াম সালফেট আমদানি হচ্ছে শিল্প লবণ ঘোষণা দিয়ে। কিন্তু পরবর্তীতে এই লবণই বাজারে আসছে বলে একাধিক অভিযোগ পেয়েছে মন্ত্রণালয়। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিসিককে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, শিল্প লবণ শূণ্য শতাংশ শুল্কে আমদানি হচ্ছে বিধায় এখানে কারসাজির অনেক সুযোগ রয়েছে। এভাবে বিনাশুল্কে কোন পণ্যই আমদানি হতে পারে না। এ কারণে সোডিয়াম সালফেট বা শিল্প লবণ আমদানিতে শুল্ক আরোপের বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে।