প্রায় ১০০ দোকানে অনুমোদনহীন ব্যবসা
মনোহরদী উপজেলায় রাস্তাঘাটা, বাজার এলাকা ও সড়কের বিভিন্ন মোড়ে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার, পেট্রলসহ দাহ্য পদার্থ। অনুমোদনহীনভাবে এই সিলিন্ডার বিক্রি করতে গিয়ে দোকানে ঘটতে পারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। তারপরও দাহ্য পদার্থ বিক্রির নীতিমালা মানার কোনো তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এই বিস্ফোরক দ্রব্য। ফলে যেকোনো সময় যেকোন স্থানে বিস্ফোরণের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বর্তমানে রান্নার কাজে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এর ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় শহর থেকে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও লাকড়ির চুলার ঝামেলা এড়াতে গ্রামাঞ্চলে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এলপিজি গ্যাস। শুধু বাসাবাড়ি কিংবা হোটেল-রেস্তোরাঁয় রান্নার কাজে নয়, যানবাহনেও ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এ গ্যাসের ব্যবহার যেমন বাড়ছে, বাড়ছে ঝুঁকিও। নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। তবুও যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এই গ্যাস সিলিন্ডার।
বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে, দোকানপাটে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারসহ দাহ্য পদার্থ বেচাকেনা চলছে যেখানে সেখানে। দোকানদার এক লিটার অথবা দুই লিটারের প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রল ভরে টেবিলের ওপর পসরা সাজিয়ে রেখেছেন। যে কেউ ইচ্ছা করলেই বোতলভর্তি পেট্রল কিনতে পারছে। অথচ দাহ্য পদার্থ পেট্রল বিক্রি করতে হলে বিস্ফোরক অধিদফতরের লাইসেন্স নিতে হয়।
বিস্ফোরক পরিদফতরের সরকারি বিধি মোতাবেক গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রল, মবিল বিক্রির জন্য কমপক্ষে ফ্লোর পাকাসহ আধপাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার, মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। একজন ব্যবসায়ী ওই সব শর্ত পূরণ করলেই কেবল বিস্ফোরক লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য। বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া কোনো দোকানে দাহ্য পদার্থ বিক্রি করা যাবে না।
উপজেলার শুকুন্দি গ্রামের ঈসমাইল হোসেন বলেন, এ উপজেলায় দিন দিন বেড়েই চলেছে দাহ্য পদার্থ বিক্রির দোকানের সংখ্যা। কোমল পানীয়ের বোতলে ভরে পেট্রল বিক্রি করা হচ্ছে। এসব দোকানের পেট্রলের ক্রেতাকে অনেক দোকানি চেনেন না বা জানেন না। এটি খুবই বিপজ্জনক। দুষ্কৃতকারীদের হাতে পেট্রল চলে যেতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক দাহ্য পদার্থ বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। টুকটাক তেল ও দু-একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চালাই। আমরা এই আইন সম্পর্কে কিছুই জানি না।
উপজেলার বেশ কয়েকজন বলেন, এ উপজেলার সদর, চালাকচর, সাগরদী, শেঁখেরবাজার, খিদিরপুর, রামপুর, মনতলা, ভূঁইয়ার বাজার, গাবতলী, তারাকান্দী, চক বাজার, নোয়াকান্দী, মৌলভীবাজার, হাতিরদিয়া, চুলা, সিএন্ডবি, শুকুন্দি, পাঁচকান্দী, বড়চাপা, একদুয়ারিয়াসহ বিভিন্ন বাজার ও সড়কের মোড়ে মুদি, প্লাস্টিক, হাঁড়ি-পাতিল, মোবাইল রিচার্জ, রকমারি দোকানে এমনকি সেলুনেও গ্যাস সিলিন্ডার এবং পেট্রলের মতো দাহ্য পদার্থ বিক্রি হচ্ছে। এ উপজেলায় এ রকম প্রায় ১০০টি দোকান রয়েছে। অনুমোদনহীন এসব দোকান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে দীর্ঘদিন। যে কোন সময় ঘটতে পাড়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনা এটা জেনেও উপজেলায় যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্য পদার্থ বিক্রি করা বন্ধ হয়নি।
এদিকে অনুমোদিত এলপি গ্যাস বিক্রেতারা জানান, তারা সরকারি অনুমোদন নিয়েই এলপি গ্যাস ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থ বিক্রি করছেন। তবে যত্রতত্র এলপি গ্যাস বিক্রির ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এতে করে অনুমোদিত বিক্রেতারা লোকসানের মুখে পড়ছেন, পাশাপাশি ক্রেতারাও প্রতারিত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে মনোহরদী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের লিডার মো. আতিকুল আলম জানান, দাহ্য পদার্থ বিক্রির সুনির্দিষ্ট বিধিমালা রয়েছে। যত্রতত্র বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। মনোহরদীতে অনুমোদিত পেট্রোল পাম্প রয়েছে ৫টি। এর মধ্যে মনোহরদী সদরে একটি সিএনজি ও পেট্রোল পাম্প যা দিনরাত খোলা থাকে। আর পেট্রোলসহ ডিজেল বিক্রির অনুমোদন রয়েছে আরও ৩টির। অন্যদিকে উপজেলায় এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির অনুমোদন নিয়েছেন মাত্র ২ জন ব্যবসায়ী। তবে যত্রতন্ত্র পেট্রল ও এলপি গ্যাস বিক্রেতাদের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গত রমজান মাসে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে।
মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিয়া আক্তার শিমু জানান, এ বিষয়ে রমজানে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি এবং তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে এসেছি। মোবাইল কোর্ট অব্যাহত আছে যদি নির্দেশনা না মানা হয় তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বুধবার, ১০ জুলাই ২০১৯ , ২৬ আষাঢ় ১৪২৫, ৬ জ্বিলকদ ১৪৪০
প্রায় ১০০ দোকানে অনুমোদনহীন ব্যবসা
মাহবুবুর রহমান, মনোহরদী (নরসিংদী)
মনোহরদী উপজেলায় রাস্তাঘাটা, বাজার এলাকা ও সড়কের বিভিন্ন মোড়ে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার, পেট্রলসহ দাহ্য পদার্থ। অনুমোদনহীনভাবে এই সিলিন্ডার বিক্রি করতে গিয়ে দোকানে ঘটতে পারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। তারপরও দাহ্য পদার্থ বিক্রির নীতিমালা মানার কোনো তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এই বিস্ফোরক দ্রব্য। ফলে যেকোনো সময় যেকোন স্থানে বিস্ফোরণের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বর্তমানে রান্নার কাজে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এর ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় শহর থেকে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও লাকড়ির চুলার ঝামেলা এড়াতে গ্রামাঞ্চলে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এলপিজি গ্যাস। শুধু বাসাবাড়ি কিংবা হোটেল-রেস্তোরাঁয় রান্নার কাজে নয়, যানবাহনেও ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এ গ্যাসের ব্যবহার যেমন বাড়ছে, বাড়ছে ঝুঁকিও। নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। তবুও যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এই গ্যাস সিলিন্ডার।
বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে, দোকানপাটে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারসহ দাহ্য পদার্থ বেচাকেনা চলছে যেখানে সেখানে। দোকানদার এক লিটার অথবা দুই লিটারের প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রল ভরে টেবিলের ওপর পসরা সাজিয়ে রেখেছেন। যে কেউ ইচ্ছা করলেই বোতলভর্তি পেট্রল কিনতে পারছে। অথচ দাহ্য পদার্থ পেট্রল বিক্রি করতে হলে বিস্ফোরক অধিদফতরের লাইসেন্স নিতে হয়।
বিস্ফোরক পরিদফতরের সরকারি বিধি মোতাবেক গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রল, মবিল বিক্রির জন্য কমপক্ষে ফ্লোর পাকাসহ আধপাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার, মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। একজন ব্যবসায়ী ওই সব শর্ত পূরণ করলেই কেবল বিস্ফোরক লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য। বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া কোনো দোকানে দাহ্য পদার্থ বিক্রি করা যাবে না।
উপজেলার শুকুন্দি গ্রামের ঈসমাইল হোসেন বলেন, এ উপজেলায় দিন দিন বেড়েই চলেছে দাহ্য পদার্থ বিক্রির দোকানের সংখ্যা। কোমল পানীয়ের বোতলে ভরে পেট্রল বিক্রি করা হচ্ছে। এসব দোকানের পেট্রলের ক্রেতাকে অনেক দোকানি চেনেন না বা জানেন না। এটি খুবই বিপজ্জনক। দুষ্কৃতকারীদের হাতে পেট্রল চলে যেতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক দাহ্য পদার্থ বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। টুকটাক তেল ও দু-একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চালাই। আমরা এই আইন সম্পর্কে কিছুই জানি না।
উপজেলার বেশ কয়েকজন বলেন, এ উপজেলার সদর, চালাকচর, সাগরদী, শেঁখেরবাজার, খিদিরপুর, রামপুর, মনতলা, ভূঁইয়ার বাজার, গাবতলী, তারাকান্দী, চক বাজার, নোয়াকান্দী, মৌলভীবাজার, হাতিরদিয়া, চুলা, সিএন্ডবি, শুকুন্দি, পাঁচকান্দী, বড়চাপা, একদুয়ারিয়াসহ বিভিন্ন বাজার ও সড়কের মোড়ে মুদি, প্লাস্টিক, হাঁড়ি-পাতিল, মোবাইল রিচার্জ, রকমারি দোকানে এমনকি সেলুনেও গ্যাস সিলিন্ডার এবং পেট্রলের মতো দাহ্য পদার্থ বিক্রি হচ্ছে। এ উপজেলায় এ রকম প্রায় ১০০টি দোকান রয়েছে। অনুমোদনহীন এসব দোকান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে দীর্ঘদিন। যে কোন সময় ঘটতে পাড়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনা এটা জেনেও উপজেলায় যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্য পদার্থ বিক্রি করা বন্ধ হয়নি।
এদিকে অনুমোদিত এলপি গ্যাস বিক্রেতারা জানান, তারা সরকারি অনুমোদন নিয়েই এলপি গ্যাস ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থ বিক্রি করছেন। তবে যত্রতত্র এলপি গ্যাস বিক্রির ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এতে করে অনুমোদিত বিক্রেতারা লোকসানের মুখে পড়ছেন, পাশাপাশি ক্রেতারাও প্রতারিত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে মনোহরদী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের লিডার মো. আতিকুল আলম জানান, দাহ্য পদার্থ বিক্রির সুনির্দিষ্ট বিধিমালা রয়েছে। যত্রতত্র বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। মনোহরদীতে অনুমোদিত পেট্রোল পাম্প রয়েছে ৫টি। এর মধ্যে মনোহরদী সদরে একটি সিএনজি ও পেট্রোল পাম্প যা দিনরাত খোলা থাকে। আর পেট্রোলসহ ডিজেল বিক্রির অনুমোদন রয়েছে আরও ৩টির। অন্যদিকে উপজেলায় এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির অনুমোদন নিয়েছেন মাত্র ২ জন ব্যবসায়ী। তবে যত্রতন্ত্র পেট্রল ও এলপি গ্যাস বিক্রেতাদের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গত রমজান মাসে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে।
মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিয়া আক্তার শিমু জানান, এ বিষয়ে রমজানে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি এবং তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে এসেছি। মোবাইল কোর্ট অব্যাহত আছে যদি নির্দেশনা না মানা হয় তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।