ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে এ মামলার তার জামিন মিলল না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে করা এক জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। জামিন শুনানিকালে নুসরাতের ভিডিও সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে হাইকোর্ট মন্তব্য করেন ‘কিছু কিছু ওসি-ডিসি নিজেদের জমিদার মনে করে, মনে হয় তারাই অল ইন অল’।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে মোয়াজ্জেমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. আহসান উল্লাহ ও সালমা সুলতানা। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আব্বাস উদ্দিন।
শুনানিতে মোয়াজ্জেমের আইনজীবী মো. আহসান উল্লাহ আদালতকে বলেন, ‘তার (মোয়াজ্জেম) মোবাইল থেকে ভিডিওটি এক সাংবাদিকের হাতে চলে গেছে। সেখান থেকেই ভিডিওটি ছড়িয়েছে।’ তখন আদালত বলেন, ‘সাংবাদিকদের হাতে ভিডিওটি আগে গেলে তাকে (নুসরাত) মরতে হতো না।’
মোয়াজ্জেমের আইনজীবী বলেন, ‘দেশে সাংবাদিকদের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। ওই সাংবাদিক ওসির মোবাইল থেকে ভিডিওটি নিয়ে ছড়িয়েছে এবং তা স্বীকার করেছে। যে ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তার সাজার মাত্রা কম, অপরাধটি জামিনযোগ্য এবং তিনি অসুস্থ হওয়ার কারণে তার চিকিৎসা দরকার বলেই জামিন আবেদন করেছি। এছাড়া তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা, তার পেনশনের একটা বিষয় রয়েছে। জামিন দিলে তো তিনি পালিয়ে যাবেন না।’
এ সময় আদালত বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি গুরুতর। সে অপরাধে সাজা বেশি না কম তা বড় কথা নয়।’ মোয়াজ্জেমের আইনজীবী বলেন, ‘তিনি বয়স্ক। কানে সমস্যা, কম শোনেন।’ আদালত তখন বলেন, ‘তিনি কানে কম শুনলে ?ওসি থাকেন কী করে?’
এরপর মোয়াজ্জেমের আইনজীবী মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের ব্যক্তিগত বিষয়ে মন্তব্য করলে আদালত বলেন, ‘সাংবাদিকরা যদি শুরু থেকেই এ ঘটনার পেছনে লেগে থাকত, তাহলে এ ঘটনা (নুসরাতের মৃত্যু) ঘটত না। সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। ব্যারিস্টার সুমনও সমাজের দর্পণ।’ তখন মোয়াজ্জেমের আইনজীবী বলেন, ‘সরকারি চাকরি যারা করেন, তারাই জানেন তাদের কী কষ্ট!’
এরপর শুনানি করতে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, ‘সরকারি অফিসার হয়ে তিনি (মোয়াজ্জেম) ভিডিও করলেন, তা ভাইরাল হলো। তাকে জামিন দিলে জনমনে কী মেসেজ যাবে? তিনি অসুস্থ থাকলে জেল অথরিটি রয়েছে, তারাই তাকে চিকিৎসা করাবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিজনারস সেলে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ অফিসারদের এমন দায়িত্বহীন কাজ আগে দেখিনি। মেয়েটিকে যেসব প্রশ্ন করেছে তা শোনা যায় না (অশ্লীল ভাষা)!’ তখন আদালত বলেন, ‘কিছু কিছু অফিসার নিজেদের জমিদার মনে করে, সবাই কিন্তু না। কিছু কিছু অফিসার এমন আছে। অনেক দেশেই এমন আছে, তবে আমাদের দেশে বেশি।’
আদালত তখন বলেন, ‘মেয়েটি থানায় অভিযোগ করতে এলো। এজাহারের জন্য তাকে (নুসরাত) লিখিত বক্তব্য দিতে বললেই হতো। সেখানে এসব প্রশ্নের কোন দরকার হয়? ওসির প্রশ্নগুলোর কোন প্রসঙ্গ দেখি না।’
মাহবুবে আলম বলেন, ‘এখানে কোন প্রেক্ষাপট কাজ করছে? এসব প্রশ্ন করে মজা করবে আবার ভাইরাল করবে? একেবারেই দায়িত্বহীনতার কাজ করেছে।’ আদালত বলেন, ‘ঘটনা শুনে তার সহানুভূতি দেখানো উচিত ছিল। তখন যদি মেয়েটিকে নিরাপত্তা দেয়া হতো তাহলে এ ঘটনা এত দূর এগোত না।’
এরপর আদালত মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন। এর ফলে মোয়াজ্জেমের কারামুক্তি মিলছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
বুধবার, ১০ জুলাই ২০১৯ , ২৬ আষাঢ় ১৪২৫, ৬ জ্বিলকদ ১৪৪০
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে এ মামলার তার জামিন মিলল না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে করা এক জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। জামিন শুনানিকালে নুসরাতের ভিডিও সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে হাইকোর্ট মন্তব্য করেন ‘কিছু কিছু ওসি-ডিসি নিজেদের জমিদার মনে করে, মনে হয় তারাই অল ইন অল’।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে মোয়াজ্জেমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. আহসান উল্লাহ ও সালমা সুলতানা। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আব্বাস উদ্দিন।
শুনানিতে মোয়াজ্জেমের আইনজীবী মো. আহসান উল্লাহ আদালতকে বলেন, ‘তার (মোয়াজ্জেম) মোবাইল থেকে ভিডিওটি এক সাংবাদিকের হাতে চলে গেছে। সেখান থেকেই ভিডিওটি ছড়িয়েছে।’ তখন আদালত বলেন, ‘সাংবাদিকদের হাতে ভিডিওটি আগে গেলে তাকে (নুসরাত) মরতে হতো না।’
মোয়াজ্জেমের আইনজীবী বলেন, ‘দেশে সাংবাদিকদের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। ওই সাংবাদিক ওসির মোবাইল থেকে ভিডিওটি নিয়ে ছড়িয়েছে এবং তা স্বীকার করেছে। যে ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তার সাজার মাত্রা কম, অপরাধটি জামিনযোগ্য এবং তিনি অসুস্থ হওয়ার কারণে তার চিকিৎসা দরকার বলেই জামিন আবেদন করেছি। এছাড়া তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা, তার পেনশনের একটা বিষয় রয়েছে। জামিন দিলে তো তিনি পালিয়ে যাবেন না।’
এ সময় আদালত বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি গুরুতর। সে অপরাধে সাজা বেশি না কম তা বড় কথা নয়।’ মোয়াজ্জেমের আইনজীবী বলেন, ‘তিনি বয়স্ক। কানে সমস্যা, কম শোনেন।’ আদালত তখন বলেন, ‘তিনি কানে কম শুনলে ?ওসি থাকেন কী করে?’
এরপর মোয়াজ্জেমের আইনজীবী মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের ব্যক্তিগত বিষয়ে মন্তব্য করলে আদালত বলেন, ‘সাংবাদিকরা যদি শুরু থেকেই এ ঘটনার পেছনে লেগে থাকত, তাহলে এ ঘটনা (নুসরাতের মৃত্যু) ঘটত না। সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। ব্যারিস্টার সুমনও সমাজের দর্পণ।’ তখন মোয়াজ্জেমের আইনজীবী বলেন, ‘সরকারি চাকরি যারা করেন, তারাই জানেন তাদের কী কষ্ট!’
এরপর শুনানি করতে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, ‘সরকারি অফিসার হয়ে তিনি (মোয়াজ্জেম) ভিডিও করলেন, তা ভাইরাল হলো। তাকে জামিন দিলে জনমনে কী মেসেজ যাবে? তিনি অসুস্থ থাকলে জেল অথরিটি রয়েছে, তারাই তাকে চিকিৎসা করাবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিজনারস সেলে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ অফিসারদের এমন দায়িত্বহীন কাজ আগে দেখিনি। মেয়েটিকে যেসব প্রশ্ন করেছে তা শোনা যায় না (অশ্লীল ভাষা)!’ তখন আদালত বলেন, ‘কিছু কিছু অফিসার নিজেদের জমিদার মনে করে, সবাই কিন্তু না। কিছু কিছু অফিসার এমন আছে। অনেক দেশেই এমন আছে, তবে আমাদের দেশে বেশি।’
আদালত তখন বলেন, ‘মেয়েটি থানায় অভিযোগ করতে এলো। এজাহারের জন্য তাকে (নুসরাত) লিখিত বক্তব্য দিতে বললেই হতো। সেখানে এসব প্রশ্নের কোন দরকার হয়? ওসির প্রশ্নগুলোর কোন প্রসঙ্গ দেখি না।’
মাহবুবে আলম বলেন, ‘এখানে কোন প্রেক্ষাপট কাজ করছে? এসব প্রশ্ন করে মজা করবে আবার ভাইরাল করবে? একেবারেই দায়িত্বহীনতার কাজ করেছে।’ আদালত বলেন, ‘ঘটনা শুনে তার সহানুভূতি দেখানো উচিত ছিল। তখন যদি মেয়েটিকে নিরাপত্তা দেয়া হতো তাহলে এ ঘটনা এত দূর এগোত না।’
এরপর আদালত মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন। এর ফলে মোয়াজ্জেমের কারামুক্তি মিলছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।