ডিএসইতে ২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে ডিএসইএক্স সূচক

নতুন গুজবে শেয়ারবাজারে হাহাকার

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পাস হওয়ার পর শেয়ারবাজার ভালো যাওয়ার প্রত্যাশা ছিল বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু সেই প্রত্যাশার ছিটেফোঁটাও লাগেনি বাজারে। বাজেট পাসের পর থেকেই দেশের শেয়ারবাজার নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। তার সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে নানা গুজব। নগদ লভ্যাংশ দেয়ার পরিবর্তে কোম্পানিগুলো আগামীতে ‘নো ডিভিডেন্ট’ দেয়ার গুজবে চরম আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে। এই পরিস্থিতিতে একই সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের দুরবস্থার খবরে হতাশা বিরাজ করছে শেয়ারবাজারে। দরপতনের প্রতিবাদে গতকাল ডিএসইর সামনে বিনিয়োগকারীরা মানববন্ধন করে।

সুশাসনের অভাবে বাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের। এছাড়াও গ্রামীণফোনের দেনা-পাওনা নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে দ্বন্দ্ব এবং পিপলস লিজিং কোম্পানির অবসায়ন ঘোষণায় নতুন করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ও তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। পুঁজি ফিরে পাওয়ার পরিবর্তে নতুন করে পৌনে ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীদের সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে নতুন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। এই দরপতনের ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবারও বাড়ছে হাহাকার । বাজেটে বলা হয়েছে, নগদের পরিবর্তে বোনাস শেয়ার বিতরণের প্রবণতা কোম্পানিসমূহের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এতে বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রত্যাশিত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ জন্য বাজেটে বোনাস লভ্যাংশের ওপর কোম্পানিগুলোর জন্য ১০ শতাংশ কর ধার্য করা হয়েছে। তাতে বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ প্রদানে নিরুৎসাহিত হবে।

এদিকে বাজেট পাসের পর ৬ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ৫ কার্যদিবস দরপতন হয়েছে। আর মাত্র একদিন সূচক সামান্য বেড়েছে। এই সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ১৪১ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। আর তাতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি অর্থাৎ বাজার মূলধন কমেছে ৮ হাজার ৯৪৯ কোটি ৪৫ লাখ ১ হাজার টাকা। গতকালও পতনে শেষ হয়েছে শেয়ারবাজারের লেনদেন। এদিন উভয় শেয়ারবাজারের সব সূচক কমেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে ২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৩০ পয়েন্টে। ডিএসইর এই সূচকটি ১ মাস ২৫ দিন বা ৩৪ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গেছে। এর আগে চলতি বছরের ১৫ মে ডিএসইএক্স সূচক আজকের থেকে কম স্থানে অবস্থান করছিল। ওই দিন ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫ হাজার ১৯৬ পয়েন্টে। গতকাল ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট ও ডিএসই-৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১৯৮ ও ১৮৬০ পয়েন্টে। ডিএসইতে গতকাল ৪০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫১২ কোটি টাকার। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন ১০৪ কোটি টাকা কম হয়েছে। ডিএসইতে এদিন ৩৫৩টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫১টির বা ১৪ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। দর বেড়েছে ২৭৯টির বা ৭৯ শতাংশের এবং ২৩টি বা ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। ডিএসইতে টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। এদিন কোম্পানিটির ১৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা রূপালী ইন্স্যুরেন্সের ৯ কোটি ২১ লাখ টাকার এবং ৯ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে রানার অটোমোবাইল। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিনোবাংলা, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, সিঙ্গার বিডি, এশিয়ান টাইগার, সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স এবং প্রাইম ইন্স্যুরেন্স।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই গতকাল ১৮২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৭ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৬৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৪২টির, কমেছে ২১১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১১টির দর। গতকাল সিএসইতে ১৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০১৯ , ২৭ আষাঢ় ১৪২৫, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪০

ডিএসইতে ২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে ডিএসইএক্স সূচক

নতুন গুজবে শেয়ারবাজারে হাহাকার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পাস হওয়ার পর শেয়ারবাজার ভালো যাওয়ার প্রত্যাশা ছিল বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু সেই প্রত্যাশার ছিটেফোঁটাও লাগেনি বাজারে। বাজেট পাসের পর থেকেই দেশের শেয়ারবাজার নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। তার সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে নানা গুজব। নগদ লভ্যাংশ দেয়ার পরিবর্তে কোম্পানিগুলো আগামীতে ‘নো ডিভিডেন্ট’ দেয়ার গুজবে চরম আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে। এই পরিস্থিতিতে একই সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের দুরবস্থার খবরে হতাশা বিরাজ করছে শেয়ারবাজারে। দরপতনের প্রতিবাদে গতকাল ডিএসইর সামনে বিনিয়োগকারীরা মানববন্ধন করে।

সুশাসনের অভাবে বাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের। এছাড়াও গ্রামীণফোনের দেনা-পাওনা নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে দ্বন্দ্ব এবং পিপলস লিজিং কোম্পানির অবসায়ন ঘোষণায় নতুন করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ও তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। পুঁজি ফিরে পাওয়ার পরিবর্তে নতুন করে পৌনে ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীদের সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে নতুন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। এই দরপতনের ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবারও বাড়ছে হাহাকার । বাজেটে বলা হয়েছে, নগদের পরিবর্তে বোনাস শেয়ার বিতরণের প্রবণতা কোম্পানিসমূহের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এতে বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রত্যাশিত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ জন্য বাজেটে বোনাস লভ্যাংশের ওপর কোম্পানিগুলোর জন্য ১০ শতাংশ কর ধার্য করা হয়েছে। তাতে বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ প্রদানে নিরুৎসাহিত হবে।

এদিকে বাজেট পাসের পর ৬ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ৫ কার্যদিবস দরপতন হয়েছে। আর মাত্র একদিন সূচক সামান্য বেড়েছে। এই সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ১৪১ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। আর তাতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি অর্থাৎ বাজার মূলধন কমেছে ৮ হাজার ৯৪৯ কোটি ৪৫ লাখ ১ হাজার টাকা। গতকালও পতনে শেষ হয়েছে শেয়ারবাজারের লেনদেন। এদিন উভয় শেয়ারবাজারের সব সূচক কমেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে ২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৩০ পয়েন্টে। ডিএসইর এই সূচকটি ১ মাস ২৫ দিন বা ৩৪ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গেছে। এর আগে চলতি বছরের ১৫ মে ডিএসইএক্স সূচক আজকের থেকে কম স্থানে অবস্থান করছিল। ওই দিন ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫ হাজার ১৯৬ পয়েন্টে। গতকাল ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট ও ডিএসই-৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১৯৮ ও ১৮৬০ পয়েন্টে। ডিএসইতে গতকাল ৪০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫১২ কোটি টাকার। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন ১০৪ কোটি টাকা কম হয়েছে। ডিএসইতে এদিন ৩৫৩টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫১টির বা ১৪ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। দর বেড়েছে ২৭৯টির বা ৭৯ শতাংশের এবং ২৩টি বা ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। ডিএসইতে টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। এদিন কোম্পানিটির ১৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা রূপালী ইন্স্যুরেন্সের ৯ কোটি ২১ লাখ টাকার এবং ৯ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে রানার অটোমোবাইল। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিনোবাংলা, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, সিঙ্গার বিডি, এশিয়ান টাইগার, সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স এবং প্রাইম ইন্স্যুরেন্স।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই গতকাল ১৮২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৭ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৬৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৪২টির, কমেছে ২১১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১১টির দর। গতকাল সিএসইতে ১৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।