সিরাজকে দেখেই জ্ঞান হারালেন নুসরাতের মা

আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে দেখে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়েছেন আগুনে পুড়িয়ে হত্যার শিকার সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মা শিরিন আক্তার। গতকাল ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে নুসরাত হত্যা মামলার বিচারকালে এ ঘটনা ঘটে। পরে শিরিন আক্তারকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আদালত সূত্র জানায়, বুধবার দুপুর ১২টা থেকে আদালতে নুসরাতের মা শিরিন আক্তারের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছিল। এ সময় বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আদালতের এজলাসে নুসরাত হত্যার নির্দেশদাতা ও যৌন নিপীড়ক অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা এবং হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া কামরুন নাহার মনি ও উম্মে সুলতানা পপিকে দেখে নুসরাতের মা চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন। বেলা আড়াইটার দিকে আদালতের এজলাসেই জ্ঞান হারান তিনি। পরে তাকে ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর আগে এ মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। পরে নুসরাতের বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফুর্তি, মাদ্রাসার পিয়ন নুরুল আমিন, নৈশপ্রহরী মো. মোস্তফা, কেরোসিন বিক্রেতা লোকমান হোসেন লিটন, বোরকা দোকানদার জসিম উদ্দিন ও দোকানের কর্মচারী হেলাল উদ্দিন ফরহাদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। সরকারি ছুটি ছাড়া প্রতিদিনই এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম চলছে। ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেয়ায় গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষাকেন্দ্রে গেলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। মারাত্মক আহত নুসরাত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফেনীর পরিদর্শক শাহ আলম আদালতে ১৬ জনকে আসামি করে চার্জশিট জমা দেন। চার্জশিটের ১৬ আসামি হলেন- হত্যার নির্দেশদাতা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

এছাড়া ২৭ মার্চ যৌন নিপীড়নের মামলার পর বেআইনিভাবে নুসরাতের জবানবন্দি গ্রহণের সময় ভিডিও ধারণ ও তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ আইনে মামলা হয়। পালানোর পর গ্রেফতার হওয়া সেই ওসি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০১৯ , ২৭ আষাঢ় ১৪২৫, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪০

সাক্ষ্য দিতে এসে

সিরাজকে দেখেই জ্ঞান হারালেন নুসরাতের মা

প্রতিনিধি, ফেনী

আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে দেখে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়েছেন আগুনে পুড়িয়ে হত্যার শিকার সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মা শিরিন আক্তার। গতকাল ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে নুসরাত হত্যা মামলার বিচারকালে এ ঘটনা ঘটে। পরে শিরিন আক্তারকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আদালত সূত্র জানায়, বুধবার দুপুর ১২টা থেকে আদালতে নুসরাতের মা শিরিন আক্তারের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছিল। এ সময় বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আদালতের এজলাসে নুসরাত হত্যার নির্দেশদাতা ও যৌন নিপীড়ক অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা এবং হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া কামরুন নাহার মনি ও উম্মে সুলতানা পপিকে দেখে নুসরাতের মা চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন। বেলা আড়াইটার দিকে আদালতের এজলাসেই জ্ঞান হারান তিনি। পরে তাকে ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর আগে এ মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। পরে নুসরাতের বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফুর্তি, মাদ্রাসার পিয়ন নুরুল আমিন, নৈশপ্রহরী মো. মোস্তফা, কেরোসিন বিক্রেতা লোকমান হোসেন লিটন, বোরকা দোকানদার জসিম উদ্দিন ও দোকানের কর্মচারী হেলাল উদ্দিন ফরহাদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। সরকারি ছুটি ছাড়া প্রতিদিনই এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম চলছে। ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেয়ায় গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষাকেন্দ্রে গেলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। মারাত্মক আহত নুসরাত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফেনীর পরিদর্শক শাহ আলম আদালতে ১৬ জনকে আসামি করে চার্জশিট জমা দেন। চার্জশিটের ১৬ আসামি হলেন- হত্যার নির্দেশদাতা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

এছাড়া ২৭ মার্চ যৌন নিপীড়নের মামলার পর বেআইনিভাবে নুসরাতের জবানবন্দি গ্রহণের সময় ভিডিও ধারণ ও তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ আইনে মামলা হয়। পালানোর পর গ্রেফতার হওয়া সেই ওসি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।