মার্কিন ‘গুপ্তচরকে’ মুক্তি দিল ইরান

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে আটক লেবাননের নাগরিক নিজার জাক্কাকে মুক্তি দিয়েছে ইরান। লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালের ১১ জুন তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী জাক্কা লেবানিজ নাগরিক হলেও পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। পরে তিনি দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তার মুক্তির বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, জাক্কার মুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের এক ধরনের আলোচনার সূত্রপাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মার্কিন কংগ্রেস ও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দীর্ঘদিন ধরেই জাক্কার মুক্তির জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। তবে তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সরাসরি কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, জাক্কা মার্কিন সামরিক বাহিনীর ইরান সংক্রান্ত তথ্যের ভান্ডার ছিলেন। যদিও তার বিরুদ্ধে আনা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জাক্কা। মুক্তির পর জাক্কা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, তার কাছে নিজের মুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইরানের বন্ধুত্বের বার্তা বলেই মনে হয়েছে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইরানের আমন্ত্রণে তেহরানে ইন্টারনেটভিত্তিক একটি উদ্যোক্তা সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জাক্কা। ইতিপূর্বে তিনি সিআইস্কো এবং মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানির জন্য কাজ করেছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যে বিনিয়োাগকারীদের অনলাইন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতেও তিনি সহায়তা করেন। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর যখন জাক্কা তার ফিরতি ফ্লাইটের জন্য তেহরানে ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন তখন ইরানি নিরাপত্তা এজেন্ট তাকে গ্রেফতার করে।

এক বছর পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। এ ঘটনায় তাকে ১০ বছরের কারাদন্ড এবং ১০ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়। তবে প্রায় অর্ধেক দন্ড ভোগের পরই তাকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তেহরান। উল্লেখ্য জাক্কার মুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বার্তা দিতে চাইছে তেহরান। আর সেটি হচ্ছে তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। তবে তেহরানের এমন আগ্রহে ট্রাম্প প্রশাসনের দিক থেকে তেমন সাড়া পরিলক্ষিত হয়নি। একটি মার্কিন সূত্র রয়টার্সকে বলে, ইরান জাক্কাকে মুক্তি দেয়ার সুযোগটি হাতছাড়া করে ফেলেছে। ওয়াশিংটন আর তেহরানের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী নয়। ইরানের মনোভাব সম্পর্কে জ্ঞাত দ্বিতীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, এ মুক্তির ঘটনার মধ্য দিয়ে তেহরান বার্তা দিতে চায় যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধাংদেহী উত্তেজনা প্রশমনে আগ্রহী। আর নিজার জাক্কার মুক্তি ছিল, উত্তেজনার পারদ কমিয়ে আনতে ইরানের শুভেচ্ছামূলক পদক্ষেপ। তেহরানের দিক থেকে এটি যুদ্ধবিরতির মতো পদক্ষেপ। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেও তারা একই ধরনের উদ্যোগ আশা করে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, তেহরান আসলেই উত্তেজনা কমাতে চাইলে তাদের উচিত একজন মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেয়া। অর্থাৎ, দৃশ্যত তিনি জাক্কার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছেন বা তাকে লেবানিজ নাগরিক হিসেবে দেখাতে চাইছেন। যদিও এক সময় যুক্তরাষ্ট্র তাকে মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০১৯ , ২৭ আষাঢ় ১৪২৫, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪০

মার্কিন ‘গুপ্তচরকে’ মুক্তি দিল ইরান

সংবাদ ডেস্ক

image

নিজার জাক্কা

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে আটক লেবাননের নাগরিক নিজার জাক্কাকে মুক্তি দিয়েছে ইরান। লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালের ১১ জুন তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী জাক্কা লেবানিজ নাগরিক হলেও পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। পরে তিনি দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তার মুক্তির বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, জাক্কার মুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের এক ধরনের আলোচনার সূত্রপাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মার্কিন কংগ্রেস ও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দীর্ঘদিন ধরেই জাক্কার মুক্তির জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। তবে তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সরাসরি কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, জাক্কা মার্কিন সামরিক বাহিনীর ইরান সংক্রান্ত তথ্যের ভান্ডার ছিলেন। যদিও তার বিরুদ্ধে আনা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জাক্কা। মুক্তির পর জাক্কা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, তার কাছে নিজের মুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইরানের বন্ধুত্বের বার্তা বলেই মনে হয়েছে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইরানের আমন্ত্রণে তেহরানে ইন্টারনেটভিত্তিক একটি উদ্যোক্তা সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জাক্কা। ইতিপূর্বে তিনি সিআইস্কো এবং মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানির জন্য কাজ করেছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যে বিনিয়োাগকারীদের অনলাইন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতেও তিনি সহায়তা করেন। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর যখন জাক্কা তার ফিরতি ফ্লাইটের জন্য তেহরানে ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন তখন ইরানি নিরাপত্তা এজেন্ট তাকে গ্রেফতার করে।

এক বছর পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। এ ঘটনায় তাকে ১০ বছরের কারাদন্ড এবং ১০ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়। তবে প্রায় অর্ধেক দন্ড ভোগের পরই তাকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তেহরান। উল্লেখ্য জাক্কার মুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বার্তা দিতে চাইছে তেহরান। আর সেটি হচ্ছে তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। তবে তেহরানের এমন আগ্রহে ট্রাম্প প্রশাসনের দিক থেকে তেমন সাড়া পরিলক্ষিত হয়নি। একটি মার্কিন সূত্র রয়টার্সকে বলে, ইরান জাক্কাকে মুক্তি দেয়ার সুযোগটি হাতছাড়া করে ফেলেছে। ওয়াশিংটন আর তেহরানের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী নয়। ইরানের মনোভাব সম্পর্কে জ্ঞাত দ্বিতীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, এ মুক্তির ঘটনার মধ্য দিয়ে তেহরান বার্তা দিতে চায় যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধাংদেহী উত্তেজনা প্রশমনে আগ্রহী। আর নিজার জাক্কার মুক্তি ছিল, উত্তেজনার পারদ কমিয়ে আনতে ইরানের শুভেচ্ছামূলক পদক্ষেপ। তেহরানের দিক থেকে এটি যুদ্ধবিরতির মতো পদক্ষেপ। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেও তারা একই ধরনের উদ্যোগ আশা করে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, তেহরান আসলেই উত্তেজনা কমাতে চাইলে তাদের উচিত একজন মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেয়া। অর্থাৎ, দৃশ্যত তিনি জাক্কার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছেন বা তাকে লেবানিজ নাগরিক হিসেবে দেখাতে চাইছেন। যদিও এক সময় যুক্তরাষ্ট্র তাকে মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল।