জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এখন মানবসভ্যতার প্রতি অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সর্বোচ্চ ঝুঁকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) কৃষিকৌশল বিভাগের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের লবণাক্ত উপকূলীয় অঞ্চলের মাটির ওপরিভাগে চাষযোগ্য ফসলের জন্য পানি সংরক্ষণের সেচ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও অভিযোজন’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন আইইবির প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর। এতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক (এনআরএম) ড. প্রকৌশলী সুলতান আহম্মেদ, আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, বিএআরআইয়ের সাবেক পরিচালক (গবেষণা) ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের এনএটিপি প্রকল্পের কনসালট্যান্ট ড. প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন। আইইবি কৃষিকৌশল বিভাগের সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম শেখ শফিকের সঞ্চালনা ও বিভাগের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম মিয়ার সভাপতিত্বে এ সময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএআরআইয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. প্রকৌশলী খোকন কুমার সরকার।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলীয় নিচু এলাকাগুলো। এসব এলকায় সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে লোনা পানি বেড়ে যাচ্ছে এবং মিঠা পানি কমে যাওয়ায় অনেকে বাধ্য হচ্ছেন কৃষিতে পরিবর্তন আনতে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এ ঘটনা হচ্ছে। তবে উপকূলীয় এলাকাগুলোয় এখন লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এমন প্রজাতির ধান চাষ করা হচ্ছে। অনেকে ধান ছেড়ে চিংড়ি চাষ করছেন। কোথাও বা বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হচ্ছে। তারা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতা মোকাবিলা করে বাংলাদেশে কৃষির জন্য দুর্যোগপ্রবণ এলাকা তথা হাওর ও উপকূলীয় এলাকার চাষযোগ্য জমি উৎপাদন উপযোগী করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারলে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এ লক্ষ্যে সরকার লবণাক্ত এলাকার উপযোগী লবণ ও খরাসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে কৃষির গবেষণা প্রতিষ্ঠাসমূকে গবেষণার জন্য যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকার উপযোগী ফসলের জাত গবেষণার জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ কাজ করে যাচ্ছে। এর পাশপাশি লবণাক্ত পানি চাষের অনুপযোগী হওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় সীমিত আকারে প্রাপ্ত ভূপৃষ্ঠস্থ ও বৃষ্টির সাধু পানি সংরক্ষণ করে আধুনিক কলাকৌশল, ড্রিপ, শাওয়ার সেচ, সেচ পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক শস্য উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি রিমোট সেনসিং, প্রিপেইড মিটারিং, সেন্সর ইত্যাদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শস্যে পরিমাণমতো সেচ দেয়া এখন সময়ের দাবি। ইতোমধ্যে বিএডিসি, বিএমডিএ ও ডিএইতে কর্মরত কৃষি প্রকৌশলীরা বেশকিছু পানিসাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন।
সেমিনারে জানানো হয়, দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় ফসল উৎপাদন সচল রাখতে কৃষি প্রকৌশলী/গবেষকরা তাদের মেধা জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে পানিসাশ্রয়ী টেকনোলজি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ফসল উৎপাদন ব্যবস্থায় অবদান রেখে চলেছেন। এসডিজি-২ ও এসডিজি ৬-এর লক্ষ্যমাত্রা হলো ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রহণযোগ্য কৃষি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই করা। একই সঙ্গে পরিমিত পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা। একইভাবে বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের সুপেয় পানির যে সমস্যা রয়েছে, তা একটি মাত্রা পর্যন্ত নামিয়ে আনা। উপকূলীয় এলাকায় এই ধরনের গবেষণা ওইসব এলাকায় বসবাসকারী মানুষের ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে খাবার পানি ও গৃহস্থালিসহ অন্যান্য কাজে সুপীয় পানির যে সংকট রয়েছে, তা অনেকাংশই কমিয়ে আনবে।
বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০১৯ , ২৭ আষাঢ় ১৪২৫, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪০
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এখন মানবসভ্যতার প্রতি অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সর্বোচ্চ ঝুঁকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) কৃষিকৌশল বিভাগের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের লবণাক্ত উপকূলীয় অঞ্চলের মাটির ওপরিভাগে চাষযোগ্য ফসলের জন্য পানি সংরক্ষণের সেচ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও অভিযোজন’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন আইইবির প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর। এতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক (এনআরএম) ড. প্রকৌশলী সুলতান আহম্মেদ, আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, বিএআরআইয়ের সাবেক পরিচালক (গবেষণা) ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের এনএটিপি প্রকল্পের কনসালট্যান্ট ড. প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন। আইইবি কৃষিকৌশল বিভাগের সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম শেখ শফিকের সঞ্চালনা ও বিভাগের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম মিয়ার সভাপতিত্বে এ সময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএআরআইয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. প্রকৌশলী খোকন কুমার সরকার।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলীয় নিচু এলাকাগুলো। এসব এলকায় সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে লোনা পানি বেড়ে যাচ্ছে এবং মিঠা পানি কমে যাওয়ায় অনেকে বাধ্য হচ্ছেন কৃষিতে পরিবর্তন আনতে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এ ঘটনা হচ্ছে। তবে উপকূলীয় এলাকাগুলোয় এখন লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এমন প্রজাতির ধান চাষ করা হচ্ছে। অনেকে ধান ছেড়ে চিংড়ি চাষ করছেন। কোথাও বা বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হচ্ছে। তারা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতা মোকাবিলা করে বাংলাদেশে কৃষির জন্য দুর্যোগপ্রবণ এলাকা তথা হাওর ও উপকূলীয় এলাকার চাষযোগ্য জমি উৎপাদন উপযোগী করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারলে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এ লক্ষ্যে সরকার লবণাক্ত এলাকার উপযোগী লবণ ও খরাসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে কৃষির গবেষণা প্রতিষ্ঠাসমূকে গবেষণার জন্য যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকার উপযোগী ফসলের জাত গবেষণার জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ কাজ করে যাচ্ছে। এর পাশপাশি লবণাক্ত পানি চাষের অনুপযোগী হওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় সীমিত আকারে প্রাপ্ত ভূপৃষ্ঠস্থ ও বৃষ্টির সাধু পানি সংরক্ষণ করে আধুনিক কলাকৌশল, ড্রিপ, শাওয়ার সেচ, সেচ পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক শস্য উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি রিমোট সেনসিং, প্রিপেইড মিটারিং, সেন্সর ইত্যাদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শস্যে পরিমাণমতো সেচ দেয়া এখন সময়ের দাবি। ইতোমধ্যে বিএডিসি, বিএমডিএ ও ডিএইতে কর্মরত কৃষি প্রকৌশলীরা বেশকিছু পানিসাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন।
সেমিনারে জানানো হয়, দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় ফসল উৎপাদন সচল রাখতে কৃষি প্রকৌশলী/গবেষকরা তাদের মেধা জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে পানিসাশ্রয়ী টেকনোলজি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ফসল উৎপাদন ব্যবস্থায় অবদান রেখে চলেছেন। এসডিজি-২ ও এসডিজি ৬-এর লক্ষ্যমাত্রা হলো ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রহণযোগ্য কৃষি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই করা। একই সঙ্গে পরিমিত পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা। একইভাবে বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের সুপেয় পানির যে সমস্যা রয়েছে, তা একটি মাত্রা পর্যন্ত নামিয়ে আনা। উপকূলীয় এলাকায় এই ধরনের গবেষণা ওইসব এলাকায় বসবাসকারী মানুষের ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে খাবার পানি ও গৃহস্থালিসহ অন্যান্য কাজে সুপীয় পানির যে সংকট রয়েছে, তা অনেকাংশই কমিয়ে আনবে।