আসবাবপত্র রপ্তানিতে ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ

প্রবৃদ্ধি ১৮ শতাংশ

দেশের বাইরে ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে বাংলাদেশে তৈরি আসবাবপত্র বা গৃহস্থলী পণ্য। গত এক দশক ধরে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এখাতে রপ্তানি আয়। ফলে বিশ্ববাজারে ইতোমধ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশের আসবাবপত্র। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে ৭ কোটি ৪৮ লাখ মার্কিন ডলারের আসবাবপত্র রপ্তানি হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসবাবপত্র রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ কোটি ডলার। আর বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে আসবাবপত্র রপ্তানি হয়েছিল ৬ কোটি ৩১ লাখ ডলারের। দেশের আসবাবপত্রশিল্প ব্যবসায়ীরা বলছেন, গুণগতমান এবং যুগোপযোগি নকশায় আসবাবপত্র তৈরির ফলে বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের আসবাবপত্র প্রিয় হয়ে উঠছে। তাই নতুনত্ব আর আধুনিকতায় গত এক দশকে অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশের আসবাবপত্র শিল্প। বর্তমানে আরব বিশ্ব বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মূলত বাংলাদেশে তৈরি আসবাবপত্র রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, রাশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে রপ্তানি শুরু হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় ৪৮ লাখ ডলার বেশি হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ আসবাবপত্র রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি কেএম আক্তরুজ্জামান বলেন, নিত্যনতুন নকশা, মানসম্মত কাঠ আর কারিগরদের দক্ষতায় তৈরি করা বাংলাদেশের আসবাবপত্রের মান খুব ভালো। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক বাজারে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাই বিশ্ববাজারে চীনের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশকে ভাবা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, রপ্তানির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের বিপুল চাহিদা মেটাতেও সক্ষম হচ্ছে দেশীয় আসবাবপত্র। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য গুণগতমান উন্নয়ন এবং ডিজাইনে প্রতিনিয়ত নতুনত্ব আনা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মহাপরিচালক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, দেশের আসবাবপত্র শিল্পকে স্থায়ী রপ্তানি পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নতুন বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য তৈরি এবং রপ্তানিতে উৎসাহ প্রদানে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।

ইপিবির পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৬১ কোটি ডলার। পোশাক রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে দেশের সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি আয় ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। শেষ পর্যন্ত বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি আয় ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছিল। এর মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ১০১ কোটি ডলার আয় হয়েছে। যদিও এ ক্ষেত্রে রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশের বেশি। কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যে ৯০ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে। এই আয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে ৮১ কোটি ডলার আয় হয়েছে, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ কম।

শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০১৯ , ২৮ আষাঢ় ১৪২৫, ৮ জিলকদ ১৪৪০

আসবাবপত্র রপ্তানিতে ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ

প্রবৃদ্ধি ১৮ শতাংশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

দেশের বাইরে ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে বাংলাদেশে তৈরি আসবাবপত্র বা গৃহস্থলী পণ্য। গত এক দশক ধরে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এখাতে রপ্তানি আয়। ফলে বিশ্ববাজারে ইতোমধ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশের আসবাবপত্র। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে ৭ কোটি ৪৮ লাখ মার্কিন ডলারের আসবাবপত্র রপ্তানি হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসবাবপত্র রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ কোটি ডলার। আর বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে আসবাবপত্র রপ্তানি হয়েছিল ৬ কোটি ৩১ লাখ ডলারের। দেশের আসবাবপত্রশিল্প ব্যবসায়ীরা বলছেন, গুণগতমান এবং যুগোপযোগি নকশায় আসবাবপত্র তৈরির ফলে বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের আসবাবপত্র প্রিয় হয়ে উঠছে। তাই নতুনত্ব আর আধুনিকতায় গত এক দশকে অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশের আসবাবপত্র শিল্প। বর্তমানে আরব বিশ্ব বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মূলত বাংলাদেশে তৈরি আসবাবপত্র রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, রাশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে রপ্তানি শুরু হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় ৪৮ লাখ ডলার বেশি হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ আসবাবপত্র রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি কেএম আক্তরুজ্জামান বলেন, নিত্যনতুন নকশা, মানসম্মত কাঠ আর কারিগরদের দক্ষতায় তৈরি করা বাংলাদেশের আসবাবপত্রের মান খুব ভালো। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক বাজারে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাই বিশ্ববাজারে চীনের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশকে ভাবা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, রপ্তানির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের বিপুল চাহিদা মেটাতেও সক্ষম হচ্ছে দেশীয় আসবাবপত্র। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য গুণগতমান উন্নয়ন এবং ডিজাইনে প্রতিনিয়ত নতুনত্ব আনা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মহাপরিচালক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, দেশের আসবাবপত্র শিল্পকে স্থায়ী রপ্তানি পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নতুন বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য তৈরি এবং রপ্তানিতে উৎসাহ প্রদানে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।

ইপিবির পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৬১ কোটি ডলার। পোশাক রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে দেশের সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি আয় ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। শেষ পর্যন্ত বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি আয় ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছিল। এর মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ১০১ কোটি ডলার আয় হয়েছে। যদিও এ ক্ষেত্রে রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশের বেশি। কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যে ৯০ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে। এই আয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে ৮১ কোটি ডলার আয় হয়েছে, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ কম।