অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা জোরদারে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি), ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে সফররত নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা জরিগুয়েতা সেরুতি। এ সময় তিনি ডিজিটাল আর্থিক সেবা সহজীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের যে বিকাশ ঘটেছে, এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে তিনি মোবাইল ব্যাকিংয়ের ওপর জোর দেন। একই সঙ্গে আর্থিক সেবায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের প্যাসিফিক লাউঞ্জে দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী ও ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসসের।
উল্লেখ্য, রানী ম্যাক্সিমা জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেজের ইনক্লুসিভ ফিনান্স ফর ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক বিশেষ পরামর্শক। বিশ্বব্যাপী অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা জোরদার, দারিদ্র্য নিরসন, খাদ্য নিরাপত্তা ও শিক্ষার মতো উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তিনি জনসচেনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এর অংশ হিসেবে ৯ জুলাই তিন দিনের সফরে বাংলাদেশ আসেন তিনি।
বৈঠক শেষে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, পোশাক খাতে এমন ইকো-সিস্টেম ব্যবস্থা দাঁড় করাতে হবেÑ যাতে শতভাগ শ্রমিককে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসা যায়। এ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। রানী বলেছেন, প্রয়োজন হলে বিশ্বের যেসব প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল আর্থিক সেবা নিয়ে ভালো কাজ করছে, সেগুলোর সঙ্গে কারিগরি জ্ঞান বিনিময়ের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে তিনি সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ জোরদারে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন বলে তিনি জানান।
রানী ম্যাক্সিমাকে উদ্ধৃত করে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিরণে বড় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তবে আর্থিক সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এখনও লিঙ্গবৈষম্য রয়ে গেছে। পুরুষদের তুলনায় নারীরা ডিজিটাল আর্থিক বা ব্যাংকিং সেবাপ্রাপ্তিতে পিছিয়ে আছে। এ বৈষম্য কমাতে আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা আরও কীভাবে ডিজিটালাইজড করা যায়, এ নিয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
রানী বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতে ৪৫ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের কেবল অনলাইনে বেতন পরিশোধ করলে চলবে না। তারা যেন তাদের কেনাকাটা বা অন্যান্য লেনদেন অনলাইনে করতে পারেন, এ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি সহায়তা করবেন বলে জানান।
এর আগে ঢাকার সোনারগাঁ হোটেলে বুধবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকের সঙ্গে বৈঠক করেন রানী ম্যাক্সিমা। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সুবিধা তৃণমূল পর্যায়ে সম্প্রসারণের জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। এ সময় তারা দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে, বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের সর্বশেষ উন্নয়ন এবং অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এতে উভয় দেশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। জুনাইদ আহ্মেদ কেন্দ্রীয়ভাবে নতুন ব্যবসা অনুমোদনের জন্য একক প্রতিষ্ঠান চালু করার প্রস্তাব করেন। এক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডস সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়। বৈঠকে আইসিটি বিভাগের সচিব এনএম জিয়াউল আলম, নেদারল্যান্ডস দূতাবাস ও আইসিটি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০১৯ , ২৮ আষাঢ় ১৪২৫, ৮ জিলকদ ১৪৪০
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |
অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা জোরদারে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি), ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে সফররত নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা জরিগুয়েতা সেরুতি। এ সময় তিনি ডিজিটাল আর্থিক সেবা সহজীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের যে বিকাশ ঘটেছে, এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে তিনি মোবাইল ব্যাকিংয়ের ওপর জোর দেন। একই সঙ্গে আর্থিক সেবায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের প্যাসিফিক লাউঞ্জে দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী ও ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসসের।
উল্লেখ্য, রানী ম্যাক্সিমা জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেজের ইনক্লুসিভ ফিনান্স ফর ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক বিশেষ পরামর্শক। বিশ্বব্যাপী অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা জোরদার, দারিদ্র্য নিরসন, খাদ্য নিরাপত্তা ও শিক্ষার মতো উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তিনি জনসচেনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এর অংশ হিসেবে ৯ জুলাই তিন দিনের সফরে বাংলাদেশ আসেন তিনি।
বৈঠক শেষে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, পোশাক খাতে এমন ইকো-সিস্টেম ব্যবস্থা দাঁড় করাতে হবেÑ যাতে শতভাগ শ্রমিককে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসা যায়। এ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। রানী বলেছেন, প্রয়োজন হলে বিশ্বের যেসব প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল আর্থিক সেবা নিয়ে ভালো কাজ করছে, সেগুলোর সঙ্গে কারিগরি জ্ঞান বিনিময়ের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে তিনি সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ জোরদারে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন বলে তিনি জানান।
রানী ম্যাক্সিমাকে উদ্ধৃত করে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিরণে বড় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তবে আর্থিক সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এখনও লিঙ্গবৈষম্য রয়ে গেছে। পুরুষদের তুলনায় নারীরা ডিজিটাল আর্থিক বা ব্যাংকিং সেবাপ্রাপ্তিতে পিছিয়ে আছে। এ বৈষম্য কমাতে আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা আরও কীভাবে ডিজিটালাইজড করা যায়, এ নিয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
রানী বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতে ৪৫ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের কেবল অনলাইনে বেতন পরিশোধ করলে চলবে না। তারা যেন তাদের কেনাকাটা বা অন্যান্য লেনদেন অনলাইনে করতে পারেন, এ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি সহায়তা করবেন বলে জানান।
এর আগে ঢাকার সোনারগাঁ হোটেলে বুধবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকের সঙ্গে বৈঠক করেন রানী ম্যাক্সিমা। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সুবিধা তৃণমূল পর্যায়ে সম্প্রসারণের জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। এ সময় তারা দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে, বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের সর্বশেষ উন্নয়ন এবং অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এতে উভয় দেশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। জুনাইদ আহ্মেদ কেন্দ্রীয়ভাবে নতুন ব্যবসা অনুমোদনের জন্য একক প্রতিষ্ঠান চালু করার প্রস্তাব করেন। এক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডস সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়। বৈঠকে আইসিটি বিভাগের সচিব এনএম জিয়াউল আলম, নেদারল্যান্ডস দূতাবাস ও আইসিটি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।