কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক

দলের গতি বৃদ্ধি ও জনমতের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা আমাদের আছে

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘দেশের উন্নয়নের ধারা’ অব্যাহত রাখতে দলের সাংগঠিনক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি জনমত যেন সরকারের পক্ষে থাকে, এদিকে নজর দিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় তিনি এই নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা বিগত দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ যেভাবে উন্নতির পথে এগিয়েছে, আগামী দিনে দেশের উন্নয়নে নেয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জনগণের সমর্থনের পাশাপাশি তূণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করারও প্রয়োজনীয়তা সভায় তুলে ধরেন। শোকের মাস আগস্টে নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি, তৃণমূল পর্যায়ে দলকে আরও গোছানোসহ দলের নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় সভায়। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী দিনে দেশকে কোথায় নিয়ে যাব, ওই পরিকল্পনাও আছে। সেটি ইতোমধ্যেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ওই প্রস্তুতিটি আমাদের নিতে হবে। ওই পথগুলোয় আমাদের ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে। বাধাগুলো অতিক্রম করতে হবে। এ জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন সাংগঠনিকভাবে আমাদের দলকে যেমন শক্তিশালী করা, তেমনি জনমত সৃষ্টি করা। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি চিন্তা-চেতনাগুলোকে সমন্বয় করে প্রতি পদক্ষেপে আমরা যেন সুষ্ঠুভাবে পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে পারি। তা আমাদের চলার পথে যত বাধাই আসুক, অতিক্রম করে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে একটি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছেন। আমরা এরই পথ ধরে এগিয়ে গিয়ে আজ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের চলার পথ খুব সহজ ছিল, তা না। প্রতি পদে পদে বাধা। অগ্নিসন্ত্রাস, খুন, নির্যাতন অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। তারপরও আমরা এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। আমরা যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি, সেটি ধরে রাখা। আর রাজনৈতিক শক্তিটি খুব বেশি প্রয়োজন এবং সংগঠন ও জনগণের সমর্থন প্রয়োজন। আমরা আরও সামনে যেতে চাই। আমরা বাংলাদেশটাকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে চাই। আমাদের উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রেখেছি। এই ক’বছরে কখনও আমরা হোঁচট খাইনি বা পিছিয়ে যাইনি। আবার হঠাৎ করে লাফ দিইনি। আমরা খুব স্থিরভাবে ধাপে ধাপে এগিয়ে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। একটা নিয়মের মধ্য দিয়ে লক্ষ্য স্থির করে কাজগুলো যে করা সম্ভব, তা আমরা প্রমাণ করেছি।

সরকারের সমালোচনাকারীদের নিয়ে শেখ হাসিনা, এটাও ঠিক, আমাদের দেশে কিছু লোক থাকেই, তাদের কোন কিছুই ভালো লাগে না। এই যে আমরা অর্থনৈতিকভাবে যতদূরই আগায়, কিছু লোকের সব সময় এটাকে ভিন্ন একটা চোখে দেখার অভ্যাস। তারা আসলে কখনও গণতান্ত্রিক ধারাটা চায় না। গণতান্ত্রিক ধারাটা হলে আমার মনে হয় যেন তাদের দমবন্ধ হয়ে যাবে, তারা মনে হয় নিঃশ্বাস নিতে পারে নাÑ এ রকম একটা ভাব তাদের। দেশে অস্বাভাবিক একটা অবস্থা থাকলে তাদের খুব দাম বাড়ে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কাজেই দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা অব্যাহত থাকুক- সেটিই আমরা চাই।

দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব কিছুর ব্যাপারেই আমরা যথেষ্ট সজাগ রয়েছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার ওই সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। আমরা প্রতিনিয়ত খবর নিচ্ছি। যার যা দায়িত্ব, সেটি দেয়া আছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, এখন বৃষ্টি হচ্ছে, বন্যা হচ্ছে, কোথাও নদী ভাঙন হতে পারে বা পাহাড়ে ধস নামতে পারে। আমরা প্রতিনিয়ত সারাদেশে কোথায় কী ঘটছে, খবর নিচ্ছি। যেখানে যার যেটা দায়িত্ব, তা দেয়া আছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে ওই দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে এতটুকু শৈথিল্য নেই।

শেখ হাসিনা ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের একটি ঘটনার কথা স্মরণ করে বলেন, ১৯৯১ সালে যখন প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়, তখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায়। তারা জানেই না বড় একটা ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, কত মানুষ মারা গেছে। তিনি বলেন, পার্লামেন্টে আমি বললাম, ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, এত মানুষ তখন মারা গেছে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পার্লামেন্টে বলে দিলেন, যত মানুষ মরার কথা ছিল, তত মানুষ মরেনি। আমি জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলাম, কত মানুষ মরলে আপনার তত মানুষ হবে বলেন। এছাড়া বলার মতো কিছু ছিল না। কারণ তিনি জানেনই না। এই যে একটা দুর্যোগ এলে সিগন্যাল দেয়া হচ্ছে, কিচ্ছু জানেনই না।

দলের উপদেষ্টাদের ‘থিংক ট্যাংক’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে উপদেষ্টাদের আরও সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ করছি। আপনাদের সবাইকে সক্রিয় হতে হবে। বিভিন্ন উপ-কমিটি করা আছে। আপনারা মিটিং, সেমিনার করছেন। সেটি অব্যাহত রাখবেন।

শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৫, ৯ জিলকদ ১৪৪০

কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক

দলের গতি বৃদ্ধি ও জনমতের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা আমাদের আছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘দেশের উন্নয়নের ধারা’ অব্যাহত রাখতে দলের সাংগঠিনক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি জনমত যেন সরকারের পক্ষে থাকে, এদিকে নজর দিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় তিনি এই নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা বিগত দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ যেভাবে উন্নতির পথে এগিয়েছে, আগামী দিনে দেশের উন্নয়নে নেয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জনগণের সমর্থনের পাশাপাশি তূণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করারও প্রয়োজনীয়তা সভায় তুলে ধরেন। শোকের মাস আগস্টে নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি, তৃণমূল পর্যায়ে দলকে আরও গোছানোসহ দলের নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় সভায়। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী দিনে দেশকে কোথায় নিয়ে যাব, ওই পরিকল্পনাও আছে। সেটি ইতোমধ্যেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ওই প্রস্তুতিটি আমাদের নিতে হবে। ওই পথগুলোয় আমাদের ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে। বাধাগুলো অতিক্রম করতে হবে। এ জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন সাংগঠনিকভাবে আমাদের দলকে যেমন শক্তিশালী করা, তেমনি জনমত সৃষ্টি করা। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি চিন্তা-চেতনাগুলোকে সমন্বয় করে প্রতি পদক্ষেপে আমরা যেন সুষ্ঠুভাবে পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে পারি। তা আমাদের চলার পথে যত বাধাই আসুক, অতিক্রম করে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে একটি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছেন। আমরা এরই পথ ধরে এগিয়ে গিয়ে আজ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের চলার পথ খুব সহজ ছিল, তা না। প্রতি পদে পদে বাধা। অগ্নিসন্ত্রাস, খুন, নির্যাতন অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। তারপরও আমরা এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। আমরা যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি, সেটি ধরে রাখা। আর রাজনৈতিক শক্তিটি খুব বেশি প্রয়োজন এবং সংগঠন ও জনগণের সমর্থন প্রয়োজন। আমরা আরও সামনে যেতে চাই। আমরা বাংলাদেশটাকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে চাই। আমাদের উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রেখেছি। এই ক’বছরে কখনও আমরা হোঁচট খাইনি বা পিছিয়ে যাইনি। আবার হঠাৎ করে লাফ দিইনি। আমরা খুব স্থিরভাবে ধাপে ধাপে এগিয়ে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। একটা নিয়মের মধ্য দিয়ে লক্ষ্য স্থির করে কাজগুলো যে করা সম্ভব, তা আমরা প্রমাণ করেছি।

সরকারের সমালোচনাকারীদের নিয়ে শেখ হাসিনা, এটাও ঠিক, আমাদের দেশে কিছু লোক থাকেই, তাদের কোন কিছুই ভালো লাগে না। এই যে আমরা অর্থনৈতিকভাবে যতদূরই আগায়, কিছু লোকের সব সময় এটাকে ভিন্ন একটা চোখে দেখার অভ্যাস। তারা আসলে কখনও গণতান্ত্রিক ধারাটা চায় না। গণতান্ত্রিক ধারাটা হলে আমার মনে হয় যেন তাদের দমবন্ধ হয়ে যাবে, তারা মনে হয় নিঃশ্বাস নিতে পারে নাÑ এ রকম একটা ভাব তাদের। দেশে অস্বাভাবিক একটা অবস্থা থাকলে তাদের খুব দাম বাড়ে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কাজেই দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা অব্যাহত থাকুক- সেটিই আমরা চাই।

দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব কিছুর ব্যাপারেই আমরা যথেষ্ট সজাগ রয়েছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার ওই সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। আমরা প্রতিনিয়ত খবর নিচ্ছি। যার যা দায়িত্ব, সেটি দেয়া আছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, এখন বৃষ্টি হচ্ছে, বন্যা হচ্ছে, কোথাও নদী ভাঙন হতে পারে বা পাহাড়ে ধস নামতে পারে। আমরা প্রতিনিয়ত সারাদেশে কোথায় কী ঘটছে, খবর নিচ্ছি। যেখানে যার যেটা দায়িত্ব, তা দেয়া আছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে ওই দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে এতটুকু শৈথিল্য নেই।

শেখ হাসিনা ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের একটি ঘটনার কথা স্মরণ করে বলেন, ১৯৯১ সালে যখন প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়, তখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায়। তারা জানেই না বড় একটা ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, কত মানুষ মারা গেছে। তিনি বলেন, পার্লামেন্টে আমি বললাম, ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, এত মানুষ তখন মারা গেছে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পার্লামেন্টে বলে দিলেন, যত মানুষ মরার কথা ছিল, তত মানুষ মরেনি। আমি জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলাম, কত মানুষ মরলে আপনার তত মানুষ হবে বলেন। এছাড়া বলার মতো কিছু ছিল না। কারণ তিনি জানেনই না। এই যে একটা দুর্যোগ এলে সিগন্যাল দেয়া হচ্ছে, কিচ্ছু জানেনই না।

দলের উপদেষ্টাদের ‘থিংক ট্যাংক’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে উপদেষ্টাদের আরও সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ করছি। আপনাদের সবাইকে সক্রিয় হতে হবে। বিভিন্ন উপ-কমিটি করা আছে। আপনারা মিটিং, সেমিনার করছেন। সেটি অব্যাহত রাখবেন।